খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যের অবস্থা নিয়ে উৎকণ্ঠা বাড়ছে৷ তার চিকিৎসক এবং পরিবারের লোকজন এ বিষয়ে কতটা জানেন? সরকারের ভেতরের ভাবনাটা কী? নতুন সিদ্ধান্ত কি আসতে পারে?
বিজ্ঞাপন
ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসক দলে ১৫ জন চিকিৎসক থাকলেও তারা কেউ তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে সরাসরি কথা বলছেন না৷ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও কোনো ব্রিফিং করছে না৷ ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকে বার বার চেষ্টা করেও চিকিৎসা নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি৷ তবে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এবং বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলতে গেলে সার্বক্ষণিক এভার কেয়ার হাসপাতালে অবস্থান করছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘খালেদা জিয়া এখন ক্রনিক কিডনি ডিজিজে যেমন ভুগছেন তেমনি ক্রনিক লিভার ডিজিজেও ভুগছেন৷ এখন তার লিভারের সমস্যা বেশি হচ্ছে৷ যার কারণে জিআই (পরিপাকতন্ত্র) ব্লিডিং বেশি হচ্ছে৷ এটা কমাতে মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে বুধবার আবারো এন্ডোসকপি করা হয়েছে৷ আর এই পরিপাকতন্ত্রে রক্তক্ষরণের কারণে তার শারীরিক দুর্বলতা বেড়ে গেছে৷ তিনি কষ্ট পাচ্ছেন৷ চিকিৎসকরা এই ব্লিডিং স্থায়ীভাবে বন্ধের চেষ্টা করছেন৷’’
খালেদা জিয়ার চার বছর
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সাজাপ্রাপ্ত হন খালেদা জিয়া৷ এরপর থেকে তিনি কারাগার, হাসপাতাল ও বাসায় আছেন৷
ছবি: AFP/Getty Images
মামলার রায়
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত৷ একই মামলায় তারেক রহমানসহ অন্য আসামিদের ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়৷ পরে আপিলে খালেদার কারাদণ্ডের মেয়াদও বেড়ে ১০ বছর হয়৷ সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৮ সালের ৩ জুলাই ঢাকার রমনা থানায় মামলাটি করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন৷ ছবিতে খালেদা জিয়াকে আদালতে যেতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A.M. Ahad
অভিযোগপত্রে যা বলা হয়েছিল
১৯৯১ সালে সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে এতিমদের সহায়তায় গঠিত ‘প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিলে’ চার কোটি ৪৪ লাখ ৮১ হাজার ২১৬ টাকা জমা হয়েছিল৷ কিন্তু ১৯৯৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঐ অর্থ দেশের প্রতিষ্ঠিত কোনো এতিমখানায় দেয়া হয়নি৷ পরে ‘জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’ গঠন করে সেখানে দুই কোটির বেশি টাকা ট্রান্সফার করে সেটা আসামিরা আত্মসাত করেন বলে মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়েছিল৷
ছবি: bdnews24.com
রায় ঘোষণার দিনটি যেমন ছিল
পুরো রাজধানীতে পুলিশের সতর্ক পাহারা ছিল৷ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়, হাইকোর্ট ও বকশিবাজারে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল৷ দুপুর ১২টায় গুলশানের বাসা থেকে বকশিবাজারের আদালতের উদ্দেশ্যে রওনা হন খালেদা জিয়া৷ পথে কাকরাইল ও চাঁনখারপুলে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়৷ এই সময় বিএনপির বেশ কয়েকজন কর্মীকে আটক করা হয়৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
আদালত থেকে কারাগারে
রায় ঘোষণার পর খালেদা জিয়াকে নাজিমুদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়৷ ২০১৬ সালে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা ঐ কারাগারটিকে ‘সাবজেল’ ঘোষণা করেছিল সরকার৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
কারাগার থেকে হাসপাতালে
চিকিৎসকদের পরামর্শে ২০১৮ সালের ৬ অক্টোবর খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল৷ সেখানে টানা এক মাস দুই দিন চিকিৎসা নেয়ার পর ৮ নভেম্বর তাকে কারাগারে ফিরিয়ে নেয়া হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images
বিএসএমএমইউতে যেতে আপত্তি
২০১৯ সালের ১০ মার্চ খালেদার চিকিৎসার জন্য বিএসএমএমইউ প্রস্তুত করা হয়েছিল৷ কিন্তু তিনি সেখানে যেতে রাজি হননি৷ খালেদা জিয়াকে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার দাবি জানিয়েছিল বিএনপি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ANN/The Daily Star
অবশেষে আবারও বিএসএমএমইউ
কারাগারে অসুস্থ হওয়ায় ২০১৯ সালের ১ এপ্রিল খালেদা জিয়াকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷ ২০২০ সালের ২৫ মার্চ মুক্তির আগ পর্যন্ত তিনি সেখানেই ছিলেন৷
ছবি: Bdnews24.com
আবারও কারাদণ্ডের রায়
২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াসহ চার জনকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়৷ ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় মামলাটি করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন৷ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ আনা হয় মামলায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Jahan
অবশেষে মুক্তি
শর্তসাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি পেয়ে ২৫ মাস কারাভোগের পর ২০২০ সালের ২৫ মার্চ মুক্তি পান খালেদা জিয়া৷ একদিন আগে খালেদাকে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেয়ার সরকারি সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক৷ শর্ত হলো এই সময়ে খালেদাকে ঢাকায় নিজের বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে৷ তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না৷
ছবি: bdnews24
নির্বাহী আদেশে মুক্তি
খালেদা জিয়ার বয়স ও অসুস্থতা বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার প্রধান হিসেবে নির্বাহী আদেশে তাকে মুক্তি দিয়েছেন বলে সেই সময় জানিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের৷
ছবি: Asif Mahmud Ove
চার দফা সময় বৃদ্ধি
২০২০ সালের ২৫ মার্চ খালেদা জিয়াকে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেয়া হয়েছিল৷ এরপর চার দফায় তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়৷ ছবিতে খালেদা জিয়ার বাড়ি দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: DW/S. Hossain
এটা এখন আইনের ব্যাপার: প্রধানমন্ত্রী
১৭ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘খালেদা জিয়াকে যে কারাগার থেকে বাসায় থাকতে দিয়েছি, চিকিৎসা করতে দিয়েছি এটাই কি বেশি নয়?’’ তিনি বলেন, ‘‘আমার হাতে যেটুকু পাওয়ার, সেটুকু আমি দেখিয়েছি৷ ... এখানে আমার কিছু করার নাই৷ আমার যেটা করার, আমি করেছি৷ এটা এখন আইনের ব্যাপার৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/FARJANA K. GODHULY
স্মারকলিপি
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে মঙ্গলবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের কাছে স্মারকলিপি দেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা৷
ছবি: bdnews24
তিনবার হাসপাতালে
২০২০ সালের মার্চে মুক্তি পাওয়ার পর থেকে এ নিয়ে তিনবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন খালেদা জিয়া৷ এর মধ্যে গত এপ্রিলে তিনি করোনা ভাইরাসেও আক্রান্ত হয়েছিলেন৷
ছবি: bdnews24.com
খালেদা কী অসুখে ভুগছেন
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বৃহস্পতিবার ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘খালেদা জিয়া এখন ক্রনিক কিডনি ডিজিজে যেমন ভুগছেন তেমনি ক্রনিক লিভার ডিজিজেও ভুগছেন৷ এখন তার লিভারের সমস্যা বেশি হচ্ছে৷ যার কারণে জিআই (পরিপাকতন্ত্র) ব্লিডিং বেশি হচ্ছে৷’’ তিনি বলেন, ‘‘খালেদা জিয়ার আগে থেকেই আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস আছে৷ আর রাইট হার্ট ফেইলিউরসহ আরো কিছু শারীরিক অসুস্থতা বা জটিলতা আছে৷’’
ছবি: Bdnews24.com
স্লো পয়জনিং?
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘...একটি সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত কারাগারে দুই বছরের বেশি সময় আটক রাখা হয়েছিল৷ পরে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল, সেখানে চিকিৎসা দেওয়া হয়নি৷ এখন অনেকের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, সেই সময়ে খালেদা জিয়াকে কোনো স্লো পয়জনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছিল কি না, আমরা পরিষ্কার করে জানতে চাই৷’’
ছবি: Asif Mahmud Ove
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সংবাদ সম্মেলন
খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী৷ এরপর বুধবার সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘‘আমি এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়ে খালেদা জিয়াকে দেখে এসেছি৷ যা দেখেছি, সাম্প্রতিককালে এত মর্মান্তিক ঘটনা আমি দেখিনি৷ খালেদা জিয়া কতক্ষণ, কয় দিন, কয় মিনিট বাজবেন, তা আমি বলতে পারব না৷ এটা বলতে পারি, তিনি ক্রান্তিকালে আছেন, তাকে হত্যা করা হচ্ছে৷’’
ছবি: DW/S. Hossain
17 ছবি1 | 17
খালেদা জিয়ার এই ব্যক্তিগত চিকিৎসক দাবি করেন, খালেদা জিয়ার আগে থেকেই আর্থরাইটিস বা ডায়াবেটিস আছে৷ আর রাইট হার্ট ফেইলিউর বা ডিআরএ -২ সহ আরো কিছু শারীরিক অসুস্থতা বা জটিলতা আছে তার৷ খালেদা জিয়ার চিকিৎসা এবং ফলোআপ যেভাবে হওয়া উচিত ছিল সেভাবে হয়নি৷ তাকে চিকিৎসা না করানোর কারাণেই পরবর্তীতে এই জটিলতাগুলো দেখা গেছে৷
তিনি বলেন, ‘‘হাসপাতালে যে চিকিৎসক আছেন এবং হাসপাতালের বাইরেও দেশের সেরা যে চিকিৎসকরা আছেন, তারা এখন প্রাণপন চেষ্টা করছেন খালেদা জিয়াকে দেশে সবচেয়ে ভালো, মানসম্পন্ন চিকিৎসা দিতে৷ তবে এর পরবর্তী পর্যায়ে আরো অ্যাডভান্স চিকিৎসা হতে পারে৷ অ্যাডভান্স লিভার ডিজিজের যেসমস্ত সেন্টার আছে অ্যামেরিকাতে সেখানে নেয়ার প্রয়োজন হতে পারে৷ এজন্য তার চিকিৎসক এবং মেডিকেল বোর্ড তাকে দেশের বাইরে নেয়ার পরামর্শ গত জুন মাস থেকে দিচ্ছেন৷ বুধবারও দিয়েছেন৷’’
তার আফসোস, ‘‘যে মানুষটা আলিয়া মাদ্রাসার এজলাসে হেঁটে হাজির হয়েছিলেন, সেই মানুষটা এখন দুই জনের সহায়তা ছাড়া চলাফেরা করতে পারেন না৷’’
খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম হাসপাতালে খালেদা জিয়াকে দেখতে যান প্রায়ই৷ সর্বশেষ বুধবার তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়েছিলেন৷ তিনি বলেন, ‘‘ওইদিন খালেদা জিয়াকে আমি এক মিনিটের জন্য দেখতে পেয়েছি৷ তাকে অপারেশন থিয়েটারের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল৷ তখন আমি দেখতে পাই৷ তার সাথে তখন কোনো কথা বলার সুযোগ পাইনি৷’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘তার চিকিৎসকরা বলেছেন তাকে অ্যামেরিকায় নিতে হবে৷ আপনারা তা তো পত্রিকায় দেখেছেন৷ আমরা তাকে দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য নেয়ার চেষ্টা করছি৷ আমরা এবং আমার ভাই মিলে তিনবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছি৷ তিনি তো কোনো সাড়া দিচ্ছেন না৷ তার সাথে আমার ভাই দেখা করেছেন৷’’
এখনই যদি ব্যবস্থা না নেয়া হয় তাহলে তিনি এই মাসও টিকবেন কিনা বলা মুশকিল: ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী
চিকিৎসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘এভারকেয়ারে তার চিকিৎসা হচ্ছে৷ চিকিৎসকরা বলেছেন তার যে রোগ হয়েছে এখানে তার চিকিৎসা সম্ভব নয়৷ তাকে অ্যামেরিকার কেন্টপে নিতে হবে৷ নতুবা তাকে এভাবেই থাকতে হবে যতদিন থাকে৷’’
খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম জানান, ‘‘তার ছেলে (তারেক রহমান) লন্ডনে আছেন৷ তার স্ত্রী-ও ডাক্তার৷ তারা সেখানেও ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করছেন৷’’
জানা গেছে, খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডে তার যেসব সমস্যা রয়েছে, তার প্রত্যেকটির ক্ষেত্রেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা রয়েছেন৷ শুধু হাসপাতালের নয়, দেশের সেরা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও তার চিকিৎসায় যুক্ত আছেন বলে জানান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন৷ তার এন্ডোস্কোপির ক্ষেত্রেও বাইরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ নেয়া হচ্ছে৷ জানা গেছে, তারেক রহমান লন্ডনে চিকিৎসকদের পরাশর্মও নিচ্ছেন৷ খালেদা জিয়ার সব ধরনের রিপোর্ট সেখানে পাঠানো হচ্ছে৷ আর ডা. জাহিদ অ্যামেরিকার চিকিৎসকদের সাথে পরামর্শ করছেন৷
আমরা আশাবাদী সরকার যথাসময়ে অনুমতি দেবে: শামসুজ্জামান দুদু
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীও খালেদা জিয়াকে দেখতে যান গত মঙ্গলবার৷ তিনি বলেন, ‘‘তার অবস্থা খুবই ক্রিটিক্যাল৷ তার রক্তক্ষরণ হচ্ছে মুখ দিয়ে, পরিপাকতন্ত্র দিয়ে৷ তার চিকিৎসা এখানে হবে না৷ তাকে দেশের বাইরে পাঠানো উচিত বলে আমি মনে করি৷ এখনই যদি ব্যবস্থা না নেয়া হয়, তাহলে তিনি এই মাসও টিকবেন কিনা বলা মুশকিল৷’’
খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর দাবিতে বিএনপি ১০ দিনব্যাপী কর্মসূচি পালন করছে৷ যদি সরকার অনুমতি না দেয়, তাহলে এই কর্মসূচি কোন দিকে যেতে পারে জানাতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘‘আমরা আশাবাদী সরকার যথাসময়ে অনুমতি দেবে৷ তাকে নিয়ে সরকার কোনো রিস্ক নেবে না৷ তারা যে আইনের কথা বলছে এটা রাজনৈতিক কারণে বলছে৷ এর আগেও কারাগারে আটক এবং দণ্ডপ্রাপ্ত একাধিক ব্যক্তিকে দেশের বাইরে চিকিৎসাসেবা নিতে যাওয়ার অনুমতি দেয়ার নজির আছে৷’’
আইনের বাইরেও তিনি বেশি সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন: মাহবুব উল আলম হানিফ
তার এই বক্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘‘তিনি কোন দেশে, কোন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে চান খালেদা জিয়ার চিকিৎসকরা কিন্তু কিছুই সে ব্যাপারে বলেননি৷ তার দণ্ড স্থগিত করে দেশের সেরা হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে৷ দেশের বাইরেও চিকিৎসকের সাথে পরামর্শের সুযোগ আছে৷ তিনি দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি৷ আইনের বাইরেও তিনি বেশি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন৷ কারাগারেও তাকে গৃহপরিচারিকা রাখার সুযোগ দেয়া হয়েছিল৷ বিএনপি এখন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে রাজনীতি করছে৷’’
দুর্নীতির মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হলে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানো হয়৷ ২০১৯ সালের ১ এপ্রিল থেকে তিনি বিএসএমএমইউর প্রিজন সেলে ছিলেন৷ ২০২০ সালের ২৫ মার্চ খালেদা জিয়া শর্ত সাপেক্ষে ৬ মাসের জন্য মুক্তি পেয়ে বাসায় ফেরেন৷ এরপর থেকে আবেদনের ভিত্তিতে তার এই মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে৷
গত ১৩ নভেম্বর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাকে৷ সেদিন রাত থেকেই তিনি সিসিইউতে আছেন৷ তার বয়স এখন ৭৬ বছর৷