জার্মানির চ্যান্সেলর ‘ক্লাইমেট চ্যান্সেলর' হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন৷ এই পরিচিতি ভবিষ্যতে কতটা যৌক্তিক হবে তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে৷ কেননা, জার্মানি কার্বন নির্গমন রোধের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনের পর এক কঠিন পরীক্ষার মধ্যে পড়েছেন জার্মান চ্যান্সেল আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ সম্ভাব্য যে জোট সরকার গড়ার পথে তিনি রয়েছেন, তাতে একদিকে রয়েছে পরিবেশবান্ধব দল গ্রিন পার্টি এবং অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের দল হিসেবে পরিচিত এফডিপি৷ এই দুই সম্ভাব্য জোটসঙ্গীর মধ্যে অমিল অনেক৷ বিশেষ করে পরিবেশের ইস্যুতে গ্রিন পার্টি যতটা কঠোর উদ্যোগ নেয়ার পক্ষে, এফডিপি ততটা নয়৷ বরং দলটি দেখছে বড় বড় কর্পোরেটদের স্বার্থ৷
এ অবস্থায় কার্বন নির্গমন কমানোর যে লক্ষ্যমাত্রায় জার্মানি অতীতে সম্মত হয়েছিল, তা পূরণ হবে না বলেই মনে হচ্ছে৷ রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ম্যার্কেল জলবায়ু পরিবর্তন রোধে বিশ্ব মঞ্চে বড় বড় বুলি আওড়ালেও জোট সরকার গড়তে গিয়ে সম্ভবত তাঁকে ব্যবসা এবং রাজনীতির স্বার্থে বেশ কিছুটা ছাড় দিতে হবে৷ এমন শঙ্কা থেকেই জার্মানির সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘ডি সাইট' ম্যার্কেলের নীতির সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতির মিল রয়েছে বলে মনে করছে৷ পার্থক্য এই যে, ট্রাম্প সততার সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন, লিখেছে পত্রিকাটি৷
ইউরোপের সবচেয়ে বড় কয়লা খনি বিরোধী প্রতিবাদ
কপ২৩-এর ঠিক আগে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে কয়লা খনি বিরোধী কর্মীরা জার্মানির হাম্বাখ কয়লা খনিতে প্রতিবাদ কর্মসূচি করেন৷ তাঁদের কথায়, কয়লার ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব কমিয়ে আনা যাবে না৷
ছবি: DW/Wecker/Banos Ruiz
কয়লা ত্যাগ করুন – এখনই !
বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে কয়লা ব্যবহারের বিরোধীতা জানিয়ে কপ২৩-এর ঠিক একদিন আগে, হাজার হাজার বিক্ষোভকারী সমবেত হন৷ বিক্ষোভকারীদের সবাই সেসময় সাদা পোশাক পরে প্রায় ১০ কিলোমিটার হেঁটে হাম্বাখ কয়লা খনি পর্যন্ত যান৷
ছবি: DW
ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ করুন
ইউরোপে সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণকারী কয়লা খনি হলো হাম্বাখ৷ এর সম্প্রসারণের কারণে ইতিমধ্যে ১ হাজার বছরের পুরনো বন কেটে ফেলা হচ্ছে৷ পরিবেশবাদীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে যখন বন শহরে সম্মেলন চলছে তখন সেখান থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে এই খনি থাকাটা খুবই হাস্যকর একটা ব্যাপার৷
ছবি: DW
শান্তিপূর্ণ লড়াই
বিপুল সংখ্যক পুলিশের উপস্থিতি সত্ত্বেও, রবিবারের প্রতিবাদ কর্মসূচি ছিল একেবারে শান্তিপূর্ণ৷ রঙিন ব্যানার, চেহারায় নানা অংকন, কেউ কেউ আবার গিটার এনে গানও করেছেন দিনের প্রথম ভাগে৷
ছবি: DW/Wecker/Banos Ruiz
জীবনের ঝুঁকিতে দৃষ্টি আকর্ষণ
বিক্ষোভকারীরা খনির কাছাকাছি পৌঁছালে পুলিশ কর্মকর্তারা চারপাশ থেকে তাঁদের ঘিরে রাখে৷ স্পিকারে তারা ঘোষণা করে যে, বিক্ষোভকারীরা অন্যের ব্যক্তিগত জায়গায় ঢুকে পড়েছেন৷ আর তাতে নাকি নিরাপত্তা সংক্রান্ত জটিলতা হতে পারে৷
ছবি: DW
পালাও
খনিরা কাছে যেতেই বিক্ষোভকারীদের দীর্ঘ লাইনে হঠাৎ করেই কেউ কেউ ফুঁসে ওঠেন৷ অনেকেই চিৎকার ও দৌড়াতে শুরু করে দেন৷
ছবি: DW
একটি একদিনের সাফল্য
বিক্ষোভকারীদের মতে, তাঁদের দাবি তুলে ধরার সবচেয়ে ভালো উপায়ই ছিল এই কয়লা খনির চারপাশ অবরোধ করা৷ এতে করে কিছু সময়ের জন্য হলেও তো খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ ছিল! তাই কিছুক্ষণের এই বিরতিকে বিরাট সাফল্য হিসেবে দেখছেন বিক্ষোভকারীরা৷
ছবি: DW
কয়লা: আর না...
বিক্ষোভকারীরা বলছেন, বিদ্যুতের জন্য কয়লার ওপর এতটা নির্ভরশীলতা ইউরোপের আর কোথাও নেই৷ ‘কয়লা ত্যাগ করুন, জলবায়ু রক্ষা করুন’ লেখা ব্যানারও সেদিন তাই চোখে পড়ে৷
ছবি: DW
শেষ পর্যন্ত
রবিবারের প্রতিবাদ কর্মসূচির শেষ দিকে বিক্ষোভকারীদের দু’টি দল মূল দল থেকে তাঁদের নেতাদের নিয়ে ভাগ হয়ে যায়৷ ছবিতে নিশ্চয় দেখতে পাচ্ছেন পুলিশ তাঁদের প্রতিরোধ করতে কীভাবে প্রস্তুত ছিল৷
ছবি: DW/Wecker/Banos Ruiz
এখনই সময়
একদিনের জন্য হাম্বাখ খনি বন্ধ করে দিতে সফল হন বিক্ষোভকারীরা৷ তবে এটা দেখতে হবে যে শেষ পর্যন্ত রাজনীতিবিদরা ‘কপ২৩’ সম্মেলনে কয়লা খনি নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী কোনো পদক্ষেপ নেন কিনা৷
ছবি: DW/Wecker/Banos Ruiz
9 ছবি1 | 9
এদিকে শনিবার ম্যার্কেল বলেছেন, জার্মানি এবং অর্থনৈতিকভাবে উন্নত অন্যান্য দেশগুলোর বরফ গলা, উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং আরো বিরূপ প্রাকৃতিক দুর্যোগ কমাতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে৷ সাপ্তাহিক পডকাস্টে এ কথা বলেন তিনি৷ তবে ম্যার্কেল একইসঙ্গে জানিয়েছেন যে, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বিষয়াদি রক্ষার মানে এই নয় যে, জার্মানির মূল শিল্পখাতের উপর বড় আঘাত হানতে হবে৷ যদি বিভিন্ন শিল্পকারখানা জার্মানি থেকে দুর্বল পরিবেশ আইন আছে এমন সব দেশে চলে যায়, তাহলে তা বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন রক্ষায় তেমন কোনো ভূমিকা রাখবে না বলে মনে করেন তিনি৷
ম্যার্কেলের সিডিইউ দলের সম্ভাব্য অন্যতম জোটসঙ্গী গ্রিন পার্টি নির্বাচনের আগে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলসেগুলো থেকে কিছুটা সরে আসছে বলে শোনা যাচ্ছে৷ দলটি জোট সরকারে গেলে সঙ্গে সঙ্গে সবচেয়ে পরিবেশ দূষণকারী বিশটি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ এবং ২০৩০ সালের মধ্যে কয়লা এবং জীবাশ্ম জ্বালানীভিত্তিক গাড়ি বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল৷ কিন্তু গত সপ্তাহ সম্ভাব্য জোট সরকারের অন্যান্য দলগুলোর চাপে সময়সীমা সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতিগুলো থেকে সরে এসেছে দলটি৷
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমনের হার ১৯৯০ সালের তুলনায় চল্লিশ শতাংশ কমিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছিল জার্মানি৷ কিন্তু বর্তমান যে অবস্থা তাতে ৩২ শতাংশের বেশি কমাতে পারবে না দেশটি৷ ফলে ২০৩০ সালের ৫৫ শতাংশ এবং ২০৫০ সাল নাগাদ ৯৫ শতাংশ কার্বন নির্গমন রোধের যে সিদ্ধান্ত দেশটি নিয়েছিল, তাও বাস্তবায়ন কঠিন হবে বলে মনে করা হচ্ছে৷
এআই/এসিবি (এএফপি, ডিপিএ)
পরিবেশবান্ধব জলবায়ু সম্মেলন
জার্মানির বন শহরে চলছে দুই সপ্তাহব্যাপী জলবায়ু সম্মেলন৷ কার্বন নির্গমন কমানোর উপায় নিয়ে আলোচনা করার এই সম্মেলনকে যতটা সম্ভব পরিবেশবান্ধব করতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷
ছবি: DW/A. Setiawan
বিমান পরিবহণ
সম্মেলনে আসা ২০ হাজারের বেশি অংশগ্রহণকারীর অধিকাংশই বিমানে করে জার্মানির বনে এসেছেন৷ অথচ বিমান হচ্ছে কার্বন নির্গমনের একটি বড় উৎস৷ অর্থাৎ অংশগ্রহণকারীরা প্রত্যেকেই পরিবেশের ক্ষতি করে পরিবেশ বাঁচানোর আলোচনা করতে এসেছেন৷ কিন্তু বিমান ছাড়া তো আর বিকল্পও নেই৷ জার্মানি অবশ্য এই ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করেছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Meissner
অফসেট
এটি জলবায়ু সংক্রান্ত একটি ‘টার্ম’৷ কার্বন নির্গমনের ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার একটি উপায় এটি৷ বিমান পরিবহণসহ অংশগ্রহণকারীদের রাতে হোটেলে থাকা, লাইট, ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার, এসব নানা কারণে পরিবেশের যে ক্ষতি হবে তা পুষিয়ে দিতে জার্মানি ‘সার্টিফায়েড এমিশন রিডাকশন’ বা সিইআর ক্রেডিট কিনবে৷ আরও জানতে ক্লিক করুন উপরে (+) চিহ্নে৷
ছবি: DW/H. Kaschel
সিইআর ক্রেডিট
জার্মানির কেনা এই ক্রেডিট ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলোতে জাতিসংঘের ‘ক্লিন ডেভেলপমেন্ট মেকানিজম’ বা সিডিএম-এর অধীনে যেসব প্রকল্প নিবন্ধিত আছে সেখানে ব্যবহৃত হবে৷ সিডিএম সম্পর্কে আরও জানতে ক্লিক করুন উপরে (+) চিহ্নে৷
ছবি: picture alliance/Robert Harding World Imagery
কাগজের ব্যবহার
আগের যে কোনো সম্মেলনের চেয়ে এবার কাগজের ব্যবহার কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে৷ সম্মেলনের তথ্য সংক্রান্ত বেশিরভাগ কাগজপত্র প্রিন্ট না করে ইলেক্ট্রনিক উপায়ে ব্যবহারযোগ্য করা হয়েছে৷ তবে এরপরও কেউ প্রিন্ট চাইলে তাঁকে প্রিন্ট করে দেয়া হচ্ছে৷ তবে সেটা একই পাতার এপাশ-ওপাশ করে৷
ছবি: DW/M. Z. Haque
রিসাইকেল
একেক রকমের ময়লা ফেলার জন্য একেক রকমের ‘ডাস্টবিন’ রাখা হয়েছে৷ সেখানে পাওয়া ময়লা এবং সম্মেলনের জন্য তৈরি করা ব্যানারগুলো রিসাইকেল করে ভবিষ্যতের জলবায়ু সম্মেলনের জন্য পুনরায় ব্যবহারযোগ্য পানির বোতল কিংবা ব্যাগ তৈরির কাজে লাগানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে৷
ছবি: DW/M. Z. Haque
প্লাস্টিক বোতল
এটি ব্যবহৃত প্লাস্টিক বোতল ফেলার জায়গা৷ এ সব বোতল জমা দিয়ে পাওয়া অর্থ ‘নিউ ওয়ার্ল্ড প্রোগ্রাম’-কে দান করা হবে৷ এটি ‘কোকা কোলা ফাউন্ডেশন’ ও ‘গ্লোবাল ওয়াটার চ্যালেঞ্জ’-এর একটি যৌথ উদ্যোগ৷ পানি পানের জন্য প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীকে বিনামূল্যে বার বার ব্যবহারযোগ্য পানির বোতল দেয়া হয়েছে৷
ছবি: DW/M. Z. Haque
হাইড্রোজেন বাস
হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ দিয়ে চলে এই বাস৷ এটা এখনও ব্যয়বহুল ও জটিল এক প্রক্রিয়া৷ তবে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে জার্মান গবেষকরা এই প্রযুক্তিতে কার্যকর করার চেষ্টা করছে৷ জলবায়ু সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের এক জোন থেকে আরেক জোনে নিয়ে যেতে এই বাস ব্যবহৃত হচ্ছে৷
ছবি: DW/A. Setiawan
ইলেকট্রিক গাড়ি
নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে তৈরি বিদ্যুৎ দিয়ে চলছে এই বাস৷ কপ২৩-এ ব্যবহৃত ইলেকট্রিক গাড়িগুলো বেশিভাগই কোরিয়ায় তৈরি৷ ই-কারের জগতে জার্মান গাড়ি নির্মাতারা এখনও কোরিয়া, জাপান ও চীনাদের চেয়ে পিছিয়ে আছে৷
ছবি: DW/A. Setiawan
সাইকেল
পরিবেশবান্ধব এই বাহনেরও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে৷ নেক্সটবাইক কোম্পানির প্রায় ছয়শটি সাইকেল কপ-এ ব্যবহৃত হচ্ছে৷ অংশগ্রহণকারীরা একটি অ্যাপ ডাউনলোড করলে সেখান থেকে একটি পিন পাচ্ছেন৷ সেই পিন দিয়ে যে কোনো সাইকেল খুলে নিয়ে যাতায়াত শুরু করতে পারছেন৷ সেবাটি অবশ্যই বিনামূল্যে৷
ছবি: DW/A. Setiawan
হাইব্রিড বাস
এটি আসলে পুরোপুরি পরিবেশবান্ধব নয়৷ নামই বলে দিচ্ছে যে, এতে ডিজেল ও বিদ্যুৎ দুই-ই ব্যবহৃত হয়৷ অংশগ্রহণকারীদের আনা নেয়ায় এই বাসেরও ব্যবস্থা করছে আয়োজক কর্তৃপক্ষ৷