রাশিয়া নিয়ে অ্যামেরিকার নীতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। পুটিন নিয়ে মন্তব্য ক্ষোভের কারণে, জানালেন বাইডেন।
বিজ্ঞাপন
গত শনিবারই মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনবলেছিলেন, পুটিন কিছুতেই ক্ষমতায় থাকতে পারেন না। বাইডেনের এই মন্তব্যের পর প্রচুর জলঘোলা হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি মার্কিন নীতিবদল হলো? নাহলে অন্য দেশের প্রেসিডেন্টের ক্ষমতায় থাকা না থাকা নিয়ে কী করে মন্তব্য করতে পারেন বাইডেন?
সোমবার বাইডেন নিজেই তার মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ওটা ছিল তার ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। অ্যামেরিকার নীতি আগের মতোই থাকছে। কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না।
তবে বাইডেন জানিয়েছেন, তার মন্তব্যের জন্য তিনি ক্ষমা চাইবেন না। হোয়াইট হাউসে সিএনএনের সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বাইডেন বলেছেন, ''খারাপ মানুষরা খারাপ কাজ চালিয়ে যেতে পারে না। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, পুটিনকে ক্ষমতাচ্যূত করার জন্য অ্যামেরিকার নীতির মৌলিক কোনো পরিবর্তন হচ্ছে।''
ভ্লাদিমির পুটিন: গোয়েন্দা থেকে প্রেসিডেন্ট
পড়াশোনা শেষে গোয়েন্দা হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন ভ্লাদিমির পুটিন৷ এরপর কয়েক বছরের মধ্যেই রাজনীতির শীর্ষে চলে আসতে সক্ষম হন তিনি৷
জন্ম ১৯৫২ সালে সেন্ট পিটার্সবার্গে৷ ১৯৭৫ সালে আইন বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করে সাবেক সোভিয়েত গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবিতে যোগ দিয়েছিলেন৷ তাঁর প্রথম দায়িত্ব ছিল নিজ শহর লেনিনগ্রাদে (পরবর্তীতে নাম হয় সেন্ট পিটার্সবার্গ) বিদেশি নাগরিক ও কনস্যুলেটের কর্মীদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা৷ এরপর বদলি হন পূর্ব জার্মানির ড্রেসডেনে৷ বার্লিন প্রাচীর পতনের পর তিনি কেজিবির অনেক ফাইল পুড়িয়ে ফেলেন বলে জানা যায়৷
বামে তরুণ পুটিনকে দেখতে পাচ্ছেন? ছবিতে যে ব্যক্তিকে এক নারীর সঙ্গে হাত মেলাতে দেখা যাচ্ছে, তাঁর নাম আনাতোলি সবচাক৷ তিনিই প্রথম পুটিনকে রাজনীতিতে নিয়ে আসেন, নিজের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেন পুটিনকে৷
ছবি: Imago/ITAR-TASS
উল্কার বেগে উত্থান
খুব দ্রুতই সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে মস্কো চলে গিয়েছিলেন পুটিন৷ ১৯৯৭ সালে তৎকালীন রুশ প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলিৎসিন তাঁকে নিজের প্রশাসনে মাঝ পর্যায়ের এক পদে নিয়োগ দেন৷ এই পদটি আসলে ছিল গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বন্ধুত্ব গড়ে তোলার পদ, যার মাধ্যমে ভবিষ্যতে দেশ পরিচালনার অভিজ্ঞতা পেয়েছিলেন পুটিন৷
ছবি: picture alliance/AP Images
বন্ধুর মৃত্যু
২০০০ সালে সবচাকের মৃত্যু পুটিনকে আবেগে আক্রান্ত করেছিল৷ কারণ, যাঁরা পুটিনকে রাশিয়ার ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন, তাঁদের অন্যতম ছিলেন তিনি৷ সবচাকের মৃত্যুর বছরখানেক আগে তাঁর বিরুদ্ধে থাকা প্রতারণার অভিযোগ নিজের রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে বাতিল করেছিলেন পুটিন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Chirikov
অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট
২০০০ সালের জুনে ইয়েলিৎসিন ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পুটিন অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন৷ এরপর যখন তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য প্রচারণা চালাচ্ছিলেন, তখন তাঁর বিরুদ্ধে সেন্ট পিটার্সবার্গ প্রশাসনে থাকাকালীন দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছিল৷ কিন্তু অভিযোগ যিনি এনেছিলেন, সেই সাংসদ মারিনা সালিয়েকে শেষ পর্যন্ত শহর ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছিল৷
ছবি: Imago/ITAR-TASS
রাজনৈতিক সঙ্গী
সংবিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দু’বার দায়িত্ব পালনের পর ২০০৮ সালে আর তৃতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট হওয়া সম্ভব ছিল না পুটিনের৷ তাই সেই সময় তিনি তাঁর রাজনৈতিক সহকর্মী দিমিত্রি মেদভেদেভকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে সমর্থন দিয়েছিলেন৷ আর নিজে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছিলেন৷ সেবারই সংবিধানে পরিবর্তন আনা হয় আর প্রেসিডেন্টের মেয়াদকাল চার থেকে বাড়িয়ে ছয় বছর করা হয়৷ এরপর ২০১২ সালে আবার প্রেসিডেন্ট হন পুটিন৷
ছবি: Imago/ITAR-TASS
চতুর্থবার প্রেসিডেন্ট
১৮ মার্চ, ২০১৮ রবিবার অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আবারও জয়লাভ করেন পুটিন৷ ফলে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট থাকছেন তিনি৷ ২০৩০ সালেও তিনি প্রার্থী হবেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে পুটিন সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘‘১০০ বছর বয়স পর্যন্ত কাজ করে যাবার কোনো ইচ্ছা তাঁর নেই৷’’
ছবি: Reuters/D. Mdzinarishvili
7 ছবি1 | 7
পুটিনকে নিয়ে বাইডেনের আগের মন্ত্যব্যের পরেই মার্কিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছিল যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট আসলে পুটিনের আচরণের নিন্দা করেছেন। বাইডেনও সোমবার বলেছেন, ''আমি একটা সহজ কথা বলতে চেয়েছিলাম, পুটিন যে ব্যবহার করছেন, তা মানা যায় না। তার মোকাবিলা করার জন্য ন্যাটোকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে. শক্তিশালী করতে হবে এবং ইউক্রেনকে সাহায্য করতে হবে।'' তার দাবি, ন্যাটো এর আগে কখনো এতটা শক্তিশালী ছিল না।
জো বাইডেনের জীবনের গল্প
২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের জীবনের গল্প দেখুন এই ছবিঘরে৷
ছবি: Kevin Lamarque/Reuters
জন্ম ও পরিবার
১৯৪২ সালের ২০ নভেম্বর স্ক্র্যানটন পেনসিলভ্যানিয়াতে জন্মগ্রহণ করেন জোসেফ রবিনেট বাইডেন জুনিয়র বা আজকের ‘জো বাইডেন’৷ জীবনের প্রথমভাগ বাইডেন কাটান দাদা-দাদির সাথে৷ পরিবারে আর্থিক অনটন থাকলেও বাইডেন স্কুলজীবনে তুখোড় ফুটবল, বেসবল খেলোয়াড় ছিলেন, যা পরে বিশ্ববিদ্যালয়েও তাঁকে জনপ্রিয় করে তোলে৷ জানা যায়, ছোটবেলায় বাইডেন কথা বলতে গেলে তোতলাতেন, যা কবিতা আবৃত্তি করার মাধ্যমে পরে নিয়ন্ত্রণে আনেন তিনি৷
ছবি: Handout Joseph Biden/AFP
তারুণ্য
প্রথমে ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক হবার পর আইনে স্নাতকোত্তর স্তরের পড়াশোনা করতে বাইডেন পাড়ি দেন নিউ ইয়র্কের সাইরাক্যুজ বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ সেখানেই তাঁর পরিচয় নেলিয়া হান্টারের সাথে৷ ১৯৬৬ সালে নেলিয়া ও বাইডেন বিয়ে করেন৷
ছবি: Keystone/dpa/picture-alliance
রাজনীতিতে পদার্পণ
১৯৭২ সালে মাত্র ২৯ বছর বয়েসে ডেলাওয়ারে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান সেনেটর কেলেব বগসের বিরুদ্ধে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে লড়েন বাইডেন৷ অর্থাভাব, রাজনীতির ময়দানে অনভিজ্ঞতা সত্ত্বেও পারিবারিক সহায়তা ও মাঠপর্যায়ে প্রচার চালিয়ে গবসকে পরাজিত করেন বাইডেন৷ সেখান থেকেই ডেমোক্র্যাট হিসাবে তাঁর উত্থানের সূত্রপাত৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Keystone
পারিবারিক বিপর্যয়
সেনেটর নির্বাচিত হবার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই বাইডেনের জীবনে আসে বিপর্যয়৷ একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় তাঁর স্ত্রী নেলিয়া ও কন্যা নাওমির মৃত্যু হয়৷ মারাত্মকভাবে জখম হন তাঁর দুই পুত্রও৷ এই বিপর্যয়ের কারণে রাজনীতি ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন বাইডেন৷ কিন্তু দলের জোরাজুরিতে হাসপাতালেই সেনেটর পদে শপথগ্রহণ করেন বাইডেন৷ পরে ১৯৭৭ সালে জিল জেকবসকে বিয়ে করেন বাইডেন৷ তাঁদের একটি কন্যা রয়েছে, নাম অ্যাশলি৷
ছবি: Kevin Larkin/AFP/Getty Images
রাজনীতির চেয়ে পরিবারকে প্রাধান্য
বাইডেনের পারিবারিক জীবনে আবার বিপর্যয় আসে ২০১৫ সালে৷ ভাইস-প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ব্রেন টিউমারজনিত জটিলতায় তিনি তাঁর পুত্র জোসেফকে হারান৷ পরের বছর ২০১৬ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসাবে লড়ার পরিকল্পনা থাকলেও পরিবারকে সময় দিতে নির্বাচন থেকে সরে আসেন বাইডেন৷
ছবি: Kevin Lamarque/REUTERS
তবুও উত্তরণ
এর আগে ১৯৮৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রাথমিকভাবে অংশগ্রহণ করলেও প্রাইমারি নির্বাচনের আগেই নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন৷ কিন্তু সেনেটর হিসাবে কাজ করে যান তিনি৷ ২০০৮ সালেও প্রথমে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আগ্রহ দেখিয়েছিলেন তিনি৷ জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতার প্রতীক হিসাবে ২০১৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাঁকে ‘প্রেসিডেনশিয়াল মেডাল অফ ফ্রিডম’ প্রদান করেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Kamm
গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ
রাজনীতির শুরু থেকেই বাইডেন ক্রেতা সুরক্ষা ও পরিবেশবিষয়ক ইস্যু নিয়ে সোচ্চার থেকেছেন৷ ২০১০ সালের ‘পেশেন্ট প্রোটেকশান অ্যান্ড অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার’ আইনের বাস্তবায়নে তাঁর ভূমিকার কথা বারবার আলোচিত হয়েছে৷ শুধু তাই নয়, ১৯৯২ সাল থেকেই আইনি কড়াকড়ি বাড়ানো ও সাজার মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষে তাঁর অবস্থান তিনি স্পষ্ট করেছেন, যা অনেক ক্ষেত্রেই তাঁর দলের নীতির সাথে পুরোপুরি খাপ খায়নি৷
ছবি: Jim Watson/AFP/Getty Images
বাইডেনকে ঘিরে বিতর্ক
১৯৮৮ সালের নির্বাচনি প্রচারের সময় বাইডেনের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ লেবার পার্টির নিল কিনকের বক্তব্য চুরির অভিযোগ ওঠে৷ এছাড়া অ্যামেরিকার দক্ষিণাঞ্চলের বর্ণভিত্তিক বিভেদপন্থিদের সাথে সুর মিলিয়ে আদালতের রায়ের বিরোধিতা করে সমালোচিত হন বাইডেন৷ ২০১২ সালেও সমকামী জুটিদের বিয়ের অধিকারের পক্ষে কথা বলে বাইডেন শিরোনামে উঠে আসেন৷
ছবি: Carolyn Kaster/AP/picture alliance
যৌন নির্যাতনের অভিযোগ
২০২০ সালের মার্চ মাসে টারা রিড অভিযোগ আনেন যে ১৯৯৩ সালে জো বাইডেন তাঁকে যৌন নির্যাতন করেছিলেন৷ সেনেটর থাকাকালীন বাইডেনের অফিসে সহযোগী হিসাবে কাজ করতেন রিড৷ ১৯৯৩ সালে বিষয়টি আলোচিত হবার পর নতুন করে এবছর আবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রেক্ষিতে সেটি আলোচনায় উঠে আসে৷ এই অভিযোগ বাইডেন উড়িয়ে দিলেও আরো কয়েকজন নারী বাইডেনের বিরুদ্ধে অসঙ্গত আচরণের অভিযোগ এনেছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Locher
বাইডেনের যত নাম
গণমাধ্যমে বাইডেনের নামের সাথে জুড়েছে নানা ধরনের বিশেষণ৷ জীবনের গোড়ার দিকের অর্থনৈতিক বাস্তবতার কারণে কখনো তাঁর নাম হয়েছে ‘মিডল ক্লাস জো’৷ ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণের সময় বয়সের কারণে ডনাল্ড ট্রাম্প তাঁকে তাচ্ছিল্য করে বলেন ‘স্লো জো’ ও ‘স্লিপি জো’৷
ছবি: Jim Watson/AFP/Getty Images
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ
২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসাবে অংশগ্রহণ করেন জো বাইডেন৷ তার পক্ষে ব্যাপকভাবে প্রচারে নামেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা৷ টুইটার-ইন্সটাগ্রামে পাশে দাঁড়ান সেলেব্রেটিরাও৷ নির্বাচনে ডনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়ে বিজয়ী হন তিনি৷ বাইডেনের নির্বাচনসঙ্গী কমলা হ্যারিস দেশের প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত, প্রথম আফ্রিকান-অ্যামেরিকান ও প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়ে ইতিহাস গড়েন৷
ছবি: Carolyn Kaster/AP Photo/picture alliance
11 ছবি1 | 11
বাইডেন জানিয়েছেন, তিনি ওয়ারশতে গিয়ে ইউক্রেন থেকে আসা মানুষদের দেখেছেন, কথা বলেছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের দাবি, তার মন্তব্যের ফলে পরিস্থিতি আর খারাপ হবে না।