সাগরের মাছ ধরে ধরে যখন সমুদ্র শূন্য হতে চলেছে, তখন মেক্সিকো উপসাগরের উপকূলের একটি গ্রামের মহিলাদের মাথায় আইডিয়া এলো: খাবার জন্য মাছ না ধরে অ্যাকোয়ারিয়ামের রঙিন মাছ ধরলে কেমন হয়?
ছবি: Reuters/Pichi Chuang
বিজ্ঞাপন
গাল্ফ অফ ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূল বরাবর ১৮টি সামুদ্রিক ন্যাশনাল পার্ক আছে৷ তবে অরক্ষিত এলাকাগুলিতে অবাধে মাছ ধরা চলেছে, যার ফলে সাগরে মাছ প্রায় ফুরোতে বসেছে৷ জার্মান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জিআইজেড-এর মেরিন বায়োলজিস্ট ফল্কার কখ ন্যাশনাল পার্ক কর্তৃপক্ষকে নতুন সংরক্ষিত এলাকা নির্ধারণ ও কার্যকরী করার কাজে সাহায্য করে থাকেন৷ ফল্কার বললেন: ‘‘কাজটা প্রায়শই কঠিন, কেননা জনসাধারণের ধারণা, তাহলে তারা কিছুই করতে পারবে না৷ মানুষজনকে বোঝাতে সময় লাগে যে, তাদের প্রথাগত কর্মপন্থা খুব বেশিদিন ধরে চালানো যাবে না৷ অপরদিকে এমন অনেক কাজকর্ম রয়েছে, যা কাবো পুলমো-র মানুষেরা করে থাকেন; যেমন শুধু মাছ ধরে শেষ করার তুলনায় ইকোটুরিজমের মাধ্যমে অনেক বেশি মাছ পাওয়া যায়৷''
ক্যালিফোর্নিয়া উপসাগরে বহু প্রজাতির মাছ ও প্রাণী ডিম পাড়ে ও বাচ্চা মানুষ করে৷ আরো উত্তরের লোরেটো উপসাগরে নীলতিমিরা বাচ্চা পাড়তে আসে৷ মেক্সিকো উপসাগরের নাতিশীতোষ্ণ এলাকাগুলিতে বিশ্বের বৃহত্তম প্রাণীরা শীতকালটা কাটায়, তারপর আবার উত্তরমেরু অভিমুখে যাত্রা করে৷ এই এলাকাটিও একটি ন্যাশনাল পার্ক৷ এখানে বিশেষ বিশেষ এলাকায় সীমিত পরিমাণে মাছ ধরার অনুমতি আছে৷
পার্ক ও পর্যটন
মার্টিন কাস্ত্রো পেশায় মাছ-ধরিয়ে, তবে শীতকালে তিনি পর্যটকদের শুশুক দেখান৷ যিনি একেবারেই রিল্যাক্স করতে চান, তিনি সি লায়ন বা হাতিসিলদের পর্যবেক্ষণ করতে পারেন৷ বহু বছর ধরে টুরিজম এই এলাকার মানুষদের পক্ষে একটা সুযোগ – সেই সঙ্গে একটা বিপদও বটে, বিশেষ করে যদি পর্যটকদের সংখ্যা বাড়ে৷ সৈকত জুড়ে একের পর এক বহুতল হোটেল পরিবেশের বারোটা বাজাতে পারে৷ ন্যাশনাল পার্কের পরিচালক আলেহান্দ্রো গঞ্জালেস লেইয়া বললেন: ‘‘পার্কের মধ্যে পড়ে সাগর ও আরো পাঁচটি দ্বীপ, যেখানে আমরা পর্যটন নিয়ন্ত্রণ করি৷ কিন্তু হোটেলগুলো পার্কের পরিধির বাইরে৷ কাজেই পর্যটন শিল্পের বড় বড় প্রকল্পগুলো রোখার জন্য আমাদের অন্যভাবে সক্রিয় হতে হয়, নয়তো পার্কের উপর তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে৷''
মাছ খান, সুস্থ থাকুন
মাছে তেমন কোনো চর্বি নেই, রয়েছে প্রচুর প্রোটিন, যা শারীরিক ও মানসিকভাবে মানুষকে ফিট রাখতে সহায়তা করে৷ বলেন খাদ্য বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: DW/Sarah Wiertz
মাংসের বদলে মাছ
আজকাল প্রায়ই লক্ষ্য করা যায় অনেক জার্মানই মাংসের পরিবর্তে নানা ধরণের মাছ খেতে পছন্দ করেন৷ বিশেষকরে যাঁরা স্বাস্থ্য সচেতন তাঁরা তো অবশ্যই৷ মাছে তেমন কোনো চর্বি নেই, রয়েছে প্রচুর প্রোটিন, যা শারীরিক ও মানসিকভাবে মানুষকে ফিট রাখতে সহায়তা করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Schamberger
খাবারের মুকুট
জার্মানিতে মাছকে বলা হয় ‘খাবারের মুকুট’৷ মাছ মস্তিষ্কের রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে৷ জার্মান খাদ্য গবেষণা কেন্দ্রের পরামর্শ, প্রতিটি মানুষেরই সপ্তাহে অন্তত দু’দিন মাছ খাওয়া প্রয়োজন৷ মাছ হৃদরোগ ও ক্যানসার থেকেও দূরে থাকতে সাহায্য করে৷ মাছ বুদ্ধি বাড়াতে সাহায্য করে৷
ছবি: AP
নানা জাতের মাছ
জার্মানিতে নানা রকম মাছ পাওয়া যায়৷ ছোট বড়, নদীর মাছ, সামুদ্রিক মাছ, লোনা পানির মাছ, হ্রদের মাছ, তাজা মাছ, হিমায়িত, ধূমায়িত এবং টিনজাত মাছ৷
ছবি: picture alliance/Bildagentur Huber
মাছ ভাজি
জার্মানরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মাছ ভাজি খায়, আমাদের বাঙালিদের মতো রান্না করে খুবই কম খেয়ে থাকেন তাঁরা৷ ডয়চে ভেলের ক্যান্টিনে সপ্তাহে প্রায় দু’দিন মাছ দেওয়া হয়৷ ক্যান্টিনে এরকম একটি ট্রাউট মাছের ভাজির দাম ৭ ইউরো, বাইরে যার দাম প্রায় দ্বিগুণ৷
ছবি: Fotolia/Comugnero Silvana
কাটা মাছ
বাজারে পাঠানোর আগে এভাবেই মাছ ‘প্রসেস’ করা হয়৷ মাছ কেটে পরিষ্কার করে, কাঁটা বেছে ‘স্লাইস’ করে তবেই সেটা বাজারে যায়৷ তবে কিছুটা ছোট আকারের মাছ কার্প, ট্রাউট, হেরিং, সি ব্রাস ইত্যাদি মাছ আস্তই পাওয়া যায় বাজারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সখের জেলে
জার্মানিতে অনেকেই সখ করে মাছ ধরেন, তবে তাঁদের অবশ্যই মাছ ধরার লাইসেন্স থাকতে হবে৷ তাছাড়া যে কোনো জায়াগায় মাছ ধরা যায় না, শুধু যেসব জায়গায় অনুমতি রয়েছে সেখানেই মাছ ধরা সম্ভব৷
ছবি: DW
তাজা মাছের বাজার
এভাবেই সুন্দর করে সাজানো থাকে মাছের বাজারে মাছগুলো৷ দেখে মনে হয়, মাছগুলো যেন মাছ-প্রেমীদের ডাকছে৷ মাছ মস্তিষ্ককে সজাগ রাখে, তাই ডাক্তাররা মাছ খেতে সবসময়ই পরামর্শ দিয়ে থাকেন, বিশেষকরে ছাত্র-ছাত্রী এবং বয়স্কদের৷ তবে সবার জন্যই মাছ খুব উপাদেয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ধূমায়িত মাছ
ধূমায়িত বা ‘স্মোক্ড’ মাছ জার্মানদের কাছে বেশ প্রিয়, বিশেষ করে রুটির সাথে তাঁরা এ ধরনের বিশেষ প্রক্রিয়ায় রান্না করা মাছ খেতে পছন্দ করেন৷ ম্যাকরেল নামের এক মাছ যার মধ্যে খুব সামান্য হলেও আমাদের ইলিশের স্বাদ খুঁজে পাওয়া যায়৷ তবে সেই মাছ ‘স্মোক্ড’ অবস্থায়ই বেশি পাওয়া যায়৷
ছবি: picture-alliance/chromorange
বরফ দেওয়া মাছ
এভাবেই মাছকে যত্ন করে বরফের ওপর সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা হয়৷ শুধুমাত্র মাছের জন্য রয়েছে আলাদা বাজার, সেখানে এ ধরনের মাছ পাওয়া যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মাছ খান, সুন্দর আর স্লিম থাকুন
মাছ খাওয়ার পরামর্শ আজকাল চারিদিকে শোনা যায়৷ ডাক্তার থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য সচেতন যে কেউ এই পরমার্শ দেন৷ তবে ছোটবেলা থেকেই এই অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা৷ শরীরে আয়োডিনের ঘাটতিও পূরণ করে থাকে বেশ কিছু মাছ৷
ছবি: DW/Sarah Wiertz
10 ছবি1 | 10
কোর্ট-কাছারি এবং বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বিরোধেও পরামর্শ দিয়ে থাকেন জার্মানি থেকে আসা উন্নয়ন বিশেষজ্ঞরা৷ জিআইজেড-এর ফল্কার কখ বলেন: ‘‘প্রত্যেকটি ন্যাশনাল পার্ক একটি নিজস্ব জগত এবং তার পরিচালকও শুধু নিজের এলাকার জন্য দায়ী – অন্যান্য ন্যাশনাল পার্কে কী ঘটছে বা না ঘটছে, তার জন্য দায়ী নন৷ জিআইজেড-এর সঙ্গে উদ্যোগের একটা অংশ হল, এই পরিস্থিতির পরিবর্তন খতিয়ে দেখা, একাধিক ন্যাশনাল পার্কের একই সমস্যা আছে কিনা৷ শুধু নিজের কথা ভাবলেই চলবে না৷''
পর্যটকদের আকর্ষণ করে জার্মানির যে দ্বীপগুলি
জার্মানিতে প্রায় ৮০টি দ্বীপ রয়েছে এবং বেশিরভাগের অবস্থান পূর্বে বাল্টিক সাগর এবং পশ্চিমে উত্তর সাগরে৷ এই ছবিঘরে জার্মানির দ্বীপপুঞ্জের কিছু নমুনা পাওয়া যাক৷
ছবি: picture alliance / Hinrich Bäsemann
জার্মানির উত্তরে
উত্তরে শ্লেসভিক হলস্টাইন রাজ্যের পশ্চিম উপকূলের কাছে ওয়াডেন সাগরে অবস্থিত উত্তর ফ্রিসিয়ান দ্বীপপুঞ্জের কিছু দ্বীপ৷ জার্মানির সবচেয়ে বড় দ্বীপ স্যুল্ট জার্মানি থেকে ডেনিশ উপকূল পর্যন্ত প্রসারিত৷ এখানকার মানুষরা ইংরেজি, ডেনিশ এবং ডাচ ভাষার মিশ্রণে অদ্ভুত এক আঞ্চলিক ভাষা ‘স্যালরিং’-এ কথা বলে৷
ছবি: Sven Hoppe/AFP/GettyImages
গভীর সাগরের গ্ল্যামার
নিউইয়র্কের হ্যামস্টনস যেমন,জার্মানিতে স্যুল্ট-ও তেমনি দ্বীপ৷ জার্মানির এলিট শ্রেণি এবং পর্যটকরা আসেন রেড ক্লিফ-এর মতো একটি ক্লাবে গ্ল্যামার উপভোগ করতে এবং সেলিব্রেটিদের দেখার জন্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রুগেন দ্বীপের দুর্লভ সময়
জার্মানির রুগেন দ্বীপের অবস্থান জার্মানির পূর্বাঞ্চলে বাল্টিক সাগরের কাছাকাছি৷ ২০১৩ সালে এই দ্বীপে এক কোটিরও বেশি মানুষ রাত কাটান৷ এখানে আলোকসজ্জ্বায় সজ্জিত সাগরপাড়ের অবসর যাপন কেন্দ্র সেলিন-এ পর্যটকরা আনন্দের সাথে কনসার্ট উপভোগ করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মধ্যযুগীয় উত্তরাধিকার
রাইশেনাউ দ্বীপটির অবস্থান জার্মানির দক্ষিণের সীমান্তে অবস্থিত লেক কন্সটানৎস-এর কাছাকাছি৷ এই দ্বীপটি আবিষ্কৃত হয় ৭২৪ সালে আর ২০০২ সাল থেকে এটি বিশ্ব সংস্কৃতির ঐতিহ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নেদারল্যান্ডস-এর উত্তরে
ঐতিহাসিক দলিলপত্রে সরকারিভাবে বরকুম দ্বীপের প্রথম উল্লেখ দেখা যায় ১৩৯৮ সালে৷ সে সময় দ্বীপটি ছিলো জলদস্যুদের স্বর্গ৷ বর্তমানে উত্তর সাগরের এই দ্বীপে বসবাস করে আনুমানিক পাঁচ হাজার মানুষ৷ হোটেলগুলোর অবস্থান একেবারে সাগরের গা ঘেঁষে৷ ১৮৩০ সাল থেকে এই সমুদ্র সৈকত অবসর যাপন কেন্দ্র৷
ছবি: picture-alliance/Bildagentur Huber
হেলগোলান্ড-এর প্রাকৃতিক টাওয়ার
জার্মানির উপকূল থেকে একমাত্র হেলগোলান্ড দ্বীপে যেতেই নৌকায় প্রায় তিন ঘণ্টা সময় লাগে৷ পরিবেশ রক্ষার জন্য এখানে গাড়ি চালানো নিষিদ্ধ৷ বালির পাথর ‘টল আনা’ এই দ্বীপের বড় চিহ্ন৷
ছবি: picture alliance / Hinrich Bäsemann
6 ছবি1 | 6
অ্যাকোয়ারিয়ামের মাছ
অনেক সময় নানা নতুন আইডিয়া পাওয়া যায়৷ কয়েক বছর হল লোরেটো-র কাছে একটি জেলেদের গ্রামে লোকজন অ্যাকোয়ারিয়ামের মাছ ধরা শুরু করেছেন – মার্কিন মুলুকের বড় বড় অ্যাকোয়ারিয়ামের ফরমায়েশে৷ এই ধরনের একটি কাউফিশ বিক্রি হয় প্রায় সাড়ে পাঁচ ডলারে৷ একটি পর্কুপাইন ফিশ-এর জন্য তার তিনগুণ পাওয়া যায়৷ হাজার হোক, তার কেরামতি অনেক বেশি!
পুরুষেরা মাছ ধরার জন্য জলে নামলেও, এই ব্যবসায় তারা নেহাত কর্মচারী৷ আইডিয়াটা এসেছিল তাদের স্ত্রীদের মাথায়৷ তারাই একটি মহিলা সমবায় গঠন করেন৷ সমবায়ের প্রধান ক্লাউডিয়া তালামান্তেস রোমেরো জানালেন: ‘‘আমরা এ ভাবে নতুন সম্মান পেয়েছি৷ আমাদের স্বামীরা সাধারণ জেলে৷ কিন্তু আমরা হিসেব করে দেখেছি যে, একটি অর্নামেন্টাল ফিশ থেকে যা পাওয়া যায়, তা দামে পাঁচ কিলো খাবারের মাছের সমান৷''
ব্যবসায়িক ভিত্তিতে বড় বড় ট্রলারে করে মাছ ধরার বিরুদ্ধে সুরক্ষা হিসেবে এলাকার বাসিন্দারা লোরেটো-র ন্যাশনাল পার্ক সৃষ্টির দাবি তোলেন আজ থেকে বহু বছর আগে৷ তবে রঙিন মাছের ব্যবসা থেকে যে এতো লাভ হবে এবং তাঁদের জীবন এ ভাবে বদলে যাবে, জেলেরা নিজেরাও তা ভাবতে পারেননি৷ ধীবর ও টুরিস্ট গাইড মার্টিন কাস্ত্রো রোমেরো জানালেন: ‘‘জেলে হিসেবে কী মাছ জালে উঠল, শুধু সেটাই মাথায় থাকে৷ বাকি কোনো কিছুর কোনো মূল্য থাকে না৷ কিন্তু এখন আমি জানি, এখানে কতো কিছু পাওয়া যায় - আমরা কী পরিমাণ বড়লোক! আমাদের কোনো কিছু ধরা-মারার দরকার নেই৷ মানুষজনকে শুধু দেখালেই হল, এখানে কতো কিছু আছে৷... সেটাই আমাদের ভবিষ্যৎ বলে আমার ধারণা৷''
রোমেরো-র কথা যদি সত্যি হয়, তাহলে এখানকার মানুষের ভবিষ্যৎ আছে বৈকি৷