সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ভাগাড় কাণ্ড চোখ রাখতে বাধ্য করল বাঙালির খাদ্যাভ্যাসে৷ দেখা গেল, মাংসের মতো সবজি, ফলেও ফর্মালিন! এমনকি মাছেও ফর্মালিন! বাঙালি তবে খাবে কী?
বিজ্ঞাপন
সন্দেহ ছিল অন্ধ্রপ্রদেশে মাছে ফর্মালিন দেওয়া হচ্ছে৷ কিন্তু অন্ধ্রপ্রদেশ সরকারের পাশাপাশি মৎস্য উৎপাদন, ব্যবসায়ী ও প্যাকেজিং সংগঠনগুলি দাবি করেছে, অন্ধ্রের ব্যবসায়ীরা সচেতনভাবেকখনই মাছে বিষাক্ত রাসায়নিক মেশাবেন না৷ ঘটনাটি ঘটছে পশ্চিমবঙ্গেরই কোনো অংশে৷ যদিও গত সপ্তাহে অন্ধ্রপ্রদেশের মাছ নিয়ে আপত্তি তুলেছে অসম৷ তারা অন্ধ্র থেকে আসা মাছ নিষিদ্ধ করেছে৷ রোজ অসমে ২,৪০০ টন মাছ আসে অন্ধ্র থেকে৷ এই মাছের নমুনা পাঠানো হয়েছে ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য৷
বাঙালি রসনাপ্রিয় জাতি৷ কিন্তু সবেতেই যদি ফর্মালিন বা অন্য রাসায়নিকের চোখ রাঙানি থাকে, তাহলে তো বিষম সমস্যা! এই সমস্যার মুখে দাঁড়িয়ে ডয়চে ভেলে খোঁজ নিয়ে দেখল, কী বলছেন বিশেষজ্ঞ এবং সাধারণ মানুষ?
ফর্মালিনের ব্যবহার পশ্চিমবঙ্গে অনেক পুরানো৷ তবে তা আইনসম্মত বা বৈজ্ঞানিক উপায় নয়৷ গত ৫-৭ বছরে ফর্মালিনের ব্যবহার বহুল অংশে বেড়েছে বলে জানা গেছে৷ ফর্মালিন প্রয়োগের আগে বরফ, ইউরিয়া বা নুন দিয়ে মাছ সংরক্ষণ করা হতো৷ কিন্তু এখন কলকাতাসহ রাজ্যের বিভিন্ন বাজারে বিভিন্ন মাছে পাওয়া যাচ্ছে ফর্মালিন৷ এ অভিযোগ কোনো মৎস্য ব্যবসায়ী সরাসরি স্বীকার করেননি৷ এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলকাতার এক মৎস্য ব্যবসায়ী স্বীকার করলেন যে, মাছের পচন রোধে ফর্মালিন ব্যবহার করতে হয়৷ আগে সেটা কেবল স্প্রে করা হতো বা মাখানো হতো, কিন্তু এখন তা ইনজেকশনের মাধ্যমে মাছের দেহের ভেতর চালান করা হয়৷
‘টাটকা জিনিস কিনে খান৷ বাসি বা বরফের জিনিস এড়িয়ে চলুন'
তবে কি মাছ খাওয়া ছেড়ে দিচ্ছে বাঙালি? বেহালা বকুলতলা বাজারে দীর্ঘদিনের বাজারের অভিজ্ঞতা থেকে মুরারীমোহন সামন্ত ডয়চে ভেলেকে জানালেন, জ্যান্ত মাছের বিক্রি বাড়লেও তবে একেবারে বরফের মাছের বিক্রি কমে যাচ্ছে, এমনটা নয়৷ এছাড়া বেশিরভাগ মানুষেরই ধারণা, মাত্র দু-এক পিস মাছে কত আর ফর্মালিন শরীরে ঢুকবে! উচ্চ তাপমাত্রায় সমস্ত ব্যাকটিরিয়া নষ্ট হয়, কাজেই মাছে ফর্মালিন থাকলে তাও নষ্ট হবে, আশা করা যায়!
সত্যিই কি তাই? মানবশরীরে ফর্মালিনের ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে না? এ ব্যাপারে বিশিষ্ট চিকিৎসক ফুওয়াদ হালিম বললেন, ‘‘ভাগাড় কাণ্ডের রিপোর্ট এখনও আমাদের হাতে আসেনি৷ তবে সেই মাংস যে ফর্মালিনে চোবানো হতো, তাতে সন্দেহ নেই৷ কিন্তু মাংস শুধু ধুয়ে নিলেই যে ফর্মালিন চলে যাবে তা তো নয়, মাংসের ভেতরকার সেই ফর্মালিন কিন্তু মানব শরীরে ঢুকেছে৷ পাশাপাশি মাছ-মাংসের ক্ষেত্রে হিমাঙ্কের নির্দিষ্ট প্যারামিটার মেনে চলাটাও জরুরি৷ সেটা না হলে বিভিন্ন ক্ষতিকারক ব্যাকটিরিয়া বা ছত্রাক বাসা বাঁধে৷ এটাই হয়েছে ভাগাড়ের মাংসে৷ এর ফলে কিডনি, লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে যেমন, তেমনি বাড়ছে ক্যানসারের আশঙ্কা৷ মাছের ক্ষেত্রেও এমনটা স্বাভাবিক৷''
কিন্তু বাঁচার উপায় কী তবে? পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শিবকিঙ্কর দাস এ ব্যাপারে বলেন, ‘‘সত্যি বলতে তো ফর্মালিনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাঁচার উপায় নেই৷ তবে কিছু টোটকা আছে৷ যেমন ইলিশ মাছের কথাই বলতে গেলে প্রথমেই বলব, বাজারে খেয়াল রাখতে হবে ইলিশ মাছে মাছি বসছে কিনা৷ ফর্মালিন দেওয়া মাছে মাছি বসবে না৷ ফর্মালিন যুক্ত মাছ, বিশেষ করে ফর্মালিন ইনজেকশন দেওয়া মাছ শক্ত হবে৷ একটু নরম ইলিশ মাছে ফর্মালিন থাকে না৷ ফর্মালিন দেওয়া ইলিশ মাছের চোখ কালো হবে৷ স্বাভাবিক ইলিশ মাছের চোখ কালচে লাল বা ঘোলাটে হবে৷''
খাবার গ্রহণে অ্যালার্জি
লোভনীয় সব খাবার দেখলে কারই বা খেতে ইচ্ছে না করে? তবে সেসব খাবার খেতে মন চাইলেও অনেকের শরীর তা গ্রহণ করে না বা সেসব খাবারে তাদের অ্যালার্জি হয়৷ এ নিয়েই আজকের ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/dpa
খাওয়া কি শুধু জীবন ধারণের জন্য?
খাওয়া ছাড়া যেমন কোনোভাবেই মানুষের বেঁচে থাকা সম্ভব নয়, ঠিক তেমনি মানুষ যে শুধু বেঁচে থাকার জন্য খায় সেটাও নয়৷ জীবন ধারণ করা ছাড়াও নানারকম মজার মজার খাবার মানুষ উপভোগ করতে চায়৷ কিন্তু সেটা যে সবার পক্ষে সম্ভব নয়৷ কারণ অনেক মানুষেরই রয়েছে বিভিন্ন খাবারে অ্যালার্জি৷
ছবি: imago
বাদাম, ফল এবং ল্যাকটোজ
চকলেট, আপেল কিংবা দই, যাই হোক না কেন শতকরা ১৭ জন জার্মান এসব খাবার উপভোগ করতে পারে না৷ অর্থাৎ এসব খাবারের অন্তত একটিতে হলেও তাদের অ্যালার্জি আছে৷ এক সমীক্ষায় বেরিয়ে এসেছে এই তথ্য৷ জার্মানির স্বাস্থ্য বিমা কোম্পানি টেকনিকার জানিয়েছে, যাদের খাবারে অ্যালার্জি রয়েছে তাদের মধ্যে শতকরা ২০ জন বাদাম, ২৯ জন বিভিন্ন ফল এবং ২৫ জন ল্যাকটোজ সহ্য করতে পারে না৷
ছবি: Fotolia/ChristArt
শিক্ষিতদেরই বেশি অ্যালার্জি
একটি ব্যাপার লক্ষ্যণীয় যে, শিক্ষার হার যত বেশি, অ্যালার্জি রোগীর সংখ্যাও তত বেশি! না, অবাক হবেন না৷ কথাটার মানে হলো, শিক্ষিত ও সচেতন মানুষরাই ডাক্তারের কাছে যেয়ে বুঝিয়ে বলতে পারেন এবং এসব বিষয়ে পরীক্ষা করিয়ে জানতে পারেন তাদের অ্যালার্জি থাকার কথা, বলেন জার্মানির পুষ্টি বিশেষজ্ঞ নিকল বাটেনফেল্ড৷ কম শিক্ষিত মানুষ বিষয়টাকে তেমন গুরুত্ব দেয় না বা ডাক্তারের কাছে যায় না৷
ছবি: Fotolia/W. Heiber Fotostudio
অ্যালার্জি টেস্ট
কোন খাবারে কার কতটুকু অ্যালার্জি আছে সেসব পরীক্ষা করারও রয়েছে নানা নিয়মকানুন৷ কোন খাবারে কতটা অ্যালার্জি সেটার ওপর নির্ভর করে রোগীর শারীরিক সুস্থতা৷ অনেকের বেলায় দেখা যায় শারীরিকভাবে একজন মানুষ যতটা অসুস্থ, সে পছন্দের খাবার না খেতে পেয়ে মানসিকভাবে তার চেয়ে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দুধের অ্যালার্জি
ফলমূল বা দুধে ছোটবড় অনেকেরই অ্যালার্জি দেখা দেয়৷ কেউ হয়ত শুধু দুধ খেতে পারে না, কিন্তু দুধে তৈরি বা রান্না করা খাবার ঠিকই খেতে পারে৷ নিকল বাটেনফেল্ড বলেন, যাদের অ্যালার্জি আছে তাদের অবশ্যই বুঝেশুনে স্বাস্থ্য সম্মত খাবার খাওয়া উচিত৷ তাছাড়া ল্যাকটোজ ফ্রি খাবারও পাওয়া যায়৷
ছবি: Colourbox/E. Atamanenko
ফল বা সবজি
ফল বা সবজির ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য, কারণ কেউ হয়তো কাঁচা ফল খেলে অসুস্থ বোধ করেন৷ কিন্তু একই ফল সেদ্ধ বা অন্য কিছুর সাথে মিশিয়ে খেলে হয়ত অসুবিধা হয় না৷
ছবি: picture alliance/chromorange
ডাক্তারের পরামর্শ
কারো অ্যালার্জি আছে কিনা সবসময়ই তা অ্যালার্জি টেস্টে ধরা পড়বে তেমন নয়, বিশেষ করে খাবারের ব্যাপারে৷ খাওয়ার পর অনেকের শরীরে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, আবার কারো বেলায় ওপর দিয়ে কিছুই বোঝা যায় না৷ আর সেটাই ভয়ের কারণ৷ তাই, যদি কেউ কিছু খাওয়ার পর ভালো বোধ না করে বা একেবারে সহ্য না হয় তাহলে তার সেটা না খাওয়াই উচিত৷ কারণ সেক্ষেত্রে ফলাফল ভয়াবহ হতে পারে৷ বিষয়টাকে মোটেই হালকাভবে নেওয়া ঠিক নয়৷
ছবি: Fotolia/ lassedesignen
তৈরি বা রেডিমেড খাবার
তৈরি খাবার বা ফাস্টফুড-এ ব্যবহার করা হয় প্রিজারভেটিভ বা সংরক্ষক, যা অনেকের শরীরেই সহ্য হয় না বা অ্যালার্জি হয়৷ ফাস্টফুড খেতে তরুণ প্রজন্ম খুবই আগ্রহী৷ তাই এদিকেও নজর দেওয়া উচিত৷ তৈরি খাবার শুধু ওজনই বাড়ায় না শরীরে অন্যান্য সমস্যাও দেখা দেয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
8 ছবি1 | 8
অধ্যাপক জানান, শুঁটকি মাছের ক্ষেত্রে এ দেশে ফর্মালিন প্রয়োগ অব্যর্থ৷ অ্যামেরিকার মতো দেশে শুঁটকি জাতীয় মাছ তৈরির পদ্ধতি পুরো আলাদা৷ ইলেকট্রিক ড্রায়ারের মাধ্যমে ওখানে মাছ শুকনো করা হয়, তাই ওখানকার মাছে কোনো গন্ধও হয় না৷ কিন্তু আমাদের মতো দেশে শুঁটকি মাছ তৈরির পদ্ধতি বিজ্ঞানসম্মত না হওয়ায় ফর্মালিন স্প্রে করতে হয়৷
কিন্তু এ সবে জীববৈচিত্র্যে পরিবর্তন আসতে পারে কি? তিনি বলেন, ‘‘শুঁটকি মাছের গুঁড়ো গবাদি পশু, মুরগি এবং মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়৷ যখনই তা জলে মিশে যায়, ফর্মালিন পুকুর বা জলাশয়ের জলকে দূষিত করে৷ এরকমভাবে মিষ্টি জলের মাছ যেমন, রুই, কাতলা, ব্রিগেড ইত্যাদি ধরার জন্য পুকুরে বিষ প্রয়োগ করা হয়৷ তা মাছগুলোকে অর্ধসচেতন রাখলেও তা আদতে বিষক্রিয়ার ফল৷ এতে পুকুরের বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি হয়৷''
তাহলে একটা প্রশ্ন উঠেই যায়, মানুষ খাবে কী? ডায়েটিশিয়ান ঈপ্সিতা চক্রবর্তী বললেন, ‘‘প্রোটিন আমরা কোনোমতেই বন্ধ করতে পারি না৷ এটা খুবই দরকারি৷ তাই মাছ-মাংস বন্ধ করার প্রশ্ন আসছে না৷ ভাগাড় কাণ্ডের পর একান্তই যারা মাংস বা মাছ খাওয়া ছাড়ছেন তাঁদের জন্য দ্বিতীয় শ্রেণির প্রোটিন দিই৷ দুগ্ধজাত প্রোটিন বা বাজারের সাপ্লিমেন্টাল কমার্শিয়াল প্রোটিন তখন দিতে হয়৷ কিন্তু এ সব সবার পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না৷ কিন্তু বড় বড় হাসপাতালে যেখানে প্রতিদিন কয়েক হাজার রোগীকে দৈনিক মাছ বা মাংসের যোগান দিতে হয়, সেক্ষেত্রে এটা সম্ভব নয়৷ এ প্রসঙ্গে তাঁর মত, বাজারে দেখে যদি জ্যন্ত মুরগি বা মাছ কেনা হয়, তার বিকল্প নেই৷ তবে এক্ষেত্রে সেটা সম্ভব হয় না বলেই সাপ্লায়ারের ওপর নির্ভর করতে হয়৷ নিয়মিত ভাবে যারা তা সাপ্লাই করেন, তাদের ওপর ভরসা করতেই হয়৷
ঈপ্সিতা সাধারণ মানুষের উদ্দেশে বললেন, ‘‘আমাদের সচেতনতার অভাব আছে তো বটেই৷ খবরের কাগজ বা টিভি দেখে জনমনে একটা আতঙ্ক ছড়িয়েছে৷ তবে এতে মাছ-মাংস খাওয়া বন্ধ করে দেওয়ার কোনো দরকার নেই৷ সবজিতেও কীটনাশক দেওয়া হয়, তা সত্ত্বেও যখন সবজি খেতে হচ্ছে, তখন মাছ-মাংস বন্ধ করবেন কেন? টাটকা জিনিস কিনে খান৷ বাসি বা বরফের জিনিস এড়িয়ে চলুন৷''
কিন্তু ফর্মালিন এড়িয়ে চলা কি এত সহজ? সরকারি তরফে যেখানে কোনও উদ্যোগ নেই, মানুষের সচেতনতা নেই, সেখানে বাড়তি লোভের তাড়নায় নিজেদেরই বিপদ ডেকে আনার অসাধু প্রয়াস রোখার কোনো পথ দেখা যাচ্ছে না৷ তৃতীয় বিশ্বে হয়ত এটাই দস্তুর, যেখানে প্রতিদিন পাতে পড়ার জন্য ওঁৎ পেতে থাকে ভাগাড়ের মাংস বা ফর্মালিন দেওয়া মাছ৷
অজান্তেই পেটে যাচ্ছে প্লাস্টিক
প্লাস্টিকের ছোট ছোট অংশ প্রতিদিন আমাদের পেটে ঢুকছে৷ জানতেও পারছি না আমরা৷ গায়ে মাখার ক্রিম থেকে খাবার, প্লাস্টিক সর্বত্র৷ তেমনই কিছু খাবারের সন্ধান দেওয়া হলো এই ছবিঘরে৷
ছবি: picture alliance/JOKER/A. Stein
মুখভর্তি প্লাস্টিক
৫ মিলিমিটারের চেয়েও ছোট প্লাস্টিকের অংশকে বলা হয় মাইক্রোপ্লাস্টিক৷ ছোট ছোট এই প্লাস্টিকের অংশ গিয়ে মিশছে সমুদ্রে৷ ঢুকে পড়ছে আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য সামগ্রীতে৷ শুধু তাই নয়, বাতাসেও ছড়িয়ে রয়েছে মাইক্রোপ্লাস্টিক৷ টুথপেস্ট থেকে ক্রিম, মাছ থেকে জল সর্বত্র মাইক্রোপ্লাস্টিক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Sauer
প্লাস্টিক দিয়ে মুখ ধোয়া
বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, কোনো কোনো কসমেটিকে বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়৷ কখনো কখনো যার পরিমাণ প্যাকেজিংয়ে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের সমপরিমাণ বা তার চেয়েও বেশি৷ কিন্তু আপাত চোখে কসমেটিকে প্লাস্টিক দেখা যায় না৷ তা লুকিয়ে থাকে ক্রিম বা টুথপেস্টের মধ্যে৷ ব্যবহার করলে কিছু অংশ ঢুকে যায় দেহের ভিতর৷ বাকি অংশ চলে যায় ড্রেনে৷
ছবি: picture-alliance/empics/Y. Mok
পানিতেও প্লাস্টিক
ড্রেনের জলে মিশে যাওয়া প্লাস্টিক পৌঁছে যায় সমুদ্রে৷ বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, সমুদ্রে গিয়ে মেশা প্লাস্টিক ঢুকে যায় জলজ উদ্ভিদে৷ মাছ সেই উদ্ভিদ খায়৷ ফলে তাদের শরীরেও পৌঁছে যাচ্ছে বিপুল পরিমাণ মাইক্রোপ্লাস্টিক৷ ২০১৭ সালের একটি পরীক্ষায় দেখা গেছে, ইন্দোনেশিয়া এবং ক্যালিফোর্নিয়ার বাজারের ২৫ শতাংশ মাছের শরীরে মাইক্রোপ্লাস্টিকের অংশ রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Anka Agency International
এমনকি লবণেও...
২০১৭ সালে ইউরোপ, অ্যামেরিকা এবং চিনে একটি যৌথ গবেষণা হয়েছিল৷ তার রিপোর্টে বলা হয়, শুধু মাছ নয়, সমুদ্র উপকূল থেকে সংগৃহীত নুনের মধ্যেও মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে৷ তার কারণও আছে৷ প্রতি বছর প্রায় ১২ মিলিয়ন প্লাস্টিক আবর্জনা সমুদ্রে গিয়ে মেশে৷ ফলে উপকূলবর্তী নুনেও তার অংশবিশেষ মিশে যায়৷
ছবি: picture alliance/Bildagentur-online/Tetra
নিরাপদ নয় মধু
সম্প্রতি ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন জানিয়েছে, মধুতে প্রচুর মাইক্রোপ্লাস্টিক আছে৷ এ কারণে মধু নিষিদ্ধ করারও একটি পরিকল্পনা হয়েছে৷ কিন্তু মধুতে কীভাবে মাইক্রোপ্লাস্টিক মিশছে, সে বিষয়ে এখনো পরীক্ষানিরীক্ষা সম্পূর্ণ হয়নি৷
ছবি: Colourbox
জামা নয়, প্লাস্টিক
সুতি নয়, কিন্তু সিন্থেটিক জামায় প্রচুর মাইক্রোপ্লাস্টিক থাকে৷ কাপড় ধোয়ার সময় সেই প্লাস্টিক জামা থেকে বেরিয়ে ড্রেনের পানিতে গিয়ে মেশে৷ পরীক্ষা করে দেখা গেছে, ৬ কিলোগ্রাম সিন্থেটিক জামা কাচলে তার থেকে ৭ লক্ষ প্লাস্টিক ফাইবার নির্গত হয়৷ ড্রেনের জলের মাধ্যমে তা গিয়ে পৌঁছায় সমুদ্রে৷ বস্তুত, সমুদ্রের জলে প্লাস্টিকের মোট পরিমাণের এক তৃতীয়াংশই জামা কাপড়ের মাইক্রোপ্লাস্টিক৷
ছবি: Imago/Mint Images
চাকায় প্লাস্টিক
গাড়ির চাকা থেকেও প্রচুর মাইক্রোপ্লাস্টিক পরিবেশে গিয়ে মেশে৷ রবারের সঙ্গে সিন্থেটিক পলিমার মিশিয়ে তৈরি হয় গাড়ির টায়ার৷ রাস্তার সঙ্গে টায়ারের ঘর্ষণে সেই সিন্থেটিক পলিমার থেকে মাইক্রোপ্লাস্টিক রাস্তায় গিয়ে মেশে৷ কখনো বা বাতাসেও মিশে যায়৷ নরওয়ে এবং সুইডেনের বিভিন্ন পরীক্ষায় ধরা পড়েছে, সমুদ্র থেকে পাওয়া মাইক্রোপ্লাস্টিকের একটা বড় অংশ গাড়ির চাকার পলিমার৷
ছবি: Colourbox/Akhararat
কল খুললেও প্লাস্টিক
কলের পানিতেও মিশে থাকছে প্লাস্টিক৷ বিশ্বের প্রায় সমস্ত দেশ থেকে কলের জল সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা করে দেখা গেছে, অন্তত ৮০ শতাংশ নমুনাতেই মাইক্রোপ্লাস্টিক আছে৷ বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, কলের পানিতেই প্লাস্টিক থাকলে যে কোনো খাবারেই তা সহজে মিশে যেতে পারে৷
ছবি: Imago/Westend61
বিয়ারেও ভয়
কলের পানিতেই যদি প্লাস্টিক থাকে, বিয়ারেও যে থাকবে, তা তো স্বাভাবিক! ২০১৪ সালের একটি পরীক্ষা থেকে জানা গেছে, ২৪টি জার্মান বিয়ারে প্লাস্টিক মিশে আছে৷ যদিও জার্মানির পরিবেশ সংক্রান্ত দফতর জানিয়েছে, এ বিষয়ে আরো গবেষণার প্রয়োজন আছে৷