1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কয়লা বন্ধ করছে জার্মানি, ভারত পারবে না

১৬ জানুয়ারি ২০২০

কয়লার ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ করতে চলেছে জার্মানি। ভাবা হচ্ছে বিকল্প শক্তি নিয়ে। কিন্তু ভারত এখনই তা পারবে না। বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

ছবি: Getty Images/J. Schlueter

পরিবেশের কথা ভেবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে জার্মানি। তাদের দাবি, আগামী ২০৩৮ সালের মধ্যে দেশে কয়লার ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ করে ফেলা যাবে। পুরো দেশকে নিয়ে আসা যাবে বিকল্প শক্তির আওতায়। যার প্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠেছে, জার্মানি যা ভাবতে পারে, ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশ কি তা ভাবতে পারে না?

তথ্য বলছে, শিল্প বিপ্লবের পর থেকে বিশ্বের তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি বৃদ্ধি পেয়েছে। এর প্রথম এবং প্রধান কারণ হল কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসের বৃদ্ধি। মনে রাখা দরকার, শিল্প বিপ্লবের পর ফসিল ফুয়েল বা জীবাশ্ম থেকে পাওয়া জ্বালানির ব্যবহার বহু গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কয়লা যার অন্যতম। বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, কয়লা থেকে সব চেয়ে বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস তৈরি হয়। যে ভাবে গোটা পৃথিবীতে তার ব্যবহার চলছে, তাতে আগামী শতাব্দীর মধ্যে তাপমাত্রা আরও ৪ ডিগ্রি বেড়ে যেতে পারে। এবং ২২০০ সালে তা বেড়ে পৌঁছবে ৭ ডিগ্রিতে। যদি তাই হয়, তাহলে সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার প্রভূত সম্ভাবনা। পরিবেশবিদদের অনেকই মনে করেন, বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ে আরও অনেক আগেই সজাগ হওয়া উচিত ছিল। এই মুহূর্তে যদি বিষয়টি নিয়ে সচেতন হওয়া না যায় তাহলে বিপদ আসন্ন।

ছবি: picture-alliance/S. Ziese

সেই বিপদের কথা মাথায় রেখেই যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে জার্মানি। তাদের বক্তব্য, এখনও দেশে যে ক'টি কয়লায় চলা কারখানা আছে, ২০৩৩ সালের মধ্যে তা বন্ধ করে দেওয়া সম্ভব। কয়লা খনি গুলিও ক্রমশ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। ফলে আশা করাই যায়, ২০৩৮ সালের মধ্যে তা একেবারে বন্ধ করে ফেলা সম্ভব হবে।

প্রশ্ন হল, তাহলে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে কী ভাবে? জার্মানির দাবি বিকল্প শক্তির ব্যবহার এখনই যথেষ্ট পরিমাণে হচ্ছে। আগামী এক দশকে তা অন্য মাত্রায় নিয়ে যাওয়া হবে। ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে তারা কাজও করতে শুরু করেছে।

বস্তুত, প্যারিস সম্মেলনে গ্রিন হাউস গ্যাস নিয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। বাতাস থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড কমানোর জন্য সেখানে বেশ কিছু প্রস্তাবও নেওয়া হয়। ঠিক হয়েছিল, তাপমাত্রার বৃদ্ধি যেন কোনও ভাবেই ১.৫ ডিগ্রির বেশি বৃদ্ধি না পায়, সে দিকে নজর রাখতে হবে। এবং ২০৫০ সালের মধ্যে কয়লার ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। জার্মানি দেখিয়ে দিল, কী ভাবে সেই লক্ষ্যে পৌঁছনো যায়।

জার্মানি যখন কয়লার ব্যবহার বন্ধের কথা বলছে, ভারতে তখন নতুন নতুন কয়লা খনি খোলার ভাবনা চিন্তা করা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গেই একটি বিশাল কয়লা খনি খোলা নিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে পরিবেশকর্মীদের বিতর্ক শুরু হয়েছে। দেশের বহু পরিবেশবিদ বলছেন, ভারতের সরকার এবং প্রশাসন পরিবেশ নিয়ে আদৌ চিন্তিত নয়। মুখেই কেবল বড় বড় কথা বলা হচ্ছে। কাজের ক্ষেত্রে তার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

ভারত সরকারের প্রাক্তন উচ্চপদস্থ আমলা এবং পরিকল্পনা বিশেষজ্ঞ অমিতাভ রায়ের বক্তব্য, ''জার্মানি যে কথা এখন বলছে, ভারতের পক্ষে এখুনি তা ভাবা সম্ভব নয়। কারণ এ দেশে প্রাথমিক শক্তির উৎসই হল কয়লা। এবং এখানে এখনও প্রচুর পরিমাণে কয়লা মজুত আছে। কয়লার ব্যবহার বন্ধ করে বিকল্প শক্তির উপর সম্পূর্ণ আস্থা রাখার জন্য যে পরিমাণ খরচ করতে হবে, ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশের পক্ষে তা এখনই করা সম্ভব নয়। তবে এ দেশেও বিকল্প শক্তি নিয়ে নানারকম ভাবনা চিন্তা হচ্ছে। একেবারেই হচ্ছে না, এমন বলা যায় না।'' তবে এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে দিকে দৃষ্টিনিক্ষেপ করেছেন অমিতাভবাবু। তাঁর বক্তব্য, পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয় নিয়েও বিশ্ব জুড়ে এক ধরনের রাজনীতি চলছে। উন্নয়নশীল দেশগুলি বলছে, উন্নত দেশ এত দিন ধরে পরিবেশের ক্ষতি করে নিজেদের অর্থনীতির উন্নতি করেছে। এখন উন্নয়নশীল দেশগুলি তা করতে গেলে তাতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, বিকল্প শক্তির প্রযুক্তি উন্নত দেশগুলি উন্নয়নশীল দেশগুলিকে বিক্রি করে মুনাফা তৈরি করতে চাইছে। এটা এক ধরনের ব্যবসা।

পুরোটাই কি ব্যবসা? পরিবেশবিদদের বক্তব্য, ব্যবসা অবশ্যই আছে। রয়েছে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক রাজনীতি। কিন্তু পরিবেশ যে বিপন্ন, সে কথা অস্বীকার করা যায় না। ফলে রাজনীতি ভুলে পরিবেশের কথা সকলকে ভাবতেই হবে।

গেরো রোয়টার/এসজি/জিএইচ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ