করোনার ধাক্কা সামলে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আবার গতি পাচ্ছে৷ কিন্তু তেল, গ্যাসের দাম বাড়ায় এবং শীতকাল আসায় অনেকদিন পর বিভিন্ন দেশে কয়লার চাহিদা বেড়েছে৷
বিজ্ঞাপন
স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে সদ্য সমাপ্ত জলবায়ু সম্মেলনের চুক্তিপত্রে কয়লার ব্যবহার ‘একেবারে শেষ' করার পরিবর্তে ‘কমানোর' কথা বলা হয়েছে৷ যদিও সম্মেলন শুরুর আগে সম্মেলনের প্রধান অলোক শর্মা কয়লাকে ‘ইতিহাসে জায়গা' করে দেয়ার আশা করেছিলেন৷ চুক্তিপত্রে এমন ভাষার ব্যবহার নতুন করে কয়লা উৎপাদনের জন্য একটি সবুজ সংকেত বলে সেই সময় মন্তব্য করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক পরিবহনমন্ত্রী ম্যাট ক্যানাভ্যান৷
গ্লাসগো সম্মেলন শুরুর আগে ২০৩০ বা ২০৪০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী কয়লার ব্যবহার বন্ধ করার বিষয়ে একধরনের ঐকমত্য দেখা গিয়েছিল৷ তবে বিশেষজ্ঞরা এখন স্বীকার করছেন, সম্মেলনের চুক্তিপত্রে কয়লার ব্যবহার কমানোর কথা ঐ লক্ষ্য পূরণে পানি ঢেলে দিতে পারে৷
অবশ্য চুক্তিপত্রের ভাষাকে কয়লার পুনর্জাগরণ বলতে নারাজ জলবায়ু থিংক ট্যাংক কার্বন ট্র্যাকারের গবেষণা প্রধান ক্যাথেরিনা হিলেনব্রান্ড ফন ডেয়ার নাইয়েন৷ বর্তমানে কয়লার চাহিদা আবার বাড়লেও সেটি বেশিদিন স্থায়ী হবে না বলে মনে করেন তিনি৷ নবায়নযোগ্য জ্বালানির দাম কম হওয়ায় বিশ্বব্যাপী কয়লা প্ল্যান্ট পরিচালনা আর লাভজনক হতে পারছে না বলে জানান তিনি৷
বার্লিনভিত্তিক থিংক ট্যাংক ক্লাইমেট অ্যানালিটিক্সের গবেষক গৌরভ গান্তিও ফন ডেয়ার নাইয়েনের সঙ্গে একমত৷ তিনি মনে করেন, কয়লার বর্তমান চাহিদা বেশিদিন থাকবে না৷
করোনার পর অর্থনীতি পরিচালনায় চীন ও ভারত কয়লার উপর নির্ভর করলেও এটা সত্য যে ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তির পর কয়লাচালিত নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা ৭৬ শতাংশ কমেছে৷
জলবায়ু বিক্ষোভের ১০টি শক্তিশালী স্লোগান
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে বিশ্ববাসী, বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা সচেতন হয়ে উঠছেন৷ ফলে এটি মোকাবিলার পর্যাপ্ত উদ্যোগ না নেয়ার প্রতিবাদে শামিল হচ্ছেন তারা৷
ছবি: AFP/Getty Images/S. Khan
‘জলবায়ুর জন্য স্কুল ধর্মঘট’
২০১৮ সালের নভেম্বরের কোনো এক শুক্রবারে সুইডেনের সংসদের সামনে তোলা এই ছবিটি এখন আইকনিক ছবিতে পরিণত হয়েছে৷ ১৫ বছর বয়সি স্কুল শিক্ষার্থী গ্রেটা টুনব্যার্গের হাতে ধরা কাগজে লেখা ‘জলবায়ুর জন্য স্কুল ধর্মঘট’৷ প্রতি শুক্রবার তিনি স্কুলে না গিয়ে এই কাজ করতেন৷ গ্রেটার আন্দোলন এখন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে৷
ছবি: picture-alliance/DPR/H. Franzen
‘ধরিত্রী বললো আমিও’
২০১৭ সালে জার্মানির বার্লিনে কয়লাবিরোধী এক বিক্ষোভের স্লোগান ছিল এটি৷ নারীদের যৌন হয়রানির প্রতিবাদের আন্দোলন হচ্ছে ‘মিটু’৷
ছবি: Getty Images/S. Gallup
‘আমরা টাকা খেতে পারি না’
২০১৯ সালের এপ্রিলে লন্ডনের বাণিজ্যিক এলাকায় বিক্ষোভের ছবি এটি৷ আয়োজক ছিল ‘এক্সটিঙ্কশন রেবেলিয়ন’ নামের পরিবেশবাদী এক সংগঠন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/NurPhoto/W. Szymanowicz
‘সীমান্ত পোড়াও... কয়লা নয়’
জার্মানির হামবাখে কয়লা খনির কারণে পাশের বনজঙ্গলের ক্ষতি হচ্ছিল৷ তার প্রতিবাদে গতবছর অক্টোবরে বিক্ষোভ হয়৷ এই স্লোগানের মধ্য দিয়ে কয়লাবিরোধী বার্তার সঙ্গে রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অর্থ জুড়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Young
‘আপনারা বড়দের মতো আচরণ না করলে আমরা করবো’
সুইডিশ শিক্ষার্থী গ্রেটা টুনব্যার্গের উদ্যোগে শুরু হওয়া ‘ফ্রাইডেস ফর ফিউচার’ আন্দোলনের অংশ এটি৷ চলতি বছরের ১৫ মার্চ হংকংয়ে অনুষ্ঠিত স্কুল শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের ছবি এটি৷
ছবি: AFP/Getty Images/A. Wallace
‘অস্বীকার করা কোনো নীতি নয়’
এই ছবিটিও চলতি বছরের ১৫ মার্চের৷ তোলা হয়েছে সাউথ আফ্রিকার কেপ টাউনে৷ এই স্লোগান ছাড়াও ‘অস্বীকার করা বন্ধ করুন! আমাদের পৃথিবী মরে যাচ্ছে’ শীর্ষক স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/N. Manie
‘আপনাদের হাতে আমাদের ভবিষ্যৎ’
বার্লিনে প্রতিবাদের সময় বিক্ষোভকারীরা প্ল্যাকার্ড ছাড়াও নিজেদের শরীরে নানান স্লোগান লিখে নিয়ে এসেছিলেন৷
ছবি: AFP/Getty Images/T. Schwarz
‘পরিণতি আছে’
স্লোগানটি ভালো করে খেয়াল করুন৷ ইংরেজি ‘কনসেকোয়েন্স’ শব্দটি লেখার সময় প্রথম দুই বর্ণ ‘সি’ আর ‘ও’ এর পর ‘এন’ লেখার আগে ছোট্ট করে ‘টু’ বসানো হয়েছে, যার অর্থ হচ্ছে কার্বন ডাই-অক্সাইড৷ জার্মানির আখেন শহরে গত জুনের প্রতিবাদের ছবি এটি৷
ছবি: DW/G. Rueter
‘প্ল্যানেট বি নেই’
২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনে জাতিসংঘের সেই সময়কার মহাসচিব বান কি-মুন বলেছিলেন, ‘‘প্ল্যান বি বলে কিছু নেই, কারণ, আমাদের প্ল্যানেট বি নেই৷’’ এরপর থেকে এই বার্তাটি বিক্ষোভকারীদের কাছে জনপ্রিয় স্লোগান হয়ে ওঠে৷
ছবি: Getty Images/A. Berry
‘এখন বিক্ষোভ কর, নইলে পরে সাঁতার কাটতে হবে’
জার্মানির হামবুর্গে ১ মার্চের এই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন গ্রেটা টুনব্যার্গ৷ তার কয়েকদিন আগে ডাভোস ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতাদের তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমি চাই আপনার আতঙ্কিত হোন৷ আমি চাই আমি প্রতিদিন যে ভয় অনুভব করি, আপনারাও সেটা পান৷ এবং তারপর আমি চাই আপনারা উদ্যোগ নিন৷’’
ছবি: Reuters/M. Mac Matzen
10 ছবি1 | 10
২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী কয়লার বিনিয়োগের ৭৫ শতাংশই করেছে চীন৷ তবে গত সেপ্টেম্বরে তারা জানিয়েছে, নিজ দেশের বাইরে তারা আর কয়লায় বিনিয়োগ করবে না৷
গ্লাসগো সম্মেলন থেকে কয়লার ব্যবহার বন্ধের বিষয়ে শক্ত কোনো অঙ্গীকার না এলেও বিভিন্ন দেশ এক্ষেত্রে তাদের আগের লক্ষ্যমাত্রা কয়েকবছর এগিয়ে আনছে৷ যেমন ইউরোপের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কয়লার ব্যবহার করা দেশ জার্মানির নতুন সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে কয়লার ব্যবহার বন্ধ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে৷ আগের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৩৮ সালের মধ্যে কয়লার ব্যবহার বন্ধ করতে চেয়েছিল দেশটি৷
চলতি বছর জার্মানিতে কয়লার চাহিদা বেড়েছে৷ এর একটি কারণ বায়ু ও সৌরশক্তি উৎপাদনের জন্য অনুকূল আবহাওয়ার অভাব৷ তবে ২০১০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে কয়লার ব্যবহার অর্ধেক কমিয়েছে জার্মানি৷
চলতি সপ্তাহে পর্তুগাল জ্বালানি উৎপাদনে কয়লার ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে৷ লক্ষ্যমাত্রার দুই বছরে আগেই কাজটি করলো তারা৷
অনেক বেশি জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করা আরেক দেশ ইউক্রেন ২০৩৫ বা ২০৪০ সালের মধ্যে কয়লার ব্যবহার বন্ধ করতে চায়৷
সাউথ আফ্রিকার মোট জ্বালানির ৯০ শতাংশ আসে কয়লা থেকে৷ ফলে আফ্রিকার সবচেয়ে বেশি কার্বন নির্গত করা দেশ তারা৷ জার্মানিসহ ইইউর কয়েকটি দেশ ও যুক্তরাষ্ট্র সাউথ আফ্রিকাকে কয়লার ব্যবহার থেকে বেরিয়ে আসতে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে৷