‘খালেদা-হাসিনার বিরুদ্ধে দুই তদন্তেই দুদকের সমান ভূমিকা ছিল'
২৫ ডিসেম্বর ২০২০
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সমান ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান৷
বিজ্ঞাপন
ডয়চে ভেলে বাংলার সাপ্তাহিক ইউটিউব টকশো ‘খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়'-এর এবারের পর্বে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান এবং ক্যানাডার টরন্টোর ‘নতুন দেশ'-এর সম্পাদক শওকত আলী সাগর৷ এবারের প্রশ্ন ছিল, দুর্নীতিরুখতে কি দুদক ব্যর্থ?
এ প্রসঙ্গে আলোচিত হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ ও সে বিষয়ে দুদকের ভূমিকা৷ দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘‘শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে যে মামলা দায়ের হয়, তার রায় ঢাকা ল রিপোর্টে বেরিয়েছে৷ একইভাবে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের ভিত্তিতে যে মামলা চলে, তার রায়ও ঢাকা ল রিপোর্টে প্রকাশিত হয়েছে৷ যদি দুটি রায়কে পাশাপাশি রাখা হয়, তাহলে দেখবেন যে দুটি ক্ষেত্রেই দুদকের ভূমিকা সমান ছিল৷ সেখানে আমাদের ভূমিকায় কোনো ফাঁক নেই৷ যদি সেই রায়ে আমাদের ভূমিকায় কোনো ফাঁক দেখাতে পারেন, তাহলে তা দুদক মাথা পেতে গ্রহণ করবে৷ আমরা দুটি ক্ষেত্রেই পয়েন্ট অফ ল, অর্থাৎ আইনের প্রেক্ষিতেই আমরা কনসিস্টেন্টলি আর্গুমেন্ট করেছি৷''
দুদকের সাফল্য-ব্যর্থতা প্রসঙ্গে সাংবাদিক শওকত আলি সাগর বলেন, ‘‘দুদককে আমরা প্রতিপক্ষ মনে করি না৷ তারা দেশের জনগণের আস্থার জায়গা, কারণ, তাদের কাজ দুর্নীতি দমন করা৷ আমরা আশা করি, দেশে দুদক থাকলে সে ব্যবস্থা নেবে, নাগরিকদের মনে আস্থা তৈরি করবে৷ সেটা না করলে তাদের সফলতা নিয়ে আলোচনা করে লাভ নেই৷ দুদক তাদের কাজ দিয়ে সেই আস্থার জায়গাকে প্রকট করে তুলুক৷''
এছাড়া, এবারের পর্বে আলোচিত হয় দুদকের গুরুত্বপূর্ণ কিছু মামলা, দুর্নীতিতে রাজনৈতিক ভূমিকা ও দেশের বাইরে টাকা পাচারের প্রসঙ্গও৷
এসএস/এসিবি
করোনা জালিয়াতির ‘হোতারা’
করোনা সংক্রমণের ভুয়া রিপোর্ট দেয়ায় জড়িত থাকার অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ, জেকেজির সিইও আরিফুল হক চৌধুরী ও চেয়ারম্যান সাবরিনা চৌধুরীকে আটক করা হয়েছে৷ করোনা সংক্রান্ত দুর্নীতি ও হোতাদের নিয়ে ছবিঘর...
ছবি: bdnews24.com
প্রথমে স্বামী, পরে স্ত্রী
জেকেজির বিরুদ্ধে এক ভুক্তভোগীর করা মামলার পর গত মাসে প্রতিষ্ঠানটির সিইও আরিফুল হক চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ এরপর গত রবিবার প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা চৌধুরীকেও (আরিফুলের স্ত্রী) আটক করা হয়েছে৷ এদিকে, জেকেজি হেলথ কেয়ারের নমুনা সংগ্রহের যে অনুমোদন ছিল, তা ২৪ জুন বাতিল করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর৷
ছবি: bdnews24.com
ভুয়া প্রতিবেদন
পরীক্ষা না করে করোনা সংক্রমণের ভুয়া রিপোর্ট দেয়ার অভিযোগ ওঠা রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদকে বুধবার আটক করা হয়েছে৷ ঢাকার উত্তরা পশ্চিম থানায় ব়্যাবের দায়ের করা মামলায় বলা হয়েছে, ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে প্রায় ছয় হাজার লোকের কাছ থেকে দুই কোটি ১০ লাখ টাকা আদায় করেছে রিজেন্ট হাসপাতাল৷ ওই মামলায় সাহেদসহ ১৭ জনকে আসামি করা হয়েছে৷
ছবি: bdnews24
মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স
২০১৩ সাল থেকে রিজেন্ট হাসপাতালের কোনো বৈধ লাইসেন্স নেই৷ তারপরও ‘কোভিড ডেডিকেটেড’ হাসপাতাল হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ওই হাসপাতালের সাথে চুক্তি করেছিল৷ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বুধবার জানিয়েছেন, সাবেক স্বাস্থ্যসচিব (ঘটনার সময় যিনি সচিব ছিলেন) আসাদুল ইসলামের মৌখিক নির্দেশে চুক্তিটি হয়েছে৷
ছবি: Facebook
জেকেজির বিরুদ্ধে অভিযোগ
জোবেদা খাতুন হেলথ কেয়ার, সংক্ষেপে জেকেজির বিরুদ্ধে অভিযোগ, সরকারের কাছ থেকে বিনামূল্যে নমুনা সংগ্রহের অনুমতি নিয়ে বুকিং বিডি ও হেলথকেয়ার নামে দুটি সাইটের মাধ্যমে টাকা নিচ্ছিল তারা৷ এছাড়া নমুনা পরীক্ষা ছাড়াই ভুয়া সনদ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে জেকেজির বিরুদ্ধে৷ প্রতিষ্ঠানটি সাড়ে ১১ হাজার ভুয়া করোনা টেস্টের হোতা বলে জানা গেছে৷
ছবি: bdnews24
পিপিই এবং মাস্ক দুর্নীতি
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ৯০০ কোটি টাকার পিপিই ও মাস্ক দুর্নীতির তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন, দুদক৷ করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মধ্যে এন-৯৫ মাস্ক ও পিপিইসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী কেনাকাটায় দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে গত ১৫ জুন দুদক কর্মকর্তা জয়নুল আবেদীন শিবলীকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে৷
ছবি: bdnews24.com
স্বাস্থ্যখাতে সিন্ডিকেট
আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক সোমবার ডয়চে ভেলেকে জানান, স্বাস্থ্যখাতে একটি শক্ত সিন্ডিকেট কাজ করছে৷ এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের লোকজনও জড়িত বলে৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তিনি এই সিন্ডিকেটের কথা জানিয়েছিলেন বলেও জানান৷
ছবি: DW
নথিতে যা আছে
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মে মাসের এক নথিতে দেখা যায়, গত ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠু নামে একজন এই সিন্ডিকেটের (সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী যার কথা বলেছেন) মূল নেতৃত্বে রয়েছেন৷ নথিতে সিন্ডিকেটের অংশ হিসেবে একজন সাবেক মন্ত্রী, একজন বর্তমান মন্ত্রী, তার পিএস ও তার ছেলের নামও রয়েছে৷ বর্তমান মন্ত্রী, তার পিএস এবং ছেলে এই সময়ে নানা অর্ডার ও কেনাকাটায় প্রভাব খাটাচ্ছেন বলে নথিতে বলা হয়৷
ছবি: bdnews24.com
কে এই মিঠু?
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নথিতে সিন্ডিকেটের নেতা হিসেবে মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুর নাম উল্লেখ করা হয়েছে৷ নিম্নমানের মাস্ক ও পিপিই দুর্নীতি বিষয়ে দুদক যে তদন্ত শুরু করেছে সেখানেও মিঠুর নাম আছে৷ দুদকের কাছে মিঠুর পরিচয় হচ্ছে, তিনি ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের চেয়ারম্যান ও লেক্সিকোন মার্চেন্ডাইজ ও টেকনোক্র্যাট লিমিটেডের মালিক৷