খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন মঙ্গলবার জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া দু'টি শর্তে বুধবার আদালতে আত্মসমর্পণ করতে পারেন৷ এগুলো হলো, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও আবার নিজ কার্যালয়ে ফিরে যাওয়ার নিশ্চয়তা৷
বিজ্ঞাপন
বিএনপির এই নেতা সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল৷ যদিও এখনো আমরা ‘ওয়ারেন্ট'-এর কপি হাতে পাইনি, তারপরও যদি আদালতে যেতে এবং আত্মসমর্পণ করতে হয়, তাহলে তিনি (খালেদা জিয়া) আদালতে যেতে ইচ্ছুক৷ তবে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও কার্যালয়ে ফিরে আসার আশ্বাস দিতে হবে৷''
এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনের নীচে মন্তব্য করেন শেখ আলিমুল হক আলিম৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘এ পর্যন্ত যারা পেট্রোল বোমার আগুনে পুড়ে মারা গেছে, তারা কি কোনো শর্ত দিয়ে ঘর থেকে বের হয়েছিল? দেশের সাধারণ জনগণ যখন কোর্টে হাজিরা দিতে যায় তখন কি সরকার তাদের জন্যে নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করে? তাছাড়া নেত্রীর নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীতো আছেই!! কার এত ঠেকা পড়েছে নেত্রীর উপর হামলা চালাতে যাবে?''
আদালতে হাজির হতে শর্ত দেয়ায় ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাতায় জাহিদুর রহমান মন্তব্য করেন, ‘‘কয়েকদিন পর বলবে আমাকে পাকিস্তান যেতে দিলে হরতাল অবরোধ উঠাবো৷'' আরেক পাঠক মাহফুজ আদনান মনে করেন, খালেদা জিয়ার নিরাপত্তার বিষয়টি সব পক্ষকে মাথায় রাখতে হবে৷ পাশাপাশি তাঁর রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া উচিত হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷
অস্থির বাংলাদেশ
বাংলাদেশে দশম সংসদীয় নির্বাচনের বছরপূর্তিতে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে৷ এতে একাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে৷ ৫ই জানুয়ারি রাজনৈতিক অস্থিরতার কয়েকটি ছবি পাবেন এখানে৷
ছবি: picture alliance/ZUMAPRESS.com
অবরুদ্ধ খালেদা
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে তাঁর গুলশান কার্যালয়ে আটকে রেখেছে পুলিশ৷ যদিও সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে তাঁর নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে, তবে সোমবার তিনি বাইরে যেতে চাইলে পুলিশ তাঁর গেটে তালা লাগিয়ে দেয়৷ ফলে অবরুদ্ধ খালেদা জিয়া সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন গেটের মধ্যেই৷
ছবি: AFP/Getty Images
অবরোধ ঘোষণা
অবরুদ্ধ খালেদা জিয়া পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত সারা দেশে অবরোধের ঘোষণা দিয়েছেন৷ গুলশানের কার্যালয়ে সোমবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘‘আজ আমাদের কালো পতাকা কর্মসূচি ছিল৷ সমাবেশ করতে দেওয়া হয় নাই৷ পরবর্তী কর্মসূচি না দেওয়া পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি চলবে৷’’
ছবি: picture-alliance/epa/A. Abdullah
খালেদার কার্যালয় ঘিরে পুলিশ
প্রসঙ্গত, গত দু’দিন ধরে খালেদা জিয়ার কার্যালয় ঘিরে রেখেছে পুলিশ৷ ছবিতে পুলিশে একটি গাড়ি রাস্তায় আড়াআড়িভাবে রেখে রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷ এভাবে আরো কয়েকটি বালু এবং ইটভর্তি ট্রাকও রাখা হয়েছে৷
ছবি: picture alliance/Landov
গাড়িতে আগুন
রবিবার থেকেই ঢাকায় সভা, সমাবেশ, শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করেছিল৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও সমাবেশ করার সিদ্ধান্তে অটল থাকে বিএনপিসহ বিশ দল৷ ঢাকায় একটি সিএনজি এবং মোটর সাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়ার ছবি এটি৷ বিএনপি সমর্থকরা এটা করেছে বলে জানিয়েছে সংবাদসংস্থা৷
ছবি: picture alliance/ZUMAPRESS.com
পার্ক করা গাড়িতে আগুন
পার্ক করে রাখা একটি পিকআপ ভ্যানে আগুন দিচ্ছে বিএনপির সমর্থকরা৷ ছবিটি ঢাকা থেকে তোলা৷
ছবি: picture-alliance/epa/A. Abdullah
রাজপথে সরব আওয়ামী লীগ
পুলিশ সভা, সমাবেশ নিষিদ্ধ করলেও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা জড়ো হন৷ বিষয়টি সমালোচনা করে ফেসবুকে সাংবাদিক প্রভাষ আমিন লিখেছেন, ‘‘...নিষেধাজ্ঞা কি শুধু বিএনপির জন্য? আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তো দেখি শহরজুড়ে মিছিল করছে, উল্লাস করছে, গান শুনছে, গান গাইছে৷’’ ছবিতে ঢাকায় বিএনপির এক সমর্থককে পেটাচ্ছে আওয়ামী লীগের কর্মীরা৷
ছবি: picture-alliance/epa/A. Abdullah
‘শান্তির পথে আসুন’
এদিকে সোমবার রাতে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে বিএনপি নেত্রীকে শান্তির পথে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ তবে মধ্যবর্তী নির্বাচনের যে দাবিতে বিএনপিসহ বিশদল আন্দোলন করেছে, সেই দাবির প্রতি কোন নমনীয়তা দেখাননি তিনি৷ হাসিনা মনে করেন, সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নেয়াটা বিএনপির রাজনৈতিক ভুল ছিল৷
ছবি: Oli Scarff/Getty Images
‘একতরফা’ নির্বাচন
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের পাঁচ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল অংশ নেয়নি৷ সেই নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসনে কোন ভোটাভুটি হয়নি৷ বাকি আসনগুলোতে ভোটার উপস্থিতি ছিল বেশ কম৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন সেটিকে ‘একতরফা’ নির্বাচন আখ্যা দিয়েছে৷
ছবি: DW
8 ছবি1 | 8
এদিকে বুধবার আদালতে হাজির না হলে খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে বলে অনেকে মনে করেছেন৷ ঢাকার একটি শীর্ষ দৈনিকে এমনই আভাস দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে৷
ব্রাসেলসভিত্তিক সংস্থা ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ' আশংকা করছে, খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হলে সংঘাত আরও বাড়তে পারে৷ সোমবার প্রকাশিত সংস্থার ‘ক্রাইসিসওয়াচ' শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এমন আশঙ্কার কথা জানানো হয়৷ ডয়চে ভেলে বাংলার ফেসবুক পাতায় বিষয়টি শেয়ার করে পাঠকদের কাছে জানতে চাওয়া হয় যে, তারাও এমন আশঙ্কা করছেন কিনা৷ উত্তরে পক্ষে-বিপক্ষে শতাধিক মন্তব্য এসেছে৷
এসএইচ আহাম্মেদ সুমন মনে করেন, ‘‘প্রাথমিকভাবে সংঘাত বাড়বে কিন্তু কঠিনভাবে সামলালে আগামী ৫ বছরে নতুন ঝামেলা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম৷'' একইরকম বিশ্বাস জে এস মাহমুদের৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘হ্যাঁ, প্রথম দিকে সংঘাত বাড়বে, পরে অবশ্যই কমবে৷ একটা সময় মানুষ উপলব্ধি করবে দেশে জঙ্গি দমন হয়েছে৷''
তবে আমির হোসেনের ধারণা, খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হলে সংঘাত আরও বাড়বে৷ ‘‘কারণ হাসিনার চেয়ে খালদার জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী – যা আওয়ামী লীগের ভয়ের কারণ'', মন্তব্য তাঁর৷
সিরাজুল ইসলাম মনে করেন, ‘‘(খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হলে) কোনো নেতা কর্মী আর ঘরে বসে থাকবে না, কারো জন্য অপেক্ষা করবে না, সবাই রাস্তায় নেমে আসবে৷''