ফেনীতে চালের খুদ ও ধানের কুঁড়ায় রঙ মিশিয়ে হলুদ, মরিচসহ বিভিন্ন ধরনের গুঁড়া মসলা তৈরি হচ্ছিল৷ অভিযান চালিয়ে এমন দেড় হাজার কেজি ভেজাল গুঁড়া মসলাসহ একজনকে আটক করেছে র্যাব৷
বিজ্ঞাপন
বুধবার মধ্যরাতে শহরের একটি কারখানায় অভিযান চালানো হয় বলে র্যাব-৭ ফেনীর কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার মোহাম্মদ সাদেকুল ইসলাম ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান৷
আটক সাঈদ হোসেনের বাড়ি ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার ছাড়াইতকান্দি এলাকায়৷
র্যাব জানায়, ভেজাল মসলা তৈরির গোপন সংবাদে ফেনী শহরের তাকিয়া রোডের রামপুর শিশু একাডেমি সংলগ্ন বিসমিল্লাহ মিলে অভিযান চালানো হয়৷
এ সময় র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে পালানোর সময় সাঈদ হোসেন নামে ওই ভেজাল মসলা কারবারীকে আটক করা হয়৷ পরে তাকে নিয়ে তল্লাশি চালিয়ে কারখানা থেকে প্লাস্টিকের ৩২টি বস্তায় দেড় হাজার কেজি ভেজাল রঙ ও খুদমিশ্রিত হলুদ-মরিচের গুঁড়া জব্দ করা হয়৷
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাঈদ হোসেন দীর্ঘদিন ধরে চালের খুদ, ধানের কুঁড়ায় রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে ভেজাল মসলা তৈরি করছিলেন বলে স্বীকার করেন৷
আটক সাঈদকে ফেনী মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে র্যাব কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাদেকুল ইসলাম জানান৷
এনএস/এসিবি (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)
ঢাকায় ইফতারের মান নিয়ন্ত্রণে অভিযান
রমজান মাসে ভেজাল ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্য নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
মনিটরিং বুথ স্থাপন
ঢাকায় ইফতার বাজার তদারকিতে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন পয়েন্টে ৫টি মনিটরিং বুথ চালু করেছে। এগুলো হচ্ছে বেইলি রোড, চকবাজার, তালতলা, আগারগাঁও এবং মোহাম্মদপুর টাউন হল। বুথে দায়িত্বরত ল-অফিসার আরাফাত হোসেন বলেন, ইফতার সংক্রান্ত যেকোনো অভিযোগ সরাসরি আমাদের জানালে আমরা তাৎক্ষণিক তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
'আপনারা আমাদের ভরসার জায়গা'
সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের উদ্বুদ্ধ করতে চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ যুক্ত হয়েছেন নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের এ কার্যক্রমে। তিনি ব্যবসায়ীদের বলেন, আমরা যারা কাজের সূত্রে ঘরের খাবার নিয়মিত খেতে পারি না, তাঁরা বাধ্য হয়ে আপনাদের হাতের বানানো খাবার খাই। আপনারাই আমাদের ভরসার জায়গা, তাই আপনাদেরকেই খাদ্যের নিরাপত্তা বজায় রাখতে হবে।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
'অবস্থা গত বছরের চেয়ে ভালো'
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের মনিটরিং অফিসার মোঃ ইমরান মোল্লা জানান, গত বছর আমরা এই এলাকায় অভিযান পরিচালনাকালে যে চিত্র দেখেছিলাম, এবার তারচেয়ে অনেক ভালো হয়েছে। আশা করি সামনের দিনগুলোতে নিরাপদ খাদ্যের পরিবেশ আরো বেশি নিশ্চিত হবে। এ লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
তড়িঘড়ি করে পরিষ্কার করা
ইফতার খাদ্য সামগ্রীর মান যাচাইয়ে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ তদারকিতে গেলে নবাবি ভোজ নামের রেস্টুরেন্টের কর্মীদের তড়িঘড়ি করে রান্নাঘরের ময়লা পরিষ্কার করতে দেখা যায়। এখন কেন পরিষ্কার করছেন জানতে চাইলে তাঁরা কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
যত্রতত্র ইফতারের ভ্রাম্যমাণ দোকান
ঢাকার বেইলি রোডের ফখরুদ্দিন বিরিয়ানি থেকে শুরু করে শান্তিনগর মোড় পর্যন্ত যত্রতত্র ইফতারের দোকান খুলে বসতে দেখা গেছে। কেউ ফুটপাথে, কেউ বা সামান্য একটু খোলা জায়গা পেলেই দোকান খুলে বসেছেন। এসব জায়গায় খাবার যতই ঢেকে রাখা হোক না কেন, রাস্তার ধূলাবালি খাবারে পড়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়াচ্ছেই।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
উৎপাদন-মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ নেই
ঢাকার বেইলি রোডে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের ইফতার বাজারে অভিযান পরিচালনাকালে জ্যাগেরি রেস্টুরেন্টে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বেকিং সোডা, হলুদ-মরিচের গুঁড়াসহ ব্যবহৃত মশলার কৌটায় কোনো উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ নেই। পরে অভিযান পরিচালনাকারীরা তাঁদের এ বিষয়গুলোতে সতর্ক হওয়ার নির্দেশনা দেন।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
অপরিচ্ছন্ন সংরক্ষণাগার
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সাথে অভিযানে গিয়ে ডয়চে ভেলের প্রতিনিধি দেখতে পান, হোটেল রেস্টুরেন্টগুলোতে যে পরিবেশে খাবার সংরক্ষণ করা হচ্ছে, তা সন্তোষজনক নয়। ফ্রিজগুলো যে সম্প্রতি পরিষ্কার করা হয়েছে এবং অধিকাংশ সময়ে তা অস্বাস্থ্যসম্মতই থাকে, সরেজমিনে সে চিত্র স্পষ্ট।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
'আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছি'
জ্যাগারি রেস্টুরেন্টের মালিক হারুনুর রশীদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, আগে আমরা স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির অনেক ব্যাপার-ই হয়তো জানতাম না। স্যারেরা গত বছর এখানে অভিযান পরিচালনা করে আমাদের নির্দেশনা দেন, আমরা এবার সেটা যথাযথভাবে পালনের চেষ্টা করছি।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
শুরুতেই জরিমানা নয়
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য ডঃ আব্দুল আলীম বলেন, আমাদের এবারের কার্যক্রম মূলত সচেতনতামূলক। এ কারণেই সেলিব্রেটিদের আমরা সাথে নিয়েছি যে তাঁদেরকে সাধারণ জনগণ অনুসরণ করেন। তবে একাধিকবার সাবধান করার পরেও যদি তাঁরা না মানেন, তখন আমরা অ্যাকশনে যেতে বাধ্য হবো।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
অভিজাত এলাকায় খাবারের মান কিছুটা ভালো
ঢাকার বেইলি রোডে ইফতার কিনতে এসেছেন অবসরপ্রাপ্ত একজন বেসরকারি চাকুরে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সে ক্রেতা জানান, আমাদের খাবারের মান সব জায়গাতেই কম-বেশি খারাপ। তবে গুলশান, ধানমন্ডি, বেইলি রোড এ ধরণের অভিজাত এলাকায় তাঁরা কিছুটা হাইজিন রক্ষা করে যতটুকু জানি। অন্যান্য এলাকায় তো খাবার মান দেখলেই রুচি উঠে যায়।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
ঢাকঢোল পিটিয়ে অভিযান নয়
ঢাকার রামপুরা থেকে ইফতার কিনতে এসেছেন গৃহিণী মিলি আহমেদ। তিনি বলেন, খাদ্য কর্তৃপক্ষ অভিযান চালাচ্ছে ভালো কথা, কিন্তু এভাবে সবাইকে জানিয়ে অনিয়ম ধরতে এলে তো তাঁরা সাবধান হয়ে যাবে। দেখা যাবে, এনারা চলে যাওয়ার পর আবার আগের পরিস্থিতি হবে। তাই গোপনীয়তা রক্ষা করে ঝটিকা অভিযান চালানোই বেশি ফলপ্রসূ হবে।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
২০০ গজ দূরেই ভিন্ন চিত্র
ঢাকার বেইলি রোডে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের মনিটরিং বুথ থেকে ২০০ গজ দূরেই দেখা যায় যে, রাস্তার ধারেই ইফতার তৈরি এবং বিক্রির কার্যক্রম পুরোদমে চলছে। তবে রাস্তার পাশেই এভাবে খোলা অবস্থায় ইফতার বিক্রি কতটুকু স্বাস্থ্যসম্মত, এ প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি বিক্রেতা।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
জরুরি যোগাযোগ
নিরাপদ খাদ্য সংক্রান্ত যে কোনো অভিযোগ করার জন্য একটি হটলাইন নম্বর চালু করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। নাম্বারটি হচ্ছে ১৬১৫৫। এখানে যে কেউ অভিযোগ জানালে কর্তৃপক্ষ সে ব্যাপারে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।