কয়েকশ' রোহিঙ্গাকে হত্যা করেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী
১৮ অক্টোবর ২০১৭
রাখাইন থেকে রোহিঙ্গাদের বিতারণের জন্যই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটাচ্ছে বলে অভিযোগ মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের৷ তারা বলছে, সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের উপর হত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতন চালিয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
বুধবার, রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে অ্যামনেস্টি এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে৷ এতে বলা হয় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কয়েকশ' রোহিঙ্গাকে হত্যা করেছে৷ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে খুন, বলপূর্বক নির্বাসন, নির্যাতন, ধর্ষণ, নিপীড়ন এবং অন্যান্য অমানবিক কর্মকাণ্ডের প্রমাণ পাওয়ার কথা বলা হয়েছে এতে৷ অ্যামনেস্টি বলছে, আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের বিধি অনুযায়ী, এর সবই মানবতাবিরোধী অপরাধ৷ ‘জাতিগত নিধন' অভিযানের অংশ হিসেবে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের হত্যা, নির্যাতন করে তাদের মনে ত্রাস সৃষ্টি করছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি৷
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১২০ জন রোহিঙ্গা, ৩০ জন চিকিৎসা পেশাজীবী, ত্রাণকর্মী ও সাংবাদিকদের দেওয়া সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে অ্যামনেস্টি বলছে, রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনী রোহিঙ্গাদের নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পনা অনুযায়ী অভিযান চালাচ্ছে, যার প্রমাণ তাদের কাছে আছে৷ রোহিঙ্গারা জানিয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনী শত শত রোহিঙ্গা হত্যা করেছে৷ গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে৷ ঘর বাড়িতে আগুন দেয়ায় বৃদ্ধ ও অসুস্থরা পালাতে ব্যর্থ হওয়ায় তখন তাদের হত্যা করা হয়েছে৷ বেশ কিছু গ্রামে নারী ও কিশোরীরা ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলেও জানিয়েছে তারা৷
প্রত্যক্ষদর্শী রোহিঙ্গারা যে পোশাকের বর্ণণা দিয়েছে, তা মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলের সেনা কমান্ডের ইউনিফর্ম এর সাথে পুরোপুরি মিলে যায়৷ তারা জানান, নীল ইউনিফর্ম পরা ব্যক্তিরা নৃশংসভাবে একের পর এক হামলা চালিয়েছে তাদের উপর৷
গত ২৫শে আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত ৫ লাখ ৮০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে৷ রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর ক্রমাগত এই হামলা ভয়াবহ এক মানবিক সংকটে রূপ নিয়েছে৷
মিয়ানমারের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা
মিয়ানমারে গত এক সপ্তাহের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় কমপক্ষে ৪০ জন নিহত হয়েছে৷
ছবি: Getty Images
সোনার দোকান থেকে শুরু
মার্চের ২০ তারিখে রাজধানী নেপিদ থেকে ১৩০ কিলোমিটার দূরের শহরে মেইকটিলার একটি সোনার দোকানে তর্কাতর্কি থেকে দাঙ্গার শুরু৷ বার্তা সংস্থাগুলোর খবর অনুযায়ী, দোকানের মালিক ছিলেন মুসলমান আর ক্রেতা এক বৌদ্ধ দম্পতি৷
ছবি: Reuters
পুড়ছে মসজিদ
সশস্ত্র দাঙ্গাকারীরা একাধিক মসজিদ ও বাড়িঘর পুড়িয়েছে৷ রাস্তায় অগ্নিদগ্ধ লাশ পড়ে থাকতে দেখা গেছে৷ এছাড়া তারা পথে সাংবাদিকদের ভয়ও দেখিয়েছে৷ দাঙ্গাকারীদের মধ্যে বৌদ্ধ ভিক্ষুরাও ছিল বলে প্রকাশ৷
ছবি: Reuters
সব শেষ!
ছবিতে এক ব্যক্তিকে দাঙ্গায় পুড়ে যাওয়া এলাকা পরিদর্শন করতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters
সরকারের উদ্যোগ
সহিংসতা শুরুর পর মিয়ানমার সরকার বিভিন্ন স্থানে কারফিউ জারি করে৷ এছাড়া নিয়োগ করে দাঙ্গা পুলিশ৷
ছবি: AFP/Getty Images
পাহারায় পুলিশ
অস্ত্র হাতে মিয়ানমারের নিরাপত্তা রক্ষীদের মেইকটিলা শহর পাহারা দিতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters
মুসলিম নেতাদের দাবি
মিয়ানমারের মুসলিম নেতারা বলছেন, দাঙ্গা পুলিশের সামনেই সহিংসতা সৃষ্টিকারীরা ঘরবাড়িতে আগুন দিয়েছে৷ তাই পরিস্থিতি শান্ত করতে তারা প্রেসিডেন্ট তেইন সেইনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন৷
ছবি: AFP/Getty Images
শরণার্থী শিবির
দাঙ্গা শুরুর পর মুসলিম শরণার্থীরা এই শিবিরে এসে আশ্রয় গ্রহণ করেছে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
গত বছরের দাঙ্গা
এটি গত বছরের দাঙ্গার ছবি৷ সেসময় বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাখাইন রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় হামলার শিকার হয়েছিল রোহিঙ্গা মুসলমানরা৷ এতে অনেকের প্রাণও গেছে৷
ছবি: Reuters
শঙ্কায় রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যৎ!
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের কাছে খাবার-ওষুধপত্র নিয়ে যেতে দিচ্ছে না মিয়ানমার সরকার৷ এক বিবৃতিতে সংস্থাটি মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের ভবিষ্যৎ নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেছে৷
ছবি: Getty Images
9 ছবি1 | 9
অ্যামনেস্টির সংকটবিষয়ক গবেষক ম্যাথু ওয়েলস যিনি বেশ কয়েক সপ্তাহ বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে কাটিয়েছেন, জানালেন, ‘‘মানবাধিকার নিয়ে কাজ করে এমন একটি শিগগিরই আরেকটি প্রতিবেদন দেবে যেখানে অপরাধ করেছে এমন কয়েকজন ব্যক্তি ও কমান্ডারদের অপরাধের তথ্য থাকবে৷''
তিনি বলেন, ‘‘শত শত রোহিঙ্গাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে৷ চিকিৎসকরা তাদের রিপোর্টে জানিয়েছে, প্রত্যেককে পেছন থেকে গুলি করা হয়েছে৷''
ম্যাথু ওয়েলস আরও জানান, ‘‘মসজিদ গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে৷ মুসলমানদের নিশ্চিহ্ন করার এই প্রক্রিয়া একেবারে পরিকল্পিত বলে মনে হয়েছে৷ অন্তত স্যাটেলাইটের ছবি ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা সেটাই বলে৷ অথচ বৌদ্ধদের মাত্র একটি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷''
অ্যামনেস্টি বলছে, যৌন নির্যাতনের শিকার সাতজন রোহিঙ্গা নারীর সাথে কথা বলেছে তারা৷ তাদের মধ্যে চারজন মহিলা এবং ১৫-বছর বয়সি এক কিশোরীকে ধর্ষণ করা হয়েছে৷
হত্যা নির্যাতনের বাইরে রয়েছে নির্বিচারে গ্রেপ্তারের অভিযোগ৷ আটকের পর কারাগারগুলোতে রোহিঙ্গারা নির্মম নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন এমন খবরও জানা গেছে৷ আটক অবস্থায় অন্তত ছয় বন্দি নিহত হবার খবর মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমই স্বীকার করেছে৷ এই সংকটের প্রকৃত চিত্র উদঘাটনের জন্য অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জাতিসংঘকে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে৷
এএম/এসিবি(এপি, এএফপি, রয়টার্স)
রোহিঙ্গাদের মুখচ্ছবি
ভয়াবহ সব অভিজ্ঞতার মুখে দেশ ছাড়তে বাধ্য হওয়া, পেছনের টান আর ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা- এই সব নিয়ে একরাশ হতাশা আর বেদনা স্পষ্ট প্রতিটি রোহিঙ্গার চোখেমুখে৷ সম্প্রতি রয়টার্সের ক্যামেরায় ধরা পড়া এমন কিছু অবয়ব নিয়েই এই ছবিঘর৷
ছবি: Reuters/D. Sagoli
অশ্রু
মাত্র একদিন আগেই পরিবারের সবাইকে নিয়ে পালিয়ে এসেছেন ৩০ বছর বয়সি আমিনা খাতুন৷ বাংলাদেশে পৌঁছানোর পর প্রথম রাত কেটেছে কক্সবাজারের শরণার্থী আশ্রয়কেন্দ্রের পাশের সড়কে৷ সাথে ছিল তারই মতো নতুন আসা আরও হাজার হাজার মানুষ৷ সামনের দিনগুলোর কথা ভেবেই হয়তো এই অশ্রুসজল চোখ!
ছবি: Reuters/D. Sagoli
শিশুদের চাহনি
ছবি তোলা হচ্ছে দেখলেই গ্রামের ছেলেমেয়েরা দৌড়ে আসে- এই দৃশ্য খুবই পরিচিত৷ কিন্তু শিশুদের চোখেও এত অবিশ্বাস আর হতাশা বোধহয় পরিচিত নয়৷
ছবি: Reuters/C. McNaughton
জীবন যুদ্ধ
সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ৭০ এর বেশি বয়সি এই নারী মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে এসেছেন কিছুক্ষণ আগেই৷ জীবনের এই শেষ দিনগুলোতেও জীবন বাঁচাতে এমন যুদ্ধ করতে হবে কখনও হয়ত ভাবেননি৷
ছবি: Reuters/J. Silva
অসহায়ত্ব
এই শরণার্থী শিশুর অপেক্ষা একটু ওষুধের জন্য৷ সারা মুখে নানা ক্ষত আর তার ওপর মাছির আনাগোনাতেই বোঝা যাচ্ছে, একটু ওষুধ কতখানি দরকার তার৷
ছবি: Reuters/D. Sagolij
নিরুপায়
বৃষ্টি মাথায় ত্রাণকেন্দ্রের সামনে অপেক্ষা৷ আর তো কোন উপায় নেই!
ছবি: Reuters/C. McNaughton
আশ্রয়ের অপেক্ষা
মাত্রই বাংলাদেশে এসেছেন৷ শুরুতে জায়গা হয়েছে এক স্কুল ঘরে৷কিন্তু সেখানে তো আর থাকা যাবে না৷থাকতে হবে আশ্রয়কেন্দ্রে৷নতুন সেই ঠিকানার অপেক্ষাতেই এখন তারা৷
ছবি: Reuters/C. McNaughton
ত্রাণের আশা
কক্সবাজারের বালুখালি শরণার্থী শিবিরে আর সবার মতোই একটু ত্রাণের আশায় কোলের সন্তানকে নিয়ে অপেক্ষায় এই নারী৷
ছবি: REUTERS
চৌদ্দ দিন পর
সালেহা বেগম নামের এই মা এতটুকুন শিশুকে নিয়ে ১৪ দিন ধরে জঙ্গল পথে হেঁটেছেন৷ তারপর পেরেছেন সীমান্ত পাড়ি দিতে৷ এখন অপেক্ষা একটু আশ্রয়ের৷
ছবি: Reuters/C. McNaughton
বিশ্রাম
টেকনাফের শাহ পরীর দ্বীপ পর্যন্ত নৌকায় গাদাগাদি করে এসে কোনমতে পৌঁছেছে সবাই৷ নতুন আশ্রয়ে যাবার আগে তাই একটু বিশ্রাম৷
ছবি: Reuters/D. Sagolij
দায়িত্বের ভার
টেকনাফে পৌঁছেই ছুটতে হচ্ছে ত্রাণের আশায়৷ নিজেই এক শিশু, তার ওপর কোলে, পাশে আরও ভাই-বোন থাকায় দায়িত্ব যেন বেড়ে গেছে৷
ছবি: Reuters/D. Sagolij
প্রতিক্রিয়া
এত মানুষের টানাহ্যাঁচড়ার মধ্যেই দাঁড়াতে হয় ত্রাণের লাইনে৷ ধাক্কাধাক্কি সহ্য করে আর কতক্ষণ৷ তাল সামলাতে না পেরে তাই চোখ ফেটে গড়িয়ে পড়ে অশ্রু৷
ছবি: Reuters/C. McNaughton
অনিশ্চয়তা
আদরের ধন নাতিকে কোলে নিয়ে এই নারী বসে আছেন ত্রাণের আশায়৷ কিন্তু একটু ত্রাণই তো সব নয়৷ নাতির ভবিষ্যত কী, সেই ভাবনাতেই খানিকটা উদাস হয়ে পড়েছেন তিনি৷