ফ্রান্সই বিশ্বের প্রথম দেশ, যেখানে আইন করে সুপারমার্কেট থেকে অবিক্রীত খাবার-দাবার ফেলে দেওয়া নিষিদ্ধ করা হলো৷ পাইকারি ব্যবসায়ীদের সে খাবার দান করতে হবে৷ দাতব্য সংস্থাগুলি এই আইনকে স্বাগত জানিয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
গত ফেব্রুয়ারি মাসে ফ্রান্সে এই আইন পাশ করা হয়৷ তবে কিছু কিছু দাতব্য প্রতিষ্ঠানের চিন্তা হলো, তারা এই পরিমাণ খাবার-দাবার বণ্টনের ব্যবস্থা করতে পারবেন তো? কারফুর-এর মতো কোনো বড় ফরাসি সুপারমার্কেট চেনের একটি আউটলেটে গেলেই টের পাওয়া যায়, রোজ কী পরিমাণ খাবার তাদের ফেলে দিতে হয়৷ সুপারমার্কেটের ঠান্ডাঘরে দই বা পুডিং, একটু পুরনো হয়ে যাওয়া কেক বা রুটি, এ সব ডাঁই করা আছে৷
নতুন আইন অনুযায়ী বিক্রি না হওয়া খাবার-দাবার ফেলে দেওয়ার ফাইন হবে ৩,৭৫০ ইউরো, যা একটা সুপারমার্কেটের পক্ষে খুব বেশি নয়৷ কিন্তু যেদেশে বছরে প্রায় ৭০ লাখ টন খাবার-দাবার ফেলে দেওয়া হয়, সেখানে এই আইনের উপযোগিতা স্বল্প হলেও, গৌণ নয়৷ তবে খাবার নষ্ট করার মূল দায়টা পড়বে সাধারণ মানুষের ওপরে – রেস্টুরেন্ট আর দোকানপাট আসছে তার পরে৷ অপরদিকে একটি সুপারমার্কেট থেকে দাতব্য সংস্থাগুলিকে বছরে তিন লাখের বেশি ‘মিল' সরবরাহ করা যেতে পারে৷ কিন্তু বাস্তব হলো এই যে, অধিকাংশ দোকান থেকে প্রতিদিন প্রায় ২০ কিলো বিক্রি না হওয়া খাবার-দাবার ফেলে দেওয়া হয়৷
অপরদিকে ফ্রান্সের মতো দেশেও গরিব বা দুঃস্থ মানুষের কোনো কমতি নেই৷ এই পরিস্থিতিতে একটি অনলাইন পিটিশন থেকে খাবারের অপচয় রোধ আইন পর্যন্ত পৌঁছাতে একটি আধুনিক, সচেতন সমাজের বেশি দিন লাগার কথা নয় – ফ্রান্সে ঠিক যা ঘটেছে৷ ইউরোপের অপরাপর দেশেও এই সচেতনতা আছে অথবা বাড়ছে, যেমন জার্মানি কিংবা ব্রিটেনে৷ ডেনমার্কে শুধু ফেলে দেবার মতো খাবার-দাবার নিয়ে একটি ডিসকাউন্ট সুপারমার্কেট খোলা হয়েছে৷ ফ্রান্সের আগেই বেলজিয়ামের একাধিক শহরে খাবার নষ্ট নিষিদ্ধ করা হয়েছিল৷
The new food-saving App
03:29
বলতে কি, খাবারের অপচয় রোখার ক্ষেত্রে ফ্রান্স লাস্ট বয় না হলেও, আদৌ ফার্স্ট বয় ছিল না৷ এই নতুন আইন প্রমাণ করে দিল যে, সমাজে সচেতনতা দেখা দিলে পরিবর্তন ঘটতে খুব বেশি সময় লাগে না৷ তবে এমন একটি খাদ্য সরবরাহ প্রণালী, যেখানে দরিদ্র বা অভাবী মানুষজনকে ফেলে দেওয়া খাবারের ওপর নির্ভর করতে হয়, সেরকম একটি প্রণালী মানবমর্যাদার সঙ্গে কতটা খাপ খায়, এ প্রশ্নের জবাব আপাতত বাকি থাকল৷
বন্ধু, খাবার অপচয় রোখারজন্য আমরা কী করতে পারি? জানান নীচে, মন্তব্যের ঘরে৷
ইউরোপের জলবায়ু নায়করা
জলবায়ু পরিবর্তনের কুফল নিয়ে অনেকেই চিন্তিত৷ তাঁদেরই কেউ কেউ এ থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজছেন৷ ইউরোপের এমন কয়েকজনের সঙ্গে পরিচিত হয়ে নিন৷
ছবি: DW/A. S. Brändlin
মোরি আর মিলা
জার্মানির বিদ্যুৎ কোম্পানি আরডাব্লিউই একটি কয়লা খনির পরিধি বাড়ানোর জন্য প্রাচীন একটি বনের গাছপালা কাটতে চায়৷ কিন্তু মোরি আর মিলা এবং তাঁদের সহযোগীরা তা হতে দিতে চান না৷ তাই ঐ বনের কয়েকটি গাছে বাসা বানিয়ে সেখানে অবস্থান করছেন তাঁরা৷ এমনকি মাঝেমধ্যে কয়লা খনিতে থাকা ‘এক্সকাভেটর’-এ ঢুকে তাঁরা তালা লাগিয়ে দেন, যেন কেউ সেটা চালাতে না পারে৷
ছবি: DW/A. S. Brändlin
প্লাস্টিক বোতল দিয়ে নৌকা
আমস্টারডামের স্মিট শহরের খালগুলোতে পড়ে থাকা প্লাস্টিক বোতল সংগ্রহ করেন৷ পরে সেগুলো দিয়ে নৌকা তৈরি করেন, যেগুলো ঐ খালেই চলে৷
ছবি: DW/R. Krause
নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার
গাস ফান ডেয়ার ফেন আমস্টারডামের পুরনো একটি শিপ ইয়ার্ড এলাকা পরিষ্কার করে সেখানে একটি অফিস ভবন তৈরি করেছেন, যেটা চলে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও রিসাইকেল করা জিনিস-পত্র দিয়ে৷ এমনকি নিজেদের মলমূত্র থেকে সার তৈরি করে সেই সার দিয়ে সবজি চাষ করেন গাস ফেন ও তাঁর সহকর্মীরা৷
ছবি: DW/A. S. Brändlin
সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
বৈশ্বিক উষ্ণতা দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে রাখাতে সম্মত হয়ে ১৯৫টি দেশ ২০০৯ সালে একটি চুক্তি সই করেছিল৷ বেলজিয়ামও সেই অঙ্গীকার করেছিল৷ কিন্তু সরকার সেটা পূরণে যথেষ্ট পদক্ষেপ না নেয়ায় সরকারের উপর নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছেন ইগনাসে শোপস ও তাঁর সহকর্মীরা৷
ছবি: DW/R. Krause
সৌরশক্তি দিয়ে নৌকা
জার্মানির টোবিয়াস পাসুটলকা নৌকা চালাতে ও মাছ ধরতে খুব পছন্দ করেন৷ তিনি তাঁর মাছ ধরার পুরনো নৌকাকে সৌরশক্তি দিয়ে চালানোর উপযোগী করেছেন৷ সূর্য কম থাকা দিনগুলোতেও সেটা চলে৷ মাছ ধরার পাশাপাশি তিনি তাঁর নৌকায় পর্যটক সহ বন্ধুবান্ধব ও শিক্ষার্থীদের বার্লিন ঘুরিয়ে দেখান৷
ছবি: DW/R. Krause
দৈহিক শক্তি দিয়ে রিকশা চালানো
বার্লিনে পর্যটকদের আকর্ষণ করতে কয়েক বছর ধরে রিকশার আবির্ভাব হয়েছে৷ তবে সেগুলো চলে বৈদ্যুতিক শক্তিতে৷ কিন্তু গিডো বোর্গার্স ব্যতিক্রম৷ তিনি কোনো জ্বালানি ব্যবহার না করে শারীরিক শক্তি দিয়েই রিকশা চালিয়ে নিয়ে যান৷ প্লাস্টিক ব্যাগ ছাড়া দোকান!
ছবি: DW/A. S. Brändlin
ব্যাগহীন দোকান
বাজারে জিনিস-পত্র কিনে প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরেই বাসায় ফেরেন বেশিরভাগ জার্মান৷ কিন্তু মিলেনা গ্লিমবোভস্কির প্রশ্ন, এত প্লাস্টিকের কী দরকার? তাই নিজের দোকানে তিনি কোনো প্লাস্টিকের ব্যাগই রাখেননি৷ এভাবে তিনি ক্রেতাদের জলবায়ু সম্মত উপায়ে কেনাকাটায় উৎসাহিত করেন৷