ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত খারকিভে গেলেন জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেযারবক। ইউক্রেনকে আরো সাহায্যের প্রতিশ্রুতি।
বিজ্ঞাপন
সমানে বিমানহানা হচ্ছে বলে ইউক্রেনে বিমান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেয়ারবক তাই পোল্যান্ড থেকে সারারাতের ট্রেনে ইউক্রেন এসে পৌঁছান। জার্মানির পূর্ণ মন্ত্রীদের মধ্যে তিনিই প্রথম খারকিভের অবস্থা সরেজমিনে দেখলেন।
বেয়ারবকের সঙ্গে ছিলেন ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কুলেবা এবং জার্মানিতে নিযুক্ত ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত। খারকিভের গভর্নর জানিয়েছেন, বেয়ারবক খারকিভ থেকে চলে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর রাশিয়ার গোলাবর্ষণ শুরু হয়। তিনি বলেছেন, শহরের মানুষ যেন আশ্রয়স্থলের বাইরে না আসেন।
যেখানে যুদ্ধ হচ্ছে, এমন একটা শহর দেখতে চেয়েছিলেন বেয়ারবক।
রাশিয়ায় ইউক্রেনের ড্রোন হামলা যুদ্ধের গতিপথ বদলাবে?
৫ ডিসেম্বর রাশিয়ার দুটি বিমানঘাঁটিতে প্রথমবারের মতো ড্রোন হামলা চালায় ইউক্রেন৷ এই হামলা কি যুদ্ধের গতিপথ বদলাবে?
ছবি: MAXAR TECHNOLOGIES/REUTERS
রাশিয়ার বিমানঘাঁটিতে ইউক্রেনের ড্রোন হামলা
৫ ডিসেম্বর রাশিয়ার এঙ্গেলস ও ডিয়াগিলেভো বিমানঘাঁটিতে ইউক্রেন ড্রোন হামলা চালিয়েছে৷ দূরবর্তী এলাকায় হামলা চালাতে এই দুটি বিমানঘাঁটি ব্যবহার করে রাশিয়া৷
ছবি: MAXAR TECHNOLOGIES/REUTERS
বিশ্লেষকরা বিস্মিত
দুটি বিমানঘাঁটিরই অবস্থান ক্রেমলিন থেকে দূরে৷ তাই সেখানে ইউক্রেনের হামলা চালানোর ক্ষমতা বিশ্লেষকদের বিস্মিত করেছে৷ জার্মানির বুন্ডেসভেয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্রাঙ্ক সাউয়ার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রতিক্রিয়া না দেখানোর বিষয়টি বিস্ময়কর - এটা হতে পারে যে, রাশিয়ার এত ভেতরে এমন হামলা হতে পারে, সেটা রাশিয়া ভাবেনি৷’’
ছবি: MAXAR/REUTERS
হামলা সম্পর্কে রাশিয়ার বক্তব্য
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, ইউক্রেনের ড্রোনগুলো ভূপতিত করা হয়েছে৷ এবং তাদের টুকরোর আঘাতে দুটি রুশ যুদ্ধবিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ তবে অনলাইনে প্রকাশিত ব্যক্তিগত সার্ভিলেন্স ক্যামেরায় তোলা ভিডিওতে দেখা গেছে, আকাশে কোনো বিস্ফোরণ হয়নি, বরং ভূমিতে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে৷
ছবি: MAXAR TECHNOLOGIES/REUTERS
কোন ড্রোন?
রাশিয়া বলছে, হামলার কাজে ১৯৭০-এর দশকে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের তৈরি পর্যবেক্ষণকারী ড্রোন টিইউ-১৪১ (ছবিতে ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ দেখা যাচ্ছে) ব্যবহার করা হয়েছে৷ তবে কিয়েভের নিরাপত্তা বাহিনীর সূত্রের বরাতে নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, পাবলিক-প্রাইভেট যৌথ অংশীদারিত্বের আওতায় ইউক্রেনের তৈরি নতুন ড্রোন দিয়ে ঐ হামলা করা হয়েছে৷
ছবি: Zeljko Hladika/PIXSELL/picture alliance
ইউক্রেনের বক্তব্য
ড্রোন তৈরির কর্মসূচি বিষয়ে ইউক্রেন নীরবতা অনুসরণ করছে৷ তবে ৮ ডিসেম্বর ফেসবুক পোস্টে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেক্সি রেজনিকভ জানান, ‘‘অতীতে আমাদের সামরিক বাহিনীর জন্য বছরে এক-দুটি ড্রোন টাইপের অনুমোদন দেয়া হত৷ তবে গত ৩০ দিনে সাতটি নতুন ড্রোন টাইপের অনুমোদন দেয়া হয়েছে৷’’
ছবি: Kai Pfaffenbach/REUTERS
‘প্রতীকী গুরুত্বের চেয়েও বেশি’
রাশিয়ার এত ভেতরে ইউক্রেনের হামলা চালানোর সক্ষমতার বিষয়টি শুধু প্রতীকী অর্থে নয়, তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ, বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা৷ ইউক্রেনের সামরিক বিশেষজ্ঞ ওলেগ কাটকভ বলেন, ‘‘রাশিয়ার এখন তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুনরায় মোতায়েন করতে হবে, কিংবা তাদের যুদ্ধবিমানগুলো আরও দূরে নিয়ে যেতে হবে৷ সেক্ষেত্রে আরও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করতে হবে, যা খরচ বাড়াবে৷’’
ছবি: Sergei Savostyanov/ITAR/TASS/imago
পশ্চিমা বিশ্বের জন্য সংকেত?
ইউক্রেন অনেকদিন ধরে পশ্চিমের কাছে দূরে হামলা করার অস্ত্র চাইছে৷ যুক্তরাষ্ট্র দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপে সক্ষম ‘হাইমার্স’ ব্যবস্থা দিলেও রাশিয়ার ভয়ে সেটির সীমা কমিয়ে দিয়েছে৷ ফলে শুধু রাশিয়া অধিৃকত এলাকায় সেটি ব্যবহার করা যাবে৷ ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেসন্সের উলরিকে ফ্রাঙ্কে মনে করছেন, রাশিয়ায় হামলা চালিয়ে ইউক্রেন পশ্চিমা বিশ্বকে এই সংকেত দিয়েছে যে, তাদের ছাড়াও তারা হামলা করতে সক্ষম৷
ছবি: Roman Koksarov/AP/picture alliance
7 ছবি1 | 7
সাহায্যের প্রতিশ্রুতি
বেয়ারবক জানিয়েছেন, এখন ইউক্রেনে ভয়ংকর ঠান্ডা। তাপমাত্রা মাইনাস ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই অবস্থায় তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষগুলির কাছ থেকে তাদের অভিজ্ঞতার কথা শুনতে চেয়েছিলেন। সেজন্যই খারকিভে গিয়েছিলেন।
বেয়ারবকের সফরসঙ্গী ডিডাব্লিউর সংবাদিক ম্যাক্স জান্ডের জানিয়েছেন, বেয়ারবক এই শীতে রাশিয়ার আক্রমণের প্রভাব বিদ্যুৎ, জল, হিটিংয়ের মতো অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবার উপর কীভাবে পড়ছে, তা দেখতে চেয়েছিলেন। তিনি বাচ্চাদের একটি হাসপাতালও পরিদর্শন করেন।
বেয়ারবক জানিয়েছেন, জার্মানি ইউক্রেনকে সমর্থন ও সাহায্য করে যাবে। তারা ইউক্রেনকে আরো কম্বল ও জেনারেটর দেবে। অস্ত্রও দেবে। বেয়ারবক জানিয়েছেন, তিনি চান এখনও রাশিয়ার দখলে থাকা জমিতে যে সব ইউক্রেনের নাগরিক আছেন, তাদের মুক্ত করতে হবে।
ইউক্রেন জার্মানির কাছ থেকে লেপার্ড ২ কামান চায়। তবে জার্মান সরকার এখনও তাদের সেই কামান দিতে রাজি হয়নি।