ক্যানসার মোকাবিলার নানা প্রচেষ্টার মধ্যে ক্যানসার প্রতিরোধও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ শুধুমাত্র খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমেই এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব৷ এক বিশেষজ্ঞ এমন কিছু খাবার চিনিয়ে দিচ্ছেন৷
বিজ্ঞাপন
খাদ্য বিশেষজ্ঞ হিসেবে উলরিকে গোন্ডার খাদ্য বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারেন৷ কোন খাদ্য ক্যানসারের কারণ হতে পারে এবং কোন খাদ্য ক্যানসার থেকে রক্ষা করতে পারে, তার হদিশ তিনি জানেন৷ তিনি ‘গুড গাই' ও ‘ব্যাড গাই', অর্থাৎ ভালো ও খারাপ খাদ্য বিলক্ষণ চেনেন৷ উলরিকে বলেন, ‘‘শাকসবজির মধ্যে ব্রকোলিকে তারকা বলা চলে৷ তার মধ্যে গ্লুকোসিনেলেটস, অর্থাৎ গন্ধকের মতো উপাদান রয়েছে৷ চিবানো, কাটা অথবা রান্নার সময়ে সেগুলি বেরিয়ে আসে৷ বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় তার অনেক ক্যানসার প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য দেখা গেছে৷ তবে এই উপাদানের পরিমাণ ফুলের তুলনায় গোড়ার মধ্যে দ্বিগুণ৷ অর্থাৎ, ব্রকোলি রান্নার সময় শুধু ফুল নয়, সবটাই ব্যবহার করা উচিত৷ তার কিছু অংশ অবশ্য রান্নার সময় আবার নষ্ট হয়ে যেতে পারে৷ অর্থাৎ, ছোট করে কেটে, ভাপিয়ে নেওয়া উচিত৷ বেশি রান্না করলে সেই উপাদানের একটা অংশ আবার নষ্ট হয়ে যায়৷''
প্রতিদিনের খাবারেই লুকিয়ে আছে ক্যানসারের কারণ
আপনার খাবার ঘরে এই জিনিসগুলোর অবশ্যই দেখা মিলবে৷ আর এগুলোতে এমন কিছু উপাদান আছে, যা ক্যানসারের কারণ হতে পারে৷ ছবিঘরে সেই সব খাদ্যের তালিকাই তুলে ধরা হলো৷
ছবি: Printemps / Fotolia
সাদা ময়দা
ময়দা সাদা করার জন্য গমকে প্রক্রিয়াজাত করা হয় এবং তাতে ক্লোরিন ব্যবহার করা হয়৷ এই একই ক্লোরিন কিন্তু কাপড়ের রং ওঠাতেও ব্যবহার করা হয়৷ বলা বাহুল্য, এই ক্লোরিন ব্যবহারের ফলে খাদ্যের সব পুষ্টিগুণ কমে যায়৷
ছবি: Fotolia/BK
লবণাক্ত স্ন্যাকস
পট্যাটো বা আলুর চিপসে অতিরিক্ত লবণ থাকে৷ তাই খুব বেশি চিপস খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত৷ ক্যানসার সৃষ্টির জন্য সব ধরনের উপাদান রয়েছে এই চিপসে৷ এছাড়া চিপসকে মচমচে করতে যে অ্যাক্রিলামাইড ব্যবহার করা হয়, সেই একই উপাদান পাওয়া যায় সিগারেটেও৷
ছবি: picture-alliance/Romain Fellens
লাল মাংস
অল্প মাত্রায় এ ধরনের মাংস খেলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক নয়৷ কিন্তু ‘লাল মাংস’ যদি খুব বেশি পরিমাণে খাওয়া হয়, তাহলে কোলন বা প্রস্টেট ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা দ্বিগুণ হয়ে যায়৷ যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা অনুযায়ী, রেড মিট বা গরু, ছাগল এবং ভেড়ার মাংসে এক ধরনের সিলিসিক অ্যাসিড থাকে, যেটা ক্যানসারের কারণ৷
ছবি: Fotolia/hjschneider
কোমল পানীয়
কোকাকোলা, পেপসি এবং এ ধরনের অন্যান্য পানীয়তে উচ্চ মাত্রায় চিনি রয়েছে, যা কৃত্রিমভাবে রং করা৷ এ ধরনের কোমল পানীয় ভীষণ ক্ষতিকর৷ এছাড়া কৃত্রিম সুইটেনারে বেশি মাত্রায় সোডিয়াম থাকে৷ যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও মাদক প্রশাসন জানিয়েছে, এ সব কোমল পানীয় গ্রহণ করলে মানুষের মস্তিষ্ক রাসায়নিক দ্রব্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে৷
ছবি: Fotolia/B. Hofacker
ভেজিটেবল তেল
সূর্যমুখী তেলে এক ধরনের রং ব্যবহার করা হয়, যাতে তা ক্রেতাকে আকৃষ্ট করে৷ এই তেলে ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, যা স্বাস্থ্যকর৷ কিন্তু তেলে যদি রঙের পরিমাণ বেশি হয়, তবে তা স্তন ও প্রস্টেট ক্যানসারের কারণ হতে পারে৷ ক্লিনিকাল ইনভেস্টিগেশন জার্নালে এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে সম্প্রতি৷
ছবি: Printemps / Fotolia
প্রক্রিয়াজাত মাংস
সসেজ, নানা রকম সালামি – এগুলো দেখতে এবং খেতে ভালোই লাগে৷ কিন্তু এগুলো সংরক্ষণের জন্য উচ্চমাত্রার ‘প্রিজারভেটিভ’ ব্যবহার করা হয়৷ যত বেশি প্রিজারভেটিভ থাকে খাবারে বিষাক্ত সোডিয়াম নাইট্রেটের পরিমাণ তত বেড়ে যায়৷ ফলে ক্যানসারের ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়৷
ছবি: eyewave - Fotolia.com
নন-অরগ্যানিক ফল
সেসব ফলের বাগানে সার হিসেবে নাইট্রোজেন ব্যবহার হয় এবং গাছে পোকা মারার বিষ দেয়া হয়, সেই সব ফল খাওয়া খুবই বিপজ্জনক৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে মাত্রা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে, তা না মেনে অতিরিক্ত পরিমাণে নাইট্রোজেন ব্যবহার করা হয়ে থাকে৷ তাই এ রকম ‘নন-অরগ্যানিক’ ফল বেশি খেলে দীর্ঘদিন পর এর ক্ষতিকর প্রভাব শরীরেও দেখা যায়৷
ক্যানসারের মতো অসুখকে শুধু ভাগ্যের লিখন বলা যায়না৷ কারণ টিউমার হওয়ার কারণগুলো গবেষকরা খুব ভালো করেই জানেন৷ ক্যানসারের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে প্রত্যেকেই কিছু করতে পারেন৷
ছবি: Getty Images
ভাগ্য নিজের হাতেই
‘আপনার ক্যানসার ধরা পড়েছে’ এমন দুঃসংবাদ শোনার জন্য কেউ কখনো অপেক্ষা করেনা৷ তবে একটু সাবধানতা অবলম্বন করলে হয়তো ক্যানসার রোগীর সংখ্যা অর্ধেক হতে পারে৷ ক্যানসার রোগীর প্রতি পাঁচজনের একজনই হচ্ছে ধূমপায়ী৷ বিষাক্ত তামাকের ধোঁয়া যে শুধু ফুসফুসের ক্যানসারের জন্যই দায়ী তা নয়, ধূমপান অন্যান্য ক্যানসারের হওয়ারও একটি কারণ৷ তবে ধূমপান ক্যানসার হওয়ার একমাত্র কারণ নয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অতিরিক্ত ওজন মৃত্যুর কারণও হতে পারে
ক্যানসার হওয়ার নানা কারণের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে অতিরিক্ত ওজন এবং ইনসুলিনের মাত্রা বেশি থাকা৷ ইনসুলিনের মাত্রা বেশি হলে তা কিডনি, গলব্লাডার, খাদ্যনালীর ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়৷ শুধু তাই নয়, অতিরিক্ত মোটা মহিলাদের শরীরের মেদের কারণে খুব সহজে জরায়ু এবং স্তন ক্যানসার হতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আলসেমি নয়, সোফা থেকে উঠে পড়ুন!
যারা সারাক্ষণ শুয়ে বসে থাকেন অর্থাৎ হাঁটা-চলা কম করেন, তাদের ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি৷ দীর্ঘমেয়াদী গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে ব্যায়াম বা খেলাধুলা টিউমার হওয়ার পথে বাধার সৃষ্টি করে৷ শারীরিক কার্যকলাপ ইনসুলিনের মাত্রা কমায় এবং পাশাপাশি মোটা হওয়াও রোধ করে৷ শরীরচর্চা বলতে যে সব সময় ফিটনেস সেন্টারে যাওয়া বোঝায় তা কিন্তু নয়৷ যে কোনো ব্যায়াম, হাঁটাহাঁটি বা সাইকেল চালানোও হতে পারে৷
ছবি: Fotolia/runzelkorn
অ্যালকোহলকে না করুন
অ্যালকোহল বা মাদককে ক্যানসার উত্তেজক হিসেবে ধরা হয়ে থাকে৷ বিশেষ করে অ্যালকোহল পানে মুখের ভেতর, গলা এবং পাকস্থলীর নালীতে টিউমার ছড়ানোকে প্রভাবিত করে৷ তবে সবচেয়ে বিপজ্জনক হচ্ছে ধূমপান এবং মদ্যপান যদি একসাথে করা হয়৷ এই দুটো একসাথে হয়ে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় ১০০ ভাগ৷ তবে বলা হয়ে থাকে প্রতিদিন একগ্লাস ওয়াইন স্বাস্থ্যের জন্য ভালো৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পশুর মাংস খাওয়া এড়িয়ে চলাই ভালো
রেড-মিট বা গরু বা ভেড়ার মতো প্রাণীর মাংস ক্যানসার হতে সহায়তা করে৷ তবে এর আসল কারণ ঠিক কী তা এখনও খুঁজে বের করা যায়নি৷ দীর্ঘমেয়াদী গবেষণায় এটুকু জানা গেছে যে রেড-মিটের সাথে ক্যানসারের সম্পৃক্ততা রয়েছে৷ শুকরের মাংসের তুলনায় গরুর মাংস খাওয়া বেশি বিপজ্জনক৷ অন্যদিকে মাছ খেলে হয় ঠিক তার উল্টোটা, অর্থাৎ মাছ খেলে ক্যানসার হওয়া থেকে দূরে থাকা যায়৷
ছবি: Fotolia
ফাস্টফুডকে না বলুন!
ফাস্টফুড বা রেডিমেড খাবার সব সময়ই যে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর সে কথা কম বেশি সবাই জানি৷ অন্যদিকে বেশি বেশি সবজি এবং ফলমূল ক্যানসার রোধে সাহায্য করে৷ দীর্ঘ গবেষণায় অবশ্য গবেষকরা দেখেছেন যে স্বাস্থ্যকর খাবার খেলে মাত্র দশ শতাংশ ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বেশি রোদ, বেশি ক্ষতি
সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি মানুষের ত্বকের অনেক পরিবর্তন করে৷ তবে সানক্রিম সূর্যের বিকিরণ থেকে ত্বককে রক্ষা করে ঠিকই, তবে তারও সময়সীমা রয়েছে৷ ত্বক যখন পুড়ে যায়, ধরে নিতে হবে যে ত্বকে অনেক বেশি সূর্যের কিরণ লেগে গেছে৷
ছবি: dapd
আধুনিক ওষুধ থেকে ক্যানসার
এক্সরে রশ্মি জেনোটাইপের ক্ষতির কারণ, তবে সাধারণ এক্সরেতে তেমন ক্ষতি হয়না৷ সে রকম প্রয়োজন না হলে কম্পিউটার-টোমোগ্রাফি না করাই ভালো৷ আবার অন্যদিকে এমআরআই কিন্তু মোটেই শরীরে জন্য ক্ষতিকারক নয়৷ ভালো খবর যে, প্লেন ভ্রমণ থেকে ক্যানসার হবার কোনো আশঙ্কা থাকেনা৷
ছবি: picture alliance/Klaus Rose
ইনফেকশনের মাধ্যমে ক্যানসার
হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাস লিভার কোষের ক্ষতি করতে পারে৷ ছবিতে যে ব্যাকটেরিয়া দেখা যাচ্ছে সেটা পাকস্থলী নষ্ট করে দিয়ে সেখানে ক্যানসারের জন্ম দিতে পারে৷ তবে বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে মুক্ত রাখতে টিকা বা অ্যান্টিবায়োটিকও নেয়া যেতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
9 ছবি1 | 9
সুপারমার্কেটেও ভালো খাবার পাওয়া যায়৷ এ ক্ষেত্রে অবশ্য রংয়ের সঙ্গে সঙ্গে স্বাদও গুরুত্বপূর্ণ৷ উলরিকে বলেন, ‘‘এখানে আরো মসলাদার খাবারদাবার রয়েছে৷ স্বাদ অল্প ঝাল হলেই বুঝবেন, খাবারের মধ্যে গন্ধকের মতো ক্যানসার প্রতিরোধী পদার্থ রয়েছে, যেমনটা ব্রকোলির মধ্যে দেখা যায়৷ এমন অনেক খাদ্য রয়েছে৷''
উলরিকে গোন্ডার এমন আরো ‘গুড গাই'-এর খোঁজ চালাচ্ছেন৷ সম্প্রতি বাদামের গুণাগুণ নিয়ে হইচই পড়ে গেছে৷ ফাইবার ছাড়াও বাদামের আরো গুণ রয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘ব্রাজিল নাট, সেলেনিয়ামের মতো বাদামের অনেক গুণাগুণ রয়েছে৷ ক্যানসার সুরক্ষার ক্ষেত্রে এগুলি খুবই কার্যকর৷ তবে সব বাদাম ও অনেক উদ্ভিদের মধ্যে পলিফেনল রয়েছে৷ বিশেষ করে কোলন ক্যানসার মোকাবিলার ক্ষেত্রে বাদামের পলিফেনলের কার্যকারিতার প্রমাণ পাওয়া গেছে৷ বাদামের সমস্যা হলো, তাতে দ্রুত ছত্রাক ধরে যায়৷ ছত্রাক ক্যানসারের কারণ হতে পারে৷ তাই গোটা বাদাম কিনে বাসায় গুঁড়া করা ভালো৷ তবে ছোট টুকরো করার পর বেশিদিন রেখে না দেওয়াই ভালো৷''