লিন্ডা লেৎসিয়ুস-এর ইভেন্ট ডিনারে গেস্টদের পরস্পরের সঙ্গে হাত বেঁধে দেওয়া হতে পারে; আবার হয়ত চোখ বাঁধে হলো ফেট্টি দিয়ে; কিংবা হয়ত নানা ধরনের ফুল দিয়ে ভোজ হচ্ছে – যেন বিভূতিভূষণের ‘মধুলিড়’!
বিজ্ঞাপন
হাতে হাতে আজ চোখে ফেট্টি বেঁধে কানামাছি হয়ে ডিনার খাওয়া? বার্লিনের উত্তর-পশ্চিমে ক্যুরিৎস শহরে খ্রিষ্টীয় যাজিকাদের মঠের বাগানে লিন্ডা লেৎসিয়ুস যে সব ‘ইভেন্ট ডিনার’-এর আয়োজন করেন, তার রীতি-নীতি, কায়দা-কানুন সব আলাদা – সাধারণ রেস্টুরেন্টের সঙ্গে তা ঠিক মেলে না৷ লিন্ডার ‘ইভেন্ট এজেন্সি’-র নাম হল ‘ওয়াইল্ড অ্যান্ড রুট’৷ এখানে খাওয়া-দাওয়াই হল একটা নতুন, নিজস্ব অভিজ্ঞতা৷
খাওয়াটাই যেখানে একটা অভিজ্ঞতা
03:05
লিন্ডা বলেন, ‘‘এক অর্থে আমাদের স্পেশাল ডিনারে অতিথিদের পরস্পরের সঙ্গে সহযোগিতা করার আহ্বান জানানো হয়; ভাগাভাগি করে নিতে, একসঙ্গে খেতে, টেবিলে অন্যভাবে বসতে৷ অনেক সময় ওপর থেকে খাবার পেড়ে নিতে হয়, কিংবা মাটি থেকে খুঁড়ে বার করে নিতে হয়; এমনকি বাক্সের স্ক্রু খুলে বার করে নিতে হয়৷ খাবার টেবিলে একসঙ্গে বসা আর একসঙ্গে খাওয়ার ওপর জোর দেওয়া হয়৷’’
লিন্ডার ‘ওয়াইল্ড অ্যান্ড রুট’ এজেন্সির আয়োজিত প্রতিটি ডিনারের ধরন আলাদা হলেও, খাবার-দাবার কিন্তু সবসময়ে আসে স্থানীয় খামারচাষিদের কাছ থেকে৷ ব্রান্ডেনবুর্গ প্রদেশের ‘সুখি’ শাক-সবজি দিয়ে লিন্ডা তাঁর নিরামিষ ভোজের আয়োজন করেন কুইরিৎস শহরের ‘মঠ ভোজনে’৷ ‘মঠ ভোজনের’ উপজীব্য হল খাওয়া যায়, এমন নানা ধরনের ফুল৷ ফুল যে শুধু দেখতে ভালো, শুধু তাই তো নয় – খাদ্য হিসেবেও ফুলের নানা গুণাগুণ আছে৷
জার্মানির অদ্ভুত সব সবজি
যাঁরা শাক-সবজি খেতে পছন্দ করেন, জার্মানি তাঁদের জন্য মজার এক জায়গা৷ নানা রকম সবজিতে ভরপুর হলেও, যাঁরা নতুন এসেছেন, তাঁদের মাথা ঘুরে যেতে বাধ্য৷ কোনো কোনো সবজির হয়ত নামই শুনেননি কোনোদিন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Brichta
কোলরাবি
উপমহাদেশে এই সবজি অবশ্য বেশ পরিচিত৷ বাংলায় একে বলা হয় ওলকপি৷ কিন্তু বিশ্বের অন্যান্য অনেক অঞ্চলেই পাওয়া যায় না এই সবজি৷ রসালো এবং কচকচে এই সবজি কাঁচাও খাওয়া যায়, আবার সেদ্ধ করে নানা রকম সসের সাথেও পরিবেশন করা যায়৷ জার্মানরা অবশ্য তরকারিতে রান্না করে ‘কোলরাবি’ খাওয়ার প্রক্রিয়াটি জানেন না৷
ছবি: picture-alliance/S. Persch
স্যাভয় বাঁধাকপি
দেখতে বাংলাদেশের বাঁধাকপির মতোই, কিন্তু পাতাগুলো একটু বেশি সবুজ আর কোঁকড়ানো, তাই না? খেতেও সাধারণ বাঁধাকপির চেয়ে বেশ আলাদা ভিটামিন-সি পরিপূর্ণ এই সবজি৷ স্যুপ বা স্ট্যু তৈরির জন্য এই কপিটি জার্মানদের খুব পছন্দের৷ অন্য খাবারের সাথে সেদ্ধ ‘স্যাভয়’ কপিও প্রায়ই খাওয়া হয়ে থাকে৷
ছবি: eyetronic/Fotolia
র্যুবশ্টিল
এক ধরনের সবুজ শালগমের ডাঁটাকেই এই নামে ডাকেন জার্মানরা৷ ইংরেজি নাম ‘গ্রিন টার্নিপ’৷ দেশটির পশ্চিম রাইনল্যান্ড এবং পার্শ্ববর্তী দেশ নেদারল্যান্ডসে এই খাবার বেশ জনপ্রিয়৷ কেটে টুকরো করে আলুর সাথে মিশিয়ে বেশ মজার এক খাবার তৈরি হয়৷ বসন্ত বা শরৎ, এই দুই ঋতুতেই ‘র্যুবশ্টিল’ চাষ করেন কৃষকরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Thissen
বন্য রসুন
রসুন তো রসুনই, এর আবার বন্য কি, আর পোষা কি! এমন ভাবাটা স্বাভাবিক৷ কিন্তু বনে জন্মানো এই রসুন সাধারণ রসুনের চেয়ে অনেক কড়া স্বাদের৷ জার্মানরা একে ডাকেন ‘বেয়ারলাউখ’ নামে৷ জার্মানিতে বন্য রসুন অনেক জনপ্রিয়৷ স্যুপ, সালাদ, এমনকি পনিরেও ব্যবহার করা হয় ‘বেয়ারলাউখ’৷
ছবি: picture-alliance/dpa/blickwinkel/H. P. Schaub
ব্ল্যাক সালসিফাই
ব্ল্যাক সালসিফাই এক ধরনের গাছের শেকড়৷ মূল সবজি সাদা হলেও এর চামড়া কালো হওয়াতেই এমন নাম৷ ‘শোয়ার্ৎস ভুর্সেল’ ‘গরিবের অ্যাসপারাগাস’ বা ‘শীতের অ্যাসপারাগাস’ নামেও ডেকে থাকেন জার্মানরা৷ জার্মানদের অতিপ্রিয় সাদা অ্যাসপারাগাস শীতকালে পাওয়া যায় না৷ তখন বিকল্প হিসেবে সেদ্ধ আলু ও মাখন দিয়ে এই ‘শোয়ার্ৎস ভুর্সেল’ খেয়ে থাকেন জার্মানরা৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/R. Koenig
সাদা অ্যাসপারাগাস
ওপরের ছবিতে যে সবজি দেখা যাচ্ছে, সেটি সত্যিকারের অ্যাসপারাগাস৷ তবে অন্যান্য দেশে সবুজ অ্যাসপারাগাস বেশি জনপ্রিয় হলেও জার্মানদের পছন্দ এর সাদা প্রজাতি৷ শীত ধীরে ধীরে কমতে থাকে, জার্মানরাও প্রস্তুত হন অ্যাসপারাগাসের জন্য৷ এপ্রিলের শেষ থেকে বাজারে আসতেই ভিড় করে সবাই কিনে নেন পছন্দের এই সবজি৷
ছবি: Imago/Strussfoto
পার্সলের শেকড়
গাজর, মূলার মতোই আরেক ধরনের শেকড়-সবজি এই পার্সলে৷ তবে সাধারণত এই ধরনের অন্যান্য সবজির তুলনায় আকারে একটু বড় হয় পার্সলে৷ ছবিতে বাম দিক থেকে তৃতীয় সবজিটি হচ্ছে পার্সলে৷ যত কচি, তত মজা, পার্সলের ক্ষেত্রে এমনটাই মনে করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Brichta
সাদা মূলা
জার্মানির বাভেরিয়া অঞ্চলে কখনও বিয়ারের সাথে হালকা নাশতার অর্ডার দিলে প্লেটের মধ্যে অন্য খাবারের সাথে ছোট ছোট করে কাটা, মচমচে মূলাও পাবেন৷ জার্মানরা সবসময়ই এই সবজি কাঁচা কাঁচা খেয়ে থাকেন৷
ছবি: picture-alliance/chromorange/B. Jürgens
8 ছবি1 | 8
লিন্ডা বলেন, ‘‘শুধু দেখানোর জন্য যে, ফুলের মধ্যে যে কতো ধরনের ওষধি থাকে, আমরা আজ তা ভুলে গেছি৷ আমরা বেসিল বা তুলসীপাতা কিনি, টমেটো আর মোৎসারেলা চিজ বেসিল দিয়ে খেতে ভালো লাগে বলে৷ কিন্তু তুলসীপাতা যে মাথা ধরা সারাতেও কাজে লাগে, তা আজ আর কেউ জানে না বা আমাদের বলে দেয় না৷ কাজেই বাড়ির কাছে যে সব জিনিস পাওয়া যায়, তার ক্ষমতা সম্পর্কে আমরা লোকজনকে সচেতন করে তুলতে চাই, যাতে তারা অন্যভাবে বাজার করতে, অন্য ধরনের জিনিসপত্র খেতে শেখেন৷’’
জিনা মঠের ক্রিস্টফ লেনৎসেন-এর বাগানে সেই সব ফুল ফোটে, লিন্ডা তাঁর ডিনার রান্নায় যা ব্যবহার করে থাকেন৷ বার্লিনের ক্রয়েৎসব্যার্গ এলাকার ন'নম্বর সবজি-বাজারে ক্রিস্টফের একটি ফুলের দোকান আছে – সেখানেই দু'জনের আলাপ৷ ক্রিস্টফের ব্যবসা অরগ্যানিক সার্টিফিকেট প্রাপ্ত, কাজেই তাঁর বাগানের বা দোকানের ফুল অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নির্দ্বিধায় খাওয়া চলে৷ ক্রিস্টফের ব্যাখ্যা: ‘‘সহজ কথায় বলতে গেলে, আমরা কোনো রাসায়নিক সার ব্যবহার করি না; কোনো কীটনাশক ব্যবহার করি না৷ পাতায় পোকা ধরলে অন্য পোকারা তাদের খেয়ে ফেলবে, বলে আমরা আশা করি৷’’
সাধারণত ফুলের ব্যবসায়ীরা ফুলকে খাদ্য বলে মনে করেন না৷ অপরদিকে লিন্ডা জানেন যে, কর্নফ্লাওয়ার ফুলটি হজমের পক্ষে ভালো, বা ক্যালেন্ডুলা ফুলে ত্বক ভালো হয়৷ ‘সেজ’ গাছের পাতা জার্মান রান্নায় ব্যাপকভাবে ব্যবহার হয়; কিন্তু তার ফুলগুলোর স্বাদও অনেকটা একই রকম, কাজেই সেগুলোকেও খাওয়া চলে৷
বিরগিট ভলস্কে/এসি
সুস্বাদু কিন্তু ক্ষতিকর পাঁচটি খাবার
কিছু খাবার খেতে খুব ভালো৷ একটু খেয়ে থামতে ইচ্ছে করে না৷ ফলে আমরা সেগুলো বেশি বেশি খাই এবং স্বাস্থ্যের ক্ষতি করি৷ জেনে নিন এমন পাঁচটি খাবারের কথা৷
ছবি: Fotolia/Silverego
সাদা রুটি
সাদা রুটি তৈরি হয় গমের ভেতরের অংশ দিয়ে৷ এমন আটা বেশি আঁশযুক্ত নয়, ফলে এই আটার রুটি খেলে একটু পরেই আবার খিদে পায়, ইনসুলিনের মাত্রাও বেড়ে যায়৷ গবেষকরা বলছেন, সাদা আটার রুটি মস্তিষ্কে খাওয়ার স্পৃহাও জাগিয়ে তোলে৷ ফলে একটু পরেই আমরা আবার অন্য কিছু খেতে চাই৷ আর বেশি খেলে যে অনেক রকম ক্ষতির শঙ্কা থাকে তা তো সবাই জানেন!
ছবি: Fotolia/Viktor
সিরিয়েল
বাজারে কর্নফ্লেকসের মতো যে সব সিরিয়েল পাওয়া যায়, সেগুলোর বেশিরভাগই অল্প আঁশযুক্ত খাদ্য উপাদান দিয়ে তৈরি৷ এমন খাবার খেলে রক্তে চিনির মাত্রা খুব দ্রুত বেড়ে যায়৷ তারপর দ্রুত কমেও যায়৷ তাই সকালের নাশতায় সিরিয়েল না খাওয়াই ভালো৷
ছবি: Fotolia/manla
সুশি
খাবার হিসেবে মাছের কোনো তুলনা হয় না৷ কিন্তু এই মাছই যখন সাদা রংয়ের মিষ্টি সুশি ভাতের সঙ্গে খাবেন তখনই বিপদ৷ সুশি অল্প খেলে পেট যেন ভরতেই চায় না৷ একটু খেলে কিছুক্ষণ পরই মনে হয় অন্য কিছু খাই৷ সাদা চালের পাস্তা খেলেও এমন হয়৷ তাই সুশি বা পাস্তা যদি খেতেই হয়, বাদামি চালেরটা খান৷ তখন আর মুটিয়ে যাওয়া বা রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি খুব বেশি বাড়বে না৷
ছবি: JNTO
নোনতা এবং মিষ্টি
মিষ্টি খাবারের মস্তিষ্কের সঙ্গে বেশ ঘনিষ্ট যোগাযোগ রয়েছে৷ মিষ্টি স্বাদের অনুভূতিটা খুব তাড়াতাড়ি মস্তিষ্কে পৌঁছায়৷ তাই লক্ষ্য করবেন, নোনতা স্ন্যাকস খেলে অনেক সময় খুব মিষ্টি খেতে ইচ্ছে করে৷ চিপস খেলেও মনে হয় পেট ভরে গেছে৷ কিন্তু একটু পরই আবার কিছু-না-কিছু, অনেক সময় বিশেষ করে মিষ্টি খেতে খুব ইচ্ছে করে৷
ছবি: Fotolia/boguslaw
পিৎসা
আপনি কি কখনো একটু টুকরো পিৎসা খেয়ে থামতে পারেন? থামা খুব কঠিন৷ পিৎসাও সাধারণত সাদা আটা দিয়েই তৈরি হয়৷ সঙ্গে আরো থাকে তেল, চিজ এবং নানা ধরণের ‘প্রিজারভেটিভস’, যেসব রক্তের চিনির মাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তন আনে৷ মস্তিষ্কে তৃপ্তির অনুভূতির জন্ম দেয় এমন হরমোনও তৈরি করে এ ধরণের খাবার৷ ফলে মানুষ বেশি বেশি খায় এবং স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে৷