উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা আহরণের একটি খনির পরিধি বাড়াতে জার্মানিতে ঐতিহাসিক একটি গির্জা ভেঙে ফেলা হয়েছে৷ ২০১৩ সালে সাংবিধানিক আদালত এটি ভাঙার অনুমতি দিয়েছিল৷
বিজ্ঞাপন
সোম ও মঙ্গল - এই দুই দিন লেগেছে গির্জাটি ভাঙতে৷ ১৮৯১ সালে এটি নির্মিত হয়েছিল৷ সময় লেগেছিল প্রায় তিন বছর৷
গির্জা ভাঙার প্রতিবাদ জানাতে সোমবার সেখানে জড়ো হয়েছিলেন স্থানীয় কিছু মানুষ ও পরিবেশকর্মী৷ তবে আগে থেকেই সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল৷ অবশ্য বিক্ষোভের কারণে ভাঙার কাজ শুরু হতে পাঁচ ঘণ্টা দেরি হয়৷ পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিনপিসের একটি ব্যানারে লেখা ছিল ‘‘যারা সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে, তারা মানুষকেও ধ্বংস করতে পারে৷''
নর্থরাইন ওয়েস্টফালিয়া রাজ্যের ইমেরাথে সেন্ট লাম্ব্যার্টুস গির্জাটি অবস্থিত ছিল৷ তার পাশে এনার্জি কোম্পানি আরডাব্লিউই-এর একটি কয়লাখনি আছে৷ সেখান থেকে ‘ব্রাউন কোল' বা বাদামি কয়লা, যা লিগনাইট নামেও পরিচিত, উত্তোলন করা হয়৷ খনিটি সম্প্রসারণ করতে ঐ এলাকার বাসিন্দাদের আগেই অন্য এলাকায় সরিয়ে নেয়া হয়েছিল৷
গার্জভাইলারের উন্মুক্ত কয়লা খনি
জার্মানিতে জ্বালানি কোম্পানিগুলোর আগ্রাসনের কারণে রাইনের নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দাদের বাড়ি ছাড়তে হয়েছে৷ গত বছর সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ের ফলে পরিস্থিতি কিছুটা বদলেছে বটে৷ তবে অনেকেই মনে করেন এটা ‘যথেষ্ট নয়’৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অধিকার রক্ষায় সক্রিয় সুপ্রিম কোর্ট
গার্জভাইলারের লিগনাইট খনি নিয়ে মামলা চলেছিল কয়েক বছল ধরে৷ গত বছর জার্মানির কার্লসরুয়েতে অবস্থিত সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয় যে, কয়লা খনিতে কাজ করার ফলে ক্ষতিগ্রস্তরা অবশ্যই অভিযোগ দাখিলের সুযোগ পাবেন এবং তাঁদের সঙ্গে আগেভাগেই পুর্নবাসনের ফয়সালা চূড়ান্ত করতে হবে৷ আদালত অবশ্য একইসঙ্গে কয়লা খনির কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ারও অনুমতি দিয়েছে৷
ছবি: DW/S. Dege
যেভাবে সংগ্রহ করা হয় কয়লা
রাইন অঞ্চলে একটু মাটি খুড়লেই পাওয়া যায় লিগনাইট বা ব্রাউন কয়লা৷ উদ্ভিদ অঙ্গারে পরিণত হওয়ার আগের অবস্থাকে বলা হয় ‘লিগনাইট’৷ এই নরম, বাদামি, কালচে রঙের কয়লা এক ধরনের বিশালাকৃতির খননযন্ত্র ব্যবহার সংগ্রহ করা হয়৷ বিশেষ বেল্ট ব্যবহার করে কয়লার বড় বড় টুকরাগুলো একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে রাখা গুদামে নিয়ে যাওয়া হয়৷ তারপর সেগুলো পুড়িয়ে তৈরি হয় বিদ্যুৎ৷
ছবি: Reuters
শ্রমিকের বদলে যন্ত্র
জার্মানির এই কয়লা খনিতে শ্রমিকের সংখ্যা কম৷ কয়লা তোলার মূল কাজটা করে এ রকম বিশাল আকারের যন্ত্রগুলো৷ আর সেগুলো চালাতে প্রয়োজন হয় মাত্র অল্প কয়েকজন কর্মীর৷
ছবি: pommes.fritz123/flickr cc-by-sa 2.0
পরিবেশ হত্যাকারী
গার্জভাইলার খনির পরিধি ১১৪ বর্গ কিলোমিটার৷ ফ্রিমার্সডর্ফ পাওয়ার প্লান্টের সঙ্গে অবস্থিত খনিটি ইউরোপের দশটি ‘পরিবেশ হত্যাকারী’, মানে ভীষণমাত্রায় পরিবেশ দূষণকারী খনির একটি৷ লিগনাইট কয়লা অন্য যে কোনো জ্বালানি উৎসের চেয়ে বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন করে৷ এরপরও অবশ্য জার্মানির একটি বড় অংশ এ ধরনের কয়লার উপর নির্ভরশীল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নিষ্ফল প্রতিবাদ
উন্মুক্ত এই কয়লাখনি এমন একটি জায়গায় প্রতিষ্ঠা হয়েছে, যেখানে একসময় জনবসতি ছিল৷ তাই শুরুর দিকে এ বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়েছে অনেক৷ ‘ফ্রেন্ডস অফ দ্য আর্থ’ নামের পরিবেশ বিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার (সংক্ষেপে ‘বুন্ড’) শাখা রয়েছে জার্মানিতেও৷ তাদের তৈরি একটি তাঁবুর ছবি এটি৷ জার্মানিতে এভাবে প্রতিবাদ জানানোর পরও কোনো কাজ হয়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ভুতুড়ে শহর
কয়লা খনির আগ্রাসনের শিকার যে গ্রামগুলো, সেগুলো ধীরে ধীরে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়৷ এরকেলেঞ্জ শহরের প্রত্যন্ত জেলা বোর্শেমিখের কথাই ধরুন৷ যাঁরা এখানে থেকে যেতে চান, তাঁদের ওপর মানসিক চাপ বাড়তে থাকে৷ ফলে একসময় সবই চলে যান নিজের আবাস ছেড়ে৷ তাঁদের জন্য বিকল্প বাড়ির ব্যবস্থা করা হয় ঠিকই, কিন্তু নিজের ঘর ছাড়ার ব্যথা তাতে কি কমে?
ছবি: DW/K. Jäger
সবুজ চারণভূমি?
ইমেরাথ গ্রামটি গড়ে উঠেছিল সেই ১২ শতকে৷ কিন্তু ৮২৬তম জন্মদিনে এসে গ্রামটি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়৷ সেখানকার ৪০০ বাসিন্দাকে সরিয়ে আনা হয় ‘নিউ ইমেরাথে’৷ ছবিটি সেখানকারই সবুজ চারণভূমির৷
ছবি: DW/K. Jäger
নির্যাতিত ল্যান্ডস্কেপ
বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর কয়লা উত্তোলনের এই আকাঙ্খা শুধু মানুষকেই তাঁদের নিজ বাসভূমি থেকে সরিয়ে দিচ্ছে না, তাদের অধিগ্রহণকৃত এলাকাতে অন্য কোনো জীবও টিকতে পারছে না৷ জার্মানির নর্থ রাইন ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যের অন্যতম বড় জঙ্গলটি একসময় এখানে ছিল৷ অথচ আজ এই দৃশ্য৷ এখানে আবারো বনায়ন করা হবে, জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ৷ কিন্তু তাতে যে লেগে যাবে কয়েক দশক৷
ছবি: DW/T. Thor
এনার্জি জায়ান্ট
জানা গেছে, ২০২২ সাল নাগাদ পারামাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে সরে আসবে জার্মানি৷ আর তারপর ২০৫০ সাল নাগাদ দেশটির ৮০ শতাংশ বিদ্যুতের উৎস হবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি৷ তবে বর্তমানের প্রচলিত জ্বালানি উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর কার্যক্রম সে’সময় পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
9 ছবি1 | 9
তবে এটি সহজ কাজ ছিল না৷ এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা হয়েছিল৷ পরে জার্মানির সাংবিধানিক আদালত এই বিষয়ে একটি রায় দেয়৷ এতে বলা হয়, কয়লাখনি সম্প্রসারণের পক্ষে বেশিরভাগ মানুষ৷ তাই সম্প্রসারণ পরিকল্পনা এগিয়ে নেয়া যেতে পারে৷ ২০১৩ সালের পর থেকে ঐ গির্জায় আর প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়নি৷
উল্লেখ্য, জার্মানির মোট জ্বালানি চাহিদার প্রায় ৪০ শতাংশ আসে কয়লা থেকে৷ এর মধ্যে ২৫ শতাংশ বাদামি কয়লা বা লিগনাইট, যা বেশি দূষণ ছড়ায়৷
তবে জীবাশ্ম ও পরমাণু জ্বালানির উপর নির্ভরতা কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে জার্মানি৷ ফলে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দ্রুত প্রসার ঘটছে৷
কয়লাখনি সম্প্রসারণে পরিবেশবাদীদের সমালোচনার জবাবে এনার্জি কোম্পানিগুলোর বক্তব্য হচ্ছে, সৌর ও বায়ুশক্তি উৎপাদন যখন কম হবে তখনকার চাহিদা মেটাতে কয়লার ব্যবস্থা রাখতে হবে৷
জেডএইচ/এসিবি (এএফপি, ডিপিএ)
বাংলাদেশের কিছু গির্জা
বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় আছে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের বেশ কিছু গির্জা৷ যীশু খৃষ্টের জন্মোৎসব ‘বড়দিন’ উপলক্ষ্যে এ সব গির্জায় থাকে নানান আয়োজন৷ বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য কিছু গির্জা নিয়ে এ ছবিঘর৷
ছবি: bdnews24.com
আর্মেনিয়ান গির্জা
পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় অবস্থিত প্রাচীন গির্জা৷ আর্মেনীয়রা সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরুর পর এ গির্জাটি নির্মিত হয়েছিল ১৭৮১ খ্রিষ্টাব্দে৷ গির্জাটি লম্বায় সাড়ে ২৭ ফুট৷ এর পাশেই ছিল একটি ঘড়িঘর৷ এটি নির্মাণ করেছিলেন জোহানস কারু পিয়েতে সার্কিস৷ ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে ঘড়িঘরটি ভেঙে যায়৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
সেন্ট থমাস চার্চ
ঢাকার পুরোনো গির্জাগুলির মধ্যে অন্যতম একটি সেন্ট থমাস চার্চ৷ শাঁখারি বাজরের পূর্ব পাশে এবং বাহাদুর শাহ পার্কের উত্তর পাশে অবস্থিত এটি৷ ১৮১৯ সালে ঢাকা জেলের কয়েদিদের শ্রমের বিনিময়ে নির্মিত হয়েছেল এ গির্জা৷ প্রধান আর্কষণ হলো চূড়ায় অবস্থিত বড় আকারের একটি ঘড়ি৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
হোলি রোজারিও চার্চ
রাজধানীর ফার্মগেইটের কাছেই তেজগাঁও এলাকায় হোলি রোজারিও চার্চ৷ নতুন এবং পুরোনো, দু’টি গির্জা এখানে আছে৷ পুরোনোটি ১৬৭৭ সালে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন পর্তুগিজরা৷ আর নতুনটি তৈরি করা হয় ১৯৯৭ সালে৷ এটি ক্যাথলিক চার্চ৷
ছবি: bdnews24.com
সেন্ট মেরিস ক্যাথিড্রাল
ঢাকার ১ নং কাকরাইল সড়কে অবস্থিত সেন্ট মেরিস ক্যাথিড্রাল গির্জা৷ এটি নির্মিত হয়েছিল ১৯৫৬ সালে৷ বড়দিন উপলক্ষ্যে এ গির্জাটি সাজানো হয় আকর্ষণীয়ভাবে৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
সেন্ট সিকোলাস চার্চ
গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার নাগরী গ্রামে সাধু নিকোলাসের গির্জা৷ ১৬৬৩ সালে নির্মিত হয়েছিল৷ এখানকার সবচেয়ে পুরোনো যে গির্জা ভবনটি আছে, সেটির নির্মাণ কাল ১৬৯৫ সাল৷ এরপরে বেশ বড় আকারে আরেকটি গির্জা ভবন তৈরি করা হয় ২০০৯ সালে৷ ভবনের সামনে স্থাপন করা হয়েছে হস্ত প্রসারিত যীশুর দণ্ডায়মান মূর্তি৷ এই এলাকায় আরও একটি গির্জা আছে, নাম সেন্ট অ্যান্টোনিস চার্চ৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
অক্সফোর্ড মিশন চার্চ
খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের এ উপসনালয়টি বরিশাল শহরের বগুড়া সড়কে অবস্থিত৷ খোলা প্রান্তরের মাঝে বিশাল আকারের এ গির্জা সহজেই সবার দৃষ্টি কাড়ে৷ গ্রিক স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত গির্জার ভেতর আছে সুবিশাল প্রার্থনা কক্ষ৷ নির্মাণকাল ১৯০০ সাল৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
আওয়ার লেডি অফ দ্য হোলি রোজারিও ক্যাথিড্রাল চার্চ
চট্টগ্রাম শহরের পাথরঘাটা এলাকার বান্ডেল সড়কে অবস্থিত আওয়ার লেডি অফ দ্য হলি রোজারিও ক্যাথিড্রাল চার্চ৷ চট্টগ্রাম শহরের অন্যতম প্রধান এ গির্জাটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৬০০ সালে৷