ডনবাস অঞ্চল থেকে ইউক্রেনের সেনা সরানোর জন্য নতুন করে খারকিভে আক্রমণ শুরু করেছে রাশিয়া। জানিয়েছেন, ইউক্রেনের এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা।
বিজ্ঞাপন
ইউক্রেনের সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, মঙ্গলবার এবং বুধবার মিলিয়ে মোট ২০ জন নিহত হয়েছেন খারকিভে। তাদের অধিকাংশই বেসামরিক ব্যক্তি। রাশিয়ার লাগাতার বোমাবর্ষণের ফলেই তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের পরামর্শদাতা ওলেক্সাই অ্যারিস্টোভিচ জানিয়েছেন, খারকিভের মানুষকে আতঙ্কিত করার জন্যই এভাবে বোমাবর্ষণ শুরু করেছে রাশিয়া। একইসঙ্গে তার অভিমত, ডনবাস অঞ্চল থেকে ইউক্রেনের সেনাকে সরিয়ে আনার জন্যই খারকিভ অঞ্চলে নতুন করে আক্রমণ শুরু করেছে রাশিয়া। এর ফলে ইউক্রেনের সেনা খারকিভের দিকে ্গ্রসর হবে। সেই সুযোগে গোটা ডনবাস অঞ্চল রাশিয়া দখল করে নেবে বলে তার আশঙ্কা।
ক্যামেরায় ইউক্রেনের ধ্বংসস্তূপে আগামীর স্বপ্ন
যুদ্ধের সময়েও ইউক্রেনের মানুষ ভেঙে পড়েনি৷ তাই ধ্বংসযজ্ঞ আর মৃত্যুর মিছিলের মাঝেও চলছে স্বপ্ন রচনা৷ ফটোগ্রাফার স্তানিস্লাভ সেনিকের ক্যামেরায় চেরনিহিভের ধ্বংসস্তূপে স্কুল পরীক্ষার্থীদের ছবিগুলো সে কথাই বলে...
ছবি: Instagram/@senykstas
ধ্বংসস্তূপে অন্যরকম পরীক্ষা
যুদ্ধ শুরুর পর অনেকেই ইউক্রেন ছেড়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছেন৷ তবে যারা দেশ ছাড়েননি, তারা হয় দেশরক্ষার লড়াইয়ে নেমেছেন, নয়ত নিজেকে তৈরি রাখছেন, তৈরি করছেন দেশ পুনর্গঠনে ভূমিকা রাখার জন্য৷ যুদ্ধের মাঝেও পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছে শিক্ষার্থীরা৷ ধ্বংসপ্রায় চেরনিহিভের শিক্ষার্থীরা স্কুল ফাইনালও দিয়েছে৷ তাদের কয়েকজনকে নিয়ে স্তানিস্লাভ সেনিকের ফটোশুটটাও ছিল অন্যরকম এক পরীক্ষা৷
ছবি: Instagram/@senykstas
অচেনা রূপে চেনা শহর
এই দুই কিশোরীর ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর চেরনিহিভেই জন্ম, বেড়ে ওঠা৷ তাদের প্রিয় শহর আজ রুশ হামলায় ধ্বংসপ্রায়৷ তবে ধ্বংসপ্রায় শহরটিও তাদের প্রিয়৷ এই শহরকে নতুন করে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখে তারা৷ স্তানিস্লাভ সেনিকের আইডিয়াটা তাই পছন্দ হয়েছে তাদের৷ বোমায় ভেঙে পড়া এক ভবনেই তাই ফটোশুটে অংশ নিয়েছে তারা৷
ছবি: Instagram/@senykstas
দুঃস্বপ্নময় বর্তমানে সুন্দর এক স্বপ্ন
স্তানিস্লাভ সেনিকের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ফটোশুটটা ওরা চেরননিহিভের জীর্ণ, বিবর্ণ ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে করতে রাজি হয়েছে মূলত একটি কারণে৷ বাকিদের মতো ওরাও ভেবেছে, এই ছবি থেকে যাবে স্মৃতি হয়ে৷ দিন বদলাবে৷ আসবে সুদিন৷ চেরনিহিভ একদিন আবার সেজে উঠবে নতুন সাজে৷ তখন এই দুই কিশোরী তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে এই ছবি দেখিয়ে বলতে পারবে, ‘‘দেখো, আমরা এই ধ্বংসপ্রায় শহরটাকে ভালোবেসে বেসে আবার বাঁচিয়ে তুলেছি৷’’
ছবি: Instagram/@senykstas
‘ওরা আর ভয় পায় না, মন খারাপ করে না’
ছবির এই মানুষটিই স্তানিস্লাভ সেনিক৷ ছবি তোলাকে পেশা করেছেন পাঁচ বছর আগে৷ রাশিয়ার হামলায় বিধ্বস্ত চেরনিহিভ শহরে শিক্ষার্থীরা স্বতস্ফূর্তভাবে ফটোশুটে অংশ নেবে কিনা- এ নিয়ে তার অনেক সংশয় ছিল৷ কিন্তু কথা বলে বুঝলেন, শিক্ষার্থীদের ফটোশুটে কোনো আপত্তি নেই৷ আরো দেখলেন, ‘‘ওরা এখন আর ভয় পায় না, প্রিয় শহরের ধ্বংসপ্রায় রূপ দেখে খুব বেশি মন খারাপও করে না৷’’
ছবি: Instagram/@senykstas
দুমড়ানো-মোচড়ানো গাড়ির ছাদে ওরা পাঁচজন
স্বাভাবিক অবস্থায় এই চেহারার গাড়ি কোনো শহরেই যত্ন করে রাখা হয় না৷ যুদ্ধ শেষ হলে এই দুটোকেও হয়ত আর কোথাও দেখা যাবে না৷ তবে এই পাঁচ শিক্ষার্থীর এই ফটোশুটের কল্যাণে আগামী পৃথিবীর অনেকেই নিশ্চয়ই মনে রাখবে গাড়ি দুটোর কথা৷
ছবি: Instagram/@senykstas
‘ভুল বুঝবেন না’
ফটোশুটে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা অবশ্য আগেভাগেই জানিয়ে রেখেছে, কেউ যদি ছবিগুলো দেখে মনে করেন, চেরনিহিভের ধ্বংসপ্রায় চেহারা নিয়ে শিক্ষার্থীরা গর্বিত আর এ কারণেই তারা সেখানে ফটোশুটে অংশ নিয়েছে- তাহলে খুব বড় ভুল করা হবে৷ তাদের অনুরোধ, ‘‘প্লিজ, আমাদের ভুল বুঝবেন না, আমরা আসলে এই দুঃসময়টাকে ফ্রেমে ধরে রাখতে চাই, আগামী প্রজন্মকে ছবি দেখিয়ে বলতে চাই ভয়ঙ্কর এই যুদ্ধের কথা৷’’
ছবি: Instagram/@senykstas
6 ছবি1 | 6
আগামী কয়েকসপ্তাহে যুদ্ধ পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে বলেও জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।
ন্যাটোর বৈঠক
কয়েকদিনের মধ্যেই ইউরোপে শুরু হতে চলেছে জি৭ এবং ন্যাটোর বৈঠক। সেখানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের বিরুদ্ধে আরো চরম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই এবিষয়ে আলোচনা শুরু করেছে পশ্চিমা দেশগুলি। জার্মানির বাভারিয়াতে এবার জি৭ এর বৈঠক হওয়ার কথা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও সেখানে উপস্থিত হবেন। এছাড়াও যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইটালি, জাপান, ক্যানাডা এবং জার্মান প্রতিনিধিরা সেখানে থাকবেন।
যে পাঁচ উপায়ে পৃথিবী বদলে দিয়েছে যুদ্ধ
রাশিয়ার ইউক্রেনে হামলা শুরুর ১০০ দিন পার হলো৷ অন্য রাষ্ট্রের সীমানায় ঢুকে এমন আক্রমণ গেল ৮০ বছরে ইউরোপে আর হয়নি৷ এই যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে বিশ্বজুড়ে৷ সেটি কেমন? চলুন দেখে নিই৷
ছবি: South Korean Defense Ministry/Getty Images
অসংখ্য শরণার্থী
রাশিয়ার আক্রমণের পর প্রায় ৬৮ লাখ ইউক্রেনিয়ান দেশ ছেড়েছেন৷ জাতিসংঘের হিসেবে, এদের প্রায় ৩০ লাখ প্রতিবেশী দেশগুলো ছাড়িয়ে অন্যান্য দেশেও আশ্রয় নিয়েছেন৷ জার্মানিতে সাত লাখেরও বেশি ইউক্রেনিয়ান আশ্রয় নিয়েছেন৷ আরো ৭৭ লাখ দেশের ভেতরেই ঘরছাড়া হয়েছেন৷
ছবি: Kirsty O'Connor/empics/picture alliance
খাদ্য সংকট
বিশ্বের অর্ধেক সানফ্লাওয়ার ভোজ্য তেল উৎপাদন করে ইউক্রেন৷ এছাড়া দেশটি ১৫% ভুট্টা ও ১০% গম রপ্তানি করে৷ যুদ্ধের কারণে এসব পণ্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে৷ এ কারণে এসব পণ্য উৎপাদনকারী অন্য দেশগুলোও অভ্যন্তরীণ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য রপ্তানি বন্ধ করেছে৷ গেল মে মাস পর্যন্ত ২৩টি দেশ এসব পণ্য রপ্তানি বন্ধ করেছে৷
ছবি: Jelena Djukic Pejic/DW
জ্বালানি সংকট
রাশিয়া পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জ্বালানি গ্যাস রপ্তানিকারক দেশ৷ তারা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ও তৃতীয় সর্বোচ্চ কয়লা রপ্তানিকারক৷ ইউক্রেনে হামলা করার পর রাশিয়ার ওপর জ্বালানি নির্ভরতা কমাতে বা বন্ধ করতে একযোগে কাজ করছে ইউরোপের দেশগুলো৷ রাশিয়াও একাধিক ইউরোপীয় দেশে গ্যাস রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে৷
ছবি: ITAR-TASS/imago
দ্রব্যমূল্য ও মুদ্রাস্ফীতি
খাদ্যপণ্য ও জ্বালানি সংকটের মুখে দাম বেড়ে গেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের৷ বেড়েছে মার্কিন ডলারের দাম৷ ইউরোজোনে গত মাসে মুদ্রাস্ফীতি হয়েছে ৮.১%৷ সারা বিশ্বেই মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমছে৷
ছবি: Emre Eser/DW
ন্যাটোর পুনর্জন্ম
রাশিয়ার আক্রমণ এককাট্টা করেছে ন্যাটোর সদস্যদেশগুলোকে৷ শুধু তাই নয়, রাশিয়ার কারণে নিরাপত্তা হুমকিতে ভোগা অনেক রাষ্ট্র এখন ৩০ সদস্যদেশের এই জোটে যুক্ত হবার ব্যাপারে ভাবছে৷ ফিনল্যান্ড ও সুইডেন এরই মধ্যে তাদের আনুষ্ঠানিক আবেদন জমা দিয়েছে৷
ছবি: Gints Ivuskans /AFP
5 ছবি1 | 5
জি৭ এর বৈঠক শেষ করে মাদ্রিদে ন্যাটোর বৈঠকে যোগ দেবেন বাইডেন। অন্য নেতারাও সেখানে যাবেন।
জেলেনস্কির ফোন
ইউক্রেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ পাওয়ার আগে ইউরোপীয় নেতাদের ফোন করছেন দেশের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এখনো পর্যন্ত ১১ জন রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে তিনি ফোনে কথা বলেছেন। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বেলজিয়াম, অস্ট্রিয়া, গ্রিস, চেক রিপাবলিক। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাকি দেশগুলির রাষ্ট্রপ্রধানদেরও তিনি ফোন করবেন বলে জানিয়েছেন। সকলের সমর্থন আদায়ের জন্যই তিনি এই ফোন করছেন বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট।
লিথুয়ানিয়ায় অবরুদ্ধ ট্রেন
ইউরোপীয় ইউনিয়নেরনিষেধাজ্ঞার জন্য লিথুয়ানিয়া থেকে কোনো ট্রেন রাশিয়ায় ঢুকছে না। সেখানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন অবরোধ তৈরি করেছে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র জানিয়েছেন, এর ফলে রাশিয়ায় বহু গুরুত্বপূর্ণ জিনিস ঢুকছে না। রাশিয়াও এর পাল্টা ব্যবস্থা নেবে বলে তিনি হুমকি দিয়েছেন।