1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

খালেদা জিয়ার অসুস্থতা: তথ্য নিয়ে বিভ্রান্তি ও রাজনীতি

২৬ নভেম্বর ২০২১

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ১৩ নভেম্বর থেকে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি৷ এখন পর্যন্ত যতটুকু জানা যাচ্ছে, তিনি হাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষণ বা সিসিইউতে রয়েছেন৷

ছবি: bdnews24

ডাক্তাররা তাকে দ্রুত উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন৷

শর্ত সাপেক্ষে জেল থেকে মুক্ত হওয়ার পর একাধিকবার খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে৷ এরমধ্যে ২৭ এপ্রিল থেকে টানা ৫৪ দিন তিনি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন৷ বিভিন্ন সময় তার আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভোগার তথ্য গণমাধ্যমে উঠে আসে৷ তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি চেয়ারপার্সনের অসুস্থতার ধরন নিয়ে সাধারণ মানুষ অনেকটাই অন্ধকারে থেকেছেন৷ এর কারণ কী?

বিএনপি বিষয়ক সংবাদ নিয়মিত কাভার করেন এমন একজন টেলিভিশন সাংবাদকর্মীর কাছে এই প্রশ্ন করেছিলাম৷ তিনি জানান, বিএনপি নেতারা চান না তাদের নেত্রীকে দুর্বল হিসেবে উপস্থাপন করতে৷ এতে কর্মীদের মধ্যে হতাশা নেমে আসতে পারে বলে মনে করেন দলটির নীতিনির্ধারকরা৷ আর সে কারণে খালেদা জিয়া মানসিকভাবে কতটা দৃঢ় আছেন সংবাদমাধ্যমে বা দলীয় কর্মসূচীতে সেই বার্তাটি বারবার দেয়ার চেষ্টা করেন তারা৷ দ্বিতীয়ত, ঐ সাংবাদিক মনে করেন, বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের অনেকে আসলে নিজেরাও ভালো করে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা জানেন না৷ সম্প্রতি এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীও৷ সেই প্রসঙ্গে পরে আসছি৷

যথাযথভাবে তথ্য সরবরাহ করা না হলে গুঞ্জন আর গুজব ডালাপালা বিস্তার করে৷ কোনটি সঠিক আর কোনটি ভুল তথ্য সেটি যাচাই করতে তখন হিমশিম খান সাংবাদিকরা৷ গত এপ্রিলে খালেদা জিয়ার করোনা শনাক্ত হওয়ার সময়কার কথাই ধরা যাক৷ শুরুতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার করোনা টেস্টের রিপোর্ট ছড়িয়ে পড়ে৷ পরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে গণমাধ্যম খবরটি প্রকাশ করে৷ কিন্তু তখনও বিএনপি নেতারা এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করতে পারছিলেন না৷ উল্টো খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক মামুন রহমান দাবি করেন, পরীক্ষার জন্য খালেদা জিয়া নমুনাই নাকি দেননি৷ দলের মহাসচিব নিশ্চিত করার আগে তাই এ নিয়ে বিভ্রান্তি চলতে থাকে৷

তথ্যগত এমন বিভ্রান্তি সাম্প্রতিক সময়েও দূর করা গেছে, তা নয়৷ গত ২০ নভেম্বর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর বের হয় এন্ডোসকোপি পরীক্ষায় খালেদা জিয়ার ‘লিভার সিরোসিস ধরা পড়েছে’৷ বিএনপির চেয়ারপার্সনের সাবেক প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল তার এক ফেসবুক পোস্টেও এই তথ্য দেন৷ সেখানে তিনি লিখেন, ‘‘তার রোগ ও শারীরিক অবস্থার কথা প্রচার করা না হলেও আমি সাংবাদিকতার কলাকৌশল প্রয়োগে বিভিন্নভাবে খোঁজ-খবর করে নিশ্চিত হয়েছি যে, তিনি তার পুরনো জটিল রোগগুলো ছাড়াও ডিকমপেন্স্যাটেড লিভারসিরোসিস-এ আক্রান্ত হয়েছেন৷’’

তবে একদিন পর খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এজেডএম জাহিদ হোসেন জানান, এই খবর সঠিক নয়৷ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ‘‘ম্যাডাম লিভার, কিডনি, হার্টের জটিলতায় ভুগছেন৷ রয়েছে ডায়াবেটিসও৷… এখন গণমাধ্যম কোথা থেকে লিভার সিরোসিসের সংবাদ পেলেন, সেটা আমার জানা নেই৷’’

অন্যদিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রতিদিন অনেকটা একই সুরে কথা বলে যাচ্ছেন৷ মঙ্গলবার তিনি বলেন, ‘‘ম্যাডাম অত্যন্ত গুরুতরভাবে অসুস্থ৷ যে কথা আমি বলেছিলাম প্রথম দিনে, জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে৷ এই কথাটাই অ্যাপ্রোপ্রিয়েট কথা৷’’ একইদিন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও বলেন, ‘তিনি এখন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন৷’’

এমন অবস্থায় খালেদা জিয়ার চিকিৎসা আর অসুস্থতা নিয়ে সাধারণ মানুষতো বটেই এমনকি বিএনপির ভিতরে দলীয় কর্মীদের মধ্যেও বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বলে জানালেন একটি সংবাদপত্রে দীর্ঘদিন বিএনপি বিটে কাজ করা প্রতিবেদক৷ প্রতি রাতেই খালেদা জিয়ার মৃত্যুর গুজব রটছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই পরিস্থিতি তৈরি হতো না যদি মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা বা তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা নিয়মিত আপডেট দিতেন৷ যদিও ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, রোগীর প্রাইভেসি রক্ষা করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আইনগতভাবে বাধ্য৷ তাই তারা এ নিয়ে কথা বলবেন না৷ 

অন্যদিকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়া খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে অন্য কেউ কথা না বলতে দলের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে৷ তাই দলের গুরুত্বর্পূণ পদে থাকা ব্যক্তিগত চিকিৎসকরাও এখন সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলছেন না৷ 

এমন পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার চেয়ে রাজনৈতিক জল ঘোলাই যেন বেশি হচ্ছে৷ বিএনপি মহাসচিব যা বলেন তা নিয়ে পরদিন পাল্টা বক্তব্য দেন সরকার দলীয় নেতারা৷ দুই দলের কথার মারপ্যাচে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার দিনকে দিন অবনতির আশঙ্কা থাকছে৷ বুধবার ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীও উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরেছেন৷ তিনি জানান, হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় নিয়োজিত ছয় ডাক্তার তাকে বিস্তারিত জানিয়েছেন এবং তিনি নিজেও প্রতিদিনের ফাইলের প্রতিটি লেখা পড়েছেন৷ সেই প্রেক্ষিতে তার বক্তব্য, ‘‘খালেদা জিয়া অত্যন্ত কঠিন অবস্থায় আছেন৷ যেকোনো মুহূর্তে চলে যেতে পারেন৷ যেকোনো দিন চলে যেতে পারেন৷ তার অবস্থা অত্যন্ত ক্রিটিক্যাল৷ আমার কাছে আশ্চর্য লাগছে, বিএনপি এত দিন এই কথা জানায়নি! হয়তো তারা জানতেনই না৷’’

ফয়সাল শোভন, ডয়চে ভেলে বাংলাছবি: Masum Billah

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা বাংলাদেশে সম্ভব নয় উল্লেখ করে অবিলম্বে তাকে দেশের বাইরে পাঠানোর দাবি জানান তিনি৷ তবে সরকারের পক্ষ থেকে এখনও ইতিবাচক সাড়া মেলার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না৷ বিএনপি এখন পর্যন্ত যেসব কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে তাও যথেষ্ট চাপ তৈরি করতে পারছে না৷ শুরুতে যে টেলিভিশন সাংবাদিকের কথা বলেছিলাম তার বক্তব্য, এর আগেও খালেদা জিয়ার জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে দল কোন ভূমিকা রাখতে পারেনি৷ বরং সরকারের সঙ্গে পরিবারে আলোচনার মাধ্যমেই তা সম্ভব হয়েছে৷ এবারও হয়ত তেমন চেষ্টাই করা হচ্ছে৷

খালেদা জিয়ার শারীরিক পরিস্থিতি নিয়ে তথ্য দেওয়ার বিষয়ে তার পরিবারের পক্ষ থেকে কোন বারন আছে কীনা সেটি জানা যাচ্ছে না৷ তবে গুজব, বিভ্রান্তি দূর করতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলাদেশের অন্যতম বড় দলের প্রধান হিসেবে তার শারীরিক পরিস্থিতি সাধারণ মানুষেরও জানা থাকা প্রয়োজন৷ অন্যদিকে কেবল সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবেই নয়, সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবেও খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিশ্চিত করার দায় সরকারের উপর বর্তায়৷ প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে মন্ত্রী-এমপিরা যখন স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্যেও বিদেশ ছোটেন তখন প্রয়োজন হলে খালেদা জিয়াকেও উন্নত চিকিৎসার জন্য সেই সুযোগ দেওয়া উচিত৷ সরকার চাইলে নিয়মের মধ্যেই সেটি সম্ভব হতে পারে, যেমনটা তার শর্তসাপেক্ষে মুক্তির ক্ষেত্রেও হয়েছে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

বাংলাদেশ