বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক স্থায়ী নয়৷ তিনি বলেছেন জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ার বিষয়টি সময় এলে দেখা যাবে৷
বিজ্ঞাপন
এর প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবুল আলম হানিফ বলেছেন, বিএনপিকে কাজের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করতে হবে জামায়াতের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক স্থায়ী নয়৷ আর বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আহমেদ আজম খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, একসময় আওয়ামী লীগের সঙ্গেও জামায়াতের সম্পর্ক ছিল৷
গত ৫ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচনের পরদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপিকে যুদ্ধাপরাধী ও সন্ত্রাসী জামায়াতে ইমলামীর সঙ্গ ত্যাগ করে আলোচনা এবং সমঝোতায় আসার আহ্বান জানান৷ এরপর খালেদা জিয়া তাঁর বিবৃতিতে নির্বাচন বাতিল ও পদত্যাগ করে সরকারকে সমঝোতায় আসার আহ্বান জানালেও জামায়াত নিয়ে কথা বলেননি৷
কিন্তু খালেদা জিয়া যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রভাবশালী পত্রিকাকে দেয়া সাক্ষাত্কারে বলেছেন, ‘‘জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির জোট কোনো স্থায়ী জোট নয়৷'' তাহলে বিএনপি জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ছে কিনা – এমন প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে আমি কিছু বলতে পারছি না৷ তবে যখন সময় আসবে তখন দেখব৷'' বিএনপির আটক নেতা-কর্মীদের মুক্তি দিলে তাঁর দল সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছাতে প্রস্তুত বলেও জানান খালেদা জিয়া৷
এর প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ ডয়চে ভেলেকে বলেন, খালেদা জিয়ার এই বক্তব্য ভাওতাবাজি ছাড়া আর কিছুই না৷ কারণ জামায়াতকে রক্ষা করতে বিএনপি সবকিছুই করছে৷ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত এবং যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতাদের বাঁচাতে বিএনপি সবধরণের উদ্যোগ নিয়েছে৷ আর জামায়াতের সহযোগিতায় তারা আন্দোলনের নামে হত্যা এবং সন্ত্রাস চালাচ্ছে৷ তিনি বলেন বিএনপি এবং জামায়াত এখন একাকার হয়ে গেছে৷ জামায়াত ছাড়া বিএনপি অচল হয়ে পড়েছে৷
হানিফ বলেন, বিএনপিকে কথা নয়, কাজে প্রমাণ করতে হবে যে জামায়াতের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক স্থায়ী নয়৷ আলোচনায় আসতে হলে তাদের জামায়াতের সঙ্গ ছাড়তেই হবে৷ এধরণের ‘কৌশলী কথা' বলে লাভ নেই৷
এদিকে, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আহমেদ আজম খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির আদর্শিক কোনো মিল নেই৷ এটা কোনো আদর্শিক জোটও নয়, নির্বাচনি জোট৷ তাই জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক স্থায়ী কোনো বিষয় নয়৷ দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া সেই বিষয়টি আবারো স্পষ্ট করেছেন৷ এই জোট কতদিন থাকবে তাও নিশ্চিত করে বলা যায় না৷
২০১৩ সালের আলোচিত দশ মন্তব্য
২০১৩ সালে বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করে বাংলাদেশে আলোচনায় ছিলেন অনেকে৷ কোনো কোনো মন্তব্য সাধারণ মানুষের হাসির খোরাকও হয়েছে৷ বাংলাদেশে আলোচিত দশটি মন্তব্য প্রকাশ করা হলো এই ছবিঘরে৷
ছবি: DW/A. Chatterjee
‘হরতাল সমর্থকদের নাড়াচাড়ায় ভবন ধস’
সাভারে রানা প্লাজা ধসে পড়ার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর ২৪ এপ্রিল বলেন, ‘‘কিছু হরতাল সমর্থক ভবনটির ফাটল ধরা দেয়ালের বিভিন্ন স্তম্ভ এবং গেট ধরে নাড়াচাড়া করেছে বলে জানতে পেরেছি৷ ভবনটি ধসে পড়ার পেছনে সেটাও একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে৷’’ রানা প্লাজা ধসে প্রাণ হারিয়েছেন এক হাজারের বেশি মানুষ৷
ছবি: Reuters
‘আমার কাছে তথ্য আছে’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অত্যন্ত সক্রিয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘‘আমার কাছে তথ্য আছে আওয়ামী লীগ আগামীবার আবার ক্ষমতায় আসবে৷’’ ২৩ জুলাই ঢাকায় এক আলোচনা সভায় একথা বলেন তিনি৷
ছবি: Sajeeb Ahmed Wazed
‘লোডশেডিং দিতে বলেছিলাম’
বিদ্যুতের প্রয়োজনীয় উৎপাদন নিশ্চিত হওয়ার পরও লোডশেডিং প্রসঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘আমি নিজেই প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে লোডশেডিং দিতে বলেছিলাম৷ তা না হলে মানুষ ভুলে যাবে দেশে লোডশেডিং ছিল৷’’ ২০১৩ সালের ৪ আগস্ট ঢাকায় কুড়িল উড়ালসেতু উদ্বোধনকালে একথা বলেন শেখ হাসিনা৷
ছবি: dapd
‘...তারা বাঙালি নয়’ (প্রতীকী ছবি)
একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের টক শোতে রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী মিতা হকের একটি মন্তব্য আলোচনার ঝড় তোলে৷ ‘‘যারা ঘোমটা পরে, তারা বাঙালি নয়’’ – এ কথা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও, মিতা জানান, তিনি চোখ পর্যন্ত ঢেকে রাখার যে রীতি দেখা যাচ্ছে, তার সমালোচনা করেছিলেন৷ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ‘‘আমরা যারা ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করি, তাদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার চালানো হচ্ছে৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa
‘২০ জন উপদেষ্টা’
বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারে থাকা উপদেষ্টাদের নিয়ে নতুন সরকার গঠনের প্রস্তাব করেন৷ ২১ অক্টোবর তিনি বলেন, ‘‘ওই দুই সরকারের ২০ জন উপদেষ্টার মধ্য থেকে বর্তমান সরকারি দল পাঁচজন এবং বিরোধী দল পাঁচজন সদস্যের নাম প্রস্তাব করবেন৷’’ কিন্তু গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, উপদেষ্টাদের মধ্যে মাত্র ১৪ জন এখন জীবিত আছেন৷ তাদের কয়েকজন আর উপদেষ্টা হতে রাজি নন৷
ছবি: Getty Images
‘...তেঁতুল বলি নাই’
হেফাজতে ইসলামের আমীর আহমেদ শফী এক ওয়াজ মাহফিলে ‘নারীদের তেঁতুল’ বলেন৷ বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়৷ পরবর্তীতে ২ নভেম্বর চট্টগ্রামে এক সমাবেশে তিনি বলেন, ‘‘আমি মহিলাদের তেঁতুলের মতো বলেছি, তেঁতুল বলি নাই৷’’
ছবি: Mustafiz Mamun
‘ধ্বংস এখন অবধারিত’
সরকার গ্রামীণ ব্যাংক আইন সংশোধনের পর ব্যাংকটির ভবিষ্যত সম্পর্কে শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘‘এর মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংকের ধ্বংস অবধারিত হলো৷’’ ৬ নভেম্বর এক বিবৃতিতে একথা বলেন ইউনূস৷ গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে বর্তমান সরকারের সঙ্গে তাঁর বিরোধ রয়েছে৷
ছবি: Getty Images
‘মানুষ থুতু দেবে’
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১১ নভেম্বর বলেন, ‘‘সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচনে গেলে মানুষ আমাকে থুতু দেবে না? এর চেয়ে জেলেই মরে যাওয়া ভালো৷’’ এই মন্তব্যের কয়েকদিন পর তিনি বলেন, ‘‘এই সরকারকে সরাতে হলে নির্বাচন দরকার৷ নির্বাচনে না গেলে মানুষ থুতু দেবে৷’’ শেষ অবধি অবশ্য নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি৷
ছবি: JEWEL SAMAD/AFP/Getty Images
‘আমরা আপনাদের তৈরি করেছি’
অবরোধের আগুনে পোড়া গীতা সরকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সব রাজনীতিবিদদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘‘আমরা আপনাদের তৈরি করছি, আপনারা আমাদের তৈরি করেন নাই৷ আমাদের স্বামীরটা আমরা খাই৷ আপনারা আমাদের নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন৷’’ প্রধানমন্ত্রী ১ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিট পরিদর্শনে গেলে তাঁকে এসব কথা বলেন গীতা৷
ছবি: Mustafiz Mamun
‘দিস ইজ বেয়াদবি’
১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে স্মৃতিসৌধে যান নি ঢাকায় অবস্থানরত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূতরা৷ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ইইউ রাষ্ট্রদূতদের এই আচরণ প্রসঙ্গে ১৯ ডিসেম্বর বলেন, ‘‘ইইউ রাষ্ট্রদূত স্মৃতিসৌধে গেলেন না, দিস ইজ বেয়াদবি, এক্কেবারে বেয়াদবি৷’’ এরকম বিভিন্ন মন্তব্য করে গত পাঁচ বছর ধরেই আলোচনায় আছেন মুহিত৷
ছবি: DW/A. Chatterjee
10 ছবি1 | 10
তিনি বলেন জামায়াতের সঙ্গে আওয়ামী লীগেরও সম্পর্ক ছিল৷ আওয়ামী লীগ, জামায়াত একসঙ্গে এরশাদের অধীনে নির্বাচনে গেছে ১৯৮৬ সালে৷ এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত তখনকার ক্ষমতাসীন বিএনপির বিরুদ্ধে একসঙ্গে আন্দোলন করেছে৷ আওয়ামী লীগের রাষ্ট্রপতি প্রার্থী বিচারপতি বদরুল হায়দার চৌধুরী জামায়াত নেতা গোলাম আযমের কাছে দোয়া নিতে গিয়েছিলেন৷ আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকলে ভাল আর বিএনপির সঙ্গে থাকলে যুদ্ধাপরাধী, এটাতো হতে পারে না৷
আহমেদ আজম খান দাবি করেন বিএনপিও যুদ্ধাপরাধের বিচারের পক্ষে৷ তবে তা হতে হবে স্বচ্ছতার সঙ্গে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে নয়৷
তিনি বলেন জামায়াত যদি সন্ত্রাসী সংগঠন হয় তাহলে সরকারই তাদের নিষিদ্ধ করতে পারে৷ তাহলে জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক এমনিতেই থাকবে না৷ কিন্তু তাঁর মতে আওয়ামী লীগ সরকার তা করবে না৷ কারণ তারা জামায়াতকে নিয়ে রাজনীতি করবে৷ নিষিদ্ধ করলে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের কোনো সুযোগ থাকবে না৷