1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা: ‘আইনে সুযোগ আছে'

১ অক্টোবর ২০২৩

খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল এবং সংবিধান বিশিষেজ্ঞ আইনজীবী শাহদীন মালিক মনে করেন বর্তমান পরিস্থিতিতেই খালেদা জিয়ার বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ আইনে রয়েছে৷

গাড়িতে খালেদা জিয়া হাত উঠিয়ে আছেন
এপর্যন্ত মোট আটবার শর্তসাপেক্ষে খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছেছবি: bdnews24.com

বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার আবেদন বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা মানছেন না খালেদার আইনজীবী এবং বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘আইনমন্ত্রী আইনের অপব্যাখ্যা দিয়েছেন৷'' রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই তাকে বিদেশ যেতে দেয়া হচ্ছে না বলে মনে করেন তিনি৷

আইনমন্ত্রীর ব্যাখ্যার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিকও৷ তিনি মনে করেন, খালেদা জিয়া এখন যে অবস্থায় কারগারের বাইরে আছেন সেই অবস্থায়ই তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে অনুমতি দেয়ার সুযোগ আইনে আছে৷ তবে নির্বাহী সিদ্ধান্ত হিসেবে বিষয়টি ‘প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছাধীন' বলে মনে করেন তিনি৷

পুনর্বিবেচনার কোনো সুযোগ আইনে নাই: আনিসুল হক

This browser does not support the audio element.

আইনমন্ত্রীর ব্যাখ্যা

চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে স্থায়ী মুক্তি দিয়ে বিদেশ পাঠানোর সুযোগ চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন তার ভাই৷ মতামত জানতে আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷ মতামত দেয়ার পর রোববার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, "২০২০ সালের মার্চে খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে তার অসুস্থতার  কথা জানিয়ে যে  প্রথম আবেদন করা হয়েছিলো তার ভিত্তিতে তাকে দুই শর্তে তার দণ্ড স্থগিত করে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেয়া হয়েছিলো ফৌজদারী কার্যবিধির ৪০১(১) ধারায়৷ শর্ত দুইটি হলো- তিনি বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন এবং তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না৷ এর পর তার এই ছয় মাসের মেয়াদ আটবার বাড়ানো হয়েছে৷ ওই ধরায় কোনো আবেদন নিস্পত্তি হলে তা পুনর্বিবেচনার কোনো সুযোগ আইনে নাই। ওই বিষয়টি পুরোপুরি ক্লোজ হয়ে গেছে।”

তিনি বলেন, ‘‘এখন উপায় হলো সাজা স্থগিতের এই আদেশটি বাতিল করে পুনরায় বিবেচনা করা৷ আর তাদের আদালতে যাওয়ার সুযোগ তো সব সময়ই আছে৷''

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেটা বলেছেন সেটা হলো এখন যে আদেশটি আছে সেটা বাতিল করে তাকে (খালেদা জিয়া) যদি কারাগারে নেয়া হয় তাহলে তিনি আদালতে যেতে পারবেন, আবেদন করতে পারবেন। এই অবস্থায় তার আদালতে যাওয়ার কোনো সুযোগ নাই৷ আর এখন তার আদেশ বাতিল করে কারাগারে পাঠানো অমানবিক হবে৷'''

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান সবশেষ আবেদন নিয়ে আগে থেকে খালেদা জিয়ার পরিবারের সঙ্গে সরকারের কোনো কথা বা আলোচনা হয়নি৷''

শর্তমুক্তভাবে মুক্তি দিলেই বিদেশ যেতে পারেন: কায়সার কামাল

This browser does not support the audio element.

‘অপব্যাখ্যা' বলছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী

ব্যারিস্টার কায়সার কামালের মতে খালেদা জিয়াকে যে ৪০১ ধারায় শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দেয়া হয়েছে, সেই ধারায়ই শর্তহীনভাবে মুক্তি দেয়ার বিধান আছে৷ তিনি বলেন, ‘‘আইনমন্ত্রী আইনের অপব্যখ্যা দিচ্ছেন। খালেদা জিয়াকে শর্তমুক্তভাবে মুক্তি দিলেই তিনি চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে পারেন৷''

তিনি দাবি করেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসকরা বলেছেন বাংলাদেশে তার আর চিকিৎসা সুবিধা প্রাপ্তির সুযোগ নেই৷ বলেন, ‘‘এই অবস্থায় তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে না দেয়ার মানে হলো, তার (খালেদা জিয়া) জীবন নাশের একটি পদক্ষেপ। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে এটা করা হচ্ছে৷ এতে প্রমাণিত হয় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুর প্রহর গুনছেন তার প্রতিদ্বন্দ্বী শেখ হাসিনা৷''

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আইনমন্ত্রীর প্রছন্ন ইঙ্গিতে খালেদা জিয়ার মুক্তি আবেদন করা হয়েছিল৷

খালেদা জিয়াকে সবশেষ ঢাকা এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ৯ আগস্ট। তিনি এখনো হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন আছেন।

আইনে সুযোগ আছে: শাহদীন মালিক

আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন," খালেদা জিয়া এখন যে অবস্থায় আছেন সেই অবস্থায় রেখেই তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে অনুমতি দেয়া যায়৷ আইনে সে সুযোগ আছে।”

সরকার কীভাবে সাজা স্থগিতের মেয়াদ এতবার বাড়ালো?: শাহদীন মালিক

This browser does not support the audio element.

খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে ছয় মাসের জন্য নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেয়া হয়৷ এরপর ছয় মাস তা বাড়ানো হয়েছে৷ বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘আইনমন্ত্রী যে বলছেন যে ওই আবেদন নিস্পত্তি হয়ে গেছে আইনে আর কিছু করার নেই। তাহলে আমার প্রশ্ন তার মুক্তির মেয়াদ আরো আট বার বাড়ানো হলো কোন আইনে? যদি ওটা ক্লোজ হয়ে গিয়ে থাকে তাহলে তো তার মুক্তির মেয়াদ ছয় মাসেই শেষ হওয়ার কথা ছিলো৷”

আইনমন্ত্রী ৪০১ ধারা যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তার সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেন এই আইন বিশেষজ্ঞ৷ বলেন, "প্রকৃত পক্ষে ৪০১ ধারার বলা আছে, সরকার শর্ত সাপেক্ষে বা শর্তহীন ভাবে কারো দণ্ড মওকুফ বা স্থগিত করতে পারে৷ খালেদা জিয়ার দণ্ড শর্ত সাপেক্ষে স্থগিত করে মুক্তি দেয়া হয়েছে৷ শর্ত হলো তিনি ঢাকায় চিকিৎসা করাবেন এবং দেশের বাইরে যেতে পারবেন৷ এখন তাকে শর্তহীনভাবে মুক্তি দেয়া যায়৷ অথবা বলে দেয়া যায় তিনি যেখানে প্রয়োজন চিকিৎসা করাতে পারবেন৷ এরজন্য তাকে তো আবার কারাগারে গিয়ে আগের আদেশ বাতিল করে আবেদন করার দরকার নাই৷ তাই যদি করতে হয় তাহলে সরকার কীভাবে তার সাজা স্থগিতের মেয়াদ এতবার বাড়ালো? আর হ্যাঁ সেখানেও একটা শর্ত দেয়া যেতে পারে যে তিনি বিদেশে চিকিৎসা শেষে এক মাসের মধ্যে দেশে ফিরে আসবেন৷''

শাহদীন মালিক অবশ্য বলেন এটি করার ক্ষেত্রে সরকারের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই৷ ‘‘নির্বাহী সিদ্ধান্ত হওয়ায় তা প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছাধীন৷  ম্যান্ডেটরি নয়৷ তা না হলে সব আসামি বলবে আমাকে ছেড়ে দাও। কিন্তু খালেদা জিয়া বৃদ্ধ বয়সে অনেক জটিল রোগে আক্রান্ত। তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ না যেতে দিয়ে সরকার তার জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে,” অভিমত এই আইনজীবীর।

দুর্নীতির মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানো হয়৷ ২০২০ সালের ২৫ মার্চ তাকে নির্বাহী আদেশে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেয়া হয়। এরপর থেকে তার মুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে বাড়িয়ে কারাগারের বাইরে নিজ বাসায় রাখা হচ্ছে তাকে। এপর্যন্ত  মোট আটবার তার শর্তসাপেক্ষ মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

বাংলাদেশ