সিভিয়েরোদনেৎস্কে এখনো তীব্র লড়াই চলছে। তারই মধ্যে খারকিভে ভায়বহ আক্রমণ চালিয়েছে রাশিয়া। নিহতদের মধ্যে বেসামরিক মানুষও আছেন।
বিজ্ঞাপন
খারকিভে রাশিয়া আরো প্রবল আক্রমণ শুরু করেছে। খারকিভের গভর্নর জানিয়েছেন, সেখানে লাগাতার গোলাবর্ষণ করছে রাশিয়ার সেনা। মঙ্গলবার তারই জেরে অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন বলে গভর্নরের দাবি। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি খারকিভের ঘটনাকে নির্মম হত্যা বলে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, এই ঘটনা যুদ্ধাপরাধ। রাশিয়াকে এই কাজের জন্য শাস্তি দেওয়া উচিত। জেলেনস্কির দাবি, রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরো কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করুক পশ্চিমা দেশগুলি। উল্লেখ্য, এখনো পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার বিরুদ্ধে ছয়টি নিষেধাজ্ঞার প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। সপ্তম প্যাকেজটি নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে।
ক্যামেরায় ইউক্রেনের ধ্বংসস্তূপে আগামীর স্বপ্ন
যুদ্ধের সময়েও ইউক্রেনের মানুষ ভেঙে পড়েনি৷ তাই ধ্বংসযজ্ঞ আর মৃত্যুর মিছিলের মাঝেও চলছে স্বপ্ন রচনা৷ ফটোগ্রাফার স্তানিস্লাভ সেনিকের ক্যামেরায় চেরনিহিভের ধ্বংসস্তূপে স্কুল পরীক্ষার্থীদের ছবিগুলো সে কথাই বলে...
ছবি: Instagram/@senykstas
ধ্বংসস্তূপে অন্যরকম পরীক্ষা
যুদ্ধ শুরুর পর অনেকেই ইউক্রেন ছেড়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছেন৷ তবে যারা দেশ ছাড়েননি, তারা হয় দেশরক্ষার লড়াইয়ে নেমেছেন, নয়ত নিজেকে তৈরি রাখছেন, তৈরি করছেন দেশ পুনর্গঠনে ভূমিকা রাখার জন্য৷ যুদ্ধের মাঝেও পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছে শিক্ষার্থীরা৷ ধ্বংসপ্রায় চেরনিহিভের শিক্ষার্থীরা স্কুল ফাইনালও দিয়েছে৷ তাদের কয়েকজনকে নিয়ে স্তানিস্লাভ সেনিকের ফটোশুটটাও ছিল অন্যরকম এক পরীক্ষা৷
ছবি: Instagram/@senykstas
অচেনা রূপে চেনা শহর
এই দুই কিশোরীর ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর চেরনিহিভেই জন্ম, বেড়ে ওঠা৷ তাদের প্রিয় শহর আজ রুশ হামলায় ধ্বংসপ্রায়৷ তবে ধ্বংসপ্রায় শহরটিও তাদের প্রিয়৷ এই শহরকে নতুন করে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখে তারা৷ স্তানিস্লাভ সেনিকের আইডিয়াটা তাই পছন্দ হয়েছে তাদের৷ বোমায় ভেঙে পড়া এক ভবনেই তাই ফটোশুটে অংশ নিয়েছে তারা৷
ছবি: Instagram/@senykstas
দুঃস্বপ্নময় বর্তমানে সুন্দর এক স্বপ্ন
স্তানিস্লাভ সেনিকের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ফটোশুটটা ওরা চেরননিহিভের জীর্ণ, বিবর্ণ ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে করতে রাজি হয়েছে মূলত একটি কারণে৷ বাকিদের মতো ওরাও ভেবেছে, এই ছবি থেকে যাবে স্মৃতি হয়ে৷ দিন বদলাবে৷ আসবে সুদিন৷ চেরনিহিভ একদিন আবার সেজে উঠবে নতুন সাজে৷ তখন এই দুই কিশোরী তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে এই ছবি দেখিয়ে বলতে পারবে, ‘‘দেখো, আমরা এই ধ্বংসপ্রায় শহরটাকে ভালোবেসে বেসে আবার বাঁচিয়ে তুলেছি৷’’
ছবি: Instagram/@senykstas
‘ওরা আর ভয় পায় না, মন খারাপ করে না’
ছবির এই মানুষটিই স্তানিস্লাভ সেনিক৷ ছবি তোলাকে পেশা করেছেন পাঁচ বছর আগে৷ রাশিয়ার হামলায় বিধ্বস্ত চেরনিহিভ শহরে শিক্ষার্থীরা স্বতস্ফূর্তভাবে ফটোশুটে অংশ নেবে কিনা- এ নিয়ে তার অনেক সংশয় ছিল৷ কিন্তু কথা বলে বুঝলেন, শিক্ষার্থীদের ফটোশুটে কোনো আপত্তি নেই৷ আরো দেখলেন, ‘‘ওরা এখন আর ভয় পায় না, প্রিয় শহরের ধ্বংসপ্রায় রূপ দেখে খুব বেশি মন খারাপও করে না৷’’
ছবি: Instagram/@senykstas
দুমড়ানো-মোচড়ানো গাড়ির ছাদে ওরা পাঁচজন
স্বাভাবিক অবস্থায় এই চেহারার গাড়ি কোনো শহরেই যত্ন করে রাখা হয় না৷ যুদ্ধ শেষ হলে এই দুটোকেও হয়ত আর কোথাও দেখা যাবে না৷ তবে এই পাঁচ শিক্ষার্থীর এই ফটোশুটের কল্যাণে আগামী পৃথিবীর অনেকেই নিশ্চয়ই মনে রাখবে গাড়ি দুটোর কথা৷
ছবি: Instagram/@senykstas
‘ভুল বুঝবেন না’
ফটোশুটে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা অবশ্য আগেভাগেই জানিয়ে রেখেছে, কেউ যদি ছবিগুলো দেখে মনে করেন, চেরনিহিভের ধ্বংসপ্রায় চেহারা নিয়ে শিক্ষার্থীরা গর্বিত আর এ কারণেই তারা সেখানে ফটোশুটে অংশ নিয়েছে- তাহলে খুব বড় ভুল করা হবে৷ তাদের অনুরোধ, ‘‘প্লিজ, আমাদের ভুল বুঝবেন না, আমরা আসলে এই দুঃসময়টাকে ফ্রেমে ধরে রাখতে চাই, আগামী প্রজন্মকে ছবি দেখিয়ে বলতে চাই ভয়ঙ্কর এই যুদ্ধের কথা৷’’
ছবি: Instagram/@senykstas
6 ছবি1 | 6
লুহানস্কের লড়াই
খারকিভের পাশাপাশি লুহানস্কেও তীব্র লড়াই চলছে। সেখানকার গভর্নর জানিয়েছেন, সিভিয়েরোদনেৎস্কের একটি অংশ রাশিয়া দখল করে নিলেও এখনো অ্যাজট রাসায়নিক কারখানা ঘিরে রেখেছে ইউক্রেনের সেনা। সেখানে প্রবল লড়াই চলছে। কারখানার ভিতর আটকে আছেন অন্তত তিনশ বেসামরিক মানুষ।
এদিকে, সিভিয়েরোদনেৎস্কের কাছে আরো একটি গ্রাম দখল করেছে রাশিয়ার সেনা। গ্রামটির নাম তোশকিভকা।
রাশিয়ায় বন্দি
ইউক্রেনের ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, রাশিয়া ইউক্রেনের অন্তত এক হাজার পাঁচশ বেসামরিক ব্যক্তিকে বন্দি করে রেখেছে। রাশিয়ার একাধিক কারাগারে তাদের আটকে রাখা হয়েছে। দ্রুত তাদের ছেড়ে দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে, রাশিয়ার মদতপুষ্ট বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতারা জানিয়েছেন, আগামী কয়েকমাসের মধ্যেই খারকিভের এলাকাগুলিতে গণভোট নেওয়া হবে। গণভোটের মাধ্যমেই রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত হবে ওই এলাকাগুলি। যদিও ইউক্রেন এখনো পর্যন্ত এবিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।