খাদ্যদ্রব্যে জিনের পরিবর্তন
৭ জুলাই ২০১২খাদ্যদ্রব্যে জিন পরিবর্তন করা কিছু কিছু অর্গানিজমের ব্যবহার ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলিতে এখন পর্যন্ত নিষিদ্ধ৷ ভবিষ্যতে এই নীতিমালা কিছুটা শিথিল করা হবে বলে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে ইইউ'র পক্ষ থেকে৷ অবশ্য মাত্র ০.১ শতাংশ খাদ্যের ক্ষেত্রে৷ জার্মানির ভোক্তাসুরক্ষা মন্ত্রী ইলজে আইগনার ইইউ'র এই উদ্যোগকে বাড়াবাড়ি বলে মনে করেন৷ তাঁর মতে, ‘‘জিন পরিবর্তন করা নিষিদ্ধ অর্গানিজম ব্যবহার নিয়ে যে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে তা চিন্তার বিষয়৷ কেননা খাদ্যদ্রব্যকে দূষণমুক্ত রাখার বিষয়টিকে সর্বাধিকার দিতে হবে৷'' ভোক্তারাও তাঁর সঙ্গে একমত৷ এখানে প্রশ্ন উঠতে পারে, জিন পরিবর্তন করা ভোজ্যপণ্য আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে কতটা ক্ষতিকর? আমরা কী এখনও না জেনে এসব খাচ্ছি না?
ফাঁকফোকর অনেক
খাদ্যদ্রব্যের ব্যাপারে সামান্যতম দূষণও সহ্য করা হবে না, একথা বার বার বলা হলেও বাস্তবে অনেক খাদ্যই জিন প্রযুক্তিমুক্ত নয়৷ বছর দশেক ধরে জিন পরিবর্তন করা কিছু কিছু অর্গানিজম জার্মানিতে ব্যবহৃত হচ্ছে৷ তবে শর্ত হল, ইউরোপীয় ইউনিয়নে এসবের অনুমোদন থাকতে হবে৷ ভোক্তারা এ ব্যাপারে যে অনেকটা অন্ধকারে, তার কারণ হল, খাদ্যদ্রব্যে ব্যবহৃত উপাদানগুলি প্রায়ই যথাযথভাবে লেখা থাকে না৷ জিন প্রযুক্তিমুক্ত খাদ্যদ্রব্য বিষয়ক এক সংগঠনের মুখপাত্র আলেক্সান্ডার হিসটিং এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘জিন পরিবর্তন করা কিছু কিছু অর্গানিজমের ক্ষেত্রে আইন প্রণয়নকারীরা বেশ ছাড় দিয়েছেন, বলা হয়েছে এই সব অর্গানিজম পরীক্ষা নিরীক্ষা করে নিরাপদ প্রমাণিত হলে খাদ্যদ্রব্যে নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত থাকতে পারে৷ অর্থাৎ ০.৯ শতাংশ পর্যন্ত অনুমোদন পাবে৷ এরচেয়ে বেশি হলে ভোজ্যপণ্যে তা উল্লেখ করতে হবে৷ এই ভাবে অনেক ফাঁকফোকর গলিয়ে ঢুকে পড়ছে জিনপ্রযুক্তি প্রয়োগ করা খাদ্যদ্রব্য৷''
এক্ষেত্রে আরেকটি ফাঁক হল পশুখাদ্যে জিনপ্রযুক্তিজাত খাদ্যদ্রব্যের মিশ্রণ৷ একটি গরুকে জিনপ্রযুক্তিজাত খাদ্য খাওয়ানো হলেও দুধ বা দই-এর প্যাকেটে তার উল্লেখ না থাকলেও চলে৷ এইভাবে মানুষের খাদ্যেও ঢুকে পড়ছে জিন খাদ্য৷ জিনপদ্ধতিজাত বেশির ভাগ খাদ্যই দূষিত হয় পরিবহণের সময়৷ কৃষিকাজের সরঞ্জাম ও কন্টেইনারের মাধ্যমেই এই দূষণ ঘটে থাকে৷ কেননা কৃষিক্ষেতে জিন পদ্ধতি ও প্রচলিত পদ্ধতির কাজকর্মে অনেক সময় একই সামগ্রী ব্যবহার করা হয়ে থাকে৷
শতভাগ নিশ্চয়তা সম্ভব নয়
খাদ্যআইন বিশেষজ্ঞ মারকুস গিরনাউ জানান, ‘‘জিন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে, কথাটা লেখা না থাকলেও খাদ্যদ্রব্যে জিন থাকতে পারে৷ তাঁর ভাষায়, বিশ্বের নানা দেশে জিন প্রযুক্তির ব্যাপারে একেক রকমের আইন কানুন প্রচলিত৷ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও নিয়ম কানুন একেক ধরনের৷ তাই অনুমোদন ছাড়া জিনপদ্ধতিজাত কোনো পণ্য যে খাদ্যদ্রব্যের সাথে জার্মানিতে ঢুকে পড়বে না, একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় না৷''
অজানা ঝুঁকি
জিন প্রযুক্তির ব্যাপারে জনমনে সন্দেহটা কম নয়৷ এই সব খাদ্য খেলে স্বাস্থ্যের ওপর কী রকম প্রতিক্রিয়া হয়, তা এখনও সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়নি৷ জিনপ্রযুক্তি বিরোধী আলেক্সাজান্ডার হিস্টিং বলেন, ‘‘বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের দিক দিয়ে বলা যায়, এটা একটা অজানা এলাকা৷ পশুখাদ্যে জিনজাত খাদ্যের মিশ্রণ রয়েছে কীনা সে সম্পর্কে তেমন কোনো পরীক্ষা নিরীক্ষা করা যায়নি৷ কেননা এক্ষেত্রে রয়েছে প্রাথমিক গবেষণার অভাব৷ বিষয়টি নিয়ে আদৌ গবেষণা করা যায় কীনা, সেব্যাপারে বিজ্ঞানীদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে৷''
অবশ্য একথা স্পষ্টভাবে বলা যায়, ইইউ'র অনুমোদন পাওয়া জিনপ্রযুক্তিজাত খাদ্যদ্রব্য বাজারে আসার আগে ভালভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়৷ এসব খাদ্য থেকে যে স্বাস্থ্যের হানি ঘটবে না, এই নিশ্চয়তা দেয়া হয়৷ কিন্তু হিস্টিং এব্যাপারে পুরোপুরি সন্দেহমুক্ত নন৷ তাঁর কথায়, ‘‘জিনের পরিবর্তন হলে খাদ্যদ্রব্যে অন্যান্য গুণাগুণেরও পরিবর্তন হবে একই সঙ্গে৷ যেমন প্রোটিনের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে অ্যালার্জি হতে পারে৷ ইইউ যদি জিন পদ্ধতি ব্যবহারের আইন কানুন আরো শিথিল করে, তাহলে অনেক খাদ্যদ্রব্যেই অনুমোদনহীন উদ্ভিদের মিশ্রণ ঘটবে, দেখা দেবে খাদ্যদ্রব্য নিয়ে কেলেঙ্কারি৷''
প্রতিবেদন: রাইনা ব্রয়য়ার / আরবি
সম্পাদনা: জাহিদুল হক