খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করানোর বিষয়ে জল অনেকটা ঘোলা হয়েছে৷ সম্প্রতি বিএনপিপন্থি ১৫ জন আইনজীবী আইনমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তাদের দাবি তুলে ধরেছেন৷
বিজ্ঞাপন
ডয়চে ভেলের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছেন সেই দলে থাকা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী৷
ডয়চে ভেলে : খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠাতে আপনারা তো ১৫ জন আইনজীবী আইনমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলেন, উনি কী আশ্বাস দিয়েছেন?
নিতাই রায় চৌধুরী : আইনমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আমরা বলেছি, খালেদা জিয়া যে গুরুতর অসুস্থ সে খবর নিশ্চয়ই সরকার রাখে৷ তিনি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছেন৷ খুব দ্রুত, অর্থাৎ অনতিবিলম্বে মানে সেইদিনই যেন তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়৷ এখানে আইনগত কোনো বাধা হবে না৷ উনি যে আশ্বাসটা দিয়েছেন, সেটা ওনাকে একটু আলাপ আলোচনা করতে হবে৷ উনি বলেছেন, মতামতের জন্য আমার কাছে যে ফাইল আছে আপনারা আসবেন বলে সেই ফাইল আমি ছাড়িনি৷ দু-এক দিনের মধ্যে আমি ফাইলটা ছেড়ে দেব৷ উনি তো অবশ্যই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন৷
খালেদা জিয়াকে নিয়ে আইনমন্ত্রী যে মন্তব্য করেছেন তারপরে ওনার এই বক্তব্যে আপনারা কতটা আস্থাশীল?
আমি মনে করি, ওনার বক্তব্য রাজনৈতিক৷ আইনগতভাবে উনি যে পরামর্শ দেবেন সেটা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে৷ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হচ্ছে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়৷ যেখান থেকে ফাইল মুভ করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবে৷ সেক্ষেত্রে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নেবে৷ খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠাতে কোনো বাধা নেই, এটার নজিরও আছে৷ সাজাপ্রাপ্ত অনেককেই বিদেশে পাঠানো হয়েছে৷ মোহাম্মদ নাসিম মারা গেছেন, তিনি যখন সাজাপ্রাপ্ত হয়েছিলেন তখন তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছিল৷ আ স ম আব্দুর রবকেও পাঠানো হয়েছিল৷ পৃথিবীতে অনেক নজির আছে৷ সরকার পারে ৪০১ ধারায় তার সাজা স্থগিত রেখে মুক্তি দিতে৷ ওই ধারার মধ্যে বিদেশে পাঠানো যাবে না এমন কোন কথা নেই৷ সরকার শর্ত শিথিল করতে পারে, বাতিলও করতে পারে৷
‘মোহাম্মদ নাসিম যখন সাজাপ্রাপ্ত হয়েছিলেন তখন তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছিল’
সরকার যদি অনুমতিটা না দেয়, সে ক্ষেত্রে আপনাদের পদক্ষেপ কী হবে?
উনি তো সরকারের কাস্টডিতে আছেন৷ সরকার অনুমতি না দিলে আমরা রাজনৈতিকভাবে যা করার সেটা করবো৷ আমরা দাবি করে যাচ্ছি, দাবি করে যাবো৷ কিছু প্রক্রিয়া আছে, সেগুলো অবলম্বন করবো৷
এই বিষয়টা নিয়ে কি আপনারা উচ্চ আদালতে যাবেন? আদালত তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর কোনো নির্দেশনা দিতে পারে?
আমরা তো হাইকোর্টে জামিনের জন্য আবেদন করেছি৷ কিন্তু আদালত জামিন দেননি৷ আদালত জামিন দেয়নি বলেই তো উনি জেলখানায় ছিলেন৷ তার অবস্থা ক্রিটিক্যাল দেখেই তো প্রিজন সেল থেকে তাকে বাসায় দেওয়া হলো৷ বলা যায়, উনি তো এখনও জেলখানায়ই আছেন৷ কারণ তিনি সেখানে কারও সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না, বাইরে যেতে পারবেন না৷ বাসায় চিকিৎসা নিতে হবে, বাইরে যেতে পারবেন না, এটা তো শর্তের মধ্যে ছিল৷ এই শর্ত শিথিল করার কারণেই তো তাকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করানো যাচ্ছে৷ এই শর্ত শিথিল করেই তো তাকে বিদেশে পাঠাতে পারে৷
সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বয়স্ক নাগরিক, এই কারণে আদালত কি তাকে বিদেশে পাঠানোর নির্দেশনা দিতে পারেন?
সুয়োমোটো দিয়ে তো অনেক কাজই করে আদালত৷ আদালত তো পরিস্থিতি সব সময় পর্যবেক্ষণ করে৷ সুপ্রিম কোর্ট, হাই কোর্ট এগুলো তো সাংবিধানিক কোর্ট৷ দেশের অনেক ঘটনা নিয়ে কোর্ট অনেক সময় সুয়োমোটো রুল দেয়৷ জেলখানা থেকে আসামিকে বের করে নিয়ে আসে, খালাসের নির্দেশনাও দেয়৷ কেউ হয়ত বিনা বিচারে জেলে আছেন বা মরনাপন্ন কাউকে বের করে আনেন৷ এটা তো আদালত পারেন৷ এই বিষয়টা তো আদালতের নলেজে আছে৷ আদালত তো সমস্ত কিছু পর্যবেক্ষণ করে৷
খালেদা জিয়ার চার বছর
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সাজাপ্রাপ্ত হন খালেদা জিয়া৷ এরপর থেকে তিনি কারাগার, হাসপাতাল ও বাসায় আছেন৷
ছবি: AFP/Getty Images
মামলার রায়
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত৷ একই মামলায় তারেক রহমানসহ অন্য আসামিদের ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়৷ পরে আপিলে খালেদার কারাদণ্ডের মেয়াদও বেড়ে ১০ বছর হয়৷ সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৮ সালের ৩ জুলাই ঢাকার রমনা থানায় মামলাটি করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন৷ ছবিতে খালেদা জিয়াকে আদালতে যেতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A.M. Ahad
অভিযোগপত্রে যা বলা হয়েছিল
১৯৯১ সালে সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে এতিমদের সহায়তায় গঠিত ‘প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিলে’ চার কোটি ৪৪ লাখ ৮১ হাজার ২১৬ টাকা জমা হয়েছিল৷ কিন্তু ১৯৯৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঐ অর্থ দেশের প্রতিষ্ঠিত কোনো এতিমখানায় দেয়া হয়নি৷ পরে ‘জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’ গঠন করে সেখানে দুই কোটির বেশি টাকা ট্রান্সফার করে সেটা আসামিরা আত্মসাত করেন বলে মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়েছিল৷
ছবি: bdnews24.com
রায় ঘোষণার দিনটি যেমন ছিল
পুরো রাজধানীতে পুলিশের সতর্ক পাহারা ছিল৷ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়, হাইকোর্ট ও বকশিবাজারে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল৷ দুপুর ১২টায় গুলশানের বাসা থেকে বকশিবাজারের আদালতের উদ্দেশ্যে রওনা হন খালেদা জিয়া৷ পথে কাকরাইল ও চাঁনখারপুলে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়৷ এই সময় বিএনপির বেশ কয়েকজন কর্মীকে আটক করা হয়৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
আদালত থেকে কারাগারে
রায় ঘোষণার পর খালেদা জিয়াকে নাজিমুদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়৷ ২০১৬ সালে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা ঐ কারাগারটিকে ‘সাবজেল’ ঘোষণা করেছিল সরকার৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
কারাগার থেকে হাসপাতালে
চিকিৎসকদের পরামর্শে ২০১৮ সালের ৬ অক্টোবর খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল৷ সেখানে টানা এক মাস দুই দিন চিকিৎসা নেয়ার পর ৮ নভেম্বর তাকে কারাগারে ফিরিয়ে নেয়া হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images
বিএসএমএমইউতে যেতে আপত্তি
২০১৯ সালের ১০ মার্চ খালেদার চিকিৎসার জন্য বিএসএমএমইউ প্রস্তুত করা হয়েছিল৷ কিন্তু তিনি সেখানে যেতে রাজি হননি৷ খালেদা জিয়াকে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার দাবি জানিয়েছিল বিএনপি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ANN/The Daily Star
অবশেষে আবারও বিএসএমএমইউ
কারাগারে অসুস্থ হওয়ায় ২০১৯ সালের ১ এপ্রিল খালেদা জিয়াকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷ ২০২০ সালের ২৫ মার্চ মুক্তির আগ পর্যন্ত তিনি সেখানেই ছিলেন৷
ছবি: Bdnews24.com
আবারও কারাদণ্ডের রায়
২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াসহ চার জনকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়৷ ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় মামলাটি করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন৷ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ আনা হয় মামলায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Jahan
অবশেষে মুক্তি
শর্তসাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি পেয়ে ২৫ মাস কারাভোগের পর ২০২০ সালের ২৫ মার্চ মুক্তি পান খালেদা জিয়া৷ একদিন আগে খালেদাকে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেয়ার সরকারি সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক৷ শর্ত হলো এই সময়ে খালেদাকে ঢাকায় নিজের বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে৷ তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না৷
ছবি: bdnews24
নির্বাহী আদেশে মুক্তি
খালেদা জিয়ার বয়স ও অসুস্থতা বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার প্রধান হিসেবে নির্বাহী আদেশে তাকে মুক্তি দিয়েছেন বলে সেই সময় জানিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের৷
ছবি: Asif Mahmud Ove
চার দফা সময় বৃদ্ধি
২০২০ সালের ২৫ মার্চ খালেদা জিয়াকে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেয়া হয়েছিল৷ এরপর চার দফায় তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়৷ ছবিতে খালেদা জিয়ার বাড়ি দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: DW/S. Hossain
এটা এখন আইনের ব্যাপার: প্রধানমন্ত্রী
১৭ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘খালেদা জিয়াকে যে কারাগার থেকে বাসায় থাকতে দিয়েছি, চিকিৎসা করতে দিয়েছি এটাই কি বেশি নয়?’’ তিনি বলেন, ‘‘আমার হাতে যেটুকু পাওয়ার, সেটুকু আমি দেখিয়েছি৷ ... এখানে আমার কিছু করার নাই৷ আমার যেটা করার, আমি করেছি৷ এটা এখন আইনের ব্যাপার৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/FARJANA K. GODHULY
স্মারকলিপি
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে মঙ্গলবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের কাছে স্মারকলিপি দেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা৷
ছবি: bdnews24
তিনবার হাসপাতালে
২০২০ সালের মার্চে মুক্তি পাওয়ার পর থেকে এ নিয়ে তিনবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন খালেদা জিয়া৷ এর মধ্যে গত এপ্রিলে তিনি করোনা ভাইরাসেও আক্রান্ত হয়েছিলেন৷
ছবি: bdnews24.com
খালেদা কী অসুখে ভুগছেন
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বৃহস্পতিবার ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘খালেদা জিয়া এখন ক্রনিক কিডনি ডিজিজে যেমন ভুগছেন তেমনি ক্রনিক লিভার ডিজিজেও ভুগছেন৷ এখন তার লিভারের সমস্যা বেশি হচ্ছে৷ যার কারণে জিআই (পরিপাকতন্ত্র) ব্লিডিং বেশি হচ্ছে৷’’ তিনি বলেন, ‘‘খালেদা জিয়ার আগে থেকেই আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস আছে৷ আর রাইট হার্ট ফেইলিউরসহ আরো কিছু শারীরিক অসুস্থতা বা জটিলতা আছে৷’’
ছবি: Bdnews24.com
স্লো পয়জনিং?
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘...একটি সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত কারাগারে দুই বছরের বেশি সময় আটক রাখা হয়েছিল৷ পরে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল, সেখানে চিকিৎসা দেওয়া হয়নি৷ এখন অনেকের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, সেই সময়ে খালেদা জিয়াকে কোনো স্লো পয়জনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছিল কি না, আমরা পরিষ্কার করে জানতে চাই৷’’
ছবি: Asif Mahmud Ove
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সংবাদ সম্মেলন
খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী৷ এরপর বুধবার সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘‘আমি এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়ে খালেদা জিয়াকে দেখে এসেছি৷ যা দেখেছি, সাম্প্রতিককালে এত মর্মান্তিক ঘটনা আমি দেখিনি৷ খালেদা জিয়া কতক্ষণ, কয় দিন, কয় মিনিট বাজবেন, তা আমি বলতে পারব না৷ এটা বলতে পারি, তিনি ক্রান্তিকালে আছেন, তাকে হত্যা করা হচ্ছে৷’’
ছবি: DW/S. Hossain
17 ছবি1 | 17
তাহলে আপনারা আদালতে যাচ্ছেন না কেন?
উনি তো এখন সরকারের আদেশে বাসায় আছেন৷ উনি সরকারের কাস্টডিতে আছেন৷ আদালত সুয়োমোটো দিতে পারেন৷
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে একেক জন একেক রকম তথ্য দিচ্ছেন, এরমধ্যে গুজবও ছড়িয়ে পড়লো, আসল তথ্য কিভাবে জানা যেতে পারে?
তাকে নিয়ে তো দৈনিক বুলেটিন বের করা উচিত ছিল, যেটা ভারতে হয়৷ একজন সেলিব্রেটি বা একজন রাজনৈতিক নেতা, যেমন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বা জ্যোতি বসু যখন হাসপাতালে ছিলেন, তখন প্রত্যেকদিন সন্ধ্যায় হাসপাতালে বুলেটিন দেয়া হতো তাদের সর্বশেষ অবস্থা জানানোর জন্য৷ এটা এমনই দুর্ভাগা দেশ, এমনই দুঃখজনক ঘটনা, খালেদা জিয়া তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, তিনি কারো দয়ায় প্রধানমন্ত্রী হননি৷ জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী৷ তিনি বৃদ্ধ মানুষ, মরনাপন্ন অবস্থা অথচ তার চিকিৎসার সঠিক খবরটা পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে না৷ সবকিছু লুকিয়ে রাখা হচ্ছে৷
খালেদা জিয়াকে নিয়ে তো ব্রিফ করছেন বিএনপিপন্থি চিকিৎসকরা৷ কিন্তু উনি যে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন, সেই এভারকেয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তো কিছু বলেনি৷ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ব্রিফকরলে সেটা আরও বেশি গ্রহণযোগ্য হতো না?
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তো বলতে পারে না৷ যে মেডিকেল বোর্ড তার চিকিৎসা করছে তারা বলতে পারে৷ যারা ব্রিফ করছেন, তারা বিএনপির চিকিৎসক না, তারাও মেডিকেল বোর্ডের সদস্য৷ তারা তো সত্য ঘটনা বলছেন৷ যেমন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী তিনি নিজে ফাইলটা দেখেছেন৷ তিনি নামকরা একজন সার্জন৷ তিনি তো বলেছেন৷ এখন সাংবাদিকরা যদি পক্ষ নিয়ে বসে থাকে তাহলে দেশের মানুষ জানবে কীভাবে?
অনেকেই বলছেন, সংকটাপন্ন খালেদা জিয়াকে নিয়ে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি দুই পক্ষই রাজনীতি করছে, আপনি বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?
বিএনপি কোনো রাজনীতি করছে না৷ বিএনপি মানবিক ব্যাপারটা তুলে ধরছে৷ দেশের কোটি কোটি মানুষ উদ্বিগ্ন, উৎকণ্ঠিত৷ তারা বেগম জিয়ার অবস্থাটা জানতে চায়৷ কিন্তু সরকার সেটা করতে দিচ্ছে না৷ কারণ, এখন তিনি তো সরকারের কাস্টডিতে আছেন৷ এটা তো সরকারকেই জানাতে হবে৷ আমরা তো দাবি করেই যাচ্ছি যে আপনারা বলেন খালেদা জিয়ার অবস্থা৷ সরকারই তো সেই ব্যবস্থা করবে৷ তথ্যমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী এতকিছু বলছেন, কিন্তু তারা বেগম খালেদা জিয়া কোন অবস্থায় আছেন সেটা কেন বলছেন না? বললে দোষটা কোথায়? তাকে বিদেশে পাঠানোতে কোনো বাধা নেই৷ শুধু সরকারের সদিচ্ছার অভাব৷
বিএনপির তরফ থেকে বলা হচ্ছে, খালেদা জিয়ার কিছু হলে দায় সরকারকে নিতে হবে৷ আবার সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, তাকে স্বাধীনভাবে চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হয়েছে৷ আসলে এই দায়-দায়িত্বের রাজনীতি থেকে কীভাবে বের হওয়া সম্ভব?
দায়-দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে- এই কথা আমরা এজন্য বলছি যে, উনি তো এখন সরকারের কাস্টডিতে আছেন৷ ফলে দায় তো সরকারেরই৷