দুর্নীতির দু'টি মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বহাল রেখেছে আদালত৷ ওদিকে, বেগম জিয়া নিজেই গ্রেপ্তার হতে চাইছেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷
বিজ্ঞাপন
গত কয়েকদিন ধরে দেশের সর্বত্র প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল একটাই – খালেদা জিয়া কি গ্রেপ্তার হচ্ছেন? নাকি তিনি নিজেই আদালতে হাজিরা দেবেন? আসলে কী হতে যাচ্ছে? এর ফলে মামলা দু'টির শুনানির দিন, অর্থাৎ বুধবারকে ঘিরে এক ধরনের উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছিল৷ সারাদেশের মানুষ উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা নিয়ে তাকিয়ে ছিলেন আদালতের দিকে৷
দেশের মানুষের সঙ্গে উদ্বিগ্ন ছিলেন কূটনীতিকরাও৷ এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস ৪ঠা মার্চের (বুধবার) কার্যক্রম সীমিত করে৷ স্থগিত করে জরুরি কাজ ছাড়া সবকিছু৷ এমনকি ভিসা প্রার্থীদের সাক্ষাৎ-ও বাতিল করা হয়৷ তবে এ দিন কিছুই হয়নি৷ অন্যদিনের মতো স্বাভাবিকভাবেই পার হয়েছে দিনটি৷ আদালত আগামী ৫ই এপ্রিল এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য্য করেছে৷ এছাড়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বহাল থাকায়, ঐ দিন খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করা হবে কিনা – এটা দেখার জন্যও অপেক্ষা করা ছাড়া আর উপায় নেই৷
পুরনো ঢাকার বকশি বাজারে স্থাপিত বিশেষ আদালতের তৃতীয় বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদার গত ২৫শে ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন৷ একই সঙ্গে ৪ঠা মার্চ পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য্য করেন তিনি৷ এরপরই আলোচনা শুরু হয় খালেদা জিয়া কি গ্রেপ্তার হচ্ছেন? কিন্তু বুধবার পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তারের কোনো উদ্যোগই নেয়নি পুলিশ৷ এর কারণ হিসেবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘‘আদালতের দেয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থানায় না পৌঁছানোর কারণে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি৷''
অবরোধ-হরতালে বিপর্যস্ত জনজীবন
বাংলাদেশে টানা অবরোধ ও হরতালের ফলে সাধারণ মানুষের জীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্দশা৷ ক্রেতার অভাবে বেচাকেনা প্রায় শূন্যের কোঠায় গিয়ে ঠেকেছে৷ শুধু অর্থনীতি নয়, চলমান রাজনৈতিক সহিংসতায় মুষড়ে পড়েছে পরিবহন ও শিক্ষা ব্যবস্থাও৷
ছবি: DW/M. Mamun
দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন
পুরনো ঢাকার বাবু বাজারে কাগজ বোঝাই একটি ট্রাকে জ্বলছে দুষ্কৃতিকারীদের দেয়া পেট্রোল বোমার আগুন৷ গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে চলছে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের ডাকা অবরোধ৷ ডাকা হচ্ছে হরতালও৷ অবরোধ-হরতালে সবচেয়ে আলোচিত পেট্রোল বোমা৷ শুধু পেট্রোল বোমার আগুনেই পুড়ে মরেছে কমপক্ষে ৬৫ জন সাধারণ মানুষ৷
ছবি: DW/M. Mamun
পুলিশ প্রহরায় চলছে পরীক্ষা
ঢাকার মতিঝিল আইডিয়িাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে পুলিশ প্রহরা৷ চলমান এ অবরোধ-হরতালে যাঁরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, তার মধ্যে শিক্ষার্থীরা অন্যতম৷ বর্তমানে সারা দেশে চলা এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন তাই অনেকটাই অনিশ্চয়তার মুখে৷ টানা অবরোধের মধ্যে ছুটির দিনগুলোতে চলছে পরীক্ষা৷ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরাও৷
ছবি: DW/M. Mamun
দূরপাল্লার বাস নেই বললেই চলে
বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলির ডাকা অবরোধে বাংলাদেশের প্রধান সড়ক ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চিত্ত৷ দুপুর বেলায় তোলা এ ছবিতে মহাসড়কটি প্রায় যানবাহন শূন্য৷ কিন্তু সাধারণ সময়ে এ সড়কটি থাকে যানবাহনে ভরা৷ বাংলাদেশে চলমান অবরোধে দূর পাল্লার গাড়ি চলাচল কমে গেছে বহুলাংশে৷ একের পর এক পেট্রোল বোমার ঘটনায় ঝুঁকি নিয়ে বাস চালাচ্ছেন না অনেক মালিকই৷
ছবি: DW/M. Mamun
বিজিবি-র টহল পর্যাপ্ত নয়
অবরোধের মধ্যে বাংলাদেশের মহাসড়কগুলোয়, মানে ঢাকার বাইরে বিজিবি-র টহল থাকলেও, তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য৷ এছাড়া সম্প্রতি রাত ন’টার পরে বাস চলাচলে সকলকে নিরুৎসাহ করার কারণে বাস মালিকদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
ঢাকায় অস্বাভাবিক নয় যানজট
বাংলাদেশে চলমান এই অবরোধে ঢাকার ভেতরের সড়কের দৃশ্য অবশ্য আলাদা৷ যান চলাচল অন্যান্য সময়ের চেয়ে তুলনামূলক কম হলেও, অনেক জায়গাতেই যানজট দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
চরম দুর্ভোগে পড়েছেন অফিসযাত্রীরা
ঢাকার ফার্মগেটে অফিস শেষে গাড়ির অপেক্ষায় বাড়িমুখী মানুষের ভিড়৷ টানা অবরোধে গণ পরিবহন ব্যবস্থা বেহাল হলেও, অর্থাৎ গাড়িঘোড়ার চলাচল কম থাকাতে দুর্ভোগ বেড়েছে অফিসমুখী ও অফিস ফেরত মানুষের৷ অফিসে যেতে বা অফিস থেকে বাড়ি ফিরতে সাধারণ মানুষ তাই পড়ছেন দুর্ভোগে৷
ছবি: DW/M. Mamun
অবরোধে নদীপথের ভিন্ন চিত্র
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় নদীবন্দর ঢাকার সদরঘাটের চিত্র এটি৷ গত একমাসেরও বেশি সময়ের এই অবরোধে দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া উল্লেখযোগ্য বড় কোনো সহিংসতা ঘটেনি নদীপথে৷ তাই নদীপথে যান চলাচল প্রায় স্বাভাবিকই আছে৷ ঢাকা থেকে প্রধানত দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোয় নৌ-যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়নি৷
ছবি: DW/M. Mamun
যাচ্ছে না দূরপাল্লার বাসগুলো
বিএনপি ও সমমনা দলের জোটসমূহের ডাকা হরতাল-অবরোধে ঢাকার অন্যতম প্রধান বাস স্টেশন গাবতলীর দৃশ্য এটি৷ বেশিরভাগ দূর পাল্লার রুটের বাসই এ স্টেশনে পার্ক করে রাখা৷ হরতাল-অবরোধে দূর পাল্লার বাস চলাচল অনেকাংশেই বন্ধ আছে বাংলাদেশে৷
ছবি: DW/M. Mamun
খদ্দেরহীন এক রেস্তোরাঁ
ঢাকার গাবতলী বাস স্টেশনের খদ্দেরশূন্য মোহাম্মাদীয়া রেস্তোরাঁ৷ অবরোধের কারণে এ রেস্তোরাঁর লোকবল ১৬ জন থেকে ৮ জনে নামিয়ে আনা হয়েছে৷ বাকি যে আটজন আছেন তাঁদেরও নিয়মিত বেতন পরিশোধ করতে পারছেন না মালিক৷ গাবতলী স্টেশন থেকে দূর পাল্লার বাস চলাচল কম থাকায় এ রেস্তোরাঁটি দিনের বেশিরভাগ সময় খালি থাকছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
বাড়ি ফেরা নিয়ে উদ্বিগ্ন মানুষ
অবরোধ আর হরতালকারীদের প্রধান লক্ষ্য সড়কে চলাচলকারী বাস আর ট্রাক৷ বাংলাদেশে এ পর্যন্ত যতগুলো হামলার ঘটনা ঘটেছে তার বেশিরভাগেই যাত্রীবাহী বাস কিংবা ট্রাকে৷ এতে কমপক্ষে ৬০ জন মানুষের প্রাণহানি ঘটলেও, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বার্ন ইউনিটে পোড়ায় ক্ষত শরীর নিয়ে কাতরাচ্ছেন আরো শতাধিক সাধারণ মানুষ৷
ছবি: DW/M. Mamun
কমলাপুর রেল স্টেশনে অপেক্ষায় যাত্রীরা
অবরোধে ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন রুটে ট্রেন চলাচল করলেও, সময়সূচি ঠিক রাখতে পারছে না রেল কর্তৃপক্ষ৷ বিভিন্ন সময়ে অবরোধকারীদের রেল লাইনের ‘ফিশপ্লেট’ খুলে ফেলার কারণে কয়েকটি ট্রেনের লাইনচ্যুতির ঘটনায় ট্রেনের গতি কমিয়ে চালাতে হচ্ছে৷ তাই বেশিরভাগ ট্রেনই স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কমপক্ষে তিন-চার ঘণ্টা বিলম্বে ছেড়ে যাচ্ছে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন৷
ছবি: DW/M. Mamun
খেটে খাওয়া মানুষের দুর্দশা
টানা অবরোধ-হরতালে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন ফুটপাথের ভ্রাম্যমাণ দোকানদাররা৷ স্বল্প পুঁজির এ সব ব্যবসায়ীদের বিক্রি কমে যাওয়ায় পথে বসার উপক্রম হয়েছে অনেকেরই৷
ছবি: DW/M. Mamun
পুঁজি ভেঙে চলছে যাঁর সংসার
ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদ এলাকার ফুটপাথে কম্বলের ব্যবসা করেন গাজীরুল ইসলাম৷ দুপুরবেলা পর্যন্ত এ দিন তাঁর বিক্রি হয়েছে মাত্র ১৭’শ টাকার একটি কম্বল৷ তাও তার কেনা দামের থেকে ৩০০ টাকা কম৷ লাভ তো দূরের কথা সংসার চালাতে এখন পুঁজি টুকুনিই ভরসা৷
ছবি: DW/M. Mamun
অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রই যখন ভরসা
ঢাকার নবাবপুর থেকে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র নিয়ে ফিরছেন এক গাড়ি চালক ও তাঁর সহকারী৷ টানা অবরোধ-হরতালে পেট্রোল বোমার ঘটনা মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় সতর্কতা হিসেবে নিজেদের গাড়িতে এখন থেকে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র রাখবেন তাঁরা৷
ছবি: DW/M. Mamun
14 ছবি1 | 14
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এক সপ্তাহেও থানায় কেন গেল না? বকশি বাজার থেকে গুলশান থানা কতদূর? এমন প্রশ্নের জবাবে মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ওয়ারেন্ট কেন থানায় যায়নি, এটা আমি বলতে পারব না৷ কারণ এটা থানায় পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব আমার নয়৷ পুলিশ কেন ওয়ারেন্ট তামিল করছে না – সেটাও আমি বলতে পারব না৷ কারণ এগুলো আমার বলার বিষয় নয়৷''
তাহলে কে বলতে পারবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আদালত বলতে পারবে৷ তবে আগামী শুনানির দিন (৫ মার্চ) এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে৷ কারণ খালেদা জিয়াকে ঐ দিনের মধ্যে আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে অথবা তাঁকে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করতে হবে৷''
কিন্তু পরোয়ানা না পেলে পুলিশ কিভাবে তাঁকে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করবে? আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘‘অপেক্ষা করেন, নিশ্চয়ই উত্তর পাবেন৷''
জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট ও জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার সাতজন সাক্ষী বুধবার আদালতে উপস্থিত থাকলেও তাঁদের জবানবন্দি নেয়া সম্ভব হয়নি৷ বরং বিচারক সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ৫ই এপ্রিল দিন ঠিক করে আদালত মুলতবি করে দেন৷ আদেশের পর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল সাংবাদিকদের বলেন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ায় খালেদা জিয়া আইনের দৃষ্টিতে পলাতক৷ যেহেতু তিনি আত্মসমর্পণ করেননি, সেহেতু তাঁর কোনো আবেদন শোনার সুযোগ নেই৷ তারপরও তাঁর পক্ষে সিনিয়র আইনজীবীরা এসেছেন৷ এ কারণে আদালত তাঁদের বক্তব্য শুনেছে৷ সবগুলো আবেদন নথিভুক্ত রেখেছে, তবে গ্রহণ করেননি৷
গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আদেশ স্থগিতে বিচারিক আদালতের পাশাপাশি হাইকোর্টেও একটি আবেদন করেছেন খালেদা জিয়া৷ বৃহস্পতিবার (৫ মার্চ) ঐ আবেদনের সঙ্গে দুর্নীতির দু'টি মামলায় খালেদার বিচারক পরিবর্তনের আবেদনের শুনানি হবে বলে তাঁর আইনজীবীরা জানিয়েছেন৷
পুড়ছে মানুষ, পুড়ছে মানবতা
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ের জন্য বিরোধীদলের কর্মসূচিতে পুড়ছে যানবাহন, ধ্বংস হচ্ছে সম্পদ, মরছে মানুষ৷ হরতাল-অবরোধের নামে পোড়ানো অনেকে এখনো যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে৷
ছবি: Mustafiz Mamun
সারি সারি পোড়া মানুষ
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১ নম্বর বার্ন ইউনিট এখন হরতাল-অবরোধের নামে পোড়ানো জীবিকার তাগিদ কিংবা দৈনন্দিন প্রয়োজনে রাস্তায় নামা মানুষে ভরে গেছে৷
ছবি: Mustafiz Mamun
শিশুর কষ্ট বোঝেনা তারা!
কোলের শিশুও বাঁচতে পারছেন না জ্বালাও-পোড়াওয়ে হাত থেকে৷ প্রতিপক্ষের আদর্শকে ভুল প্রমাণ করে শ্রেয়তর আদর্শ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা নয়, প্রতিপক্ষকে আঘাত করে, হত্যা করে লক্ষ্যে পৌঁছানোর চেষ্টা অনেক দেখেছে বাংলাদেশের মানুষ৷ স্বাধীন দেশে নিরীহ মানুষকে নির্বিচারে পোড়ানোও দেখতে হচ্ছে৷ ৩ নভেম্বর আট বছরের সুমি দাদীর সঙ্গে নেত্রকোনা থেকে ঢাকা আসছিল৷ জয়দেবপুর চৌরাস্তায় তাদের বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়৷
ছবি: Mustafiz Mamun
বোবা কান্না...
নির্মমতার আরেকটি ছবি হয়ে আছে মজিবরের পোড়া শরীর৷ মজিবর বাকপ্রতিবন্ধী৷ কুমিল্লার দেবিদ্বারের এক ট্রাকের হেলপার৷ পিকেটারদের বোমা হামলায় বাসের সঙ্গে তাঁর শরীরও পুড়েছে৷ সবাই শুনে বুঝবে এমনভাবে কথা তিনি বলতে পারেন না, বোবা কান্নায় শুধু পারেন অসহায়ত্ব প্রকাশ করতে, আর্তনাদ করতে আর এ অন্যায়ের প্রতিকার আশা করতে৷
ছবি: Mustafiz Mamun
মেয়েকে দেখতে গিয়ে মা হাসপাতালে
জাহানারা বেগম৷ বয়স ৫২৷ পেশা – ফেরি করে কাপড় বিক্রি করা৷ হরতাল-অবরোধ থাকলে বিক্রি কমে যায় বলেই হয়তো সেদিন কাপড় নিয়ে বাড়ি বাড়ি না ঘুরে জাহানারা গিয়েছিলেন শ্যামপুরে৷ সেখানে তাঁর মেয়ের বাড়ি৷ মেয়েকে দেখে অটো রিক্সায় ফেরার সময়েই বিপদ৷ বিরোধী দলের কিছু সমর্থক সেই অটোরিক্সাতেও ছুড়ে মারে পেট্রোল বোমা৷ সন্তানের প্রতি অপত্য স্নেহের মূল্য আগুনে পুড়ে চুকাচ্ছেন জাহানারা বেগম!
ছবি: Mustafiz Mamun
তালহার অসহায়ত্ব
২৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগে বাসে পেট্রোল বোমা ছুড়ে মারে দুর্বৃত্তরা৷ শরীরের ৩০ শতাংশ পুড়ে যাওয়ায় আবু তালহা সেই থেকে ১ নম্বর বার্ন ইউনিটে৷
ছবি: Mustafiz Mamun
রাজমিস্ত্রী
রাজমিস্ত্রী ও ঠিকাদার আবুল কালাম আজাদের শরীর পুড়েছে গত ১২ নভেম্বর৷ সেদিন ঢাকার রায়েরবাগেও একটি চলন্ত বাসে ছোড়া হয় পেট্রোল বোমা৷ সেই থেকে তাঁরও ঠিকানা ঢাকা মেডিকেল কলেজের ১ নম্বর বার্ন ইউনিট৷
ছবি: Mustafiz Mamun
বাসচালক
২৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় শাহবাগে পেট্রোল বোমা ছুড়ে পোড়ানো সেই বাসটি চালাচ্ছিলেন মাহবুব৷ যাত্রীদের মতো তাঁর শরীরও পুড়েছে৷ তাঁর দেয়া তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যু্দ্ধের সময়, অর্থাৎ ১৯৭১ সালেই জন্ম মাহবুবের৷ স্বাধীনতার ৪২ বছর পর দেশ পুড়ছে, তিনিও পুড়েছেন৷
ছবি: Mustafiz Mamun
ঘুমের মাঝেই আগুন...
৭ ডিসেম্বর মুন্সীগঞ্জ জেলার মাওয়া ফেরিঘাটে বাসে ঘুমাচ্ছিলেন হেলপার আলমগীর৷ থামানো বাসেই দেয়া হয় আগুন৷ পোড়া দেহ নিয়ে এখন তিনি হাসপাতালে৷
ছবি: Mustafiz Mamun
লেগুনার যাত্রী
১০ নভেম্বর ঢাকার লক্ষীবাজারে পেট্রোল বোমা ছুড়ে পোড়ানো হয় একটি লেগুনা৷ লেগুনা পুড়ে শেষ, লেগুনার যাত্রী কামাল হোসেন ভাগ্যগুণে বেঁচে গেছেন৷ তবে শরীরের ৩৫ ভাগেরও বেশি অংশ পুড়ে গেছে৷ ৩৬ বছরের এ তরুণ লড়ছেন মৃত্যুর সঙ্গে৷ চিকিৎসকদের চেষ্টা এবং সুস্থ মানসিকতার প্রতিটি মানুষের শুভকামনায় তিনি শিগগিরই হয়তো ফিরবেন স্বাভাবিক জীবনে৷ কিন্তু এই দুর্ভোগ, এই দুঃস্বপ্নের দিনগুলো কি কোনোদিন ভুলতে পারবেন?
ছবি: Mustafiz Mamun
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শুভও ছিলেন রায়েরবাগের সেই বাসে৷ তাই ১২ নভেম্বর থেকে তিনিও পোড়া শরীর নিয়ে পড়ে আছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের বিছানায়৷
ছবি: Mustafiz Mamun
10 ছবি1 | 10
এদিকে, আত্মসমর্পণ না করলে খালেদা গ্রেপ্তার হচ্ছেন – এমন খবরে বুধবার সকালেই খালেদা জিয়ার গুলশানের কার্যালয়ে জড়ো হন সংবাদকর্মীরা৷ খালেদার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘খালেদা জিয়া আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল৷ আইনজীবীরা বিষয়টি দেখছেন৷ তাঁদের পরামর্শ অনুযায়ী খালেদা জিয়া কী করবেন, তা ঠিক হবে৷''
খালেদার পক্ষে আদালতে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এ জে মোহাম্মদ আলী৷ খালেদার অনুপস্থিতির কারণ হিসাবে মোহাম্মদ আলী আদালতকে বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন ‘নিরাপত্তাজনিত কারণে' আদালতে আসতে পারছেন না৷ এ আদালতের বিচারকের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন করার বিষয়টিও তুলে ধরেন তিনি৷ বলেন, ‘‘মিডিয়া ট্রায়েল করা হচ্ছে, যাতে বিচারকের আদেশ ‘রিফ্লেক্ট' হচ্ছে৷''
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পরেও খালেদার আদালতে না যাওয়ার কথা তুলে বিচারক এ সময় দুদক-এর আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘‘উনি আদালতে আসেননি৷ উনার আইনজীবীদের কি এ সব ‘পিটিশন' করার এখতিয়ার আছে?'' জবাবে দুদক-এর আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘‘খালেদা জিয়া আদালতে না আসায় তাদের এ সব আবেদন করার কোনো এখতিয়ার নেই৷''
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ৮ই আগস্ট খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ৷ তেজগাঁও থানার এই মামলায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাত্ করার অভিযোগ আনা হয় আসামিদের বিরুদ্ধে৷ ২০১২ সালের ১৬ই জানুয়ারি খালেদা জিয়াসহ চারজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগ-পত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা৷ জিয়া এতিমখানা ট্রাস্টে অনিয়মের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন ২০০৮ সালের ৩রা জুলাই রমনা থানায় অন্য মামলাটি দায়ের করে৷ এতিমদের সহায়তার জন্য একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয় ঐ মামলায়৷