1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র কি এবার বৈধ হবে?

সমীর কুমার দে ঢাকা
২২ মে ২০১৯

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শপথ না নেওয়ায় শূন্য হওয়া বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে অংশ নিতে খালেদা জিয়াসহ পাঁচজন বুধবার মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন৷ কিন্তু এবার কি খালেদার মনোনয়নপত্র বৈধ হবে?

Khaleda Zia Bangladesch
ছবি: Bdnews24.com

পাঁচ মাস আগে সম্পন্ন হওয়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বৈধ হয়নি৷ তাহলে এর মধ্যে কি রাজনীতি বা আদালতে এমন কিছু ঘটেছে যে, খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র এবার বৈধ হবে? কেউ কেউ অবশ্য বিষয়টিকে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা মনে করছেন৷ তবে বিএনপির এক আইনজীবীর দাবি, সমঝোতা নয়, আইনগতভাবেই খালেদা জিয়ার মনোনয়ন এবার বৈধ হবে৷

খালেদা জিয়া ছাড়া আর যাঁরা মনোনয়নপত্র নিয়েছেন তাঁরা হলেন বগুড়া জেলা বিএনপির আহবায়ক সাবেক এমপি জিএম সিরাজ, সাবেক জেলা সভাপতি ও বগুড়া পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট একেএম মাহবুবুর রহমান, সাবেক সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন চাঁন৷

আগামী ২৪ জুন এই উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ বৃহস্পতিবার রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন৷

বিএনপির দলীয় সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার মনোনয়ন বৈধ না হলে বিএনপির প্রার্থী হবেন জিএম সিরাজ৷ সেভাবেই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান৷ মঙ্গলবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বগুড়া জেলা বিএনপির নেতাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠক করেন তারেক রহমান৷ তিনি এই ৫ জনকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করার নির্দেশ দেন৷ যদিও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বুধবার দুপুরে সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছেন, ‘‘এখনো দল থেকে সিদ্ধান্ত হয়নি৷''

দলের হাইকমান্ড ৫ জনকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে বলেছে তাই করেছি:জিএম সিরাজ

This browser does not support the audio element.

বগুড়া জেলা বিএনপির আহবায়ক জিএম সিরাজ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দলের হাইকমান্ড আমাদের ৫ জনকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে বলেছে, তাই আমরা করেছি৷ এখানে আমাদের মূল প্রার্থী খালেদা জিয়া৷ কোনো কারণে তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল হলে আমি দলের প্রার্থী৷ এভাবে ৫ জনকে সিলেক্ট করা হয়েছে৷''

কিছুদিন আগেই তো খালেদা জিয়ার মনোনয়ন বাতিল হলো, তাহলে এখন আবার কেন তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে? এই প্রশ্নের জবাবে সিরাজ বলেন, ‘‘এটা হাইকমান্ড বলতে পারবে, আমি দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলছি৷''

কেমন ভোট হবে? এর জবাবে তিনি বলেন, ‘‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ও বগুড়া সদরে ভালো ভোট হয়েছে৷ এখানে তারা কেটে নেয়নি৷ কারণ এমন হতে পারে যে, তাদের প্রার্থী ছিল না৷ এখনও এখানে ভালো ভোট হবে বলেই আমি বিশ্বাস করি৷ আর একটা আসন তো এমন কিছু না৷ আওয়ামী লীগ এখানে ছাড়ও দিতে পারে৷ আবার এখানে ইভিএমে ভোট হবে৷ ফলে ইভিএম জাস্টিফাইড করার সুযোগও বলতে পারেন৷ আওয়ামী লীগকে আমরা যতই নিন্দা করি, তাদের বিরোধিতা করি, কৌশলে তো তারাই এগিয়ে আছে, এটাতে তো কোনো সন্দেহ নেই৷ তাই আমার আশা এখানে ভোট সুষ্ঠুই হবে৷''

খালেদার বিরুদ্ধে মামলাগুলোর বর্তমান অবস্থা

গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়ার জন্য তিনটি আসন থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছিল৷ কিন্তু নির্বাচন কমিশন তাঁর মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করলে কোর্টে আবেদন করলে বিভক্ত আদেশ আসে৷

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় খালেদা জিয়া ন্যায়বিচার পাননি: ব্যারিস্টার কামাল

This browser does not support the audio element.

ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার প্রধান আইনজীবী ও বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘‘৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে যখন কারাগারে পাঠানো হয় তখন তাঁর বিরুদ্ধে ৩৬টি মামলা ছিল৷ পরে আরো চারটি মামলা যুক্ত করা হয়েছে৷ এই মুহূর্তে খালেদা জিয়া চারটি মামলা বাদে সবগুলো মামলায় জামিনে আছেন৷ এই চারটির মধ্যে দু'টির নিম্ন আদালত থেকে রায় হয়েছে, অন্য দু'টি মানহানির মামলা৷ মানহানির মামলা দু'টির শুনানি আজই (বুধবার) হওয়ার কথা ছিল৷ কিন্তু একেবারেই অন্যায়ভাবে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতের কাছে শুনানির জন্য এক মাস সময় চান৷ অথচ এই মামলা দু'টি ব্যক্তির মামলা, রাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই৷ এছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট্রের মামলা হাইকোর্টে শুনানির অপেক্ষায় আছে৷ আর জিয়া অর্ফানেজ ট্রাস্টের মামলা আপিল বিভাগে আছে৷ নিম্ন আদালতের কাগজপত্র দুই মাসের মধ্যে আপিল বিভাগে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত৷ এই দু'টি মামলায়ও আমরা জামিন শুনানি করার জন্য প্রস্তুত রয়েছি৷''

ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনের সময় খালেদা জিয়া ন্যায়বিচার পাননি বলে মনে করেন ব্যারিস্টার কামাল৷ তিনি বলেন, ‘‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় খালেদা জিয়া ন্যায়বিচার পাননি৷ কারণ আইনে সুস্পষ্ট বলা আছে, উচ্চ আদালত থেকে কেউ দুই বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্ত হলে তিনি পরবর্তী ৫ বছর নির্বাচন করতে পারবেন না৷ খালেদা জিয়ার সাজা ২ বছরের বেশি এটা সত্যি৷ কিন্তু তিনি তো সর্বোচ্চ আদালত থেকে দোষী সাব্যস্ত হননি৷ উচ্চ আদালতে মামলা চলাটাও আইনের অংশ৷ আদেশ না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে সাজাপ্রাপ্ত বলা যাবে না৷ তখন তাঁর মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছিল এই গ্রাউন্ডে যে, উনি ভোটের দিন নির্বাচনে বাধা দিতে পারেন? অথচ উনি কারাগারে৷ এই কারণে বলি, নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে তাদের গ্রহণযোগ্যতা অনেকাংশেই নষ্ট করে ফেলেছে৷ এখন কিছু রিকভার করার সুযোগ এসেছে তাদের সামনে৷ খালেদা জিয়ার মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করে তারা এই কাজটি শুরু করতে পারে৷'' 

৫ মাসের মধ্যে এমন কিছু ঘটেনি, যাতে খালেদা জিয়ার মনোনয়ন বৈধ হতে পারে:শান্তনু মজুমদার

This browser does not support the audio element.

বিশ্লেষকের মত

হঠাৎ করে আবারও কেন খালেদা জিয়াকে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে? এর মধ্যে এমন কি কিছু ঘটেছে, যাতে খালেদা জিয়ার মনোনয়ন বৈধ হতে পারে? জানতে চাইলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক শান্তনু মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘না, এই ৫ মাসের মধ্যে এমন কিছু ঘটেনি, যাতে নতুন করে খালেদা জিয়ার মনোনয়ন বৈধ হতে পারে৷'' তাহলে কেন খালেদা জিয়াকে প্রার্থী করা হয়েছে? জবাবে তিনি বলেন, ‘‘বিএনপি আইনজীবী ভারাক্রান্ত একটি দল৷ তাঁরা ভুল করার কথা না৷ আমার মনে হয় খালেদা জিয়ার নামটি আলোচনায় রাখার জন্যই তাঁরা এই কাজটি করেছেন৷ আর কোনো সমঝোতা ভেতরে হচ্ছে কিনা, সেটা তো বাইরে থেকে বলা মুশকিল৷ তাই সামনে কী হয় তার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে৷''

আইন সচিবকে আইনি নোটিশ

বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিচার কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতর করতে চেয়ে সরকারের জারি করা প্রজ্ঞাপন বাতিল চেয়ে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী৷ মঙ্গলবার রেজিষ্ট্রি ডাকযোগে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল এ নোটিশ পাঠান৷ ২৪ ঘণ্টার সময় দিয়ে আইন সচিবকে এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে৷ এ সময়ের মধ্যে জবাব না পেলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে৷

এ ব্যাপারে ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘‘গত ১২ মে আইন মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে৷ ওই প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, খালেদা জিয়ার মামলা শুনানির জন্য পুরাতন ঢাকার সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আদালত (বিশেষ জজ আদালত-৯) স্থানান্তর করে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ সেই প্রজ্ঞাপন খালেদা জিয়া ও আমরা বেআইনি বলে মনে করি৷ কারণ, সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, যে-কোনো বিচার হতে হবে উন্মুক্তভাবে৷ কারাগারের একটি কক্ষে উন্মুক্তভাবে বিচার হতে পারে না৷ ফলে এই প্রজ্ঞাপন সংবিধান বিরোধী৷ কোথায় কারাগার স্থানান্তরিত হতে পারে, তা ফৌজদারি কার্যবিধি আইনে উল্লেখ আছে৷ সুতরাং সংবিধান ও ফৌজদারি আইনের বিরুদ্ধে সরকার অবস্থান নিয়েছে৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ