1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

খালেদার রাজনীতি: সিদ্ধান্ত আইনগত, না রাজনৈতিক?

২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া নির্বাচন এবং রাজনীতিতে অংশ নিতে পারবেন কি না তা নিয়ে সরকারের মন্ত্রীরাই দুই ভাগ হয়ে পড়েছেন৷

Khaleda Zia Bangladesch
ছবি: Bdnews24.com

কয়েকজন মন্ত্রী বলছেন, খালেদা দিয়া দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ায় তিনি রাজনীতিও করতে পারবেন না, নির্বাচনেও অংশ নিতে পারবেন না৷ আর কয়েকজন মন্ত্রী বলছেন, রাজনীতিতে বাধা নেই তবে নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না কালেদা জিয়া৷

তবে আইন বিশ্লেষকেরা একমত যে, খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে বাধা নেই৷ কিন্তু খালেদা জিয়ার চূড়ান্ত দণ্ড এবং দণ্ড স্থগিতের আইনগত ব্যাখ্যায় তাদের মধ্যে দ্বিমত রয়েছে৷

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে বন্দি ছিলেন৷

২০২০ সালের ২৫ মার্চ তিনি প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী আদেশে শর্ত সাপেক্ষে ছয় মাসের মুক্তি পান৷ তার শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে দণ্ড স্থগিত করে এই মুক্তি দেয়া হয়৷

এরপর খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যদের আবেদনে এই মেয়াদ বাড়ানোয় এখনো তিনি কারাগারের বাইরে আছেন৷ খালেদা জিয়া দলের চেয়ারপার্সন হলেও দণ্ডের পর দেশের বাইরে অবস্থানরত তার বড় ছেলে তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন৷ তিনিও দণ্ডপ্রাপ্ত৷

সাম্প্রতিক বিতর্ক

সম্প্রতি খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে অংশগ্রহণ এবং নির্বাচনে অংশগ্রণ করতে পারবেন কি না তি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে৷ গত কয়েক দিনে সরকারের মন্ত্রীরা এ নিয়ে নানা মন্তব্য করেছেন৷ বিএনপিও এর জবাবে কথা বলেছে৷

তিনি দণ্ডের মধ্যেই আছেন, কারণ তার সাজা তো বাতিল হয়নি: অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান

This browser does not support the audio element.

আইনমন্ত্রী  আনিসুল হক বৃহস্পতিবার বলেছেন, ‘‘উনি (খালেদা জিয়া)  নির্বাচন করতে পারবেন না৷ তার কারণ উনি দণ্ডিত৷ রাজনীতি করতে পারবেন না, এরকম কথা তো কোথাও নেই৷ আইনি হলে তিনি রাজনীতি করতে পারবেন৷ বাস্তব অবস্থা হলো তিনি অসুস্থ হওয়ার কারণে  দণ্ডাদেশ স্থগিত করা হয়েছিল৷ এটা মনে রাখতে হবে৷ স্বাভাবিক মানুষ মনে করে তিনি অসুস্থ হওয়ায় রাজনীতি করতে পারবেন না৷ এটা হচ্ছে প্রাক্টিক্যাল পজিশান৷’’

এদিকে খালেদা জিয়ার রাজনীতি ও নির্বাচন কোনোটিই করার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের৷

তিনি বলেছেন, ‘‘দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়ার দণ্ড দিয়েছেন আদালত৷ তিনি সেই দণ্ড থেকে মুক্তি পাননি৷ মানবিক কারণে সরকার তাকে বাসায় থাকার সুযোগ করে দিয়েছে৷ তাহলে তার রাজনীতি করার প্রশ্ন আসে কোথা থেকে? দণ্ডিত একজন কয়েদি হিসেবে খালেদা জিয়ার রাজনীতি করার সুযোগ নেই৷’’

এদিকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘‘খালেদা জিয়ার রাজনীতি করতে বাধা নেই৷ তিনি জেলে থেকেও দল পরিচালনা করতে পারবেন, বিভিন্ন নির্দেশনা দিতে পারবেন৷ তবে সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসাবে আইন অনুযায়ী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না৷’’

তবে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘‘বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী কেউ যদি দুই বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্ত হন, তাহলে তিনি নির্বাচন করতে পারেন না৷ খালেদা জিয়া দুই বছরের অনেক বেশি সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন৷ সুতরাং নির্বাচন করার প্রশ্নই আসে না৷ তার শারীরিক অবস্থা এবং বয়স বিবেচনায় তাকে শর্ত সাপেক্ষে কারাগারের বাইরে ঘরে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে৷ সেই শর্ত অনুযায়ী তিনি রাজনীতিও করতে পারেন না৷’’

এসবের জবাবে বৃহস্পতিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘‘বিএনপি চেয়রপার্সন খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে বন্দি করে রাখার কারনে তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হননি৷ পরিবেশ সৃষ্টি হলে অবশ্যই তিনি রাজনীতি করবেন৷’’

বিএনপির এই নেতা আরো বলেন, ‘‘খালেদা জিয়ার রাজনীতি করতে পারা-না পারার ব্যাপারে কয়েক দিন ধরে সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী যেসব কথা বলছেন, এসব বক্তব্যের ব্যাপারে বিএনপি আগ্রহী নয়৷’’

এদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘সরকারের সিনিয়র মন্ত্রীরা যখন স্ববিরোধী কথা বলছেন, তখন প্রমাণ হয় যে, অনির্বাচিত এই সরকার দায়িত্বশীলতা ও জবাবদিহির অভাব থেকে খালেদা জিয়াকে নিয়ে নানা অযৌক্তিক কথা বলছেন৷’’

তার কথা, ‘‘বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ এবং সে কারণে তিনি রাজনীতির মাঠ থেকে দূরে আছেন৷’’

তিনি বলেন, ‘‘সরকার খালেদা জিয়াকে সাজা থেকে রেহাই দেয়নি৷ শুধু শর্ত সাপেক্ষে তাকে বাসায় থাকতে দিয়েছে৷ ফলে তিনি কারামুক্ত নন৷ যে কারণে বিএনপির চলমান আন্দোলনে খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি রয়েছে৷’’

হঠাৎ কেন এই আলোচনা

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আসলে সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপির চলমান আন্দোলনে বিভ্রান্তি ছাড়াতেই সরকারের মন্ত্রীরা এসব অসংলগ্ন কথা বলছেন৷ তাদের নিজেদের কথায়ই মিল নাই৷ আগে বলেছেন,  বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে পারবেন না৷ এখন বলছেন রাজনীতিও করতে পারনে না৷ আসলে তারা ধুম্রজাল সৃষ্টির চেষ্টা করছেন৷ এসব বিভ্রান্তি ছড়িয়ে, ধুম্রজাল ছড়িয়ে আন্দোলনকে দুর্বল করা যাবে না৷’’

তিনি দাবি করেন, ‘‘খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে দণ্ড দেয়া হয়েছে৷ ওয়ান ইলেভেন সরকার ‘মাইনাস টু' থিওরি বাস্তবায়ন করতে খালেদা জিয়া এবং শেখ হাসিনা দুইজনের বিরুদ্ধেই মামলা দিয়েছে৷ কিন্তু এই সরকার ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনার মামলা প্রত্যাহার করেছে আর খালেদা জিয়ার মামলা প্রত্যাহার না করে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে শাস্তি দিয়েছে৷’’

তার কথা, ‘‘১০ দফাসহ খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে আমাদের আন্দোলন অব্যাহত আছে৷ আমরা সরকারের মন্ত্রীদের কথাকে গুরুত্ব দিচ্ছি না৷ আমরা খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি চাই৷’’

এর জবাবে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, ‘‘মন্ত্রীরা নিজেরা খালেদা জিয়ার বিষয়টি সামনে আনেননি৷ সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করেছেন, তার জবাবে মন্ত্রীরা কথা বলেছেন৷ এখানে ধুম্রজাল বা বিভ্রান্তির কোনো বিষয় নেই৷’’

তার কথা, ‘‘বিএনপি আইন, সংবিধান কিছুই মানে না৷  খালেদা জিয়া তো দন্ডপ্রাপ্ত৷ তার পরিবারের আবেদনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছেন৷ তাকে তো শর্ত মানতে হবে৷’’

তিনি বলেন, ‘‘জেলখানায় থেকে তিনি কীভাবে রাজনীতি করবেন? আদালত তাকে জামিন না দিলে তিনি তো বাইরে আসতে পারবে না৷ আর আইন অনুযায়ী দণ্ডিত ব্যক্তির তো নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নেই৷ তারেক রহমানের ব্যাপারটাও একই রকম৷’’

খালেদা জিয়ার সাজা তো চূড়ান্ত নয়: অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ

This browser does not support the audio element.

বিশ্লেষকেরা কী বলছেন?

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ মনে করেন,  ‘‘খালেদা জিয়ার বিষয়টি আইনগত নয়, রাজনৈতিক৷ খালেদা জিয়াকে মানবিক কারণেও সুপ্রিম কোর্ট জামিন দেয়নি৷ তবে এর কিছুদিন পর সরকার তাকে সাজা স্থগিত করে মুক্তি দিলো৷ এখানে তো আইন থাকে না৷ রাজনীতির মধ্যে চলে আসে৷ রাজনীতিতে অনেক কথাই হয়৷ আওয়ামী লীগ নেতাদের একাংশ বলছেন, তিনি নির্বাচন করতে পারবেন না৷ আরেক অংশ বলছে রাজনীতিও করতে পারবেন না৷’’

তার কথা, ‘‘সজাপ্রাপ্ত হলে নির্বাচনে প্রার্থী হতে বাধা আছে৷ কিন্তু খালেদা জিয়ার সাজা তো চূড়ান্ত নয়৷ তার আপিল পেন্ডিং আছে৷ আর সরকার তার দণ্ড তো স্থগিত করেছে৷ ফলে তিনি দণ্ডের মধ্যে নেই৷ স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার  হলে তিনি আবার সাজার মধ্যে চলে যাবেন৷ তিনি প্রার্থী হলে আদালত হয়তো এসব ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবেন৷ কিন্তু রাজনীতি করায় কোনো আইনে কোনো বাধা নেই৷’’

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন মনে করেন, ‘‘খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত হলেও তিনি দন্ডপ্রাপ্ত৷ তিনি দণ্ডের মধ্যেই আছেন৷ কারণ তার সাজা তো বাতিল হয়নি৷ করোনার সময় মানবিক কারণে দণ্ড স্থগিত করে তাকে মুক্তি দেয়া হয়েছে৷ আর দুই বছরের বেশি দণ্ড হলে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া যায় না৷’’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে বিচারিক আদালতের দণ্ড, না চূড়ান্ত দণ্ড কোনটা বিবেচনায় নেয় হবে এটা নিয়ে দ্বিমত আছে৷ কেউ মনে করেন বিচারিক আদালতের আবার কেউ মনে করেন চূড়ান্ত আদালতের৷ সুপ্রিম কোর্টের রায়ে দুই ধরনের উদাহরণই আছে৷ হয়তো এব্যাপারে সিদ্ধান্তের জন্য আদালতের কাছে খালেদা জিয়াকে যেতে হতে পারে যদি তিনি প্রার্থী হতে চান৷’’

আর রাজনীতি করার ক্ষেত্রে দণ্ডের বিষয়টি বাধা হওয়ার কোনো কারণ নেই বলে মনে করেন আইনের এই অধ্যাপক৷

তিনি বলেন, ‘‘এব্যাপারে কোনো আইনি বাধা আছ বলে আমার জানা নেই৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

বাংলাদেশ