খাদ্যশস্য: পুটিন, জেলেনস্কির সঙ্গে এর্দোয়ানের কথা
১২ জুলাই ২০২২
ইউক্রেন থেকে যাতে খাদ্যশস্য আনা যায়, তার জন্য পুটিন ও জেলেনস্কির সঙ্গে কথা বললেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ান।
বিজ্ঞাপন
রাশিয়ার আক্রমণের পর ইউক্রেন থেকে খাদ্যশস্য আসছে না। কৃষ্ণসাগরে ইউক্রেনের বন্দর থেকে যে পথে জাহাজ বেরোবে, সেখানে রাশিয়া মাইন পেতে রেখেছে বলে ইউক্রেনের অভিযোগ। তাদের দাবি, রাশিয়া ইউক্রেন থেকে কোনো পণ্যবাহী জাহাজকে বাইরে আসতে দিচ্ছে না। এর ফলে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে ইউরোপ ও আফ্রিকার দেশগুলি।
এই পরিস্থিতিতে এর্দোয়ান নতুন করে খাদ্যশস্য আনার উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলে, জাহাজে ভরা খাদ্যশস্য বাইরে আনার জন্য প্রয়াসী হয়েছেন। এর্দোয়ানের প্রস্তাব হলো, কৃষ্ণসাগরে ইউক্রেনের বন্দর থেকে খাদ্যশষস্য ভর্তি জাহাজ বাইরে আসার জন্য জাতিসংঘ একটি করিডোর ঠিক করে দেবে। সেখানে কোনো মাইন থাকবে না বা রাশিয়া সেই জাহাজ চলাচলে কোনো বাধা দেবে না।
ইউক্রেনের যে গ্রামের চাষিদের যুদ্ধও থামাতে পারেনি
রাশিয়ার হামলা শুরুর পর দেশের সব নারী, শিশু এবং ষাটোর্ধ পুরুষদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে চলে যেতে বলেছিল ইউক্রেন সরকার৷ কিন্তু ইয়াকভলিভকা গ্রামের অধিকাংশ মানুষ যানি৷ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গম চাষ করছেন তারা৷ ছবিঘরে বিস্তারিত...
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
কৃষকদের গ্রাম
ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শহর খারকিভের কাছে ইয়াকভলিভকা গ্রাম৷ গ্রামের বেশির ভাগ মানুষই কৃষিজীবী৷ গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়া৷ তারপর থেকে দেশ ছেড়েছেন অন্তত ৪০ লাখ ইউক্রেনীয়৷ কিন্তু ইয়াকভলিভকার অধিকাংশ মানুষ কোথাও যাননি৷ কৃষক অধ্যুষিত ছোট্ট গ্রামটির অনেকে এখনো সুযোগ পেলেই নেমে পড়েন কৃষিকাজে৷
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
মৃত্যুঝুঁকি
হামলা শুরুর এক সপ্তাহ পর খারকিভেও বোমা ফেলতে শুরু করে রাশিয়া৷ ইয়াকভলিভকা গ্রামে বোমার আঘাতে মারা যান চার জন, আহত হন ১১ জন৷
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
আতঙ্কের সেই রাত
প্রথম বোমা হামলার মনে পড়লে নিনা বোনদারেঙ্কো এখনো আঁতকে ওঠেন৷ জানালেন, সেদিন সারারাত না ঘুমিয়ে কাটিয়েছিলেন তারা, ‘‘ সেদিন সেলারে বসে বসে শুধু ঈশ্বরকে স্মরণ করছি৷ বাচ্চাগুলোকে কম্বল জড়িয়ে শুইয়ে দিয়েছিলাম৷কিন্তু আমরা বড়রা ভোর তিনটা কি চারটা পর্যন্ত একটুও ঘুমাতে পারিনি৷’’
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
গ্রামে কেন হামলা?
গ্রামের স্কুলে অস্থায়ী ক্যাম্প করেছিল ইউক্রেনের সেনাবাহিনী৷ধারণা করা হয়, সেখানেই বোমা ফেলতে চেয়েছিল রুশ সৈন্যরা৷ কিন্তু লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় স্কুল ভবনটি প্রায় অক্ষত থেকে যায়৷ রয়টার্স অবশ্য বলছে, রুশ বাহিনী ইয়াকভলিভকা গ্রামে সত্যিই হামলা চালিয়েছিল কিনা তা তারা যাচাই করে দেখতে পারেনি৷রাশিয়া দাবি, তারা বেসামরিক নাগরিকের ওপর হামলা চালায়নি৷
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
কৃষিপণ্য উৎপাদনে ইউক্রেন
বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম গম রপ্তানিকারক দেশ ইউক্রেন৷ রুটির জন্যও বিখ্যাত দেশটি৷ইয়াকভলিভকা গ্রামে এখনো গম চাষ চলছে৷ তবে ক্ষেতে গমের বীজ বপণ করা হলেও গম শেষ পর্যন্ত ঘরে তোলা সম্ভব হবে তো? এ নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় রয়েছেন কৃষিপণ্য উৎপাদনের প্রতিষ্ঠান ‘গ্র্যানারি অব স্লোবোদা’র পরিচালক ভাদিম আলেকসান্দ্রোভিচ৷ অথচ গত মৌসুমে ৩০০০ টন গম, ৩০০০ টন সূর্যমুখী এবং ১০০০ টন খাদ্যশস্য উৎপাদন করেছিল তার প্রতিষ্ঠান!
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
অজানা ভবিষ্যৎ
আলেকসানদ্রোভিচ বলেন, ‘‘পরিস্থিতি খুবই খারাপ৷ আমরা জানি না কী হতে চলেছে৷আগামী এক ঘণ্টার মধ্যে কী কী হতে চলেছে তা-ও বুঝতে পারছি না৷’’
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
তবুও স্বপ্ন দেখেন ভেরা বাদেঙ্কো
যুদ্ধ শুরুর আগে ৫৩৩ জনের গ্রাম ছিল ইয়াকভলিভকা৷ ১৩৩ জন প্রাণভয়ে গ্রাম ছেড়েছেন৷ কিন্তু পরে অন্য এলাকা থেকে কিছু মানুষ আশ্রয় নেয়ায় গ্রামের লোক সংখ্যা এখন ৪৩৬৷ বেঁচে থাকলে আবার নিজের গ্রামকে সুন্দর করে সাজাতে চান তারা৷ ৬৬ বছর বয়সি ভেরা বাদেঙ্কোর চাওয়া অবশ্য এত বড় কিছু নয়৷ তার ঘর এখন প্রায় ধ্বংস্তূপ৷ সুসময় এলে ঘরটা নতুন করে বানাবেন, সবার আগে ঠিক করবেন রান্নাঘরটা৷
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
7 ছবি1 | 7
ক্রেমলিন একটি বিবৃতি জারি করে জানিয়েছে, এর্দোয়ান ও পুটিনের মধ্যে খাদ্যশস্য বাইরে যাতে যেতে পারে তা নিয়ে কথা হয়েছে।
জেলেনস্কি টুইট করে এর্দোয়ানকে ধন্যবাদ দিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, রাশিয়া ইউক্রেনের খাদ্যশস্য চুরি করছে। রাশিয়াকে এই কাজ বন্ধ করতে হবে।
ইউক্রেন বিশ্বের অন্যতম বড় খাদ্যশস্য উৎপাদক। কিন্তু রাশিয়ার আগ্রাসনের পর থেকে তারা আর খাদ্যশস্য বাইরে পাঠাতে পারছে না। এর ফলে ইউরোপ ও আফ্রিকায় খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে। দাম অনেক বেড়ে গেছে। ভবিষ্যতে খাদ্যসুরক্ষা দেয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ইউক্রেনের খাদ্যপণ্য রপ্তানিতে রোমানিয়ার সাহায্যের হাত
02:11
জাতিসংঘ ইতিমধ্যেই সেফ করিডোরের কথা বলেছে। কিন্তু তাতে মস্কো ও কিয়েভের সম্পূর্ণ সমর্থন এখনো পাওয়া যায়নি।
ইউক্রেন ইউরোপের অন্য দেশের সঙ্গে ১২টি সীমান্ত ক্রসিং দিয়ে খাদ্যশস্য পাঠানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু সংবাদসংস্থা এপি-কে ইউত্রেন গ্রেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হর্বাচভ বলেছেন, এত বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য ইউরোপে পাঠানোর পরিকাঠামো তাদের নেই।