1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

খালেদা জিয়া আর তারেক রহমান কবে ফিরবেন?

৬ জানুয়ারি ২০২৫

সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া মঙ্গলবার রাতে লন্ডনের পথে ঢাকা ছাড়বেন৷

Bangladesch Khaleda Zia Oppositionsführerin
ছবি: RUBEL RASHID/AFP/Getty Images

চিকিৎসার জন্য তিনি লন্ডন যাচ্ছেন বলে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন৷

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরও তিনি চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যেতে চার মাস কেন সময় নিলেন তা নিয়ে আছে নানা প্রশ্ন৷ তবে গত ২ জানুয়ারি রাতে সেনা প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সস্ত্রীক খালেদা জিয়াকে তার গুলশানের বাসভবনে দেখতে গেলে তখনই বলা হয় যে খালেদা জিয়া দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য যাবেন৷ সে কারণেই সেনা প্রধান খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে যান৷ সেনা প্রধান ৪০ মিনিটের মতো সেখানো ছিলেন৷ তবে চিকিৎসার খোঁজ খবর নেয়া ছাড়া আর কিছুই তখন জানানো হয়নি বিএনপির পক্ষ থেকে৷

সিনিয়র সাংবাদিক আশরাফ কায়সার মনে করেন, ‘‘খালেদা জিয়া দেশে আবার ফিরতে পারবেন এই নিশ্চয়তাই হয়তো পেয়েছেন সেনা প্রধানের কাছ থেকে৷ যার ফলে তিনি এখন চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাচ্ছেন৷”

কিন্তু আরেকজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, ‘‘আসলে দেশের সার্বিক পরিস্থিতিই এখন অনিশ্চিত৷ ফলে চিকিৎসা শেষে তিনি দেশে ফিরতে পারবেন কী না তা এখনই মনে হয় বলা যাচ্ছেনা৷”

‘চিকিৎসা শেষে খালেদা জিয়ার দেশে ফিরতে আইনগত কোনো বাধা নেই’

This browser does not support the audio element.

অন্যদিকে খালেদা জিয়া ফিরলে তারেক রহমানকে সঙ্গে নিয়ে ফিরবেন কিনা তা নিয়ে আছে আলোচনা৷ কিন্তু তাতে অনেকটা পানি ঢেলে দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ৷ তিনি সোমবার  লণ্ডন থেকে ফিরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অবশ্যই দেশে ফিরবেন৷ তবে তারেক রহমানের দেশে ফেরার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ আমরা এখনো সৃষ্টি করতে পারিনি৷ সে জন্য অল্প কিছু সময় লাগবে৷” তবে সেই পরিবেশের কোনো ব্যাখ্যা দেননি তিনি৷

আর যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা এখন ম্যাডাম খালেদা জিয়ার চিকিৎসাকেই প্রাধান্য দিচ্ছি৷ আমাদের সব মনোযোগ সেদিকে৷ তিনি সুস্থ হওয়ার পর কবে দেশে ফিরবেন৷ তারেক রহমান সাহেব তার সঙ্গে ফিরবেন কিনা এসব নিয়ে এখন আমরা ভাবছিনা৷ তাকে এয়ারপোর্ট থেকে সরাসরি হাসপাতালে নেয়া হবে৷ তারেক রহমান তাকে রিসিভ করবেন,” জানান তিনি৷

কাতারের আমির তামিম বিন হাম্মাদ আল থানির পাঠানো এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে খালেদা জিয়া লণ্ডন যাবেন৷ ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানান, ‘‘প্রথমে তিনি লণ্ডনের লণ্ডন ক্লিনিকে ভর্তি হবেন৷ এরপর তাকে যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হতে পারে৷ গত বছর ২৬ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ঢাকায় এসে তার লিভার ও পেটের ফ্লুইড জমা ও রক্তক্ষরণ রোধে একটি বিশেষ পদ্ধতি (টিআইপিএস) সম্পন্ন করেছিলেন৷” এই সফরে খালেদা জিয়ার সঙ্গে ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল যাবেন৷ সর্বশেষ ২০১৭ সালে চিকিৎসার জন্য লণ্ডন গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া৷

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতির মামলায় দণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয় খালেদা জিয়াকে৷ ২০২০ সালের মার্চে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে তৎকালীন সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে সাময়িক মুক্তি পান তিনি৷ সাময়িক কারামুক্তির পর তার পরিবার বার বার চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর আবেদন করলেও ফিরিয়ে দেয় আওয়ামী লীগ সরকার৷ তবে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছাড়লে ৬ আগস্ট খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে দেন রাষ্ট্রপতি৷ আওয়ামী লীগ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশে নানা অজুহাতে খালেদা জিয়ার পাসপোর্ট আটকে রেখেছিল পাসপোর্ট অধিদপ্তর৷ গত ৬ আগস্ট খালেদা জিয়া মুক্তি পাওয়ার দিন রাতেই তাকে নবায়নকৃত মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) দেয়া হয়৷ তখন থেকেই তার বিদেশ যাওয়ায় আর কোনো বাধা ছিলেনা৷ ২ জুলাই তিনি হাসপাতাল ছেড়েছেন৷

এরপর বেশ কয়েকবার তার বিদেশ যাওয়ায়ার কথা উঠলেও তিনি যাননি৷ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘‘মেডিকেল টিম অনুমতি না দেয়ায় তাকে  দেশের বাইরে এতদিন চিকিৎসার জন্য পাঠানো সম্ভব হয়নি৷”

এরই মধ্যে খালেদা জিয়ার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া টেরিটেবল ট্রাস্ট মামলার দণ্ড স্থগিত হয়েছে৷ খালাস পেয়েছেন বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা থেকে ৷ আর যেসব মামলা আছে সবগুলো মামলায় তিনি জামিনে আছেন বলে জানান বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল৷

অন্যদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগে করা চারটি মামলার কার্যক্রম বাতিল করে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছিলেন, তা বহাল রয়েছে৷ হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা পৃথক লিভ টু আপিল সোমবার খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ৷ তারেক রহমান ২১ আগস্টের মামলা থেকেও খালাস পেয়েছেন৷ কিন্তু এখনো তার বিরুদ্ধে ১৯টি মামলা রয়েছে৷ তবে একুশে আগস্টসহ যেসব মামলায় তারেক রহমান খালাস পাচ্ছেন তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল অব্যাহত রাখবে বলে জানা গেছে৷

‘খালেদা জিয়া দেশে ফিরতে পারবেন এই নিশ্চয়তাই হয়তো পেয়েছেন’

This browser does not support the audio element.

৫ আগস্টের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে আবারো টু-মাইনাস থিওরি আলোচনায় আসে৷ বিএনপি নেতারাও বেশ কয়েকবার এটা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন৷ তবে বিএনপির কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে দেশে চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরার আশ্বাস পেয়েই খালেদা জিয়া দেশের বাইরে যাচ্ছেন৷ আর তারেক রহমানকে ফিরতে হলে সব মামলায় কমপক্ষে জামিন পেতে হবে৷ সেই প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে৷

বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘‘খালেদা জিয়া সব মামলায় হয় খালাস পেয়েছেন , নয় জামিনে আছেন৷  চিকিৎসা শেষে তার দেশে ফিরতে আইনগত কোনো বাধা নাই৷ তিনি চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে আসবেন৷ আর তারেক রহমান সাহেবের মামলাগুলো আমরা আইনগতভাবেই মোকাবিলা করছি৷ তিনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ৷ দেশে আসার ব্যাপারে তিনি যথা সময়ে পদক্ষেপ নেবেন৷”

অন্যদিকে খালেদা জিয়া কবে দেশে ফিরবেন এই প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘‘সেটা চিকিৎসকরাই বলতে পারবেন৷”

আর যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক বলেন, ‘‘তারেক রহমান সাহেবের মামলাগুলো তো দ্রুত নিস্পত্তি হচ্ছেনা৷  তার মামলাগুলোর বিরুদ্ধে সরকার বার বার আপিল করে স্লো করে দিচ্ছে৷ ফলে উনি চাইলেই তো এখনি ফিরতে পারছেন না৷ তিনি আইনি লড়াই শেষ করেই দেশে ফিরবেন৷ আর ম্যাডাম খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় কত সময় লাগে সেটা তো আমরা বলতে পারবনা৷ চিকিৎসা শেষ হলেই তার দেশে ফেরার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে,” বলেন তিনি৷

অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের  মূখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেন,'‘ আমরা কোনো টু-মাইনাস বা থ্রি-মাইনাস  থিওরিতে বিশ্বাসী নই৷ খালেদা জিয়ার অস্তিত্ব বাংলাদেশের মাটির সাথে মিশে আছে৷ আমরা আশা করি তিনি চিকিৎসা নিয়ে দ্রুত সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে আসবেন৷ আর তারেক রহমান  চাইলে যে কোনো সময় বাংলাদেশে আসতে পারেন৷ তার মামলাগুলো আইনি প্রক্রিয়ায় দেখা হচ্ছে৷ আমরা বাংলাদেশে একটি সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ চাই৷”

সিনিয়র সাংবাদিক আশরাফ কায়সার বলেন, ‘‘তার চিকিৎসার ব্যাপারটা তো আমরা জানি৷ কিন্তু পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়ার এই বিদেশ যাত্রায় শঙ্কা এবং গুরুত্ব দুইটিই আছে৷ তবে আমার মনে হয় ভরসার জয়াগা তৈরি করেছেন সেনা প্রধান তার সঙ্গে দেখা করে৷ রাষ্ট্রীয় অবস্থান এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান তার ব্যাপারে ভিন্ন কোনো অবস্থান নেবেনা, আমার মনে হয় এ ব্যাপারে তার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে৷ তবে মেঘ কেটে গেছে তাও আমার মনে হয়না৷ আসলে রাজনীতিতে তো অনেক কিছু হয়৷ দেখি বাতাস কোন দিকে যায়৷ আমার মনে হয় বিএনপির আশঙ্কা পুরোপুরি কেটে গেছে তা নয়,” বলেন তিনি৷

আর অধ্যাপক হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন,'‘ পুরো দেশেই তো এক ধরনের অনিশ্চয়তা চলছে৷ দুই মাইনাসের পর থ্রি মাইনাস,  ফোর মাইনাসও শোনা যাচ্ছে৷ ফলে পরিস্থিতি কোন দিকে যায় তা এখনই বলা যাচ্ছেনা৷”

‘‘প্রধান উপদেষ্টা তো নির্বাচনের দুইটি সময়ের কথা বলেছেন৷ কিন্তু আমার বিবেচনায় এখনো তা সুনির্দিষ্ট নয়৷ ফলে দেশের পরিস্থিতি কোন দিকে যায় তার ওপর নির্ভর করছে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের দেশে ফেরা৷ খালেদা জিয়াকে মামলা থেকে রিলিজ দেয়া হলেও তারেক রহমানের মামলার ব্যাপারে তো সরকার আপিল করছে৷”

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ