জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর হাত থেকে ইরাকের রামাদি শহরের নিয়ন্ত্রণ ছিনিয়ে নিতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ইরাকি বাহিনী৷ প্রাথমিক সমালোচনার পর ওয়াশিংটন ইরাকের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছে৷
বিজ্ঞাপন
রামাদি শহরের উপর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে সোমবার আরও যোদ্ধা নিয়ে এসেছে আইএস৷ শনিবার থেকে পালটা হামলা চালিয়ে ইরাকি বাহিনী শহরের পূর্বাংশে কিছুটা সাফল্য পেয়েছে৷ ইরান-সমর্থিত শিয়া মিলিশিয়া বাহিনী ও স্থানীয় উপজাতীয় সুন্নি যোদ্ধারাও তাদের সহায়তা করছে৷
আইএস-এর একের পর এক সাফল্যের কারণে ইরাকের সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন উঠছে৷ বিশেষ করে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যাশ কার্টার যেভাবে সরাসরি ইরাকি বাহিনীর সদিচ্ছা ও মনোবলের অভাব নিয়ে প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছেন, তার ফলে ইরাকের সরকার কিছুটা ক্ষুব্ধ হয়েছিল৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইরাকের প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল-আবাদি-র সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন৷ হোয়াইট হাউসের সূত্র অনুযায়ী, গত ১৮ মাস ধরে আইএস-বিরোধী সংগ্রামে ইরাকি বাহিনীর আত্মত্যাগের প্রশংসা করেছেন বাইডেন৷ তিনি মার্কিন প্রশাসনের সহায়তা চালিয়ে যাবার আশ্বাসও দিয়েছেন৷ হায়দার আল-আবাদি বলেছেন, কয়েক দিনের মধ্যেই ইরাকি সেনাবাহিনী রামাদি দখল করে নেবে৷
হত্যা, আতঙ্ক আর ঘৃণায় আইএস
শুধু ইরাক আর সিরিয়া নয়, আজকাল বিশ্বের অনেক দেশেই ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর তৎপরতার কথা শোনা যায়৷ খেলাফত কায়েমের কথা বলে মধ্যপ্রাচ্যে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা জঙ্গি সংগঠনটিকে নিয়েই আমাদের আজকের ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Jordan News Agency
তাদের কাছে নারী যেন বাজারের পণ্য
অনেক সময় আটক নারী ও শিশুদের আইএস জঙ্গিরা যৌন দাস হিসেবে ব্যবহার করে৷ সম্প্রতি আইএস-এর কবল থেকে পালিয়ে আসা ৪০ জনেরও বেশি ইয়াজিদি নারীর সঙ্গে কথা বলে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷ নারী ও শিশুদের সঙ্গে আইএস-এর এমন আচরণে নিন্দা জানিয়েছেন সবাই৷
ছবি: DW/Andreas Stahl
সাংবাদিক, এনজিওকর্মী হত্যা করে হুমকি
তাদের বিরুদ্ধে বিমান হামলা বন্ধ না করায় যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করতে নিরপরাধ মানুষ হত্যার বেশ কিছু নজীর গড়েছে আইএস৷ বিমান হামলার প্রতিশোধের কথা বলে যুক্তরাষ্ট্রের দু’জন সাংবাদিক, একজন এনজিও কর্মী এবং ব্রিটেনের দু’জন এনজিও কর্মীর শিরশ্ছেদ করেছে তারা৷ ওপরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক জেমস ফলিকে৷ গত আগস্টে তাঁর শিরশ্ছেদ করে ভিডিওচিত্র প্রচার করে আইএস৷
ছবি: dapd
মুসলমান হলেও রক্ষা নেই....
ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে সিরীয় শরণার্থীদের সেবায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন পিটার কাসিগ৷ মুসলমান হিসেবে তাঁর নাম হয়েছিল আব্দুল রহমান কাসিগ৷ গত নভেম্বরে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হওয়ায় তাঁকেও হত্যা করে আইএস৷ হত্যার পর ভিডিও চিত্রও প্রকাশ করা হয়৷ নৃশংস এ ঘটনাকে ‘শয়তানের কাজ' হিসেবে বর্ণনা করেন বারাক ওবামা৷
ছবি: picture-alliance/AP/Kassig Family
জিম্মি করে মুক্তিপণ দাবি, তারপর...
জাপানের দুই নাগরিককে জিম্মি করে প্রথমে ২০০ মিলিয়ন ডলার মুক্তিপণ দাবি করে আইএস৷ মুক্তিপণ না পাওয়ায় হারুনা ইউকাওয়াকে হত্যা করলেও সাংবাদিক কেনজি গোতোকে আটকে রাখে৷ গোতো এবং জর্ডানের বৈমানিক আইমান মাজ-আল-কাসাবেহকে জিম্মি করে তাঁদের প্রাণের বিনিময়ে জর্ডানে আটক আইএস-এর এক নারী যোদ্ধার মুক্তি দাবি করা হয়৷ তাঁকে মুক্তি না দেয়ায় কেনজি গোতো এবং আইমান মাজ-আল-কাসাবেহকে হত্যা করে আইএস৷
ছবি: Reuters/www.reportr.co via Reuters TV
ইরাকে শুরু....
গত বছরের জুন মাসে ঝটিকা আক্রমণের ইরাকের মোসুল দখল করে নেয় আইএস৷ সুন্দিদের এই জঙ্গি সংঠনটি তারপর ইরাকের বেশ বড় একটা অংশে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে৷ সিরিয়াতেও দখল করে নেয় কিছু এলাকা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
বাংলাদেশেও তৎপর আইএস...
আইএস সরাসরি যুদ্ধ করছে ইরাক আর সিরিয়ায়৷ যোদ্ধা সংগ্রহ করা হচ্ছে বিশ্বের প্রায় সব প্রান্ত থেকে৷ জার্মানি, বৃটেন, ফ্রান্স, বেলজিয়ামের মতো ইউরোপীয় দেশগুলো থেকে জঙ্গি মনোভাবাপন্নরা গিয়েছে ইরাক, সিরিয়ায়৷ এশিয়ার দেশগুলোতেও তৎপর আইএস৷ বাংলাদেশেও আইএস সমর্থক সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কয়েকজনকে৷
ছবি: Reuters
জুতার নীচে আইএস!
আইএস-এর প্রতি ঘৃণাও বাড়ছে সারা বিশ্বে৷ ইরাকের স্থপতি আকীল খ্রীফ তো আইএস জঙ্গিদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করতে বেছে নিয়েছেন অভিনব এক উপায়৷ পুরোনো জুতা সংগ্রহ করে তার নীচে জুতার পরিত্যক্ত ফিতা, বোতাম ইত্যাদি দিয়ে ফুটিয়ে তুলছেন আইএস জঙ্গিদের চেহারার আদল৷ আকীল খ্রীফ মনে করেন, আইএস জঙ্গিদের স্থান জুতার নীচেই হওয়া উচিত৷
ছবি: Armend Nimani/AFP/Getty Images
বৈমানিককে পুড়িয়ে মারা এবং জর্ডানের ‘প্রতিশোধ’
আটক নারী যোদ্ধাকে মুক্তি না দেয়ায় জর্ডানের বৈমানিক আইমান মুয়াত আল-কাসেসবেহ-কে নৃশংসভাবে পুড়িয়ে মারে আইএস৷ ক্ষুব্ধ হয়ে পাল্টা ব্যবস্থা নিতেও দেরি করেনি জর্ডান৷ আইমান মুয়াত আল-কাসেসবেহ-কে (ওপরের ছবি) হত্যা করে আইএস ভিডিও প্রকাশের পরই তাদের নারী যোদ্ধা সাজিদা আল-রিশোয়াই ও আরেক কর্মীকে ফাঁসিতে ঝোলায় জর্ডান সরকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Jordan News Agency
8 ছবি1 | 8
আইএস সিরিয়ার ঐতিহাসিক পালমিরা শহর দখল করার ফলেও দুশ্চিন্তা বাড়ছে৷ রোমান আমলের অমূল্য নিদর্শনগুলির ক্ষতির আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না৷ সিরিয়ার বিমানবাহিনী জানিয়েছে, তারা আইএস-এর উপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে৷ শহর দখল করার পর আইএস জঙ্গিরা অনেক শিশু সহ কমপক্ষে ২১৭ জনকে হত্যা করেছে৷
রামাদি ও পালমিরায় আইএস-এর সাফল্যের ফলে শুধু বিমান হামলার কার্যকারিতা সম্পর্কে প্রশ্ন উঠছে৷ মার্কিন নেতৃত্বে কোয়ালিশন বাহিনী এতকাল এই কৌশল চালিয়ে এসেছে৷ অর্থাৎ আইএস-এর বিরুদ্ধে সরাসরি সংগ্রামের জন্য স্থানীয় বাহিনীর উপর নির্ভর করতে হচ্ছে৷ একমাত্র আন্তর্জাতিক শক্তি হিসেবে ইরানই সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করছে৷ কিছু ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষভাবে সামরিক উপদেষ্টা, অন্যান্য ক্ষেত্রে পরোক্ষভাবে তেহরান সমর্থিত শিয়া মিলিশিয়া বাহিনী আইএস-বিরোধী অভিযানে মূল ভূমিকা পালন করছে৷ ইরানের আরেক ঘনিষ্ঠ শক্তি লেবাননের হেজবোল্লাহ-ও আল-কায়েদার শাখা হিসেবে পরিচিত আল-নুসরা ফ্রন্টের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালাচ্ছে৷ সুন্নি জঙ্গি গোষ্ঠী দমনে গোটা অঞ্চল জুড়ে ইরানের উপর নির্ভরতার পরিণাম কী হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন বিশেষজ্ঞরা৷