পোল্যান্ডের কাটোভিৎসে শহরে রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সবচেয়ে বড় কয়লা কোম্পানি৷ আর জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য অন্যতম দায়ী বিভিন্ন কয়লা কোম্পানি৷ সেই কাটোভিৎসেতে সোমবার থেকে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন শুরু হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
‘কনফারেন্স অফ দ্য পার্টিস’ বা কপ নামে পরিচিত জাতিসংঘের এই বার্ষিক আয়োজনের ২৪তম আয়োজন এটি৷ প্রায় দুই সপ্তাহব্যাপী সম্মেলন ১৪ ডিসেম্বর শেষ হওয়ার কথা৷ বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ২০০টি দেশের প্রায় ২৩ হাজার অংশগ্রহণকারী এবার কপ২৪-এ উপস্থিত থাকবেন৷
বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদের এবার সম্মেলনে অংশ নেয়ার কথা থাকলেও অসুস্থতার কারণে তিনি উপস্থিত থাকতে পারছেন না৷
গুতেরেস বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন থেকে বিশ্ব এখনও ‘অনেক দূরে’ আছে৷ সম্মেলনে উপস্থিত বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘আমরা এখনও যথেষ্ট কাজ করছি না, পর্যাপ্ত গতিতে এগোচ্ছি না৷’’
মূল লক্ষ্য
২০১৫ সালে প্যারিসের জলবায়ু সম্মেলনে স্বাক্ষরিত চুক্তির বাস্তবায়ন ২০২০ সাল থেকে শুরু হওয়ার কথা৷ সেটি কার্যকর করতে একটি ‘রুলবুক’ বা নীতিমালা তৈরিই কপ২৪-এর মূল লক্ষ্য হিসেবে ধরা হয়েছে৷ প্যারিস চুক্তিতে বিশ্বের তাপমাত্রা শিল্পবিপ্লব পূর্ববর্তী সময়ে যা ছিল, তার চেয়ে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি না বাড়তে দেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে৷
জলবায়ু পরিবর্তন রোধে যে ৫টি দেশ সফলতা দেখাচ্ছে
মানবজাতির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন৷ এই অবস্থা চলতে থাকলে বন্যা, খরা এবং দাবদাহের মতো চরম আবহাওয়ার কবলে পড়বে পৃথিবী৷ এখানে এমন কয়েকটি দেশের কথা থাকছে, যারা জলবায়ু পরিবর্তন রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে৷
ছবি: UNDP
একার পক্ষে সম্ভব নয়
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন কেবল কয়েকটি দেশের একার পক্ষে রোধ করা সম্ভব নয়৷ এর জন্য প্রয়োজন বিশ্বের প্রতিটি দেশের উদ্যোগ এবং সহযোগিতা৷ সবচেয়ে বড় সমস্যাটা হলো, প্রতি বছর মোট জ্বালানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমরা এখনও কার্বনভিত্তিক উৎসের উপর ৮৫ ভাগ নির্ভরশীল৷
ছবি: Getty Images/Anadolu Agency/C. Ozedel
ডেনমার্ক
বিশ্বে সবচেয়ে জলবায়ুবান্ধব দেশ বলা হয় ডেনমার্ককে৷ দেশটি ২০৫০ সালের মধ্যে একাই জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রায় এগিয়ে চলেছে৷ জলবায়ু পরিবর্তন রোধের সবচেয়ে কার্যকর নীতি বলা হয় কার্বন নিঃসরণ কমানো এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার৷ সেদিক দিয়ে পরিবেশ নিয়ে যাঁরা পড়ালেখা করছেন, তাঁরাও উচ্চশিক্ষার জন্য বেছে নেন এই দেশটিকে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
চীন
পরিবেশবান্ধব দেশ হওয়ার পথে চীনকে এখনও অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে৷ তবে দেশটি নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে যে পরিমাণ বিনিয়োগ করছে, তা চোখে পড়ার মতো৷ বিশ্বে সৌরশক্তি ব্যবহারের অন্যতম দেশ হিসেবে পরিচিত চীন৷ আন্তর্জাতিক শক্তি কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে দেশটি ৩৪ গিগা ওয়াটেরও বেশি সৌরশক্তি ব্যবহার করেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় দ্বিগুণ৷
ছবি: UNDP
ফ্রান্স
প্যারিস চুক্তি এবং জলবায়ু পরিবর্তন রোধে বিশ্বে অন্যতম ভূমিকা রাখছে ফ্রান্স৷ ২০৫০ সালের মধ্যে দেশটি কার্বন নিঃসরণ ৭৫ শতাংশ কমিয়ে ফেলার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে৷ পারমাণবিক শক্তি ব্যবহার করে দেশের ৮০ শতাংশ চাহিদা মেটাচ্ছে ফ্রান্স৷ এরই মধ্যে গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ কমিয়ে ফেলেছে৷ প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ সম্প্রতি জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক গবেষকদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, যাতে তাঁরা ফ্রান্সে এসে কাজ করেন৷
ছবি: Reuters/B. Tessier
ভারত
বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম শক্তিধর দেশ ভারতে প্রচুর জ্বালানির চাহিদা রয়েছে৷ সেই চাহিদার কথা মাথায় রেখে ভারতের বর্তমান সরকার কেন্দ্রীয় পর্যায়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের নীতি ঠিক করেছে৷ দেশটি ক্রমেই সৌরশক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশ্ব বাজারে তৃতীয় শক্তিধর দেশ হিসেবে নিজেদের অবস্থান গড়ে তুলছে৷ ভারতে বর্তমানে কয়লার চেয়েও সৌরশক্তি সস্তা৷
ছবি: Getty Images for SATC/S. Barbour
সুইডেন
২০৪৫ সালের মধ্যে সব ধরনের গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ বন্ধ করার ব্যাপারে একটি আইন পাস করেছে সুইডেন সরকার৷ জলবায়ু মন্ত্রী বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোকে প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন৷ দেশটির অর্ধেকেরও বেশি জ্বালানি নবায়নযোগ্য উৎস থেকে আসে৷ জলবায়ু পরিবর্তন রোধে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে দেশটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Ghani
6 ছবি1 | 6
তবে গত অক্টোবরে জাতিসংঘের সংস্থা ‘ইন্টারগভার্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ’ বা আইপিসিসি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে৷ সেখানে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার ওপর জোর দেয়া হয়েছে৷ এই লক্ষ্য পূরণ করতে চাইলে ২০৩০ সালের মধ্যে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ৪৫ শতাংশ কমাতে হবে বলে জানায় বিশ্বের প্রায় ৯০০ বিজ্ঞানীর যৌথভাবে লিখিত আইপিসিসির ঐ প্রতিবেদন৷
কাটোভিৎসে সম্মেলন শুরুর আগে রবিবার বেলজিয়ামের ব্রাসেলস এবং জার্মানির বার্লিন ও কোলন শহরে বিক্ষোভ হয়েছে৷ ব্রাসেলসের বিক্ষোভে প্রায় ৬৫ হাজার মানুষ অংশ নেন বলে পুলিশ জানিয়েছে৷
তাঁদের হাতে থাকা ব্যানারে লেখা বিভিন্ন স্লোগানের মধ্যে আছে ‘প্ল্যানেট বি বলে কিছু নেই’, ‘জলবায়ু প্রথম, রাজনীতি দ্বিতীয়’ ইত্যাদি৷
ইয়েন্স থুরাউ/জেডএইচ
জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে কতটা জানেন?
সিওটু, গ্রিনহাউস গ্যাস, কার্বন নির্গমন – এই সব শব্দ সংবাদমাধ্যমের আলোচনায় বার বার উঠে আসে৷ কিন্তু এই সব শব্দের প্রেক্ষাপট আপনি কতটা বোঝেন? যাচাই করে নিন এই ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্রশ্ন
পৃথিবী আসলে কতটা উষ্ণ হয়ে উঠেছে?
ছবি: DW
উত্তর
১৮৫০ সালে শিল্প-বিপ্লবের শুরু থেকে বিশ্বের তাপমাত্রা এক ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে৷ তাই গবেষকদের আশঙ্কা, ২১০০ সালের মধ্যে তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি কমানোর লক্ষ্যমাত্রা বিফল হবে৷ জলবায়ু গবেষণার ভিত্তিতে বড়জোর দেড় ডিগ্রির সীমা ধরে রাখার চেষ্টা করা উচিত বলে মনে করেন সমালোচকরা৷
ছবি: DW/G. Rueter
প্রশ্ন
২১০০ সাল পর্যন্ত বৈশ্বিক উষ্ণায়নের পরিণতি কী হতে পারে?
ছবি: DW/K.Hasan
উত্তর
পৃথিবীর তাপমাত্রা আরও বেশি মাত্রায় বাড়লে উপকূলবর্তী এলাকায় প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষ বিপদে পড়তে পারেন৷ প্রায় ২০০ কোটি মানুষ জলের অভাবে সমস্যায় পড়বেন৷ পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পেরে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ প্রজাতির প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/AP/T. Gutierrez
প্রশ্ন
গ্রিনহাউস গ্যাসের প্রভাবের উৎস কী?
ছবি: IRNA
উত্তর
কয়লা, পেট্রোলিয়াম ও গ্যাস৷ জীবাশ্মভিত্তিক জ্বালানির সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন, ঘরবাড়ি গরম রাখা, পরিবহণ ব্যবস্থা চালানো এবং শিল্পক্ষেত্রে উৎপাদনের ফলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড সৃষ্টি হয় এবং বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়ে৷ গ্রিনহাউস গ্যাসের প্রায় ৬৫ শতাংশই কার্বন-ডাই-অক্সাইড৷ এছাড়া মিথেন, লাফিং গ্যাস ও ক্লোরোফ্লুরোকার্বন এর জন্য দায়ী৷
ছবি: Imago stock&people
প্রশ্ন
আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনার কারণে কোন দেশগুলি গত বছর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে?
ছবি: Reuters
উত্তর
সার্বিয়া, আফগানিস্তান এবং বসনিয়া-হ্যারৎসোগোভিনা ২০১৫ সালে আবহাওয়া বিপর্যয়ের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ প্যারিস-ভিত্তিক পরিবেশ সংগঠন ‘জার্মানওয়াচ’ প্রকাশিত বিশ্বব্যাপী জলবায়ু সংক্রান্ত ঝুঁকির তালিকায় এই তথ্য উঠে এসেছে৷ তবে ১৯৯৫ সাল থেকে হন্ডুরাস, মিয়ানমার, হাইতি ও ফিলিপাইন্সের মতো দক্ষিণ গোলার্ধের দরিদ্র দেশগুলি বন্যা, বিধ্বংসী ঝড় ও তাপপ্রবাহের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. uz Zaman
প্রশ্ন
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্র কেন বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখায়?
ছবি: imago/OceanPhoto
উত্তর
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের গ্রিনহাউস গ্যাস কার্বন-ডাই-অক্সাইড সমুদ্রের পানির মধ্যে রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে৷ এই প্রক্রিয়ায় জলের ‘পিএইচ ভ্যালু’ কমে যায়৷ অ্যালজির মতো ক্ষুদ্র প্রাণী ও প্রবাল প্রাচীরের উপর তার প্রভাব পড়ে৷ জলে অম্লের মাত্রা যত বাড়ে, ক্যালশিয়াম বাইকার্বোনেট তত পাতলা হয়ে যায়৷ তখন প্রবালের মৃত্যু হয়৷ ফলে সমুদ্রের গোটা ইকোসিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷
ছবি: XL Catlin Seaview Survey
প্রশ্ন
বার্লিন থেকে প্যারিস যেতে হলে গাড়ি, বিমান অথবা ট্রেন – পরিবহণের কোন মাধ্যম পরিবেশের সবচেয়ে ক্ষতি করে?
ছবি: DW/K. Jäger
উত্তর
এই দূরত্ব অতিক্রম করতে এয়ারবাস এথ্রিটুজিরো বিমানে যাত্রীপিছু ২৪৮ কিলোগ্রাম কার্বন-ডাই-অক্সাইড সৃষ্টি হয়৷ ফলক্সভাগেন কোম্পানির গল্ফ মডেলের নতুন গাড়িতে চড়ে গেলে নির্গমনের পরিমাণটা দাঁড়ায় ১৭৯ কিলো৷ অন্যদিকে সবচেয়ে পরিবেশবান্ধব বাহন হলো ট্রেন৷ সে ক্ষেত্রে নির্গমনের পরিমাণ প্রায় ১১ কিলো৷