মুক্তিযুদ্ধে শহিদের সংখ্যা নিয়ে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম, যেমন ফেসবুক, টুইটার এবং ব্লগে আলোচনার জন্ম দিয়েছে৷ এদিকে, মন্তব্য প্রত্যাহার করতে খালেদাকে উকিল নোটিশ পাঠানো হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
সোমবার ঢাকায় এক মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে খালেদা জিয়া বলেন, ‘‘আজকে বলা হয় এত লক্ষ লোক শহিদ হয়েছে৷ এটা নিয়েও অনেক বিতর্ক আছে৷''
মুক্তিযুদ্ধে কতজন শহিদ হয়েছেন সে বিষয়ে ২০১৩ সালে সামহয়্যার ইন ব্লগে একটি ব্লগ লিখেছিলেন পিনাকী ভট্টাচার্য৷ সেখানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আর জে রুমেল এর একটি বই থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, বইতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ মানুষের শহিদ হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ আছে৷ ‘‘... বইটিতে শুধু বাংলাদেশ নয়, ভিয়েতনাম যুদ্ধ পর্যন্ত সকল গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক যুদ্ধের পরিসংখ্যান দেয়া আছে এবং এই বইটি একটা বিশ্বব্যাপী গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক রেফারেন্স'', বলেন পিনাকী৷
খালেদা জিয়ার এই বক্তব্যের সমালোচনা করেছে আওয়ামী লীগ৷ দলটির টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে চারটি ছবি সহ একটি টুইট করা হয়েছে৷ ছবিগুলোতে মুক্তিযুদ্ধের সময় শহিদের সংখ্যা নিয়ে কোথায়, কী বলা হয়েছে সেগুলো উপস্থাপন করা হয়েছে৷ আওয়ামী লীগ মনে করছে, শহিদের সংখ্যা নিয়ে পাকিস্তানের যে অবস্থান, খালেদাও সেই অবস্থান নিয়েছেন৷
একটি বেসরকারি চ্যানেলের প্রধান বার্তা সম্পাদক জায়েদুল আহসান পিন্টু মনে করছেন, খালেদা জিয়ার রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার সময় হয়ে গেছে৷ ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘‘যে-কোনো কিছুরই একটি স্বাভাবিক পরিসমাপ্তি আছে৷ ওই স্বাভাবিকতা মেনে না চললে অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়৷ আমার মনে হয়, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার সময় হয়ে গেছে...৷''
ইফতেখার মোহাম্মদ খালেদা জিয়ার বক্তব্যের ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘‘মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে কুতর্ক করে খালেদা প্রমাণ দিলেন তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কেউ নন৷ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলে কোনো প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নাই, কারণ এরা খালেদার এই বক্তব্যের কোনো প্রতিবাদ করেনি৷ রাজাকারের গাড়িতে যেমন পতাকা দিয়েছেন খালেদা, ঠিক তেমনি আগামীতে সুযোগ পেলে মুক্তিযুদ্ধকে বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে বিলিন করে দিবেন৷'' কোনো প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা খালেদার সমর্থনে থাকতে পারে না বলেও মন্তব্য করেন ইফতেখার৷
শওগাত আলী সাগর অবশ্য খালেদা জিয়ার কথায় বিস্মিত হননি৷ কারণ তিনি মনে করেন, খালেদা জিয়া যে রাজনীতি করেন, যে আদর্শের রাজনীতি করেন – সেখানে মুক্তিযুদ্ধটাই ‘বিতর্কিত' বিষয়৷ ‘‘আজ তিনি বলেছেন, শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক আছে, আগামীকাল বলবেন – ইউ নো হোয়াট, মুক্তিযুদ্ধ নিয়েই আসলে বিতর্ক আছে'', ফেসবুকে লিখেছেন সাগর৷
খালেদা জিয়া কেন এমন মন্তব্য করলেন সেটা বুঝে উঠতে পারছেন না জাহিদুল হক৷
আপনার কী মনে হয় বন্ধু? খালেদা জিয়ার কি অবসর নেয়া উচিত? জানান নীচের ঘরে৷
গুলশানের বাসভবনে ‘অবরুদ্ধ’ খালেদা জিয়া
বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে তাঁর গুলশানের বাসভবনে কার্যত ‘অবরুদ্ধ’ করে রাখা হয়েছে৷ রবিবার তিনি পুলিশের বাধার কারণে বাড়ি থেকে বের হতে পারেননি৷ এই বিষয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: DW/M. Mamun
বাড়ি থেকে বেরোনোর চেষ্টা
‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ বা ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’য় অংশ নিতে রবিবার স্থানীয় সময় দুপুর তিনটার দিকে গুলশানের বাড়ি থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া৷ কিন্তু তাঁর পথরোধ করতে বাড়ির গেটে মানব দেয়াল তৈরি করে পুলিশ এবং ব়্যাবের সদস্যরা৷
ছবি: DW/M. Mamun
আটকে ছিলেন গেটে
পুলিশ এবং ব়্যাব সদস্যদের বাধার মুখে বেশ কিছুক্ষণ গাড়ির মধ্যে বসে ছিলেন খালেদা জিয়া৷ এরপর এক পর্যায়ে গাড়ি থেকে বের হয়ে আসেন তিনি৷
ছবি: DW/M. Mamun
ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
গাড়ি থেকে বেরিয়ে পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন বিরোধী দলীয় নেত্রী৷ এসময় তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন৷ উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে খালেদা বলেন, ‘‘দেশ আজ কোথায় যাচ্ছে? এরা সবাই গোপালগঞ্জের৷ গোপালগঞ্জের নামই বদলে যাবে৷’’ দৈনিক প্রথম আলো খালেদার এই বক্তব্য প্রকাশ করেছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
সোমবারও চলবে কর্মসূচি
নিরাপত্তা বাহিনীর বাধার মুখে শেষ পর্যন্ত বাড়ি থেকে বের হতে পারেননি খালেদা জিয়া৷ তবে তিনি বাড়ির মধ্যে ফিরে যাবার আগে উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, ‘‘এই সরকার জালেম এবং অগণতান্ত্রিক৷ এই সরকারের পতন হবেই৷’’ এসময় তিনি ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ সোমবারও চলবে বলে ঘোষণা দেন৷
ছবি: DW/M. Mamun
বালুভর্তি ট্রাকের ব্যারিকেড
খালেদা জিয়ার বাড়ির চারপাশে গত কয়েকদিন ধরেই পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছিল৷ শনিবার তাঁর বাড়ির সামনের রাস্তায় সাধারণ ব্যারিকেডের পাশাপাশি বালুভর্তি ট্রাকও যোগ করা হয়৷ কয়েকটি ট্রাক এমনভাবে রাখা হয়, যাতে খালেদার গাড়ি বাড়ির সামনের রাস্তা থেকে বের হতে না পারে৷ আমাদের ঢাকা প্রতিনিধি হারুন উর রশিদ স্বপন জানান, খালেদা জিয়াকে কার্যত গুলশানের বাড়িতে ‘অবরুদ্ধ’ করে রাখা হয়েছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
পুলিশের বক্তব্য
খালেদা জিয়াকে বাড়ির বাইরে যেতে না দেয়া প্রসঙ্গে পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নয়াপল্টনে কোনো জমায়েত বা সমাবেশের অনুমতি নেই৷ তাই বিরোধী দলীয় নেত্রীকে সেখানে যেতে দেয়া হবে না৷ আর তাঁর নিরাপত্তার বিষয়টিও পুলিশের দেখার আছে৷’’
ছবি: DW/M. Mamun
প্রাণহানি
এদিকে, ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’কে ঘিরে সংঘর্ষ এবং বিস্ফোরণে ঢাকায় কমপক্ষে দুই ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন৷ রবিবার সকাল এগারোটার দিকে ঢাকার মালিবাগে পুলিশ আর জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে প্রাণ হারান মনসুর আলী৷ অন্যদিকে, কমলাপুরে তল্লাশির সময় বোমার বিস্ফোরণে নিহত হন নিরাপত্তাকর্মী আবুল কাশেম৷
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Images
সুপ্রিমকোর্টে তাণ্ডব
এদিকে, ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’য় যোগ দিতে সুপ্রিমকোর্টের বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা কোর্টের মূল গেট দিয়ে মিছিল করে নয়াপল্টনে যেতে চাইলে পুলিশ তাদের জল কামান ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে আটকে দেয়৷ এরপর তারা ভিতরে গিয়ে পুলিশের প্রতি ইট পাটকেল ছোড়ে৷ এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগের একদল সমর্থক সুপ্রিমকোর্ট চত্বরে ঢুকে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়৷ সেখানে কয়েকজন আইনজীবী আহত হন৷
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Images
বিরল সংঘর্ষ
বলাবাহুল্য, সাম্প্রতিক সময়ে সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও বাইরে থেকে কোন দলের নেতাকর্মীরা সেখানে গিয়ে সংঘর্ষে অংশ নেয়নি৷ সেক্ষেত্রে রবিবার আওয়ামী লীগ সমর্থকদের আদালত চত্বরে প্রবেশ করে সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়াটা বিরল ঘটনা বলে অবিহিত করেন আমাদের ঢাকা প্রতিনিধি৷
ছবি: Reuters
চুপচাপ নয়াপল্টন
‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ কর্মসূচির আওতায় গোটা দেশ থেকে সক্ষম নেতাকর্মীদের ২৯ ডিসেম্বর, রবিবার বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে হাজির হওয়ার আহ্বান জানান খালেদা জিয়া৷ কিন্তু রবিবার বিএনপি কার্যালয়ের সামনে বিএনপির নেতাকর্মীরা জড়ো হতে পারেনি৷ কিছু নেতাকর্মী কার্যালয়ের সামনে যেতে চাইলে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ ফলে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে দৃশ্যত পুলিশ এবং সাংবাদিক ছাড়া কেউ ছিল না৷
ছবি: DW/M. Mamun
পাঁচ জানুয়ারি নির্বাচন
উল্লেখ্য, আগামী পাঁচ জানুয়ারি বাংলাদেশে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট এই নির্বাচন বর্জন করায় এবার ১৫৪টি আসনে ভোটাভুটির দরকার হচ্ছে না৷ এসব আসনে একজন করে প্রার্থী রয়েছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কমনওয়েলথ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ না করার ঘোষণা দিয়েছে৷