খাগড়াছড়িতে ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ড, সরকারের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা
১ অক্টোবর ২০২৫
খাগড়াছড়িতে কিশোরী ধর্ষণ ও ধর্ষকদের বিচার দাবিতেআন্দোলনের সময় গুলিতে তিনজন নিহত হওয়ার ঘটনায় স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷ তাদের ‘দায়িত্বহীন' আচরণের কারণেই পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা৷
বিশ্লেষকরা আরো মনে করেন, আর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ দায়িত্বশীলরা এখনো একপাক্ষিক আচরণ করছেন৷ শুধু তাই নয়, আইএসপিআরের বিবৃতিকেও ‘একপাক্ষিক' বলছেন তারা।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, পাহাড়ের সমস্যা বুঝতে হবে, তা না বুঝে শক্তি প্রয়োগ করে সমাধান সম্ভব নয়। সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক উদ্যোগ এবং শান্তি চুক্তির বাস্তবায়ন প্রয়োজন - ডয়চে ভেলেকে এমন কথাও বলেছেন তারা। খাগড়াছড়ি উত্তাল হয়ে ওঠে এক আদিবাসী কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর। ধর্ষকরদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবিতে শুরু হয় আন্দোলন। কিন্তু সেই দাবি পুরণ না করায় পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হয়। আদিবাসীদের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে৷ সংঘর্ষ শুরু হলে এক পর্যায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিন আদিবসী নিহত ও ২০ জন আহত হন।
আদিবাসীদের শতাধিক দোকানপাট, বাড়ি-ঘরে হামলা চালিয়ে লুটপাট ও অগ্নি সংযোগ করা হয়। মানবাধিকার কর্মী নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, "ওই ঘটনার যে ভিডিও আমরা দেখেছি, তাতে স্পষ্ট যে, গুইমারায় সেনাবাহিনী নির্বিচারে গুলি করেছে। সেনাবাহিনীর সঙ্গে স্থানীয় বাঙালিরাও ছিল।” তার কথা, "একটি ধর্ষণের ঘটনা হ্যান্ডেল করা , অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা কোনো কঠিন কাজ ছিল না। সেটা না করে পরিস্থিতি যখন খারাপ হলো, তখন আমরা দেখলাম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা দায় চাপাচ্ছেন। আগে যেমন কোনো ঘটনা ঘটলে বলা হতো বিএনপি ও জামায়ত-শিবির, এখন বলা হচ্ছে ফ্যাসিস্ট ও তাদের দোসর। পাশের একটি দেশের ওপর দায় চাপানো হয়। কিন্তু যা করার দরকার ছিল, তা তারা করেননি। ”
গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে খাগড়াছড়ি সদরে এক আদিবাসী কিশোরী ধর্ষণের শিকার হন।ওই ঘটনায় পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তার করলেও দাবি ছিল ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করার। ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা' তিনজনকেই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের আল্টিমেটাম দেয়। সেই দাবি পুরণ না হওয়ায় ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে খাগড়াছড়িতে অবরোধ শুরু হয়। অবরোধের মধ্যেই খাগড়াছড়ির মহাজন পাড়াসহ আরো কয়েকটি এলাকায় হামলা চালিয়ে লুটপাট করা হয়, আগুন দেয়া হয়। জুম্ম ছাত্র-জনতার মুখপাত্র কৃপায়ন চাকমার অভিযোগ- সেই সময় মাইকে মসজিদে হামলা চালানোর গুজবও ছড়ানো হয়। এরপর পরিস্থিতির আরো অবনতি হলে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়৷ ২৮ অক্টোবর ১৪৪ ধারার মধ্যে গুইমারায় অবরোধ চলাকালে প্রতিবাদ মিছিল হয়। সেখানে হামলা চালানো হয় এবং গুলিতে তিন আদিবাসী নিহত হন।
ধর্ষণ ও বিচারহীনতার ধারাবাহিকতা
খাগড়াছড়িতে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠা ওই কিশোরীর শারীরিক পরীক্ষার পরে সেই প্রতিবেদন জেলা সিভিল সার্জনের কাছে জমা দিয়েছে মেডিকেল বোর্ড। সেখানে জানানো হয়েছে, ওই কিশোরীকে ধর্ষণের আলামত মেলেনি। গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটার দিকে খাগড়াছড়ির সিভিল সার্জন ছাবের আহম্মেদের কাছে প্রতিবেদনটি জমা দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের সূত্রে খবর, ওই প্রতিবেদনে ধর্ষণের পরীক্ষার ১০টি সূচকের সব কটিতে স্বাভাবিক লেখা রয়েছে। এর অর্থ ধর্ষণের কোনো আলামত নেই।
খাগড়াছড়ির মহিলা কল্যাণ সমিতি ডয়চে ভেলেকে জানায়, তাদের হিসাব অনুযায়ী, গত এক বছরে এই জেলায় সাতজন পাহাড়ী নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। আর ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে তিনটি। ধর্ষণের ঘটনাগুলোতে সংঘবদ্ধ ধর্ষণই বেশি। খাগড়াছড়ির মহিলা কল্যাণ সমিতির প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর মনীষা তালুকদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আসলে এখানে ধর্ষণের বিচার পাওয়া যায় না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আসামি ধরা পড়লেও তারা পরে জামিনে ছাড়া পেয়ে যায়। ডিএনএ'র মিল না পাওয়া এখানে একটি সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে, যা নিয়ে আমাদের সন্দেহ আছে।”
মনীষা তালুকদারের অভিযোগ, " ধর্ষণের মামলা থেকে শুরু করে ডাক্তারি পরীক্ষা, জবানবন্দি নেয়া, আসামি গ্রেপ্তার - সব ক্ষেত্রেই সময় ক্ষেপন করা হয়। বিশেষ করে ডাক্তারি পরীক্ষায় দেরি করায় ধর্ষণের আলামত নষ্ট হয়ে যায়। সেটা ধর্ষকের পক্ষে যায়।”
বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের খাগড়াছড়ি জেলার সভাপতি ওয়াইবাই মারমার অভিযোগ, " এখানে ধর্ষণের ক্ষেত্রে এটা নতুন কোনো ঘটনা নয়। পুলিশ প্রশাসনের কাছে গেলে তারা এটাকে স্বাভাবিক ঘটনা বলে মামলা করতে নিরুৎসাহিত করে। তারা বলে. এটা তো ঘটতেই পারে। প্রভাবশালীরা চাপ দিয়ে বা টাকার বিনিময়ে পুলিশের সহায়তায় মীমাংসা করার চেষ্টা করে। তাই মামলা নিতে দেরি করে। সময় নষ্ট করে। নানা ভয় দেখায়, যে ‘মামলা করলে আপনারাই সমস্যায় পড়বেন'। ”
"মামলা নিলেও শেষ পর্যন্ত এজাহার হালকা করে দেয়, যাতে আসামি গ্রেপ্তার হলে জামিনে ছাড়া পায়। ফলে যারা গ্রেপ্তার হয়েছে, তাদের কাউকেই ছয় মাসের বেশি কারাগারে থাকতে হয়নি,” বলেন তিনি। "আর দুই-একজন আটক হলেও শেষ পর্যন্ত কোনো ধর্ষকের শাস্তি হয়েছে এমন উদাহরণ আমার জানা নাই,” বলেন ওয়াইবাই মারমা। তার দাবি, "যারা ধর্ষণের শিকার হন, তারা সবাই আদিবাসী। কিন্তু ধর্ষক যারা, তারা আদিবাসী নয়। ফলে ধর্ষণের শিকার নারী ও তার পরিবার রাজনৈতিকসহ নানা চাপের মুখে পড়ে।”
পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ?
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুধু খাগড়াছড়ি নয়, তিন পার্বত্য জেলাতেই দীর্ঘদিন ধরে আদিবাসীদের মধ্যে নানা বিষয় নিয়ে ক্ষোভ আছে। তাদের অনেকের মতে, খাগড়ছড়ির ঘটনা পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। পাহাড়িদের জমিদখল, ভূমি থেকে উচ্ছেদ, পর্যটনের নামে পাহাড় দখল, জুমের জমি দখল করে রাবার বাগান করা - নানা ধরনের অভিযোগজনিত ক্ষোভ আছে আদিবাসীদের মাঝে। পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন না করে পাহাড়িদের আরো ‘প্রান্তিক' করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন।
এর আগে ২০২৪ সালে সেপ্টেম্বরে খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় পাহাড়ি ও বাঙালিদের সংঘর্ষে চারজন আদিবাসি নিহত হন, আহত হন ২০ জনেরও বেশি। ওই সময়ও বাড়ি-ঘর ও দোকানপাটে হামলা, লুটপাট চালিয়ে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে।
এ বছর আরেকটি ঘটনা ঘটে গত ১৮ সেপ্টেম্বর৷ সদর উপজেলায় মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে মো. মামুন নামের এক বাঙালি যুবককে পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগ ওঠে। পরের দিন খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় পাহাড়ি-বাঙালিদের সহিংসতার সময়গণপিটুনিতে ধনঞ্জয় চাকমা নামের এক ব্যক্তি নিহত হন। রাতে জেলা সদরে সংঘর্ষ চলার সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে নিহত হন আরো দুই পাহাড়ি যুবক।
ওই ঘটনার প্রতিবাদে ২০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার রাঙামাটিতে ‘সংঘাত ও বৈষম্যবিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন'-এর ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল হয়। মিছিলটি রাঙামাটি শহরের বনরূপা বাজারে পৌঁছালে বাঙালিদের সঙ্গে সংঘাত বাধে। দুই পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ করে। পাহাড়ি শিক্ষার্থীদের মিছিলটি পিছু হটে গেলেও সশস্ত্র বাঙালিদের একটি দল অনিক চাকমা নামের এক কিশোরকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আমরা তো গত ২৮ বছর ধরে তাদের সাথে বেঈমানী করেছি। শান্তি চুক্তি করার পর তা বাস্তবায়ন হলো না। চুক্তি কখনো সরকার করে না, করে রাষ্ট্র। কিন্তু বলা হয়, ‘আগের সরকার করেছে, আমরা করিনি।' ইউনূস সরকার আসার পরও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। অথচ বৈষম্য দূর করা ছিল এই সরকারের প্রতিশ্রুতি। স্বাধীনতার পর বলা হলো, ‘তোমরা সবাই বঙালি হয়ে যাও।' এরপর সেখানো সেটেলারদের নিয়ে তাদের উচ্ছেদ-প্রক্রিয়া শুরু হলো। আসলে তাদের প্রতি জাতিগত অবদমন চলছে।”
"পার্বত্য এলাকায় রাস্তা হচ্ছে,পর্যটন স্পট হচ্ছে, পাঁচতারা হোটেল হচ্ছে, স্থাপনা হচ্ছে, মানুষ সাজেক পর্যন্ত চলে যাচ্ছে। কিন্তু আদিবাসীদের জন্য কিছু করা হচ্ছে না। তারা উচ্ছেদ হচ্ছে। তাদের জমি দখল হচ্ছে। কিন্তু তাদের ছেলে-মেয়েরা এবার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ব্যাপকভাবে অংশ নিয়েছে,” বলেন তিনি।
তার প্রশ্ন, "এবার খাগড়াছড়িতে একটি ধর্ষণের আসামিদের আটক করা কি কোনো কঠিন কাজ চিল?'' ‘‘কিন্তু সেটা না করে তিনজনকে হত্যা করা হলো। বাড়ি-ঘর. দোকানপাট পোড়ানো হলো। সরকারের পক্ষ থেকে একটি গোষ্ঠীর পক্ষে অবস্থান নেয়া হলো। তারা কি রাষ্ট্রের নাগরিক হিসাবে ন্যায় আচরণ পাবে না?”
জাকির হোসেনের দাবি," স্বাধীন বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন করে খাজড়াছড়ির প্রকৃত ঘটনা বের করে অপরাধীদের শাস্তি দিতে হবে। দিতে হবে ক্ষতিপুরণ।”
হতাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, "শক্তি প্রয়োগ করে এর সমাধান হবে না। সরকার এত সংলাপ করে, সব পক্ষকে নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের এই সংকট নিয়ে কেন সংলাপ করে না?”
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ
পার্বত্য চট্টগ্রাম গত ১ জানুয়ারি জনসংহতি সমিতি (জেএসএস)-এর প্রকাশিত মানবাধিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রামে ২০২৪ সালে ২০০টি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।এসব ঘটনায় ছয় হাজার ৫৫ জন মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছেন। ওই সময়ে ২১ জন নিহত এবং ১১৯টি বাড়ি ও দোকানে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট হয়েছে। এছাড়া বহিরাগত কোম্পানি, প্রভাবশালী ব্যক্তি ও সেটেলার কর্তৃক দুই হাজার ৩১৪ একর ভূমি বেদখল করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ২০২৪ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামের নাজুক সামগ্রিক পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। বরং সার্বিক পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটেছে। ২০২৪ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি সাধিত হয়নি। উপরন্তু পার্বত্য চুক্তিবিরোধী ও জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থী কার্যক্রম অধিকতর জোরদার হয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০২৪ সালে সবচেয়ে নৃশংস ও রোমহর্ষক ঘটনা হলো গত সেপ্টেম্বরে জুম্ম জনগণের ওপর নৃশংস সাম্প্রদায়িক হামলা, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হওয়া এবং ডিসেম্বরে লামায় ত্রিপুরাদের ১৭টি বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া।
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং ডয়চে ভেলেকে বলেন, " এখন তো সবাই বলছে গুইমারার ঘটনায় সেনাবাহিনী জড়িত। সরকার তাদের পক্ষ নিচ্ছে। সরকারের নীতি যদি এই হয়, তাহলে এক সময় পাহাড়ে তো আর আদিবাসী থাকবে না। শেষ হয়ে যাবে। এমনিতেই তো কমে যাচ্ছে। পাহাড়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে, হত্যাকাণ্ড হচ্ছে, ধর্ষণ হচ্ছে।সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে। এইসব ঘটনার বিচার না হলে তো আরো ঘটবে। তাহলে আমরা বিচার পাবো কার কাছে?”
তার কথা, "আমরা তো এই দেশের নাগরিক। আমাদের নাগরিক অধিকার , মানবাধিকার, ভূমির অধিকার তো রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে হবে। এখন যা পরিস্থিতি, তাতে সব পক্ষকে শান্ত থেকে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। দায় না এড়িয়ে কার্যকর পক্ষেপ নিতে হবে। আর হত্যা ধর্ষণের জন্য দায়ীদের বিচারের আওতায় না আনলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা কঠিন হবে।”
আইএসপিআরের বিবৃতি একপাক্ষিক
মানবাধিকার কর্মী এবং নারী নেত্রী খুশী কবির ডয়চে ভেলেকে বলেন, "ধর্ষণে জড়িতদের সবাইকে ধরলেই যেখানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকতো, সেখানে সেটা না করে তিনজনকে হত্যা করা হলো, বাড়ি-ঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও আগুন দেয়া হলো। এটা তো কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আর এই ঘটনায় আইএসপিআর যে বিবৃতি দিয়েছে তা পুরোটাই একতরফা। এটা তো আদিবাসীদের মধ্যে আরো বেশি আস্থাহীনতা তৈরি করলো। তারা তো আরো ভীত হয়ে পড়লো। আর ধর্ষণের বিচার চেয়ে কি আন্দোলন করা যাবে না? আমরাও তো দেখেছি, আন্দোলন না করলে বিচার হয় না, আসামি গ্রেপ্তার হয় না।”
"আদিবাসীদের ওপর আত্রমণ এবং হামলার ঘটনা আরো ঘটেছে। বমদের ওপর হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গুইমারার ঘটনায় তিনজন নিহত হলো। আহত যারা হয়েছেন তাদের একজনকে যিনি হাসপাতালে নিয়ে গেছেন, তাকেও আটক রা হয়েছে। তাহলে তারা কি চিকিৎসাও পাবে না? এটা তো অমানবিক আচরণ,” বলেন তিনি।
তার কথা, "আর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্য নিয়ে মন্তব্য না করাই ভালো। অনেক সময় তারা জানেন না কীভাবে কী বলতে হয়। আর সেটা শুনতে কেমন লাগে! আমার কথা হলো, আদিবাসী , পাহাড়ি বলে কি তারা বাংলাদেশের নাগরিক না?” নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন," কারো ওপর দায় চাপিয়ে এই সংকটের সামাধান হবে না। যারা প্রকৃত দায়ী, তাদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। আর খুঁজতে হবে রাজনৈতিক সমাধান। এটা দেশের স্বার্থেই করতে হবে।”
সরকারের দায় চাপানোর কৌশল
খাগড়াছড়ির ঘটনায় রবিবার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, "একটি মহল খাগড়াছড়িতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতৈরির চেষ্টা করছে। ভারত বা ফ্যাসিস্টদের ইন্ধনে এ ঘটনা ঘটছে।” উপদেষ্টা আরো বলেন, "কিছু সন্ত্রাসী পাহাড়ের ওপর থেকে গুলি চালাচ্ছে। এসব অস্ত্র প্রায়ই দেশের বাইরে থেকে আসে।”
আর আইএসপিআরের পর সোমবার খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান মাহমুদ সেখানে এক ব্রিফিং-এ খাগড়াছড়ি এবং গুইমারায় সংঘটিত সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনার জন্য আঞ্চলিক সংগঠন ইউপিডিএফকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘ধর্ষণ ঘটনাকে পুঁজি করে সাধারণ পাহাড়ি নারী ও কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সামনে দিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির চেষ্টা করছে সংগঠনটি। এসব কর্মসূচিতে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দিয়ে দেশীয় ও স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবহার করে ফায়ারিং করা হয়েছে।''
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, "অবরোধ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত ১৪৪ ধারা বজায় রাখার জন্য প্রশাসনের কাছে
অনুরোধ করা হয়েছে।'' খাগড়াছড়ির ঘটনার জের ধরে রাঙামাটি ও বান্দরবানেও এর প্রভাব পড়ার আশঙ্কাও ব্যক্ত করেন তিনি।
এদিকে সোমবার পুলিশ সদর দপ্তরে এক ব্রিফিং-এ আইজিপি বাহারুল আলম বলেন,"খাগড়াছড়ির ধর্ষণের ঘটনায় মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে একজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। পুলিশের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তারপরও একটি গোষ্ঠী বিষয়টিকে ইস্যু করার চেষ্টা করছে।”