1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

খাঁচা নিয়ে বাড়াবাড়ি, পাখির খবর নাই

প্রভাষ আমিন
২০ নভেম্বর ২০২০

কবিতায়, শিল্পে, গানে মানুষের মন নিয়ে, শরীর নিয়ে; মনের সাথে শরীরের সম্পর্ক নিয়ে নানান আলোচনা৷ কোথাও সরাসরি, কোথাও প্রতীকী৷

Bangladesch Mental Hospital, Pabna
ছবি: imago/UIG

আধ্যাত্মবাদেও মনের মানুষের খোঁজে নানান তত্ত্বকথা আছে৷ সব প্রাণীরই শরীর আছে, কিন্তু উন্নত মন আছে শুধু মানুষের৷ মানুষ চিন্তা করতে পারে, সৃষ্টি করতে পারে, ধ্বংসও করতে পারে৷ উন্নত মন আর চিন্তাশীলতাই মানুষকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছে৷

শারীরিকভাবে অনেক বেশি শক্তিশালী প্রাণীকেও মানুষ বশ করেছে তার বুদ্ধি দিয়ে, কৌশল দিয়ে৷ কার গায়ে কত বেশি জোর আছে, তা দিয়ে কখনোই শ্রেষ্ঠত্ব মাপা হয় না; মাপা হয় মনের সৃজনশীলতা দিয়ে, মানবিক চিন্তা দিয়ে৷ এ যুগের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং শারীরিকভাবে প্রায় অচল ছিলেন৷ কিন্তু তাও তিনি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী৷ কারণ তিনি চিন্তা করতে পারতেন৷ তার মানে শরীরের চেয়ে মন কখনো কখনো বেশি গুরুত্বপূর্ণ৷ শরীর আর মন দুটি আলাদা বিষয়৷ কখনো কখনো আমাদের শরীর খারাপ থাকে, কখনো কখনো মনও খারাপ থাকে৷ কিন্তু আমরা শরীরের সুস্থতা নিয়ে যতটা চিন্তিত, মনের বিষয়টি ততটাই উপেক্ষিত৷ শরীর খারাপ হলে আমরা উতলা হয়ে যাই, মন খারাপকে পাত্তাই দিতে চাই না৷ নিজেরা তো মনকে পাত্তা দেইইনা, কেউ যদি মনের অসুখটা ধরিয়ে দেন, আমরা কৃতজ্ঞ হওয়ার বদলে তার ওপর ক্ষেপে যাই৷ শরীরের যেমন ডাক্তার আছে, মনেরও ডাক্তার আছে৷ কাউকে মনের ডাক্তারের কাছে যেতে বললে তিনি রেগে যান, মুখের ওপর বলে বসেন, আমাকে কি পাগল মনে মনে হয়? মন নিয়ে এই মানসিকতা আমাদের বিপদে ফেলে দেয়৷ সমস্যা অল্প থাকতে ডাক্তারের কাছে যাই না৷ কিন্তু

সত্যি সত্যি যখন আমরা ‘পাগল' হয়ে যাই, তখন পাগলের মত ছুটে যাই মনের ডাক্তারের কাছে৷ তখন অনেক দেরি হয়ে যায়৷

মানসিকভাবে অসুস্থ লোকদের আমরা সহজে ‘পাগল' বলে সম্বোধন করি৷ শহরের শিক্ষিত, সচেতন মানুষেরই যেখানে মন নিয়ে কোনো ভাবনা নেই, সেখানে গ্রামের লোকজন তো মনের অস্তিত্বই মানতে চান না৷ কিন্তু শহরের শিক্ষিত লোকদের যেমন মনের অসুখ হয়, গ্রামের অশিক্ষিত লোকদেরও হয়৷ গ্রামের এই মনের অসুখে ভোগা মানুষদের জন্য আমার খুব কষ্ট হয়৷ যেহেতু মনের আলাদা অস্তিত্ব নিয়েই তারা সংশয়মুক্ত নন, তাই আলাদা ডাক্তারের কাছে যাওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না৷ মনের অসুখে ভোগা গ্রামের মানুষদের যেতে হয় নির্মম ‘চিকিৎসা পদ্ধতি'র মধ্য দিয়ে৷ সেই চিকিৎসা কোনো ডাক্তার দেয় না৷ ওঝা, কবিরাজ, ভন্ড বাবারা মানসিকভাবে অসুস্থ সেই মানুষগুলোকে চিকিৎসার নামে কী নির্মম নির্যাতন করে তা অবিশ্বাস্য৷ নির্যাতনের ধরনটা এতটাই ভয়াবহ তাতে যে কোনো সুস্থ মানুষই শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন৷ ছেলেবেলায় জ্বিনে ধরা একাধিক নারীর এমন ‘চিকিৎসা পদ্ধতি' দেখার দুর্ভাগ্য আমার হয়েছে৷ চার দশক পরে এসেও আজ লিখতে বসে আমি সেই স্মৃতি মনে করে শিউড়ে উঠছি৷ এখন টের পাচ্ছি, মানসিক রোগীর সেই চিকিৎসা মানসিকভাবে আমাকেও খানিকটা অসুস্থ করে ফেলেছে৷ এখনও যখনই মনে হয়, আমি আঁতকে উঠি৷ একজন মানুষকে শারীরিকভাবে কষ্ট দেয়ার যত ‘সৃজনশীল' পদ্ধতি আছে, সব যেন গ্রামের সেই ওঝা, কবিরাজ আর ভন্ড বাবাদের আবিস্কার৷ মরিচ পুড়িয়ে নাকে ঢুকিয়ে দেয়া, খুন্তি গরম করে লাগিয়ে দেয়া, লাঠি দিয়ে আঘাত করা, হাত-পা বেধে পেটানো, বন্ধ ঘরে ধোয়ায় অন্ধকার করে নির্যাতন, শেকল দিয়ে বেধে রাখা, মল-মুত্র পান করানো- বীভৎস সব ভাবনা৷

চিকিৎসার নামে নারীদের প্রায়শই যৌন হয়রানির শিকার হতে হয়৷ সবচেয়ে বেদনাদায়ক হলো, এই নির্যাতনগুলো হয়, সেই রোগীর স্বজনদের সম্মতিতে, তাদের সামনেই৷ ক্রমাগত নির্যাতনে একসময় যখন সেই রোগী নিস্তেজ বা অচেতন হয়ে যান, তখন বলা হয়, এইমাত্র জ্বিন তাকে ছেড়ে গেছে৷ অনেক ধকল গেছে বলে সে একটু দুর্বল হয়ে গেছে৷ ঠিক হয়ে যাবে৷ কিন্তু কিছুই ঠিক হয় না৷ সেই মেয়েটিকে আবারও জ্বিনে ধরে, আবারো তারওপর চলে সেই মধ্যযুগীয় নির্যাতন৷ কিন্তু সঠিক চিকিৎসা হয় না, তাই মেয়েটি হয়তো সুস্থও হয় না৷ একসময় মেয়েটি সত্যি সত্যি ‘পাগল' হয়ে যায়৷ একজন অল্প অসুস্থ মানুষকে চিকিৎসার নামে ধাপে ধাপে পূর্ণ অসুস্থ বানিয়ে ফেলা হয়৷

প্রত্যেক গ্রামেই একজন করে ‘পাগল' থাকেন৷ কেউ সারাবছরই পাগলামি করেন, কেউ শুধু শীতকালে৷ এরা বছরের পর বছর থাকেন, কিন্তু কোনো চিকিৎসা হয় না৷

সর্বোচ্চ চিকিৎসা হলো শিকল দিয়ে বেধে রাখা৷ এই পাগলদের নিয়ে গ্রামের সবাই মজা করে, টিটকারি করে, নিষ্ঠুর আচরণ করে৷ গ্লানির সাথে স্বীকার করছি, দুয়েকবার তেমন মজায় আমিও অংশ নিয়েছি৷ সুযোগ থাকলে আমি তাদের কাছে ক্ষমা চাইতাম৷ বুঝে না বুঝে এইরকম ঘটনায় গ্রামের অনেকেই অংশ নেন৷ সবাই পাগলদের নিয়ে মজা করে কেউ চিকিৎসা করে না৷

ইচ্ছা করে যে চিকিৎসা করে না, তা নয়৷ প্রথম কথা হলো, মানসিক সমস্যা যে শারীরিক সমস্যার মত একটা অসুখ, সেটাই অনেকে বোঝেন না৷ আর যারা বোঝেন, তারাও চিকিৎসার সুবিধা পান না৷ সমাজের ভয়ে অনেকে মানসিক রোগের কথা লুকিয়ে রাখেন৷ আমার মনে হয়, মানসিকভাবে অসুস্থ মানুষদের চিকিৎসার আগে আমাদের সমাজের মানসিকতার চিকিৎসা দরকার৷ সমাজের ভয়ে অনেক মানসিক রোগী ডাক্তার পর্যন্ত যেতে পারেন না, চিকিৎসা পান না৷ অথচ শুরুতে অল্প চিকিৎসাই তাকেসুস্থ করে তুলতে পারে৷ বাংলাদেশে মানসিক রোগীদের চিকিৎসার জন্য মাত্র দুটি বিশেষায়িত হাসপাতাল আছে- একটি পাবনায়, অপরটি ঢাকার শেরেবাংলানগরে৷

পাবনার হাসপাতালটি তো বিখ্যাত৷ বাংলাদেশে কেউ একটু উল্টোপাল্টা কথা বললেই, আমরা বলি, ও পাগল হয়ে গেছে, ওকে পাবনা পাঠিয়ে দাও৷ কিন্তু সমস্যা হলো, পাবনা পাঠিয়ে দিলেই তো আর সেখানে সিট পাওয়া যাবে না৷ ১৬ কোটি মানুষের দেশে মানসিক রোগীদের জন্য মাত্র দুটি বিশেষায়িত হাসপাতাল! জরিপ অনুযায়ী দেশে অন্তত দুই কোটি মানুষ বিভিন্ন ধরনের মানসিক সমস্যায় ভুগছেন৷

কিন্তু দেশে বিশেষজ্ঞ মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ আছেন ২৭০ জন, আর কাউন্সেলিংয়ের জন্য বিশেষজ্ঞ সাইকোলজিস্ট আছেন ২৫০ জন৷ দুই কোটি রোগীর জন্য দুটি হাসপাতাল আর এই ৫২০ জন চিকিৎসক থাকলে তো এই দেশে ‘ভন্ড বাবা'দেরই জয়জয়কার হবে৷

গ্রামে মানসিক রোগীদের নির্মম চিকিৎসার কথা শুনে আপনারা হয়তো ভেবেছেন, যাক শহরের মানসিক রোগীদের নিশ্চয়ই কোনো সমস্যা নেই৷ কিন্তু আপনার ভাবনাটা মস্ত বড় ভুল৷ গ্রামে তো বুঝে হোক না বুঝে হোক, চিকিৎসার চেষ্টা হয়৷ শহরে তাও হয় না৷ শহরে প্রথম প্রবণতা লুকিয়ে রাখার৷ তারচেয়ে বড় কথা হলো, আপনি চাইলেই তো চিকিৎসা পাচ্ছেন না৷ শহরে আবার মানসিক রোগের সাথে মাদকাসক্তিকেও গুলিয়ে ফেলা হয়৷ শহরে বেশিরভাগ মানসিক রোগী আর মাদকাসক্তের চিকিৎসা হয় গোপনে৷ গোপনে হোক আর প্রকাশ্যে, তা নিয়ে আমার আপত্তি নেই৷

প্রভাষ আমিনছবি: DW/S. Hossain

আমার আপত্তি চিকিৎসার ধরণে৷ শহরেও মানসিক রোগের চিকিৎসার মূল সুর সেই নিষ্ঠুরতাই৷ সম্প্রতি ঢাকার এক হাসপাতালে নির্মম নির্যাতনে পুলিশের মেধাবী কর্মকর্তা আনিসুল করিম শিপনের মৃত্যুর পর বিষয়টি সামনে এসেছে৷

বাংলাদেশে মানসিক রোগ এবং সাইকোলজিস্ট মিলিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছে ৫২০ জন৷ বিশেষজ্ঞরা নিশ্চয়ই ভালো জানবেন৷ কিন্তু বিশেষভাবে অজ্ঞ হিসেবে আমার মনে হয়, একজন মানসিক রোগীর চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন সংবেদনশীলতা, ধৈর্য্য, সঠিক ঔষধ, কাউন্সেলিং এবং সর্বোপরি মমতা৷ ‘হারানো সুর' সিনেমায় ডাক্তার রমা ব্যানার্জীরূপী সুচিত্রা সেনের মত না হলেও কাঁধে একটা মমতার হাত,

একটু স্নেহের পরশ, একটু নরম কথা একজন মানসিক রোগীর প্রাপ্য৷ এটাই হওয়া উচিত চিকিৎসার শুরু৷ কিন্তু অন্য দেশের কথা জানি না, বাংলাদেশে মানসিক রোগ ও মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসা শুরুই হেয় নির্মমতা দিয়ে৷

মানসিক রোগীদের পেটানো হয় নির্মমভাবে৷ পিটিয়ে নিস্তেজ করার পর চিকিৎসা শুরু করা হয়৷ আর মাদকাসক্তদের মাদক থেকে দূরে রাখার কৌশল হিসেকে আটকে রাখা হয়৷ এই ঘটনাগুলো বছরের পর বছর ধরেই ঘটছে৷ পুলিশের এএসপি আনিসুল শিপনের মৃত্যুর পর অনেক নির্মমতা সামনে এসেছে৷ শিপনকে ভর্তির পরপরই মাইন্ড এইড হাসপাতালের যে রুমটিতে নেয়া হয়, সেটির গালভরা নাম ‘অ্যাগ্রেসিভ ম্যানেজমেন্ট রুম'৷ কিভাবে অ্যাগ্রেসিভ রোগীদের ম্যানেজ করা হয়, সেটা আমরা সিসিটিভি ফুটেজে দেখেছি৷ যেখানে একজন মানুষ ঠিকমত শুতে পারবে না, সেখানে শিপনকে বিছানায় উপুড় করে ফেলে ৭/৮ জন মিলে পিটিয়েছে৷

আনিুসল শিপন পুলিশের এএসপি বলেই বিষয়টি নিয়ে এত হৈচৈ হচ্ছে৷ সাধারন কেউ মারা গেলে হয়তো ধামাচাপা পড়ে যেতো৷ মৃত্যু না হলেও প্রতিদিন মানসিকভাবে অসুস্থ কত মানুষ এখানে অ্যাগ্রেসিভ ম্যানেজমেন্ট রুমে নির্যাতিত হন, তার হিসাব কে রাখে৷ বলা হচ্ছে, আনিসুল শিপন মাদকাসক্ত ছিলেন, ভায়োলেন্ট ছিলেন৷ আরে ভাই, ভায়োলেন্ট ছিলেন বলেই তো তাকে হাসপাতালে আনা হয়েছে৷

ভায়োলেন্ট ছিলেন বলেই তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলতে হবে? পেটানো ছাড়া চিকিৎসার আর কোনো পদ্ধতি নেই? পেটানোই যদি ভায়োলেন্ট রোগীকে চিকিৎসার একমাত্র উপায় হয়, তাহলে সেটা তকো বাসাতেও করা সম্ভব৷ হাসপাতালে নিতে হবে কেন?

আনিসুল শিপনের মৃত্যুর পর বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত খবর এবং ব্যক্তিগতভাবে খোঁজ নিয়ে জেনেছি, বাংলাদেশে বেসরকারি মানসিক হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার নামে দিনের পর দিন যা হয়, তা অপরাধ৷

হাসপাতালগুলোর পরিবেশও অস্বাস্থ্যকর এবং অগ্রহণযোগ্য৷ প্রথম কথা হলো,কারাগারের মত বন্দীখানা৷ মানসিক রোগী বা মাসকাসক্তরা পালিয়ে যেতে পারে, তাই তাদের প্রায় বন্দী রাখা হয়; এ্টুকু যদি মেনেও নেই; হাসপাতালের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ কেন মানতে হবে? মানসিকভাবে যারা অসুস্থ, তাদের রাখতে হবে খোলামেলা পরিবেশে, যেখানে আকাশ দেখা যাবে, সবুজ দেখা যাবে; যেখানে থাকলে তার মন ভালো হয়ে যাবে৷ কিন্তু আমি যে কয়টা হাসপাতালের কথা জেনেছি, সেগুলোতে কিছুদিন থাকলে সুস্থ মানুষ পাগল হয়ে যাবে৷

অনেক সময় কিছু মানুষ জীবন দিয়ে অন্য অনেক মানুষকে বাঁচিয়ে দিয়ে যান৷ যেমন মেজর (অব.) সিনহার পর বাংলাদেশে ক্রসফায়ার বন্ধ হয়েছে৷ আশা করি আনিসুল শিপনের মৃত্যুর পর বাংলাদেশে মানসিক রোগীদের সাথে নির্মমতা চিরদিনের জন্য বন্ধ হবে৷ তবে এই ঘটনার বিচার করতে গিয়ে যেন আইনের কোনো ব্যত্যয় না ঘটে৷

যেহেতু আনিসুল শিপন পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন, তাই পুলিশ খুব দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছে৷ তবে এটা করতে গিয়ে নির্দোষ কেউ যেন সাজা না পান সেটা নিশ্চিত করতে হবে৷ আনিসুল শিপন হত্যা মামলায় জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের রেজিস্ট্রার ডাঃ আব্দুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ একজন সরকারি ডাক্তারকে এভাবে গ্রেপ্তার করা যায় কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷ তাছাড়া ডাঃ মামুন ঘটনাস্থলে উপস্থিতও ছিলেন না৷ আনিসুল শিপনকে প্রথমে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে নেয়া হয়েছিল৷ সেখানে ভর্তিও করা হয়েছিল৷

কিন্তু কেবিন না থাকায়, ওয়ার্ড পছন্দ না হওয়ায় শিপনের স্বজনরা তাকে বেসরকারি হাসপাতালের নিতে চান৷ তখন ডাঃ মামুনের পরামর্শ চাইলে তিনি তাদের মাইন্ড এইড হাসপাতালে যেতে বলেন এবং নিজেও ফোন করে দেন৷ রেফার করা যদি অপরাধ হয়, তাহলে এই অপরাধে মামলা হতে পারে৷ কিন্তু তাকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেয়াটা পুলিশের ক্ষমতার অপব্যবহারই মনে হয়েছে৷ পুলিশ হয়ে পুলিশ হত্যার তদন্ত করতে গেলে আবেগ বেশি থাকতে পারে৷ তবে পুলিশকে আচরণ করতে হবে অনুরাগ-বিরাগের বশবর্তী না হয়ে৷ যদি সেটা তারা করতে না পারে, তাহলে আনিসুল শিপন হত্যা মামলার তদন্তভার অন্য কোনো সংস্থার হাতে দেয়ার দাবি জানাচ্ছি৷

ডাঃ মামুনের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞরা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু করেছেন৷ আমি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদেরও বলবো, আপনারা অনুরাগ-বিরাগের বশবর্তী হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না৷ ডাঃ মামুনের মুক্তি আমিও চাইছি৷ কিন্তু ধর্মঘট করে মানসিক রোগীদের চিকিৎসা বঞ্চিত করার কোনো অধিকার আপনাদের নেই৷ আপনারা বরং সবাই মিলে মানুষকে রোগীদের চিকিৎসার নামে বাংলাদেশের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে যে নির্মমতা হয়, সেটা বন্ধ করুন৷ হাসপাতালের নামে যেন টর্চার সেন্টার কাম কারাগার বানানো আছে সেটা বন্ধ করুন৷ মানসিক রোগীদের সাথে যেন মানবিক আচরণ করা হয়, তা নিশ্চিত করুন৷ এমনিতেও নানান সামাজিক ট্যাবুর কারণে ৯২ ভাগ মানসিক রোগী ডাক্কারের কাছে যায় না৷ যারা শেষ পর্যন্ত ডাক্তার বা হাসপাতালে যান, তারাও যদি যথাযথ চিকিৎসা না পান; তাহলে মানসিক চিকিৎসা নিয়ে এই ভীতি কখনোই কাটবে না৷

আপনার বাসায় যদি পোষা পাখি থাকে, তাহলে সেই পাখিটি রাখার জন্য একটি খাঁচাও আছে নিশ্চয়ই৷ আপনার কাছে কোনটা গুরুত্বপূর্ণ- পাখি না খাঁচা? শুরুতে গানের কথা বলেছিলাম, গান দিয়েই শেষ করি৷ লালনের গান ‘খাঁচার ভেতর অচিন পাখি… বা মমতাজের গাওয়া ‘পাখিটা বন্দী আছে দেহের খাঁচায়…' দেহতত্ত্বের এই গানে খাঁচা হলো শরীর, আর পাথি হলো মন৷ এখন আপনি বলুন, আপনি খাঁচার বেশি যত্ন নেবেন না পাখির?

 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ