জার্মানির কোলন শহরের কাছে বার্ঘাইমে এই প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন শ্রমিকরা৷ ‘‘ভালো কাজ ছাড়া ভালো পরিবেশ হয় না! আমরা আমাদের কর্মের সুরক্ষা চাই৷'' এই ব্যানার নিয়ে ট্রেড ইউনিয়নগুলোর আয়োজনে এই সমাবেশ হয়৷
ট্রেড ইউনিয়ন আইজি বিসিই'র প্রেসিডেন্ট মিখাইল ফাসিলিয়াডিস নিজেই গত গ্রীষ্ম থেকে কয়লা কমিশনের সদস্য ছিলেন৷ তিনি অভিযোগ করেন, কমিশন হামবাখ বন রক্ষায় আন্দোলনরত পরিবেশবাদীদের প্রতি যতটা সংবেদনশীলতা দেখিয়েছে ততটা এই খনি শ্রমিকদের প্রতি দেখায়নি৷
স্থানীয় একটি পত্রিকায় দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘বন সুরক্ষার আন্দোলনকারীদের প্রতি সর্বোচ্চ সহমর্মিতা দেখানো হয়েছে৷ কিন্তু শ্রমিকদের সুরক্ষার প্রতি অবহেলা করা হয়েছে৷''
তিনি বলেন, ‘‘জার্মানিতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের সঙ্গে প্রায় এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান জড়িত৷''
আগামী কয়েক সপ্তাহে কমিশন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো কীভাবে আস্তে আস্তে বন্ধ করা হবে তার পরিকল্পনা তৈরি করবে৷ এতে শুধু খনি শ্রমিক নন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের সঙ্গে জড়িতরাও চাকরি হারাবেন৷
বন্ধ করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পুনর্গঠনে এ বছরের শেষ নাগাদ প্রায় দেড় হাজার কোটি ইউরো খরচের হিসেব দেয়া হয়েছে৷
লন্ডন ভিত্তিক ‘ওয়ার্ল্ড এনার্জি কাউন্সিল’ বা ডাব্লিউইসি-এর ‘বিশ্ব জ্বালানি সম্পদ ২০১৬’ প্রতিবেদনে কোন জ্বালানি কী পরিমাণ ব্যবহত হচ্ছে তার হিসেব প্রকাশ করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpaলন্ডন ভিত্তিক ‘ওয়ার্ল্ড এনার্জি কাউন্সিল’ এর ‘বিশ্ব জ্বালানি সম্পদ ২০১৬’ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হওয়া জ্বালানি হচ্ছে তেল৷ মোট ব্যবহৃত জ্বালানির প্রায় ৩২.৯ শতাংশই হচ্ছে তেল৷ আর তেল উৎপাদনে শীর্ষ তিন দেশ হচ্ছে সৌদি আরব (বছরে ৫৬৯ মিলিয়ন টন), যুক্তরাষ্ট্র (বছরে ৫৬৭ মিলিয়ন টন) ও রাশিয়া (বছরে ৫৪১ মিলিয়ন টন)৷
ছবি: picture-alliance/dpa২৯ শতাংশ নিয়ে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হওয়া জ্বালানির তালিকায় তেলের পরেই আছে কয়লা৷ তবে নব্বই দশকের পর ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো কয়লা উৎপাদন কমেছে৷ বিশ্বের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রায় ৪০ ভাগ কাজে কয়লা ব্যবহৃত হয়৷ শীর্ষ তিন উৎপাদনকারী দেশ হচ্ছে চীন (বছরে ২ দশমিক ৬২ হাজার এমটিওই), যুক্তরাষ্ট্র (৫৬৯ এমটিওই) ও ভারত (৪৭৪ এমটিওই)৷ উল্লেখ্য, এমটিওই মানে হচ্ছে এক মিলিয়ন মেট্রিক টন অফ ওয়েল ইকুইভ্যালেন্ট৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Roland Weihrauchতিন নম্বরে আছে গ্যাস (প্রায় ২৪ শতাংশ)৷ আর বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত জ্বালানির তালিকায় কয়লার (৪০ শতাংশ) পরে আছে গ্যাস (২২ শতাংশ)৷ শীর্য তিন গ্যাস উৎপাদনকারী দেশ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র (বছরে ৬৯১ এমটিওই), রাশিয়া (বছরে ৫১৬ এমটিওই) ও ইরান (বছরে ১৭৩ এমটিওই)৷
ছবি: Imagoনবায়নযোগ্য জ্বালানির বিভিন্ন উৎসের মধ্যে পানি বা জলবিদ্যুতের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি৷ ২০১৫ সালে উৎপাদিত মোট নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের প্রায় ৭১ শতাংশই এসেছে জলবিদ্যুৎ থেকে৷ আর বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হওয়া জ্বালানির তালিকায় তেল (৩৩ শতাংশ), কয়লা (২৯ শতাংশ) ও গ্যাসের (২৪ শতাংশ) পরেই আছে পানিবিদ্যুৎ (প্রায় ৭ শতাংশ)৷ শীর্ষ তিন উৎপাদনকারী চীন (বছরে ৯৬.৯ এমটিওই), ব্রাজিল (৩২.৯ এমটিওই) ও ক্যানাডা (৩২.৩ এমটিওই)৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Jourdierবিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হওয়া জ্বালানির তালিকায় পাঁচ নম্বরে আছে এটি (৪ দশমিক ৪ শতাংশ)৷ অর্থাৎ নবায়নযোগ্য জ্বালানির একটি উৎস পানিবিদ্যুতের (প্রায় ৭ শতাংশ) চেয়েও এর ব্যবহার কম৷ ইউরেনিয়াম উৎপাদনে শীর্ষ তিন দেশ হচ্ছে কাজাখস্তান (বছরে ২২ দশমিক ৮ হাজার টন), ক্যানাডা (৯ দশমিক ১৪ হাজার টন) ও অস্ট্রেলিয়া (৪ দশমিক ৯৮ হাজার টন)৷
ছবি: Kerry Skyringবিশ্বের মোট বিদ্যুতের ৭ শতাংশ আসে বায়ুবিদ্যুৎ থেকে৷ ২০১৫ সালে ৪৩২ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছিল৷ এর মধ্যে ৪২০ গিগাওয়াট অনশোর (ভূমি) ও ১২ গিগাওয়াট অফশোর, অর্থাৎ সাগরে বসানো টারবাইনের মাধ্যমে উৎপাদিত হয়৷ বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হওয়া জ্বালানির তালিকায় ছয়ে আছে এটি (১.৪৪ শতাংশ)৷ শীর্ষ তিন বায়ুশক্তি উৎপাদনকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র (বছরে ১৫.৮ এমটিওই), চীন (১৩.৬ এমটিওই) এবং জার্মানি (৪.৯৩ এমটিওই)৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Vaughn২০১৫ সালে সারা বিশ্বে মোট সৌরশক্তি উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ২২৭ গিগাওয়াটে৷ ফলে মোট বিদ্যুতের এক শতাংশ এসেছিল সৌরশক্তি থেকে৷ সৌরশক্তি উৎপাদনে শীর্ষ তিন দেশ চীন (৪৩ দশমিক ১ গিগাওয়াট), জার্মানি (৩৯ দশমিক ৬ গিগাওয়াট) ও জাপান (৩৩ দশমিক ৩ গিগাওয়াট)৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Guptaজিওথার্মাল, ই-স্টোরেজ, মেরিন এনার্জি, বর্জ্য থেকে শক্তি, বায়োএনার্জি (যেমন বায়োমাস) ইত্যাদি সহ আরও অনেক উৎস দিয়েও জ্বালানি উৎপাদন করা হয়ে থাকে৷ ছবিতে আইসল্যান্ডের একটি জিওথার্মাল পাওয়ার স্টেশন দেখা যাচ্ছে৷ ডাব্লিউইসি-র প্রতিবেদনটি পড়তে ক্লিক করুন উপরের ‘+’ চিহ্নে৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/McPHOTO আইজি বিসিই'র একজন সদস্য ফ্রিটৎস টাপফর্ন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের কাছে আমাদের কর্মসংস্থানই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ৷ আমরা এটা নিয়েই চিন্তিত৷ জ্বালানি কোত্থেকে আসছে, এটা আমাদের চিন্তার বিষয় নয়৷''
এদিকে, বার্ঘাইমে এদিন পরিবেশবাদীরাও উপস্থিত হয়েছিলেন৷ সম্প্রতি হামবাখ বন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার প্রতিবাদে এবং জার্মানির মাইনিং কোম্পানি আরডাব্লিউই'র সেখানে তাদের খনির পরিধি বাড়ানোর চেষ্টা বন্ধে মাসব্যাপী আন্দোলন করেন তাঁরা৷
‘‘আমরা আইজি বিসিই'র বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছি না৷ আমরা এখানে এসেছি এটা বলতে যে, কয়লা পোড়ানো বন্ধ করতে হবে এবং পরিবেশ বাঁচাতে হবে,'' ডিডাব্লিউকে বলেন ওলগা পেরোফ নামের এক পরিবেশবাদী৷
‘‘আমরা শ্রমিকদের শঙ্কা বুঝতে পারি৷ কিন্তু কয়লা বন্ধ হতেই হবে৷ ১৯৯০ সালে কয়লাভিত্তিক এক লাখ চাকুরি ছিল৷ এখন বাকি আছে মাত্র ২০ হাজার৷ সুতরাং সামাজিকভাবেই আমাদের এটা ত্যাগ করতে হবে,'' যোগ করেন তিনি৷
জেডএ/এসিবি (রয়টার্স, ডিপিএ)