বর্তমানে কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপার্সন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে অনলাইনে একটি পিটিশন চালু হয়েছে৷ জাতিসংঘ বরাবর করা আবেদনটিতে ইতোমধ্যে স্বাক্ষর করেছেন কয়েক হাজার মানুষ৷
বিজ্ঞাপন
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট থেকে তহবিল তছরুপের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে৷ পুরান ঢাকার একটি পরিত্যক্ত কারাভবন সংস্কার করে সেখানে রাখা হয়েছে তিনবারের প্রধানমন্ত্রী এই রাজনীতিবিদকে৷ তাঁর মুক্তির দাবিতে রাজপথে নানা ‘অহিংস' কর্মসূচির পাশাপাশি অনলাইনেও তৎপরতা দেখা যাচ্ছে৷
জনপ্রিয় অনলাইন পিটিশন সাইট চেঞ্জ ডটঅর্গে খালেদার মুক্তির দাবিতে জাতিসংঘ বরাবর একটি আবেদন করা হয়েছে৷ ‘অ্যাডভোকেসি ফর গুড গর্ভনেন্স ইন বাংলাদেশের' ব্যানারে করা পিটিশনটিতে দাবি করা হয়েছে, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার ষড়যন্ত্র করে মিথ্যা মামলায় খালেদা জিয়াকে কারাবন্দি করেছে৷ কুয়েতের আমিরের দেয়া অনুদানের যে অর্থ নিয়ে মামলা তা এখন ব্যাংকে জমা আছে এবং বর্তমানে মুনাফাসহ প্রায় তিনগুণ হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে পিটিশনে৷
দশম সংসদের চার বছর পূর্তি
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির সমালোচিত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গঠন হয় দশম জাতীয় সংসদ৷ ২৯ জানুয়ারি এর চার বছর পূর্ণ হলো৷ ছবিঘরে দেখুন দশম সংসদে উল্লেখযোগ্য কী কী হলো৷
ছবি: imago/Xinhua
নির্বাচনের বছরে দশম সংসদ
২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি যাত্রা শুরু করে দশম সংসদ৷ সে হিসেবে এর মেয়াদ চার বছর পূর্ণ হলো৷ অর্থাৎ পাঁচ বছর মেয়াদি সংসদের জন্য এটি নির্বাচনি বছর৷ আগামী বছর ২৯ জানুয়ারির আগের তিন মাসের মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারিতে ‘আলোচিত’ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গঠিত হয়েছিল দশম জাতীয় সংসদ৷ বিএনপিসহ অনেক দল ওই নির্বাচন বর্জন করেছিল৷ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৩ জন সাংসদ নির্বাচিত হন৷ ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিলেন এইচ এম এরশাদও৷ পরে তাঁর দল জাতীয় পার্টি (জাপা) সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসে৷
ছবি: bdnews24.com
বন্ধুত্বপূর্ণ সংসদ
ঠিক যেন একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সংসদ, দশম জাতীয় সংসদ৷ সরকারি ও বিরোধী দলের মধ্যে বিতণ্ডা নেই তেমন৷ সরকারের অধিকাংশ নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তে সমর্থন দিচ্ছে বিরোধী দল৷ থেকে থেকে বিরোধী দলও সরকারি দলের প্রশংসা কুড়াচ্ছে৷
ছবি: imago/Xinhua
কার্যকর সংসদ
তবে প্রশ্ন থাকছে সংসদের কার্যকারিতা নিয়ে৷ অন্যান্য সংসদের তুলনায় এ সংসদে বিরোধী দলের অংশগ্রহণ বেশি৷ তারপরও এ সংসদ আদতে কতটা কার্যকর তা নিয়ে গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে৷ একটি পত্রিকায় সাক্ষাৎকারে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘‘গুণগত বিশ্লেষণে যাচ্ছি না৷ তবে দশম সংসদে সরকারি দলের সঙ্গে বিরোধী দলের অংশগ্রহণ সংসদকে কার্যকর করেছে৷’’
ছবি: bdnews24.com
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন
মোট ১৯টি অধিবেশনে মোট কার্যদিবস ছিল ৩৪২ দিন৷ চার বছরে এই সংসদে ১৩০টি আইন পাস হয়েছে৷ ১৪টি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে৷
ছবি: DW
বিরোধী নেতার ভাষণ
গত বছর সংসদের অধিবেশন বসেছে পাঁচটি৷ মোট কার্যদিবস ছিল ৭৬টি৷ গণমাধ্যমের বিশ্লেষণ বলছে, অধিবেশনগুলোতে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের দেওয়া সমাপনী ভাষণগুলোতে কোনো নীতিনির্ধারণী বিষয়ে তাঁর শক্ত সমালোচনা, বিতর্ক বা অবস্থান ছিল না৷
ছবি: AP
বাজেট নিয়ে উত্তাপ
চলতি সংসদে সবচেয়ে বেশি উত্তাপ ছড়িয়েছে বাজেট নিয়ে৷ বিরোধী দলও এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা করেছে৷ সরকারি দলের সদস্যদের তোপের মুখে পড়েছেন অর্থমন্ত্রী৷ বিশেষ করে সমাপ্ত বছরের বাজেট অধিবেশনে ব্যাংকের আমানতকারীদের ওপরে আবগারি শুল্ক ধার্য করে বেশি সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি৷ এমনকি ব্যাংক খাতে লুটপাটের কারণে বিরোধী দলের সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ ও জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ পর্যন্ত দাবি করেছিলেন৷
ছবি: bdnews24.com
বিএনপি নিয়ে সমালোচনা
বাজেটে বিরোধী দল নিয়ে যতটা না আলোচনা হয়েছে, তার চেয়ে অনেকগুণ বেশি সমালোচনা হয়েছে বিএনপির কার্যকলাপ নিয়ে৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেকবার সুশীল সমাজের একটি অংশেরও কড়া সমালোচনা করেছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/F. K. Godhuly
সংসদীয় কূটনীতি
সংসদীয় কূটনীতির ক্ষেত্রে সফলতা দেখিয়েছে দশম জাতীয় সংসদ৷ বিচ্ছিন্নভাবে জঙ্গিবাদের উত্থান নিয়ে উন্নত কয়েকটি দেশের অতি সতর্কতার মধ্য দিয়ে সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশগুলোর সর্ববৃহৎ দু’টি সংস্থার সম্মেলনের আয়োজক হওয়া এবং তা সফল ও নিরাপদে আয়োজন করে সাফল্য দেখিয়েছে সংসদ৷
ছবি: imago/Xinhua
9 ছবি1 | 9
ফেসবুকে অনেকেই এই পিটিশনটি শেয়ার করেছেন৷ সেখানে উত্তম কুমার নামে এক ব্যক্তি লিখেছেন, ‘‘মাত্র ২ কোটি টাকার মিথ্যা মামলার জন্য যদি ৫ বছর কারাদণ্ড হয়, তাহলে শেয়ার বাজার, হলমার্ক, ডেসটিনি, সোনালি ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ফারমার্স ব্যাংক, জনতা ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা এবং ৯ বছরে মোট ১৩ লক্ষ কোটি টাকা লুটপাটের অপরাধে কত বছরের কারাদণ্ড হওয়া উচিত?''
শামস শাহরিয়ার খান নামে আরেক ব্যক্তি লিখেছেন, ‘‘খালেদা জিয়া কেন জিয়ার নামে আসা বিদেশি অনুদানের টাকা দিয়ে গত ২৮ বৎসরেও এতিম খানা না করে ঐ টাকা নানা জনের নামে ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট করে রেখে বৃদ্ধি করলো, তার জবাব আমি নেয়ার কে? জবাব চাইতে পারে কেবল জিয়ার সৈনিকরা, মানে বিএনপির নেতা-কর্মীরা, নাকি?''
পিটিশনের শেষাংশে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বাংলাদেশ সরকারের উপর চাপ দেয়ার জন্য জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংগঠনের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে৷ ইতোমধ্যে এই পিটিশনে কয়েকহাজার স্বাক্ষর জমা হয়েছে৷ তবে জাতিসংঘে বিষয়টি উত্থাপনে ঠিক কত হাজার স্বাক্ষর প্রয়োজন বা আদৌ এ ধরনের পিটিশন জাতিসংঘ গ্রহণ করে কিনা তা পিটিশনের কোথাও উল্লেখ করা হয়নি৷ চেঞ্জ ডটঅর্গে জাতিসংঘের উদ্দেশ্যে এখন পর্যন্ত জমা পড়া পিটিশনের সংখ্যা ৭৭৩টি৷
খালেদা জিয়ার মামলার রায়ের দিনটি
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দিয়েছেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত৷ দিনটি ছিল ঘটনাবহুল৷ চলুন দেখে নিই ছবিঘরে৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
পুলিশের সতর্ক পাহারা
খালেদা জিয়ার রায়ের দিনটিকে ঘিরে যেন কোনো নাশকতা না হয়, সেজন্য পুরো রাজধানীতেই ছিল পুলিশের সতর্ক পাহারা৷ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়, হাইকোর্ট এলাকা ও বকশিবাজারে আদালত প্রাঙ্গনকে ঘিরে নেয়া হয় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে
পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়টি দিনভর ছিল প্রায় নেতা-কর্মীশূন্য৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
যাত্রা হলো শুরু
দুপুর বারোটায় গুলশানের বাসা থেকে বকশিবাজারের আদালতের উদ্দেশ্যে রওনা হন খালেদা জিয়া৷ এ সময় তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মীরাসহ গাড়িবহরের পাশে অসংখ্য নেতাকর্মী ছিলেন৷
ছবি: bdnews24.com
সিনিয়র নেতারা আগেই হাজির
খালেদা জিয়া আদালতে পৌঁছানোর আগেই দলের কয়েকজন নেতাকে সঙ্গে নিয়ে বকশিবাজারে আসেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
কাকরাইলে সংঘর্ষ
খালেদা জিয়া আদালতে পৌঁছানোর পথে কাকরাইলে পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে জড়ায় বিএনপির নেতা কর্মীরা৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
চানখারপুলে সংঘর্ষ
পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় কাকরাইলে বিক্ষুব্ধ বিএনপি নেতারা একটি মোটর সাইকেল জ্বালিয়ে দেয়৷ খালেদা জিয়া আদালতে পৌঁছানোর আগেই ঢাকার চানখাঁরপুল এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের৷ বেশ কয়েক রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে সরিয়ে দেয়া হয় তাদের৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের অবস্থান
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বকশিবাজারের আদালত এলাকায় অবস্থান নিয়ে স্লোগান দেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা৷ তাঁরা আদালতে প্রবেশ করতে চাইলে পুলিশি বাঁধার সম্মুখীন হন৷