বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার ৮টি ব্যাংক হিসাবই গত ৭ বছর ধরে জব্দ রয়েছে৷ তবে এ সব হিসাব থেকে তিনি মাসে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা তুলতে পারেন৷ আর গত ৩ বছর ধরে তিনি ভাড়া বাড়িতে থাকেন৷ প্রতিমাসে ভাড়া ২ লাখ টাকা৷ এ কারণে গত ৩ বছর ধরে তিনি বাড়িভাড়া দিতে পারছেন না৷ এই খবর সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিষয়টি খতিয়ে দেখে সে পরিমাণ অর্থ ছাড় দেয়ার নির্দেশ দেন৷ একই সঙ্গে বিষয়টি সামনে এনে খালেদা জিয়া দেশের মানুষের সহানুভূতি নেয়ার চেষ্টা এবং রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করছেন কি না, তাও খতিয়ে দেখতে বলা হয়৷
গুলশানের বাসভবনে ‘অবরুদ্ধ’ খালেদা জিয়া
বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে তাঁর গুলশানের বাসভবনে কার্যত ‘অবরুদ্ধ’ করে রাখা হয়েছে৷ রবিবার তিনি পুলিশের বাধার কারণে বাড়ি থেকে বের হতে পারেননি৷ এই বিষয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: DW/M. Mamun
বাড়ি থেকে বেরোনোর চেষ্টা
‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ বা ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’য় অংশ নিতে রবিবার স্থানীয় সময় দুপুর তিনটার দিকে গুলশানের বাড়ি থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া৷ কিন্তু তাঁর পথরোধ করতে বাড়ির গেটে মানব দেয়াল তৈরি করে পুলিশ এবং ব়্যাবের সদস্যরা৷
ছবি: DW/M. Mamun
আটকে ছিলেন গেটে
পুলিশ এবং ব়্যাব সদস্যদের বাধার মুখে বেশ কিছুক্ষণ গাড়ির মধ্যে বসে ছিলেন খালেদা জিয়া৷ এরপর এক পর্যায়ে গাড়ি থেকে বের হয়ে আসেন তিনি৷
ছবি: DW/M. Mamun
ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
গাড়ি থেকে বেরিয়ে পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন বিরোধী দলীয় নেত্রী৷ এসময় তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন৷ উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে খালেদা বলেন, ‘‘দেশ আজ কোথায় যাচ্ছে? এরা সবাই গোপালগঞ্জের৷ গোপালগঞ্জের নামই বদলে যাবে৷’’ দৈনিক প্রথম আলো খালেদার এই বক্তব্য প্রকাশ করেছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
সোমবারও চলবে কর্মসূচি
নিরাপত্তা বাহিনীর বাধার মুখে শেষ পর্যন্ত বাড়ি থেকে বের হতে পারেননি খালেদা জিয়া৷ তবে তিনি বাড়ির মধ্যে ফিরে যাবার আগে উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, ‘‘এই সরকার জালেম এবং অগণতান্ত্রিক৷ এই সরকারের পতন হবেই৷’’ এসময় তিনি ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ সোমবারও চলবে বলে ঘোষণা দেন৷
ছবি: DW/M. Mamun
বালুভর্তি ট্রাকের ব্যারিকেড
খালেদা জিয়ার বাড়ির চারপাশে গত কয়েকদিন ধরেই পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছিল৷ শনিবার তাঁর বাড়ির সামনের রাস্তায় সাধারণ ব্যারিকেডের পাশাপাশি বালুভর্তি ট্রাকও যোগ করা হয়৷ কয়েকটি ট্রাক এমনভাবে রাখা হয়, যাতে খালেদার গাড়ি বাড়ির সামনের রাস্তা থেকে বের হতে না পারে৷ আমাদের ঢাকা প্রতিনিধি হারুন উর রশিদ স্বপন জানান, খালেদা জিয়াকে কার্যত গুলশানের বাড়িতে ‘অবরুদ্ধ’ করে রাখা হয়েছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
পুলিশের বক্তব্য
খালেদা জিয়াকে বাড়ির বাইরে যেতে না দেয়া প্রসঙ্গে পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নয়াপল্টনে কোনো জমায়েত বা সমাবেশের অনুমতি নেই৷ তাই বিরোধী দলীয় নেত্রীকে সেখানে যেতে দেয়া হবে না৷ আর তাঁর নিরাপত্তার বিষয়টিও পুলিশের দেখার আছে৷’’
ছবি: DW/M. Mamun
প্রাণহানি
এদিকে, ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’কে ঘিরে সংঘর্ষ এবং বিস্ফোরণে ঢাকায় কমপক্ষে দুই ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন৷ রবিবার সকাল এগারোটার দিকে ঢাকার মালিবাগে পুলিশ আর জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে প্রাণ হারান মনসুর আলী৷ অন্যদিকে, কমলাপুরে তল্লাশির সময় বোমার বিস্ফোরণে নিহত হন নিরাপত্তাকর্মী আবুল কাশেম৷
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Images
সুপ্রিমকোর্টে তাণ্ডব
এদিকে, ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’য় যোগ দিতে সুপ্রিমকোর্টের বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা কোর্টের মূল গেট দিয়ে মিছিল করে নয়াপল্টনে যেতে চাইলে পুলিশ তাদের জল কামান ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে আটকে দেয়৷ এরপর তারা ভিতরে গিয়ে পুলিশের প্রতি ইট পাটকেল ছোড়ে৷ এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগের একদল সমর্থক সুপ্রিমকোর্ট চত্বরে ঢুকে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়৷ সেখানে কয়েকজন আইনজীবী আহত হন৷
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Images
বিরল সংঘর্ষ
বলাবাহুল্য, সাম্প্রতিক সময়ে সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও বাইরে থেকে কোন দলের নেতাকর্মীরা সেখানে গিয়ে সংঘর্ষে অংশ নেয়নি৷ সেক্ষেত্রে রবিবার আওয়ামী লীগ সমর্থকদের আদালত চত্বরে প্রবেশ করে সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়াটা বিরল ঘটনা বলে অবিহিত করেন আমাদের ঢাকা প্রতিনিধি৷
ছবি: Reuters
চুপচাপ নয়াপল্টন
‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ কর্মসূচির আওতায় গোটা দেশ থেকে সক্ষম নেতাকর্মীদের ২৯ ডিসেম্বর, রবিবার বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে হাজির হওয়ার আহ্বান জানান খালেদা জিয়া৷ কিন্তু রবিবার বিএনপি কার্যালয়ের সামনে বিএনপির নেতাকর্মীরা জড়ো হতে পারেনি৷ কিছু নেতাকর্মী কার্যালয়ের সামনে যেতে চাইলে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ ফলে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে দৃশ্যত পুলিশ এবং সাংবাদিক ছাড়া কেউ ছিল না৷
ছবি: DW/M. Mamun
পাঁচ জানুয়ারি নির্বাচন
উল্লেখ্য, আগামী পাঁচ জানুয়ারি বাংলাদেশে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট এই নির্বাচন বর্জন করায় এবার ১৫৪টি আসনে ভোটাভুটির দরকার হচ্ছে না৷ এসব আসনে একজন করে প্রার্থী রয়েছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কমনওয়েলথ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ না করার ঘোষণা দিয়েছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
11 ছবি1 | 11
খালেদা জিয়ার আয়কর উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান ডয়চে ভেলেকে জানান, মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশের কথা জানার পর মঙ্গলবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন তিনি৷ রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান দেশে নেই৷ এরপর রাজস্ব বোর্ডের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেলের মহাপরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি৷ আহমেদ আজম খান বলেন, মহাপরিচালক তাঁকে জানিয়েছেন যে খালেদা জিয়ার হিসাব থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ উত্তোলনের ব্যাপারে নির্দেশনার বিষয়টি তারাও সংবাদ মাধ্যমে জানতে পেরেছেন৷ এখনো লিখিত কোনো নির্দেশ পাননি৷
এদিকে বিএনপি-র স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘‘২০০৭ সালে অবৈধ ও অসাংবিধানিক সরকার মিথ্যা মামলায় খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করে তার ব্যাংক হিসাব জব্দ করে৷ তখন বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকেও গ্রেফতার করে তার ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছিল৷ ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগেই তা খুলে দেয়া হয়৷ কিন্তু জাতীয় রাজস্ববোর্ড খালেদা জিয়ার কোনো ব্যাংক হিসাব এখনো খুলে দেয়নি৷'' তিনি অবিলম্বে খালেদা জিয়ার ব্যাংক হিসাব খুলে দেয়ার দাবি জানান৷
বেগম খালেদা জিয়া ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি হারানোর পর ২০১০ সালের ডিসেম্বর থেকে গুলশানের ৭৯ নম্বর রোডের ১ নম্বর বাড়িটি বসবাসের প্রতি মাসে দুই লাখ টাকায় ভাড়া নেন৷ আহমেদ আজম খান জানান, ২০১০ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে বেগম খালেদা জিয়ার বাড়িভাড়া ও সাংসারিক খরচসহ মোট ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা নিয়মিত ভিত্তিতে ব্যাংক থেকে উত্তোলন প্রয়োজন৷ কিন্তু তিনি প্রতিমাসে ব্যাংক থেকে তুলতে পারেন মাত্র ৫০ হাজার টাকা৷ তাই তার ৩ বছরের বাড়িভাড়া বাকি আছে৷