1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা: যতটুকু জানা যায়

২৬ নভেম্বর ২০২১

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যের অবস্থা নিয়ে উৎকণ্ঠা বাড়ছে৷ তার চিকিৎসক এবং পরিবারের লোকজন এ বিষয়ে কতটা জানেন? সরকারের ভেতরের ভাবনাটা কী? নতুন সিদ্ধান্ত কি আসতে পারে?

ছবি: Bdnews24.com

ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসক দলে ১৫ জন চিকিৎসক থাকলেও তারা কেউ তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে সরাসরি কথা বলছেন না৷ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও কোনো ব্রিফিং করছে না৷ ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকে বার বার চেষ্টা করেও চিকিৎসা নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি৷ তবে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এবং বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলতে গেলে সার্বক্ষণিক এভার কেয়ার হাসপাতালে অবস্থান করছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘খালেদা জিয়া এখন ক্রনিক কিডনি ডিজিজে যেমন ভুগছেন তেমনি ক্রনিক লিভার ডিজিজেও ভুগছেন৷ এখন তার লিভারের সমস্যা বেশি হচ্ছে৷ যার কারণে জিআই (পরিপাকতন্ত্র) ব্লিডিং বেশি হচ্ছে৷ এটা কমাতে মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে বুধবার আবারো এন্ডোসকপি করা হয়েছে৷ আর এই পরিপাকতন্ত্রে রক্তক্ষরণের কারণে তার শারীরিক দুর্বলতা বেড়ে গেছে৷ তিনি কষ্ট পাচ্ছেন৷ চিকিৎসকরা এই ব্লিডিং স্থায়ীভাবে বন্ধের চেষ্টা করছেন৷’’

খালেদা জিয়ার এই ব্যক্তিগত চিকিৎসক দাবি করেন, খালেদা জিয়ার আগে থেকেই আর্থরাইটিস বা ডায়াবেটিস আছে৷ আর রাইট হার্ট ফেইলিউর বা ডিআরএ -২ সহ আরো কিছু শারীরিক অসুস্থতা বা জটিলতা আছে তার৷ খালেদা জিয়ার চিকিৎসা এবং ফলোআপ যেভাবে হওয়া উচিত ছিল সেভাবে হয়নি৷ তাকে চিকিৎসা না করানোর কারাণেই পরবর্তীতে এই জটিলতাগুলো দেখা গেছে৷

তিনি বলেন, ‘‘হাসপাতালে যে চিকিৎসক আছেন এবং হাসপাতালের বাইরেও দেশের সেরা যে চিকিৎসকরা আছেন, তারা এখন প্রাণপন চেষ্টা করছেন খালেদা জিয়াকে দেশে সবচেয়ে ভালো, মানসম্পন্ন চিকিৎসা দিতে৷ তবে এর পরবর্তী পর্যায়ে আরো অ্যাডভান্স চিকিৎসা হতে পারে৷ অ্যাডভান্স লিভার ডিজিজের যেসমস্ত সেন্টার আছে অ্যামেরিকাতে সেখানে নেয়ার প্রয়োজন হতে পারে৷ এজন্য তার চিকিৎসক এবং মেডিকেল বোর্ড তাকে দেশের বাইরে নেয়ার পরামর্শ গত জুন মাস থেকে দিচ্ছেন৷ বুধবারও দিয়েছেন৷’’

তার আফসোস, ‘‘যে মানুষটা আলিয়া মাদ্রাসার এজলাসে হেঁটে হাজির হয়েছিলেন, সেই মানুষটা এখন দুই জনের সহায়তা ছাড়া চলাফেরা করতে পারেন না৷’’

খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম হাসপাতালে খালেদা জিয়াকে দেখতে যান প্রায়ই৷ সর্বশেষ বুধবার তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়েছিলেন৷ তিনি বলেন, ‘‘ওইদিন খালেদা জিয়াকে আমি এক মিনিটের জন্য দেখতে পেয়েছি৷ তাকে অপারেশন থিয়েটারের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল৷ তখন আমি দেখতে পাই৷ তার সাথে তখন কোনো কথা বলার সুযোগ পাইনি৷’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘তার চিকিৎসকরা বলেছেন তাকে অ্যামেরিকায় নিতে হবে৷ আপনারা তা তো পত্রিকায় দেখেছেন৷ আমরা তাকে দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য নেয়ার চেষ্টা করছি৷ আমরা এবং আমার ভাই মিলে তিনবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছি৷ তিনি তো কোনো সাড়া দিচ্ছেন না৷ তার সাথে আমার ভাই দেখা করেছেন৷’’

এখনই যদি ব্যবস্থা না নেয়া হয় তাহলে তিনি এই মাসও টিকবেন কিনা বলা মুশকিল: ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী

This browser does not support the audio element.

চিকিৎসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘এভারকেয়ারে তার চিকিৎসা হচ্ছে৷ চিকিৎসকরা বলেছেন তার যে রোগ হয়েছে এখানে তার চিকিৎসা সম্ভব নয়৷ তাকে অ্যামেরিকার কেন্টপে নিতে হবে৷ নতুবা তাকে এভাবেই থাকতে হবে যতদিন থাকে৷’’

খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম জানান, ‘‘তার ছেলে (তারেক রহমান) লন্ডনে আছেন৷ তার স্ত্রী-ও ডাক্তার৷ তারা সেখানেও ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করছেন৷’’

জানা গেছে, খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডে তার যেসব সমস্যা রয়েছে, তার প্রত্যেকটির ক্ষেত্রেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা রয়েছেন৷ শুধু হাসপাতালের নয়, দেশের সেরা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও তার চিকিৎসায় যুক্ত আছেন বলে জানান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন৷ তার এন্ডোস্কোপির ক্ষেত্রেও বাইরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ নেয়া হচ্ছে৷ জানা গেছে, তারেক রহমান লন্ডনে চিকিৎসকদের পরাশর্মও নিচ্ছেন৷ খালেদা জিয়ার সব ধরনের রিপোর্ট সেখানে পাঠানো হচ্ছে৷ আর ডা. জাহিদ অ্যামেরিকার চিকিৎসকদের সাথে পরামর্শ করছেন৷

আমরা আশাবাদী সরকার যথাসময়ে অনুমতি দেবে: শামসুজ্জামান দুদু

This browser does not support the audio element.

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীও খালেদা জিয়াকে দেখতে যান গত মঙ্গলবার৷ তিনি বলেন, ‘‘তার অবস্থা খুবই ক্রিটিক্যাল৷ তার রক্তক্ষরণ হচ্ছে মুখ দিয়ে, পরিপাকতন্ত্র দিয়ে৷ তার চিকিৎসা এখানে হবে না৷ তাকে দেশের বাইরে পাঠানো উচিত বলে আমি মনে করি৷ এখনই যদি ব্যবস্থা না নেয়া হয়, তাহলে তিনি এই মাসও টিকবেন কিনা বলা মুশকিল৷’’

খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর দাবিতে বিএনপি ১০ দিনব্যাপী কর্মসূচি পালন করছে৷ যদি সরকার অনুমতি না দেয়, তাহলে এই কর্মসূচি কোন দিকে যেতে পারে জানাতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘‘আমরা আশাবাদী সরকার যথাসময়ে অনুমতি দেবে৷ তাকে নিয়ে সরকার কোনো রিস্ক নেবে না৷ তারা যে আইনের কথা বলছে এটা রাজনৈতিক কারণে বলছে৷ এর আগেও কারাগারে আটক এবং দণ্ডপ্রাপ্ত একাধিক ব্যক্তিকে দেশের বাইরে চিকিৎসাসেবা নিতে যাওয়ার অনুমতি দেয়ার নজির আছে৷’’

আইনের বাইরেও তিনি বেশি সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন: মাহবুব উল আলম হানিফ

This browser does not support the audio element.

তার এই বক্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘‘তিনি কোন দেশে, কোন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে চান খালেদা জিয়ার চিকিৎসকরা কিন্তু কিছুই সে ব্যাপারে বলেননি৷ তার দণ্ড স্থগিত করে দেশের সেরা হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে৷ দেশের বাইরেও চিকিৎসকের সাথে পরামর্শের সুযোগ আছে৷ তিনি দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি৷ আইনের বাইরেও তিনি বেশি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন৷ কারাগারেও তাকে গৃহপরিচারিকা রাখার সুযোগ দেয়া হয়েছিল৷ বিএনপি এখন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে রাজনীতি করছে৷’’

দুর্নীতির মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হলে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানো হয়৷ ২০১৯ সালের ১ এপ্রিল থেকে তিনি বিএসএমএমইউর প্রিজন সেলে ছিলেন৷ ২০২০ সালের ২৫ মার্চ খালেদা জিয়া শর্ত সাপেক্ষে ৬ মাসের জন্য মুক্তি পেয়ে বাসায় ফেরেন৷ এরপর থেকে আবেদনের ভিত্তিতে তার এই মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে৷

গত ১৩ নভেম্বর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাকে৷ সেদিন রাত থেকেই তিনি সিসিইউতে আছেন৷  তার বয়স এখন ৭৬ বছর৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ