আল্পস পর্বতের একটি অংশ থেকে বড় ধস নামলে নীচের জনপদে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানীর মাত্রা মারাত্মক হতে পারে৷ একদল বিজ্ঞানী এমন বিপর্যয়ের নিখুঁত পূর্বাভাস সম্ভব করার চেষ্টা চালাচ্ছেন৷ সেন্সর ও নানা পরিমাপ যন্ত্র তাদের হাতিয়ার৷
বিজ্ঞাপন
পাহাড়ের চূড়ার কিছু অংশ অদূর ভবিষ্যতেই উপত্যকায় আছড়ে পড়তে চলেছে৷ মিউনিখের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা সেই বিপর্যয়ের নির্দিষ্ট দিনক্ষণ জানার চেষ্টা করছেন৷ সেটা সম্ভব হলে উপত্যকার মানুষকে ঠিক সময়ে সতর্ক করা যাবে৷ ভূমিধস বিশেষজ্ঞ মিশায়েল ক্রাউটব্লাটার বলেন, ‘‘এই পাহাড় সত্যি বেশ জোরালোভাবে নড়াচড়া করছে৷ অদূর ভবিষ্যতেই আমরা ধসের আশঙ্কা করছি৷ এমন পূর্বাভাস কতটা নিখুঁত হতে পারে, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করে আমরা তা জানতে চাই৷ আমরা কি তিন দিন আগে তা বলতে পারবো? এখানে বাতাসের গতি অনেক৷ জায়গাটিও বেশ দুর্গম৷ গোটা পরিস্থিতি বেশ বিপজ্জনক৷’’
চূড়ার দক্ষিণের প্রাচীরের একটা বড় অংশ ভেঙে প্রায় এক হাজার মিটার নীচে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে৷ নতুন ফাটল দেখা যাচ্ছে, যার মধ্যে কয়েকটি একশো মিটারের বেশি বড়৷ একটি ফাটল এত বড় যে মাঝারি মাপের একটা ট্রাক তাতে ঢুকে যেতে পারে৷ প্রতি দিন শূন্য দশমিক চার মিলিমিটার গতিতে সেটি বড় হচ্ছে৷ শুনতে কম মনে হলেও কোনো পাহাড়ের জন্য এই গতি অত্যন্ত বেশি৷
ইউরোপের পর্বতে বাইকিং
বাইক কিংবা সাইকেল নিয়ে পর্বতারোহণ চাট্টিখানি কথা নয়৷ দুঃসাহস তো বটেই, শারীরিক পরিশ্রমটাও তীব্র৷ কিন্তু অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় মানুষকে আটকে তো আর রাখা যায় না৷ তাদের জন্যই ইউরোপের এই ১০টি পাহাড়ি পথ৷
ছবি: picture-alliance/imagebroker/J. Reuther
লেক গার্দা, ইটালি
পর্বতের ভাঁজে সাইকেল চালাতে যত বাধা-বিপত্তি থাকে, তার সব নিয়ে লেক গার্দা৷ তারপরও এটিই সাইকেল চালিয়েদের স্বপ্নভূমি৷ অনেক চরাই উৎরাই পাড়ি দেয়ার সুযোগ যেমন আছে, কিছু সাদামাটা পথও আছে, থাকছে চরম ধৈর্য্য দেখিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ৷ ফলে সাইকেল আরোহী তাঁর পছন্দের পথটি বেছে নেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন৷ পাঁচ হাজার ৭৭৪ ফুট উঁচু মন্টে বাল্ডোর চূড়ায় সাইকেল চালাতে হলে শাটল বা ক্যাবল কারে চাপার সুযোগটাও আছে এখানে৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/McPhoto
আল্প ডি‘হুয়েজ, ফ্রান্স
আল্প ডি’হুয়েজের শীর্ষে যেতে বাইতে হবে খাড়া আগাছার পথ৷ ছয় হাজার ১০২ ফুট উচ্চতার এই সড়কটি ট্যুর ডি ফ্রান্স ক্লাসিক নামে পরিচিত৷ আবার অনেক বাইকাররা এখানটায় আসেন শিহরণ জাগানিয়া ‘মেগা ভ্যালেন্সে‘ পথটি পাড়ি দিতে৷ ক্যাবল কারে চেপে যেতে হয় ১০ হাজার ৯২৫ ফুট উচ্চতার পিক ব্ল্যাঙ্কে৷ তারপর শুরু হয় চরাই উৎরাই পেরোনোর আসল যুদ্ধ৷ সাইক্লিস্টদের জন্য এটি দীর্ঘতর রূক্ষ পথ৷
ছবি: picture-alliance/Augenklick/Roth
বনিফাসিও, কর্সিকা
পর্বত, এবড়ো থেবড়ো পথ, গহীন বন--সবমিলিয়ে অসম্ভব সুন্দর কর্সিকা৷ যদিও সেখানে তীব্র গরম৷ তবুও সাইক্লিস্টদের আরেকটা প্রিয় জায়গা এটি৷ আগাছা ভর্তি উপকূলে একসময়কার খামারের চিহ্ন পাওয়া যাবে৷ কিন্তু কোথাও জিরোনোর জন্য নেই কোনো ছাদ৷ সাইকেল চালিয়ে ক্লান্ত হয়ে সাগরে ঝাঁপাঝাপিটাই একমাত্র উপায়৷
ছবি: picture-alliance/imagebroker/N. Eisele-Hein
স্টেলভিও ন্যাশনাল পার্ক, ইটালি
ইটালির সবচেয়ে উঁচু পর্বত স্টেলভিও৷ যার উচ্চতা নয় হাজার ৫৫ ফুট৷ পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে তৈরি সড়কটি অসংখ্য সর্পিল আকৃতিতে ঘেরা৷ একসময় সেনাবাহিনীর দক্ষতা বাড়াতে এখানে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ছিল৷ কালক্রমে এটি বদলে হয়েছে সাইক্লিস্টদের তীর্থভূমি৷
ছবি: picture-alliance/imagebroker/N. Eisele-Hein
টিমেলতসিঁউ, অস্ট্রিয়া
আবহাওয়া ঠিক করে দেয় এ পথে সাইকেল নিয়ে আরোহীর পথা চলা৷ গ্রীষ্মকালটা ভালো মৌসুম৷ জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত খোলা থাকে এখানকার পথ৷ তাই এসময়টাতে ভিড় করে সাইক্লিস্ট আর মোটোবাইকাররা৷ আর যারা এ পথ দিয়ে যান, তাদের জিরোবার জায়গাটাও অসাধারণ৷ কারণ এখানেই আছে, অস্ট্রিয়ার সবচেয়ে উঁচু জাদুঘর ‘পাস‘৷
ছবি: picture-alliance/imagebroker/M. Keller
গ্রসগ্লোকনার হাই অ্যালপাইন রোড, অস্ট্রিয়া
আল্পস ঘিরে যতো বাইকিং রোড আছে, এটিই সবচেয়ে ব্যস্ততম রোড৷ সাইকলে চালিয়েদের জন্য অবশ্য এখানে সময়টা বরাদ্দ দেয়া আছে৷ তাদের সকাল নয়টার আগে আসতে হবে, অন্যথা দুপুর তিনটার পর৷ এখানে সাইকেল নিয়ে যাওয়ার সময় দেখা মিলবে ফুশার ট্রল আর এডেলভাইপিৎজে পর্বতের৷ আর ঠিক চূড়ায় উঠে গেলে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মুগ্ধতা ছড়াবেই৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/K. Thomas
ফানের সিনেস ব্রেইস ন্যাচার পার্ক, ইটালি
পাঁচ ঘণ্টা সাইকেল চালিয়ে আরোহণ করতে হয় ৪ হাজার ৭৫৭ ফুট উচ্চতা৷ অভিজ্ঞতা, শারিরীক সামর্থ্য আর টেকনিক্যাল স্কিল যাদের রয়েছে এই দুর্গম পথটি তাদের জন্য৷ সাইকেল কিংবা বাইক--এ পথ পাড়ি দিতে চাইলে পূর্বশর্ত পূরণ খুব জরুরি৷
ছবি: picture-alliance/imagebroker/J. Reuther
গ্রান ক্যানেরিয়া, স্পেন
ছুটি কাটাতে গ্রান ক্যানেরিয়া যারা আসেন তাদের বেশিরভাগের গন্তব্য সমুদ্র পাড়৷ কিন্তু পর্বতারোহী সাইক্লিস্ট বা বাইকারদের এদিকটায় আগ্রহ কম৷ তাই পর্যটকদের ভিড় ঠেলে তারা চলে যান পাহাড় পর্বতের দিকে৷ আঁকাবাঁকা পথের রূক্ষতা পেরিয়ে ছুটে যান গন্তব্যে৷ এখানে আছে দুর্গম এক পাহাড়ি গ্রাম৷ পুরোটা ঘুরে দেখতে দিন পাঁচেক সময় হাতে রাখতেই হবে৷
ছবি: picture-alliance/imagebroker/Siepmann
আইল্যান্ড
একদিনে বছরের চারটি মৌসুম দেখা কি সম্ভব? আপাত দৃষ্টিতে অসম্ভব মনে হলেও, আইল্যান্ডে সেটা সম্ভব৷ সাইকলে বা বাইক নিয়ে যারা আইল্যান্ড আসেন, তাদের জন্য এটি আরো সহজ৷ প্রাচীন আমলের ভেড়ার পালের রাস্তা কিংবা কিংবা পাহাড় বাওয়ার পথে গেলেই আইল্যান্ডের অকৃত্রিম সৌন্দর্য বিমোহিত করবে সবাইকে৷
ছবি: picture-alliance/imagebroker/N. Eisele-Hein
স্কটল্যান্ড
উপকূল ধরে এগিয়ে যেতে যেতে, স্কটিশ সৌন্দর্যের আধার খুঁজে পাওয়া যাবে এখানটায়৷ যতদূর চোখ যায়, দিগন্ত জোড়া সবুজ পাহাড়, নিঃসঙ্গ হ্রদ আর নির্বাক পাথর হাতছানি দিয়ে ডাকে৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/P. Cairns
10 ছবি1 | 10
মিশায়েল ক্রাউটব্লাটার ও তাঁর সহকর্মীরা সেখানে আগেই বেশ কয়েকটি পরিমাপ যন্ত্র বসিয়েছিলেন৷ কিন্তু সেগুলি বিকল হয়ে পড়েছে৷ ভালো আবহাওয়ার সুযোগ নিয়ে তাঁরা সেখানে গিয়ে যন্ত্রগুলি মেরামত করতে চান৷ ক্রাউটব্লাটার বলেন, ‘‘ছোট হলেও এই মুহূর্তে এটিই আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফাটল৷ ২০১৪ সালে এখানে ফাটল ধরতে শুরু করে৷ আমার অবস্থান থেকে নীচে ১৫ মিটার চোখে দেখা যাচ্ছে৷ প্রাচীর থেকে দেখলে সেটি ১০০ মিটার গভীর৷ আমরা এমন সব সেন্সর বসিয়েছি, যেগুলি এক মিলিমিটারের একশো ভাগ ফাটল ধরলেও টের পায়৷ কিন্তু হুবহু সেখানেই বাজ পড়ে সেন্সর নষ্ট করে দিয়েছে৷ অন্য একটি সেন্সরও কাজ করছে না৷ আমাদের দেখতে হবে, সেগুলি কীভাবে আবার চালু করা যায়৷’’
পাহাড়ের অন্য দিকেও মিশায়েল ক্রাউটব্লাটারকে নতুন করে পরিমাপের যন্ত্র বসাতে হবে৷ দূরত্ব মাপার এই যন্ত্রগুলি ফাটলে বসালে সেগুলি অতি সূক্ষ্ম পরিবর্তনও শনাক্ত করে বেতার সংকেত পাঠাতে পারে৷ এবার বড় ফাটলেও একই কাজ করার পালা৷ একটি ফাটল এত বেশি ও দ্রুত বড় হচ্ছে, যে তার উপরের প্রান্তটি পেছনদিকে পড়ে গিয়ে পরিমাপের ডাণ্ডা বেঁকিয়ে দিয়েছে৷ তাই ভূতত্ত্ববিদদের সেখানে প্রবেশ করে নতুন করে যন্ত্র ঝোলাতে হবে৷
চিড় ও ফাটল একইসঙ্গে খুলে গেলে আনুমানিক প্রায় দুই লাখ ষাট হাজার ঘন মিটার পরিমাণ পাথর উপত্যকায় আছড়ে পড়বে৷ ভূমিধস বিশেষজ্ঞ হিসেবে মিশায়েল ক্রাউটব্লাটার বলেন, ‘‘সেটা হবে বিশাল এক পরিমাণ৷ এক কিউবিক মিটার মাপের পাথরই রাজপথে যান চলাচল থামিয়ে দেয়৷ এমনটাই বেশি দেখা যায়৷ এখানকার পাথর তার দুই লাখ ষাট হাজার গুণ বড়৷ সেটি পড়লে বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে ধুলার মেঘ সৃষ্টি হবে, চারিদকে ধুলার আস্তরণ পড়বে৷ অনেক সময় ধরে ভাঙার কারণে তীব্র শব্দও শোনা যাবে৷ হয়তো গোটা হর্নবাখ উপত্যকা জুড়ে ধুলার ঝড় ছেয়ে যাবে৷ সেটা হবে বিশাল মাপের এক ঘটনা৷’’
সুইজারল্যান্ডের পিস সেংগালো পাহাড়েও এমন ঘটনাই ঘটেছিল৷