কৃষ্ণসাগর দিয়ে খাদ্যশস্য সরবরাহ নিয়ে ইস্তাম্বুলে বৈঠক চলছে ইউক্রেন এবং রাশিয়ার। সমাধানসূত্রের কাছাকাছি পৌঁছছে দুই দেশ।
বিজ্ঞাপন
বুধবার তুরস্কের ইস্তাম্বুলে বৈঠকে বসেছিলেন ইউক্রেন, রাশিয়া, জাতিসংঘ এবং তুরস্কের প্রতিনিধি। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে কৃষ্ণসাগর দিয়ে খাদ্যশস্য সরবরাহ নিয়ে বৈঠক হয়। সেখানে যুযুধান দুই দেশ ঐকমত্যে পৌঁছাতে পেরেছে বলে জানিয়েছেন তুরস্ক এবং জাতিসংঘের প্রতিনিধি।
জাতিসংঘের প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহের মধ্যে ইউক্রেন এবং রাশিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে পারবে বলে তারা আশাবাদী। এর ফলে পৃথিবীজুড়ে যে খাদ্যসংকট শুরু হয়েছে, তা খানিকটা বাগে আসবে বলে মনে করছেন গুতেরেস। বস্তুত, বুধবার বৈঠকের পর তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী তথা ওই বৈঠকের অন্যতম প্রতিনিধি জানিয়েছেন, তিনিও বৈঠক নিয়ে অত্যন্ত আশাবাদী।
যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের বন্দরে প্রায় ২২ মিলিযন টন খাদ্যশস্য আটকে আছে। কৃষ্ণসাগর দিয়ে ওই শস্য আফ্রিকা-সহ গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। ইউক্রেন এবং রাশিয়ার যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর রাশিয়া ওই শস্য বাইরে যেতে দিচ্ছে না বলে ইউক্রেনের অভিযোগ। তাদের দাবি, কৃষ্ণসাগরে রাশিয়া অবরোধ করে রেখেছে। অন্যদিকে রাশিয়া ব্লকেডের কথা স্বীকার করে জানিয়েছে ইউক্রেন কৃষ্ণসাগরে মাইন ফেলে রেখেছে। সে জন্যই তারা ওই অঞ্চলে কোনো জাহাজ ঢুকতে দিচ্ছে না।
ইউক্রেনের যে গ্রামের চাষিদের যুদ্ধও থামাতে পারেনি
রাশিয়ার হামলা শুরুর পর দেশের সব নারী, শিশু এবং ষাটোর্ধ পুরুষদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে চলে যেতে বলেছিল ইউক্রেন সরকার৷ কিন্তু ইয়াকভলিভকা গ্রামের অধিকাংশ মানুষ যানি৷ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গম চাষ করছেন তারা৷ ছবিঘরে বিস্তারিত...
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
কৃষকদের গ্রাম
ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শহর খারকিভের কাছে ইয়াকভলিভকা গ্রাম৷ গ্রামের বেশির ভাগ মানুষই কৃষিজীবী৷ গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়া৷ তারপর থেকে দেশ ছেড়েছেন অন্তত ৪০ লাখ ইউক্রেনীয়৷ কিন্তু ইয়াকভলিভকার অধিকাংশ মানুষ কোথাও যাননি৷ কৃষক অধ্যুষিত ছোট্ট গ্রামটির অনেকে এখনো সুযোগ পেলেই নেমে পড়েন কৃষিকাজে৷
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
মৃত্যুঝুঁকি
হামলা শুরুর এক সপ্তাহ পর খারকিভেও বোমা ফেলতে শুরু করে রাশিয়া৷ ইয়াকভলিভকা গ্রামে বোমার আঘাতে মারা যান চার জন, আহত হন ১১ জন৷
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
আতঙ্কের সেই রাত
প্রথম বোমা হামলার মনে পড়লে নিনা বোনদারেঙ্কো এখনো আঁতকে ওঠেন৷ জানালেন, সেদিন সারারাত না ঘুমিয়ে কাটিয়েছিলেন তারা, ‘‘ সেদিন সেলারে বসে বসে শুধু ঈশ্বরকে স্মরণ করছি৷ বাচ্চাগুলোকে কম্বল জড়িয়ে শুইয়ে দিয়েছিলাম৷কিন্তু আমরা বড়রা ভোর তিনটা কি চারটা পর্যন্ত একটুও ঘুমাতে পারিনি৷’’
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
গ্রামে কেন হামলা?
গ্রামের স্কুলে অস্থায়ী ক্যাম্প করেছিল ইউক্রেনের সেনাবাহিনী৷ধারণা করা হয়, সেখানেই বোমা ফেলতে চেয়েছিল রুশ সৈন্যরা৷ কিন্তু লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় স্কুল ভবনটি প্রায় অক্ষত থেকে যায়৷ রয়টার্স অবশ্য বলছে, রুশ বাহিনী ইয়াকভলিভকা গ্রামে সত্যিই হামলা চালিয়েছিল কিনা তা তারা যাচাই করে দেখতে পারেনি৷রাশিয়া দাবি, তারা বেসামরিক নাগরিকের ওপর হামলা চালায়নি৷
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
কৃষিপণ্য উৎপাদনে ইউক্রেন
বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম গম রপ্তানিকারক দেশ ইউক্রেন৷ রুটির জন্যও বিখ্যাত দেশটি৷ইয়াকভলিভকা গ্রামে এখনো গম চাষ চলছে৷ তবে ক্ষেতে গমের বীজ বপণ করা হলেও গম শেষ পর্যন্ত ঘরে তোলা সম্ভব হবে তো? এ নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় রয়েছেন কৃষিপণ্য উৎপাদনের প্রতিষ্ঠান ‘গ্র্যানারি অব স্লোবোদা’র পরিচালক ভাদিম আলেকসান্দ্রোভিচ৷ অথচ গত মৌসুমে ৩০০০ টন গম, ৩০০০ টন সূর্যমুখী এবং ১০০০ টন খাদ্যশস্য উৎপাদন করেছিল তার প্রতিষ্ঠান!
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
অজানা ভবিষ্যৎ
আলেকসানদ্রোভিচ বলেন, ‘‘পরিস্থিতি খুবই খারাপ৷ আমরা জানি না কী হতে চলেছে৷আগামী এক ঘণ্টার মধ্যে কী কী হতে চলেছে তা-ও বুঝতে পারছি না৷’’
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
তবুও স্বপ্ন দেখেন ভেরা বাদেঙ্কো
যুদ্ধ শুরুর আগে ৫৩৩ জনের গ্রাম ছিল ইয়াকভলিভকা৷ ১৩৩ জন প্রাণভয়ে গ্রাম ছেড়েছেন৷ কিন্তু পরে অন্য এলাকা থেকে কিছু মানুষ আশ্রয় নেয়ায় গ্রামের লোক সংখ্যা এখন ৪৩৬৷ বেঁচে থাকলে আবার নিজের গ্রামকে সুন্দর করে সাজাতে চান তারা৷ ৬৬ বছর বয়সি ভেরা বাদেঙ্কোর চাওয়া অবশ্য এত বড় কিছু নয়৷ তার ঘর এখন প্রায় ধ্বংস্তূপ৷ সুসময় এলে ঘরটা নতুন করে বানাবেন, সবার আগে ঠিক করবেন রান্নাঘরটা৷
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
7 ছবি1 | 7
এই পরিস্থিতিতে গোটা বিশ্বেই খাদ্যসংকট তৈরি হয়েছে। আফ্রিকার একাধিক দেশ খাদ্যসংকট ঘোষণা করেছে। বিষযটি নিয়ে সমাধানসূত্রে পৌঁছাতে তুরস্ক এগিয়ে আসে। বুধবার ইস্তাম্বুলে বৈঠকে বসে দুই দেশ। ইউক্রেন এবং রাশিয়া বৈঠক মনিয়ে এখনো মুখ না খুললেও জাতিসংঘ এবং তুরস্ক দুইপক্ষই জানিয়েছে যে, বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে। আগামী মাসের মধ্যে সমাধানসূত্রে পৌঁছানো গেলে ইউক্রেনের বন্দর দিয়ে জাহাজ খাদ্যশস্য নিয়ে বার হতে পারবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ইউকরেন এবং রাশিয়া দুইপক্ষই বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য বিশ্বের বাজারে রপ্তানি করে। ইউক্রেনের পাশাপাশি রাশিয়াও এই চুক্তির ফলে বিশ্বে খাদযশস্য রপ্তানি করতে পারবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।