জার্মানির নর্থরাইন ওয়েস্টফালিয়া রাজ্যে পাঁচ কিলোমিটার ব্যবধানে অবস্থিত দু'টি খামার কানেনব্রক আর ভ্যাল্টারমান৷ কিন্তু ইন্টারনেটের গতির হিসেব করলে খামার দুটির মধ্যে দূরত্ব পাঁচ মনে হবে না, মনে হবে পাঁচশ কিলোমিটার!
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি দুই খামারের মালিকের সঙ্গে কথা বলার পর এমন মন্তব্য করেছেন ডয়চে ভেলের প্রতিবেদক আর্থার সুলিভান৷ কারণ একদিকে ভ্যাল্টারমান তাঁকে জানিয়েছেন, তিনি সেকেন্ডে ১২ মেগাবিটস গতিতে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন৷ অন্যদিকে কানেনব্রক জানান, ওয়েবসাইটের একটি পাতা লোড করতে তাঁর পাঁচ মিনিট সময় লাগে৷ কারণ তাঁর ইন্টারনেটের গতি নাকি সেকেন্ডপ্রতি এক মেগাবিটসেরও কম!
জার্মানির কৃষকদের সংগঠন ডিবিভি-র ২০১৭ সালের এক জরিপ বলছে, গড়ে প্রতি তিনজন কৃষকের মধ্যে দু'জন ইন্টারনেটের গতি খুবই কম বলে জানিয়েছেন৷ তাই ডিবিভির প্রেসিডেন্ট ইওয়াখিম রুকভিড বলেছেন, জার্মানির আগামী সরকারকে ইন্টারনেটের গতি বাড়ানোর বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে৷
শুধু জার্মান কৃষকদের সংগঠনের জরিপই নয়, বৈশ্বিক এক জরিপেও জার্মানির ইন্টারনেটের গতির করুন দশার চিত্র উঠে এসেছে৷ মার্কিন কোম্পানি আকামাই-এর সবশেষ ‘স্টেট অফ দ্য ইন্টারনেট রিপোর্ট' বলছে, ইন্টারনেটের গতির দিক দিয়ে ইউরোপে জার্মানির অবস্থান ২৫ নম্বরে৷ বুলগেরিয়া, লাটভিয়া, রুমানিয়ার মতো অপেক্ষাকৃত দরিদ্র দেশগুলো এক্ষেত্রে অর্থনীতির ক্ষেত্রে ইউরোপের সুপারপাওয়ার জার্মানির চেয়ে এগিয়ে আছে৷
দেশে দেশে ইন্টারনেটে নিয়ন্ত্রণ-লড়াই
অনলাইনে ঘৃণা ছড়ানো বন্ধ করতে জার্মানি একটি ‘সামাজিক মাধ্যম আইন’ করতে চায়৷ জার্মান সংসদে এ নিয়ে আলোচনা চলছে৷ এরই মধ্যে এর সমালোচনাও শুরু হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/W. Kastl
মুক্তমত, নাকি অবৈধ বিষয়বস্তু?
ঘৃণা ছড়ানো বক্তব্য, প্রপাগান্ডা, অ্যাক্টিভিজম ইত্যাদি অনলাইনে হরহামেশাই চলে৷ এগুলো নিয়ে দেশে দেশে বিতর্ক কম হয়নি৷ নানা দেশে তাই সামাজিক মাধ্যমে সরকারি হস্তক্ষেপও এসেছে৷ অনেকে এটাকে মুক্ত মতের উপর হস্তক্ষেপ বলে মনে করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/W. Kastl
সামাজিক মাধ্যম আইন
জার্মানির আইনমন্ত্রী হাইকো মাস সামাজিক মাধ্যমের জন্য একটি আইনের প্রস্তাবনা তৈরি করেছেন৷ সে আইনে বিদ্বেষমূলক পোস্ট অপসারণ না করলে সামাজিক মাধ্যম কোম্পানির বিপুল জরিমানার কথা বলা হয়েছে৷ কিন্তু এতে বিগড়ে বসেছে ফেইসবুক৷ তারা বলছে, বিদ্বেষমূলক বক্তব্য এবং ভুয়া খবর ঠেকানোর দায় তাদের একার নয়৷ সরকারকেও এই দায়িত্ব নিতে হবে৷ আইনটি এখন পর্যালোচনার জন্য জার্মান সংসদীয় কমিটিতে রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Hase
ভুলে যাওয়ার অধিকার
২০১৪ সালে ইউরোপিয়ান কোর্ট অফ জাস্টিসের জারি করা এক আদেশে বলা হয়, গুগল, বিং-এর মতো সার্চ ইঞ্জিনকে তাদের অনুসন্ধানের ফলাফলে কোনো বিশেষ কিছু বাদ দিতে ইউরোপীয় নাগরিকরা অনুরোধ জানাতে পারবেন৷ গুগল সেই আদেশ বাস্তবায়ন করলেও আগে এ বিষয়ে বেশ অনাগ্রহ দেখিয়েছে৷ তখন তারা বলেছে, এটা ইন্টারনেটকে মুক্ত বিশ্বের আবদ্ধক্ষেত্র বানিয়ে ফেলবে৷
ছবি: picture-alliance/ROPI/Eidon/Scavuzzo
ইউক্রেনের নিষেধাজ্ঞা
ইউক্রেন গত মে মাসে রাশিয়ার সামাজিক মাধ্যম ও ওয়েবসাইটের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে৷ বিষয়টি দেশটির লাখ লাখ মানুষের উপর প্রভাব ফেলে৷ অনেকেই তাদের ডাটা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন৷ এর প্রতিবাদে তরুণরা রাস্তায় নেমে আসে৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/Str
প্রসঙ্গ: সেফ হারবার
২০১৫ সালে ইউরোপীয় কোর্ট অব জাস্টিস এক রায়ে ইউএস এবং ইইউ’র মধ্যকার চুক্তি ‘সেফ হারবার’কে অকার্যকর ঘোষণা করে৷ যে চুক্তি বলে কারো ব্যক্তিগত তথ্য পূর্বানুমতি ছাড়াই হস্তান্তর করা যায়৷ অস্ট্রেলীয় আইনের ছাত্র ম্যাক্স স্ক্রিম ফেইসবুকের বিরুদ্ধে একটি মামলার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন৷ মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার (এনএসএ) সাবেক ঠিকাদার অ্যাডওয়ার্ড স্নোডেন তথ্য ফাঁস করায় তিনি এই ব্যবস্থা নিচ্ছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Warnand
কঠোর চীন
চীনে সরকার কঠোরভাবে সামাজিক মাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করে থাকে৷ ফেসবুক, টুইটার, ইনসটাগ্রামের মতো হাজার হাজার ওয়েবসাইট দেশটির সরকার নিষিদ্ধ করে রেখেছে৷ সেখানকার সরকার নিজস্ব ওয়েবসাইট চালু করেছে৷ যেমন, ইউবো, উইচ্যাট৷ জনবহুল এই দেশটিতে এখন এগুলোরও কোটি কোটি ব্যবহারকারী রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Imaginechina/Da Qing
6 ছবি1 | 6
ইন্টারনেটের গতির ক্ষেত্রে জার্মানির এই অবস্থার জন্য দায়ী ব্রডব্যান্ড কানেকশনের ক্ষেত্রে ফাইবার অপটিকের অপ্রতুল ব্যবহার৷ ‘অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কোঅপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট' বা ওইসিডি-র সবশেষ প্রতিবেদন বলছে, জার্মানির ব্রডব্যান্ড কানেকশনের মাত্র দুই শতাংশ দেয়া হয় ফাইবার অপটিক দিয়ে৷ যেখানে সুইডেন, লাটভিয়ার মতো দেশের ক্ষেত্রে সংখ্যাটি ৫০ শতাংশের বেশি৷
জার্মানির ফেডারেল নেটওয়ার্ক এজেন্সি, বিনেটৎসএ-র সাম্প্রতিক প্রতিবেদনেও জার্মানিতে ধীরগতির ইন্টারনেটের বিষয়টি উঠে এসেছে৷ ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জার্মানির শীর্ষস্থানীয় টেলিকম সেবাদাতার কার্যক্রমের উপর নজর রেখেছিল বিনেটৎসএ৷ সেই পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে প্রকাশ করা প্রতিবেদন বলছে, প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন গ্রাহক তাঁদের চুক্তিতে ইন্টারনেটের যে গতি পাওয়ার কথা ছিল, তার অর্ধেকের চেয়েও কম গতি পেয়েছেন৷ আর কোনো গ্রাহকই ‘সর্বোচ্চ' গতি পাননি বলে জানা গেছে৷ এছাড়া স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে মাত্র ১.৬ শতাংশ জানিয়েছেন যে, তাঁরা তাঁদের ডিভাইসে প্রোভাইডার কর্তৃক অঙ্গীকার করা গতি পেয়েছেন৷
কী করছে জার্মানি?
জার্মানির খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয় গ্রামাঞ্চলে ইন্টারনেটের গতি ‘অপর্যাপ্ত' বলে স্বীকার করে নিয়েছে৷ সেই সঙ্গে সরকারের নেয়া একটি উদ্যোগের কথা জানিয়েছে৷ গ্রামাঞ্চলে ব্রডব্যান্ড সেবার প্রসার চার বিলিয়ন ডলারের একটি কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার৷
এছাড়া গতবছরের মার্চ মাসে জার্মান সরকার পুরো দেশে ২০২৫ সালের মধ্যে ‘গিগাবিট' গতির ইন্টারনেট ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনার কথা জানায়৷ এ লক্ষ্যে আট বছরে ১০০ বিলিয়ন ইউরো খরচ হবে বলে জানানো হয়৷ লক্ষ্য পূরণে ফাইবার অপটিক ও ফাইভজি-র সহায়তা নেয়া হবে৷
এদিকে, জার্মানিতে নতুন সরকার গঠনে আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সিডিইউ ও এসপিডি দলের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছে তাতে ফাইবার অপটিকের মাধ্যমে ব্রডব্যান্ড সেবা ছড়িয়ে দিতে ১৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ের পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে৷
জেডএইচ/ডিজি (ডিডাব্লিউ, ব্লুমবার্গ)
বিশ্বের শীর্ষ ৮টি টেলিযোগাযোগ কোম্পানি
টেলিযোগাযোগ শিল্প গত কয়েক বছরে ব্যাপক উন্নতি করেছে৷ ব্যবসা এবং প্রাত্যহিক জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে এটি৷ ছবিঘরে জেনে নিন বিশ্বের সেরা ৮টি টেলিযোগাযোগ কোম্পানির কথা৷
ছবি: dapd
চায়না মোবাইল লিমিটেড
চীনের শীর্ষ টেলিযোগাযোগ কোম্পানি এটি৷ এদের গ্রাহক সংখ্যা ৮৪ কোটি ৯০ লাখ৷ ২০১৭ সালের এপ্রিল পর্যন্ত এর বাজার দর ছিল ২১ হাজার ৫৩০ কোটি ডলার৷
ভেরিজোন কমিউনিকেশনস ইনকর্পোরেশন
এটি যুক্তরাষ্ট্রের সর্ববৃহৎ টেলিযোগাযোগ কোম্পানি৷ ২০১৭ সালের এপ্রিলে এর বাজার দর ছিল ১৯ হাজার ১৭২ কোটি মার্কিন ডলার৷ ভেরিজোন বর্তমানে ১৫০টি দেশে কাজ করছে৷
ছবি: Reuters
এটি অ্যান্ড টি ইনকর্পোরেশন
এটি যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম টেলিযোগাযোগ কোম্পানি৷ এর বাজার দর ২৪ হাজার ৫৫৮ কোটি মার্কিন ডলার৷ এটি বিশ্বের ২০০ টি দেশে ‘ভয়েস সার্ভিস’ প্রদান করে এবং এ সব দেশে এদের ৩৪ হাজার ওয়াইফাই হটস্পট রয়েছে৷ এদের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, এরা ৩৫ কোটি ৫০ লাখ মানুষকে সেবা দিয়ে থাকে৷
ছবি: Reuters/S. Stapleton
ভোডাফোন গ্রুপ প্রোগ্রামেবল লজিক কন্ট্রোলার
এদের সদরদপ্তর যুক্তরাজ্যে৷ এদের মোবাইল ব্যবহারকারী গ্রাহক সংখ্যা ৪৪ কোটি ৪০ লাখ৷ ২০১৬ সালে এপ্রিলে এর বাজার দর ছিল ৬ হাজার ৮৪১ কোটি মার্কিন ডলার৷ ভোডাফোন যুক্তরাজ্যের অন্যতম দামি ব্র্যান্ড এবং ২৬ টি দেশে এদের মোবাইল সুবিধা রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/S. Barbour
নিপ্পন টেলিগ্রাফ অ্যান্ড টেলিফোন করপোরেশন
জাপানের এই টেলিযোগাযোগ কোম্পানিটির বাজার দর ২০১৭ সালের এপ্রিলে ছিল ৮ হাজার ৬১৩ কোটি মার্কিন ডলার৷
ছবি: David Clausmeier/NC14
সফটব্যাংক গ্রুপ কর্পোরেশন
এটি ১৯৮১ সালে জাপানের এই কোম্পানিটি যাত্রা শুরু করে, সফটওয়্যার পরিবেশক হিসেবে৷ এর বাজার দর ৮১ হাজার ৪৫৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার৷
ছবি: Getty Images/AFP/K. Nogi
ডয়চে টেলিকম ডয়চে টেলিকম এজি
জার্মান এটি কোম্পানিটির মোবাইল গ্রাহক সংখ্যা ১০ কোটিরও বেশি৷ বর্তমানে ৫০টি দেশে তাদের ২ লাখ ১৮ হাজারেরও বেশি কর্মী রয়েছে৷ এর বাজার দর ৭ হাজার ৬১১ কোটি মার্কিন ডলার৷
ছবি: Reuters/W. Rattay
টেলিফোনিকা এসএ
স্পেনের এই কোম্পানিটি ২১টি দেশে সেবা দিচ্ছে৷ তবে এর বেশিরভাগ গ্রাহক ল্যাটিন অ্যামেরিকার৷ এই কোম্পানির বাজার দর ৫ হাজার ২৮৪ কোটি মার্কিন ডলার৷ এই কোম্পানির তিনটি ব্র্যান্ডের আলাদা টার্গেট গ্রাহক আছে৷ মুভিস্টার স্পেন আর ল্যাটিন অ্যামেরিকায় সেবা দেয়, ওটু যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড, জার্মানি, চেক প্রজাতন্ত্র এবং স্লোভাকিয়ায় সেবা দেয় আর ভিভো ব্রাজিলে সেবা দেয়৷