বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার কয়েকটি কথিত ফোনালাপ এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করছেন অনেকে৷ পুরনো এসব অডিও-র শিরোনামে ‘নাশকতার’ কথা বলা হলেও কথোপকথনে শব্দটি পাওয়া যায়নি৷
বিজ্ঞাপন
বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার হওয়া অডিওগুলো বছরখানেক আগে ইউটিউবে আপলোড করা হয় ‘বাংলালিকস' নামক একটি অ্যাকাউন্ট থেকে৷ অডিওগুলোর শিরোনাম ‘খালেদা জিয়ার নাশকতামূলক কর্মকান্ডের নির্দেশনা'৷ চটকদার এই শিরোনাম যেকারো নজর কাড়লেও কথিত অডিওগুলো শুনে খালেদা জিয়া নাশকতামূলক কর্মকান্ডের কোন নির্দেশনা দিয়েছেন কিনা, সেটা নিশ্চিতভাবে বলার সুযোগ নেই৷
কে বা কারা এসব ফোনালাপ রেকর্ড করে ইন্টারনেটে প্রকাশ করেছে, তা জানা যায়নি৷ তবে প্রকাশিত কথিত কথোপকথনে বিএনপি নেত্রী তাঁর নেতাকর্মীদের ভৎর্সনা করেছেন, রাস্তায় লোক নামাতে নির্দেশ দিয়েছেন৷ তবে কোন অডিওতেই নাশকতা কিংবা হামলা শব্দগুলো ব্যবহার করা হয়নি৷ সুনির্দিষ্টভাবে কোথাও কিংবা কারো উপর হামলা বা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের কথাও নেই৷
বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানিয়েছে, ‘‘চার বছর আগে ঢাকায় বিএনপির একটি সমাবেশের সময় দলের কয়েকজন নেতার সঙ্গে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কয়েকটি টেলিফোন সংলাপের অডিও টেপ ঘুরছে ইউটিউবে, যাতে তাকে নেতাদের নানা নির্দেশ দিতে শোনা যায়৷''
সাংবাদিকদের জন্য দুঃসময়
একটি সমীক্ষা অনুযায়ী গত দশ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার পরিস্থিতি এতো খারাপ দেখা যায়নি৷ বিশ্ব জনসংখ্যার ৮০ শতাংশেরও বেশি মানুষ বাস করেন যে সব দেশে, সে সব দেশে সাংবাদিকদের কাজে হস্তক্ষেপ করা হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images
মধ্য এশিয়ার পরিস্থিতি
ফ্রিডম হাউস নামে একটি প্রতিষ্ঠান ১৯৯৭টি দেশের ওপর একটি সমীক্ষা চালিয়েছে, যার ফলাফলে দেখা গেছে, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান এবং বেলারুশের সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সবচেয়ে কম৷ অন্যদিকে সাংবাদিকদের সবচেয়ে বেশি স্বাধীনতা রয়েছে নেদারল্যান্ডস, সুইডেন এবং নরওয়েতে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সাংবাদিকদের ওপর হামলা
তুরস্কে অনেক সাংবাদিকদের ওপর হামলা করা হয়েছে৷ সাংবাদিক গ্যোকহান বিচিচি-কে প্রেপ্তার করা হয় গেজি পার্কে বিক্ষোভ চলাকালীন সময়ে৷ সাংবাদিকদের স্বার্থরক্ষা কমিটির মতে গত ডিসেম্বরের শুরুতে তুরস্কে ৪০জন সাংবাদিকদের আটক করা হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images
অপ্রিয় রিপোর্ট
ইউক্রেনেও সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালানো হয়৷ বিশেষ করে কিয়েভের ময়দান স্কোয়ারে প্রতিবাদ বিক্ষোভের সময়৷ সরকারের সমালোচক সাংবাদিক টেটিয়ানা চর্নোভোল ঐ হামলার শিকার হন৷ তিনি পদচ্যুত প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ বিলাসী জীবনযাত্রার ওপর একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছিলেন৷ হাজারো মানুষ এই সাবেক প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেন৷
ছবি: Genya Savilov/AFP/Getty Images
মিথ্যা বলা বন্ধ করুন!
চীন এবং রাশিয়াতেও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সমালোচনার মুখে৷ দুই দেশের সরকারই মিডিয়ার ওপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে এবং সরকারের মতামত মিডিয়াকে জানানোর জন্য একটি আইনও প্রণয়ন করে৷ এমনকি রাশিয়ায় সংবাদ সংস্থা ‘রিয়া নভোস্তি’ বন্ধ করে সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত্ব করা হয়৷ অনেক রুশ নাগরিকের তা পছন্দ না হওয়ায় তারা ‘মিথ্যা বলা বন্ধ করুন’ প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে বিক্ষোভে অংশ নেয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মার্কিন সরকারের আড়িপাতা
অ্যামেরিকায় সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রয়েছে৷ কিন্তু মার্কিন তথ্যনীতি ক্রমঃশই প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে৷ সমীক্ষা অনুযায়ী, সরকার সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া বেশ কঠিন হয়ে গেছে৷ শুধু তাই নয়, এমনকি সরকার সাংবাদিকদের কাছে তথ্য সূত্রও জানতে চায়৷ এছাড়া, মার্কিন সরকার সংবাদ সংস্থা এপি-র সাংবাদিকদের টেলিফোনেও আড়ি পেতেছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
মুবারক জমানায় প্রত্যাবর্তন
মিশরে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে৷ প্রেসিডেন্ট মুরসির পতনের পর সেখানকার পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে৷ সমীক্ষা প্রতিষ্ঠান ফ্রিডম হাউস-এর মতে, ২০১৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে সামরিক অভ্যুথ্যানের পর থেকে বেশ কিছু সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয় হয় এবং পাঁচজন মারা যান৷
ছবি: AFP/Getty Images
মালিতে পরিস্থিতির উন্নতি
মালিতে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ইতিবাচক উন্নতি হয়েছে৷ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ইসলামি বিদ্রোহীদের দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিতাড়নের পর মালির আইন ও শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়৷ ২০১২ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর বেশ কিছু মিডিয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিলো৷ সেগুলো এখন আবার কাজ করছে৷
ছবি: AFP/Getty Images
কিরগিজিস্তান ও নেপালে ইতিবাচক প্রবণতা
যে সব দেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বাড়ছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে কিরগিজিস্তান৷ সেখানকার সাংবাদিকরা ২০১৩ সালে খুব কম আক্রমণের শিকার হয়েছেন৷ নেপালেও মিডিয়ার ওপর রাজনৈতিক প্রভাব কমেছে, যদিও সাংবাদিকদের হুমকি দেওয়া বন্ধ হয় নি৷ সমীক্ষা অনুযায়ী ইসরায়েলেও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার উন্নতি হয়েছে এবং এখন তাঁরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন৷
ছবি: AFP/Getty Images
8 ছবি1 | 8
সাংবাদিক নির্যাতন
এদিকে, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে এক সাংবাদিককে পিটিয়েছে পুলিশ৷ সাংবাদিক প্রভাষ আমিন ফেসবুকে এই বিষয়ে লিখেছেন, ‘‘রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় পুলিশের দুই সদস্য এক মোটর সাইকেলে যাচ্ছিলেন এবং তারা দায়িত্বরত ছিলেন না৷ ইংরেজি দৈনিক নিউজ এজের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক নাজমুল হুদা বিষয়টি দেখে ছবি তোলেন৷ তাতেই ক্ষেপে যায় ঐ দুই পুলিশ৷ তারা নাজমুল হুদা এবং সঙ্গে থাকা তার বন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খায়রুজ্জামান শুভকে আটক করে বেদম মারথধোর করে৷ তাদের নিয়ে যাওয়া হয় রমনা থানায়৷''
আমিন লিখেছেন, ‘‘আবারও প্রমাণিত হলো, কারো কারো জন্য আইন বেশি সমান৷ পুলিশতো আইন রক্ষার জন্য, পালন করার জন্য নয়৷''
আরেক সাংবাদিক সওদুদ আহমেদ সুমন লিখেছেন, ‘‘পুলিশের পৈশাচিক নির্যাতন থেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়েও রক্ষা পায়নি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপোর্টার৷ তার একমাত্র অপরাধ সে সাংবাদিক৷ আইন অমান্য করে মোটরসাইকেল চালানোর ছবি তোলায় রমনা থানার এসআই মেহেদি হাসান সুমন তার উপর চড়াও হয়৷ ঘটনাস্থল থেকে নির্যাতন শেষে গাড়িতে নেয়ার সময় বুট, অস্ত্রের বাট দিয়ে নির্যাতন অব্যাহত রাখে৷ থানায় নিয়ে কাস্টডির মধ্যেও অমানুষিক নির্যাতন চালাতে থাকে৷''
উল্লেখ্য, অবরোধের সময় নাশকতা এড়াতে কয়েকদিন আগে বাংলাদেশে মোটরসাইকেলে চালক ছাড়া অন্য কোন যাত্রী বহন নিষিদ্ধ করা হয়৷ অভিযোগ রয়েছে, সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা এই আদেশ মানছেন না৷ আর পুলিশও বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছে৷
অস্থির বাংলাদেশ
বাংলাদেশে দশম সংসদীয় নির্বাচনের বছরপূর্তিতে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে৷ এতে একাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে৷ ৫ই জানুয়ারি রাজনৈতিক অস্থিরতার কয়েকটি ছবি পাবেন এখানে৷
ছবি: picture alliance/ZUMAPRESS.com
অবরুদ্ধ খালেদা
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে তাঁর গুলশান কার্যালয়ে আটকে রেখেছে পুলিশ৷ যদিও সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে তাঁর নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে, তবে সোমবার তিনি বাইরে যেতে চাইলে পুলিশ তাঁর গেটে তালা লাগিয়ে দেয়৷ ফলে অবরুদ্ধ খালেদা জিয়া সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন গেটের মধ্যেই৷
ছবি: AFP/Getty Images
অবরোধ ঘোষণা
অবরুদ্ধ খালেদা জিয়া পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত সারা দেশে অবরোধের ঘোষণা দিয়েছেন৷ গুলশানের কার্যালয়ে সোমবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘‘আজ আমাদের কালো পতাকা কর্মসূচি ছিল৷ সমাবেশ করতে দেওয়া হয় নাই৷ পরবর্তী কর্মসূচি না দেওয়া পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি চলবে৷’’
ছবি: picture-alliance/epa/A. Abdullah
খালেদার কার্যালয় ঘিরে পুলিশ
প্রসঙ্গত, গত দু’দিন ধরে খালেদা জিয়ার কার্যালয় ঘিরে রেখেছে পুলিশ৷ ছবিতে পুলিশে একটি গাড়ি রাস্তায় আড়াআড়িভাবে রেখে রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷ এভাবে আরো কয়েকটি বালু এবং ইটভর্তি ট্রাকও রাখা হয়েছে৷
ছবি: picture alliance/Landov
গাড়িতে আগুন
রবিবার থেকেই ঢাকায় সভা, সমাবেশ, শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করেছিল৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও সমাবেশ করার সিদ্ধান্তে অটল থাকে বিএনপিসহ বিশ দল৷ ঢাকায় একটি সিএনজি এবং মোটর সাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়ার ছবি এটি৷ বিএনপি সমর্থকরা এটা করেছে বলে জানিয়েছে সংবাদসংস্থা৷
ছবি: picture alliance/ZUMAPRESS.com
পার্ক করা গাড়িতে আগুন
পার্ক করে রাখা একটি পিকআপ ভ্যানে আগুন দিচ্ছে বিএনপির সমর্থকরা৷ ছবিটি ঢাকা থেকে তোলা৷
ছবি: picture-alliance/epa/A. Abdullah
রাজপথে সরব আওয়ামী লীগ
পুলিশ সভা, সমাবেশ নিষিদ্ধ করলেও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা জড়ো হন৷ বিষয়টি সমালোচনা করে ফেসবুকে সাংবাদিক প্রভাষ আমিন লিখেছেন, ‘‘...নিষেধাজ্ঞা কি শুধু বিএনপির জন্য? আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তো দেখি শহরজুড়ে মিছিল করছে, উল্লাস করছে, গান শুনছে, গান গাইছে৷’’ ছবিতে ঢাকায় বিএনপির এক সমর্থককে পেটাচ্ছে আওয়ামী লীগের কর্মীরা৷
ছবি: picture-alliance/epa/A. Abdullah
‘শান্তির পথে আসুন’
এদিকে সোমবার রাতে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে বিএনপি নেত্রীকে শান্তির পথে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ তবে মধ্যবর্তী নির্বাচনের যে দাবিতে বিএনপিসহ বিশদল আন্দোলন করেছে, সেই দাবির প্রতি কোন নমনীয়তা দেখাননি তিনি৷ হাসিনা মনে করেন, সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নেয়াটা বিএনপির রাজনৈতিক ভুল ছিল৷
ছবি: Oli Scarff/Getty Images
‘একতরফা’ নির্বাচন
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের পাঁচ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল অংশ নেয়নি৷ সেই নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসনে কোন ভোটাভুটি হয়নি৷ বাকি আসনগুলোতে ভোটার উপস্থিতি ছিল বেশ কম৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন সেটিকে ‘একতরফা’ নির্বাচন আখ্যা দিয়েছে৷