1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

খাওয়া যখন নেশা

কাথরিন ভিটশ/আরবি২৯ এপ্রিল ২০১৩

হঠাৎ ক্ষুধার আক্রমণ পেয়ে বসলে স্যান্ডউইচ, কেক, ভাজাভুজি – এসব মজার খাবার টপাটপ মুখে পুরতে থাকেন সান্ড্রা৷ কয়েক মিনিটে কয়েক হাজার ক্যালোরি খতম, ক্ষুধা থাকুক বা নাই থাকুক৷ আসলে সান্ড্রা ‘বিঞ্জ ইটিং ডিসওর্ডার' রোগে ভুগছেন৷

ছবি: picture-alliance/dpa

এক ধরনের মানসিক অসুখ এটি৷ খেতে খেতে যখন পেটে আর জায়গা থাকে না, তখনই ক্ষান্ত দেন এই নারী৷ তবে সৌভাগ্যবশত ক্ষুধার এই আক্রমণটা পেয়ে বসে অল্পসময়ের জন্য৷ সপ্তাহে মাত্র কয়েকদিন৷

অন্য দুই ধরনের ইটিং ডিসওর্ডার ‘বুলিমিয়া' ও ‘অ্যানোরেক্সিয়া'-র মতো ওজন নিয়ে মাথা ঘামায় না বিঞ্জ ইটাররা৷ বমি করে কিংবা খেলাধুলা ও ছোটাছোটি করে ক্যালোরি কমানোর দিকে নজর নেই তাদের৷ ইটিং ডিসওর্ডারের এই ধরনটি সম্পর্কে মানুষের তেমন কোনো ধারণা নেই৷ অথচ ইটিং ডিসওর্ডারের প্রায় ১৫ শতাংশ রোগী এই সমস্যায় ভোগেন৷ খাবারের মাধ্যমে তারা মানসিক চাপ ও ভেতরের শূ্ন্যতা দূর করতে চান৷

বিঞ্জ ইটারদের কাছে খাওয়া একটি নেশা৷ সত্যিকারের ক্ষুধা বা খাওয়ার ইচ্ছার সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই৷

নেশার মতো

সান্ড্রা জানান, ‘‘অনেকে যেমন বিয়ার পান করতে পাবে ছোটেন৷ আমি ছুটি ফ্রিজের দিকে৷ হঠাৎ করেই এই চাপটা এসে যায়৷ তখন অশান্তি লাগে৷ ঠিক মাদকাসক্তদের মতো৷''

আন্ড্রেয়া হেলেসিকছবি: DW/K. Witsch

কিন্তু গপাগপ খাওয়ার পর হঠাৎ চেতনা ফিরে আসে৷ তখন লজ্জা, অনুশোচনা ও হতাশা দেখা দেয়৷ নেতিবাচক চিন্তা ঘিরে থাকে মাথায়৷ আবার সেই চিন্তাটা ঢাকতে খাবারের দিকেই হাত বাড়ান তারা৷ এ যেন ভয়ংকর এক চক্র, যা থেকে সহজে বেড়িয়ে আসতে পারেন না ভুক্তভোগীরা৷

বাড হনেফ শহরের পুনর্বাসন ক্লিনিকের ইটিংডিসওর্ডার বিভাগের প্রধান আন্ড্রেয়া হেলেসিক এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘অন্যান্য নেশার মতোই একটা কিছু পুষিয়ে নেবার প্রবণতা থাকে বিঞ্জ ইটারদের৷ ভুক্তভোগীরা নিজেরাই জানে না, এটা আসলে কী? বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আত্মমর্যদাবোধের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে সমস্যাটির৷ অথবা এর পেছনে থাকে অতীতের কোনো মানসিক আঘাত, যার ঠিকমত চিকিত্সা হয়নি৷''

সান্ড্রা বছর দুয়েক ধরে ড. হেলেসিকের কাছে চিকিত্সা নিচ্ছেন৷ ইতিমধ্যে সমস্যা কিছুটা আয়ত্তে এসেছে৷ তাঁর ভাষায়, আমি আসলে ঠিকমতো খাওয়াই শিখিনি৷ এখন আমি বুঝতে পেরেছি, খাওয়া দাওয়ার এই সমস্যার পেছনে রয়েছে শৈশবে ঘটা কোনো মানসিক আঘাত৷ এটি আমি এখন চিকিত্সা করে দূর করার চেষ্টা করছি৷''

অনেকেই স্থূলাকায়

ভুক্তভোগীদের ৪০ শতাংশই স্থূলাকায়৷ তবে সব মোটা মানুষই যে বিঞ্জ ইটার তা নয়৷ রোগটির মূল লক্ষণ হলো, হঠাৎ করে প্রচণ্ড খাওয়ার ইচ্ছা৷ এর সাথে যুক্ত হয় নিজের শরীর সম্পর্কে একটা নেতিবাচক ধারণা, সমাজে চলাফেরায় সীমাবদ্ধতা ও নানা মানসিক সমস্যা৷ ওজন বাড়ার সাথে সাথে ডায়বেটিস ও উচ্চরক্তচাপের মত অসুখ বিসুখও দেখা দেয়৷

ইওহানিটা হাসপাতালের ডা. মিন-সিওপ সোনছবি: DW/K. Witsch

সান্ড্রার ওজন ১৩৪ কিলোগ্রাম৷ তাই ঘরকন্নার কাজ করতে গেলে হাঁপিয়ে ওঠেন তিনি৷ ধোয়ামোছা করার পর দেহ আর এগুতে চায় না৷ সারা শরীর ব্যথা করে৷ চলাফেরাও কষ্টকর হয়৷

সাইকো সোমাটিক চিকিত্সার দুই বছর পর এখন ওজনের বিরুদ্ধ লড়তে চান সান্ড্রা৷ নানা রকম ডায়েটের চেষ্টা করে সফল না হওয়ায় পাকস্থলী অপারেশনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি৷ এতে পাকস্থলীর অনেকটা কেটে ফেলা হয়৷ এর ফলে অল্প খেয়েই দ্রুত পেটে ভরে যায়৷

বনের ইওহানিটা হাসপাতালের ডা. মিন-সিওপ সোন এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘অপারেশন শুধু ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে৷ কিন্তু ইটিং ডিসওর্ডারের মূল সমস্যাটির সমাধান করতে পারে না৷ এজন্য প্রয়োজন সাইকো থেরাপি৷ অপারেশন করার পরও থেরাপি চালিয়ে যাওয়া দরকার৷''

অপারেশনের পর সান্ডার কাছে এক নতুন জীবনের পথ খুলে যায়৷ কিন্তু তাঁকে সাইকো থেরাপি চালিয়ে যেতে হবে, সেই সাথে পুষ্টি পরামর্শকেন্দ্রে শেখানো নিয়ম কানুনগুলি মেনে চলতে হবে৷ সমস্যাগুলি মনের ভেতরে পুষে না রেখে মুখ খুলতে হবে৷ তবেই হাতের মুঠোয় আসবে সাফল্য৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ