সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নির্দেশেই সাংবাদিক জামাল খাশগজিকে হত্যা করা হয়েছে বলে মনে করে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ৷ বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে শুক্রবার এমন খবর প্রকাশ করেছে মার্কিন গণমাধ্যম৷
বিজ্ঞাপন
এর ফলে মিত্র সৌদি আরবের সঙ্গে খাশগজি ইস্যুতে তৈরি হওয়া টানাপোড়েন মেটানো আরো জটিল হয়ে পড়বে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পক্ষে৷ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, সিআইএ তাদের তদন্তে পাওয়া তথ্য সম্পর্কে কংগ্রেসসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে অবহিত করে৷ সেখানে তারা উল্লেখ করে যে, ইস্তানবুলে সৌদি দূতাবাসে খাশগজিকে যুবরাজের নির্দেশেই হত্যা করা হয়৷
সিআইএ'র তদন্তের বিষয়টি প্রথম প্রকাশ করেছে মার্কিন পত্রিকা ওয়াশিংটন পোস্ট৷ ওয়াশিংটনে সৌদি দূতাবাস সিআইএ'র তদন্তকে প্রত্যাখ্যান করেছে৷
‘‘তদন্তে যা দাবি করা হয়েছে, তা মিথ্যা,'' দূতাবাস থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়৷ ‘‘এমন অনেক তত্ত্ব আমরা আগেও শুনেছি এবং শুনে যাচ্ছি, অথচ এসব সন্দেহের বিষয়ে কোনো প্রাথমিক ভিত্তিই খুঁজে পাইনি৷''
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স বলেছেন, ‘‘জামাল খাশগজির হত্যার জন্য যারা জড়িত, তাদের সবাইকে বিচারের আওতায় আনার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র সংকল্পবদ্ধ৷'' পেন্স পাপুয়া নিউগিনি সফরের সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন৷ তবে তদন্তের ব্যাপারে তিনি তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করতে চাননি৷ তবে এ ঘটনায় সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষতি হবে না বলেও দাবি করেন তিনি৷
বরাবরই খাশগজি ইস্যুতে কঠোর ভাব দেখানোর পাশাপাশি সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার বিষয়েও জোর দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র৷
সিআইএ'র তদন্তের বিষয়ে শনিবার পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট কোনো মন্তব্য করেনি৷
জামাল খাশগজি: রহস্যময় অন্তর্ধান ও মৃত্যু
সৌদি সাংবাদিক তিনি৷ ছিলেন সরকারের সমালোচক৷ ইস্তানবুলে সৌদি দূতাবাস থেকে হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে গেলেন৷ বারবার বদলেছে তাঁর নিখোঁজ হওয়া বা মৃত্যু নিয়ে কর্তৃপক্ষের ভাষ্য৷ ছবিঘরে দেখুন কী কী ঘটেছে এ পর্যন্ত৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Martin
যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেলেন
তুর্কি বাগদত্তা হাতিজে জেঙ্গিসকে বিয়ে করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে ২ অক্টোবর ইস্তানবুলের সৌদি দূতাবাসে যান সাংবাদিক জামাল খাশগজি৷ কিন্তু এরপর আর বের হননি৷ তাতেই বাইরে অপেক্ষা করতে থাকা তাঁর বাগদত্তা হাতিজে উদ্বিগ্ন হয়ে খবরটি ছড়িয়ে দেন৷
ছবি: Reuters TV
সংশয়ের ডালপালা মেলা শুরু
৩ অক্টোবর: তুর্কি ও সৌদি কর্তৃপক্ষ ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য তুলে ধরেন খাশগজি সম্পর্কে৷ দূতাবাস কর্তৃপক্ষ দাবি করে, কাজ শেষে বেরিয়ে গেছেন খাশগজি৷ তুর্কি কর্তৃপক্ষ বলে যে, দূতাবাস থেকে বেরই হননি তিনি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/V. Mayo
হত্যার অভিযোগ
৬ অক্টোবর: তুরস্কের প্রশাসন জানায়, সৌদি দূতাবাসের ভেতর খাশগজিকে হত্যা করা হয়েছে৷ যে পত্রিকায় খাশগজি নিয়মিত লিখতেন, সেই মার্কিন পত্রিকা ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, তাঁকে হত্যা করতে সৌদি আরব থেকে ১৫ সদস্যের একটি দল আসে ইস্তানবুলে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/H. Jamali
আঙ্কারা চায় প্রমাণ
৮ অক্টোবর: তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়িপ এর্দোয়ান সৌদি আরবের কাছে খাশগজি যে বেরিয়ে গেছেন সে প্রমাণ দেয়ার দাবি জানান৷ তুরস্ক দূতাবাস প্রাঙ্গন তল্লাশি করার অনুমতি চায়৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/T. Kovacs
অনুমতি দেয় রিয়াদ
৯ অক্টোবর: দূতাবাস প্রাঙ্গন তল্লাশির অনুমতি দেয় সৌদি আরব৷ স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, ২ অক্টোবর একটি ভ্যান দূতাবাসে প্রবেশ করে৷ এরপর সেটি সৌদি রাষ্ট্রদূতের বাসায় যায়৷ এতে বিতর্ক আরো মাথাচাড়া দেয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/P. Giannakouris
অর্থনীতিতে ধাক্কা
১২ অক্টোবর: খাশগজির ঘটনায় ব্রিটিশ বিলিওনেয়ার রিচার্ড ব্রানসন তাঁর ভার্জিন গ্রুপের মহাকাশ প্রকল্পে সৌদি আরবের এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের বিষয়ে আলোচনা থামিয়ে দেন৷ রিয়াদে অনুষ্ঠেয় বিনিয়োগ সম্মেলন যোগ দেয়াও বাতিল করেন তিনি৷ উবার, জেপি মর্গানসহ বড় বড় কোম্পানির বিনিয়োগকারীরাও একই সিদ্ধান্ত নেন৷
ছবি: picture alliance/dpa
অনুসন্ধান বন্ধ নেই
১৫ অক্টোবর: তুর্কি তদন্তকারী দল দূতাবাসে তল্লাশি চালায়৷ প্রায় আট ঘন্টা ধরে এই তল্লাশি চলে এবং তদন্তকারীরা ভবন, বাগানের মাটি ও একটি ধাতব দরজা থেকে কিছু নমুনা নিয়ে আসেন৷
ছবি: Reuters/M. Sezer
হাতাহাতি থেকে মৃত্যু
১৯ অক্টোবর: সৌদি আরব এবার খাশগজির মৃত্যুর বিষয়টি স্বীকার করে৷ তারা বলে যে, হাতাহাতি করতে গিয়ে দূতাবাসে মারা যান খাশগজি৷ তুরস্কের ক্ষমতাসীন দল কঠোর ভাষায় জানিয়ে দেয় যে, ‘হত্যার কোনো আষাঢ়ে গল্প’ মেনে নেবে না আঙ্কারা৷ জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল রিয়াদের ব্যাখ্যা ‘অপর্যাপ্ত’ বলে আখ্যা দেন৷
ছবি: Getty Images/C. McGrath
‘চরম ভুল’
২১ অক্টোবর: সৌদি আরব এবার আবার কথা পাল্টায়৷ তারা বলে, ওই সাংবাদিকের মৃত্যু দুর্বৃত্তদের কারণে হয়৷ এটাকে ‘বিরাট ও চরম ভুল’ বলে আখ্যা দেয় তারা৷ সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এই ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানতেন না বলে দাবি করে তারা৷ রিয়াদ বলে যে, সাংবাদিকদের লাশ কোথায় তা তাদের জানা নেই৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/C. Owen
অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করে দেয় জার্মানি
২১ অক্টোবর: আঙ্গেলা ম্যার্কেল ঘোষণা দেন যে, জামাল খাশগজির হত্যার সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত সৌদি আরবে অস্ত্র রপ্তানি করবে না জার্মানি৷ যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ফ্রান্সের পর সৌদি আরবে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র রপ্তানি করে জার্মানি৷