শীতকাল শেষ হওয়ায় সাতটি কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দিয়েছে জার্মানি৷ উৎপাদক প্রতিষ্ঠান আরডাব্লিউই ও এলইএজি রোববার এই তথ্য দিয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা করার পর রাশিয়ার গ্যাসের উপর নির্ভরতা কমাতে চেয়েছে জার্মানি৷ তাই শীতের সময় গ্যাস সংকটের প্রভাব কমাতে সরকার বন্ধ হয়ে যাওয়া পাঁচটি কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করেছিল৷ আর বাকি দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধের সময়সীমা শেষ হয়ে যাওয়ার পরও চালু রাখা হয়েছিল৷
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমাতে জার্মানি কয়লার উপর নির্ভরতা কমানোর পরিকল্পনা করেছে৷ কিন্তু ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা শুরু করলে জার্মানিসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশ রাশিয়ার গ্যাসের উপর নির্ভরতা কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়৷ এতে করে জ্বালানির মূল্য বাড়া শুরু করেছিল৷ এর সমাধান হিসেবে জার্মানি কিছু কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানো ও বন্ধ থাকা বিদ্যুৎকেন্দ্র চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল৷
বন্ধ হলো জার্মানির ১৫০ বছর পুরোনো কয়লা খনি
ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে জার্মান সরকার প্রসপার-হানিয়েল নামে ১৫০ বছরের পুরোনো কয়লার খনিটিও বন্ধ করে দিয়েছে৷ এর মাধ্যমে বন্ধ হলো জার্মানির সর্বশেষ কয়লা খনিটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Stratenschulte
আর হবে না ‘কালো সোনা’ উৎপাদন
ক্রিসমাসের ঠিক তিন দিন আগে বন্ধ হয়ে গেল খনিটি৷ শেষ হলো এক সময়ের জার্মানির বিখ্যাত ‘কালো সোনা’ উৎপাদন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Seidel
কালো সোনা
উত্তোলনের পর ছবির এ টাওয়ারটির পাশে জমা রাখা হতো কয়লা৷ তারপর এখান থেকে রেলগাড়িতে করে নিকটবর্তী বন্দরে পাঠানো হতো৷ উচ্চমানসম্পন্ন হওয়ায়, জার্মান কয়লার খ্যাতি ছিল বিশ্ব জুড়েই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Weihrauch
শক্ত বন্ধন
এ কয়লার খনির শ্রমিকরা শুধুমাত্র ভালো বেতনই পেতেন না, তাঁদের প্রতি সম্মানও দেথানো হতো যথেষ্ট৷ খনিটিতে কর্মরত শ্রমিকদের মধ্যেও ছিল শক্তাশালী বন্ধন, যেন একে অপরের আত্মা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Heyder
কর্মক্ষেত্রেই আবাস
কয়লা উত্তলোনকারী প্রতিষ্ঠানটি কর্মরত শ্রমিকের জন্য খনিটির পাশেই তৈরি করে দিয়েছিল বসবাসের জায়গা৷ আবাসগুলোর সামনে ছিল প্রশস্ত বাগান৷ সেখানে শ্রমিকরা মুরগি ও শুকর পালন করতে পারতেন৷ এমনকি কবুতর পালনের জন্যও ছিল ভালো ব্যবস্থা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Schulte
ছিল ভিনদেশী সহকর্মীও
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দক্ষিণ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ও তুরস্ক থেকে কর্মীরা এ খনিটিতে শ্রমিক হিসেবে যোগদান করতে থাকে৷ ফলে এটি হয়ে ওঠে বহু-সংস্কৃতির একটি কেন্দ্রস্থল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
হুমকির মুখে পরিবেশ
গত কয়েক দশক ধরেই কয়লা খনির এ অঞ্চলটির বায়ু দূষিত হয়ে উঠছিল৷ এখানকার গাছপালার উপর এ খনিটির খারাপ প্রভাব পড়তে শুরু করে৷
ছবি: Getty Images/L. Schulze
দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব
কয়লা খনিটির প্রভাব এতই মারাত্বক ছিল যে, কয়লা উত্তোলন সাময়িকভাবে বন্ধ করেও এর বিরূপ প্রভাব থেকে নিস্তার পাওয়া যাচ্ছিল না৷ কয়লা উত্তোলনের জন্য মাটি খননের ফলে যান চলাচলের রাস্তার মারাত্বক ক্ষতি হয়৷
ছবি: Imago/J. Tack
চিরস্থায়ী সমস্যা?
গত ১৫০ বছরে এলাকাটির বেশ কিছু অংশ প্রায় ২৫ মিটার পানির নিচে তলিয়ে গেছে৷ খনি থেকে যদি কয়লা সরিয়ে নেয়া হয়, তাহলে পুরো এলাকাটি প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেবে৷ এ অবস্থা ঠেকাতে বড় পাম্পের মাধ্যমে অবিরাম পানি নিষ্কাশন করা প্রয়োজন৷
ছবি: Imago/blickwinkel
কী হবে এখানে?
কয়লা খনির বড় টাওয়ারগুলোর বেশিরভাগ অংশই ইতিমধ্যে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে৷ বিশাল অংশ জুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে বিনোদন কেন্দ্র৷