দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, সেখান থেকে অবস্থা অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে এসেছে বলে মনে করেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান৷ মঙ্গলবার ঢাকায় সাংবাদিকদের তিনি এই কথা বলেন৷
সেনাপ্রধান বলেছেন, আমাদের আরো কিছু সময় লাগবে৷ছবি: Rajib Dhar/AP/picture alliance
বিজ্ঞাপন
সেনাপ্রধান বলেছেন, ''আমাদের কিছু সময় দিন৷ আমরা ৪৮ ঘণ্টা ধরে এখানে (মোতায়েন) আছি৷ আমাদের আরো কিছু সময় লাগবে৷ আমি বিশ্বাস করি যদি আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করি তাহলে শিগগিরই স্বাভাবিকতা ফিরে আসবে৷'' এর আগে সেনাবাহিনীর এক হেলিকপ্টারে তিনি ঢাকা এবং এর আশপাশ ঘুরে দেখেন৷
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯ জুলাই মধ্যরাতে কারফিউ ঘোষণা করে বাংলাদেশ সরকার৷ সেনাবাহিনীকে মোতায়েন করা হয় বেসামরিক বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য৷ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নানা সংগঠনের নেতা-কর্মী এবং পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে চার দিনে দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে৷
কারফিউ জারির পর থেকে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি তুলনামূলক শান্ত হয়ে এসেছে বলে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি৷ সোম এবং মঙ্গলবার নতুন করে কোথাও কোনো সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে সংস্থাটি৷
গ্রেপ্তারের সংখ্যা আড়াই হাজার ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে এএফপিছবি: ABU SUFIAN JEWEL/AFP
আটককৃতদের বেশিরভাগই বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মী৷ গ্রেপ্তার হওয়া বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, জহিরউদ্দীন স্বপন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ঢাকা জেলার সাধারণ সম্পাদক নিপুন রায় চৌধুরী৷
কোটা সংস্কার করে প্রজ্ঞাপন জারি
ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এবং তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত৷ সুপ্রিম কোর্টের রায় মেনেই সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী৷
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারি করা এ প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ৯ম থেকে ২০তম গ্রেডের চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে এটি কার্যকর হবে৷
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী সাধারণ বা মেধার ভিত্তিতে ৯৩ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ১ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত থাকবে৷
নাগরিক ফেরালো মালয়েশিয়াও
ভারত এবং নেপালের পর বাংলাদেশে অবস্থান করা নিজেদের নাগরিকদের ফেরালো মালয়েশিয়াও৷ এয়ার এশিয়ার এক চার্টার্ড বিমানে মঙ্গলবার ১২১ জন মালয়েশিয়ানকে বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নেয়া হয়৷ এদের মধ্যে ৮০ জন শিক্ষার্থী৷ তবে অন্তত অর্ধশত মালয়েশিয়ান কাজ বা পড়াশোনার জন্য বাংলাদেশে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এপি৷
বাংলাদেশ থেকে ফেরত আসা মালয়েশিয়ার নাগরিকছবি: Hasnoor Hussain/REUTERS
কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাদের স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুতিয়ন৷ তিনি এপিকে জানিয়েছেন, ইন্টারনেট এবং মোবাইল ফোন সেবা বন্ধ থাকায় মালয়েশিয়া বাংলাদেশে তার নাগরিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিল না৷ তবে এর মধ্যেও এর আগে ঢাকায় দেশটির হাইকমিশন ১৯ জন শিক্ষার্থীকে ফেরাতে সক্ষম হয়েছিল৷
বাংলাদেশ থেকে ফেরত আসা মালয়েশিয়ার নাগরিকছবি: Hasnoor Hussain/REUTERS
তিনি জানিয়েছেন, অন্তত ৪০ জন শিক্ষার্থী, পাঁচ সেনা কর্মকর্তা এবং ১০ জন পাইলট বাংলাদেশে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷
এর আগে বাংলাদেশ থেকে নিজেদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়েছে নেপাল এবং ভারতও৷ বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অন্তত সাড়ে চার হাজার শিক্ষার্থীকে ফিরিয়ে নেয়ার কথা জানিয়েছে ভারত৷
অন্তত ৪০ জন শিক্ষার্থী, পাঁচ সেনা কর্মকর্তা এবং ১০ জন পাইলট বাংলাদেশে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেনছবি: Hasnoor Hussain/REUTERS
এদিকেআন্দোলন, সহিংসতা এবং কারফিউয়ের কারণে দেশে ফিরতে না পেরে ভারতে আটকা পড়েছেন অনেক বাংলাদেশিও৷ এদের কেউ শিক্ষার্থী, অনেকে পর্যটক, আবার কেউ কেউ চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন ভারতে৷ মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক এবং ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় দেশে যোগাযোগও করতে পারছেন না তাদের অনেকে৷
কোটা আন্দোলনের প্রতি সংহতি, আর সহিংসতার প্রতিবাদ ইউরোপে
বাংলাদেশে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতি সংহতি জানানোর পাশাপাশি সহিংসতার প্রতিবাদে ইউরোপের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন প্রবাসীরা৷ ছবিঘরে থাকছে এরকম কিছু কর্মসূচির কথা৷
ছবি: Niaz Muhit
বার্লিনে বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে প্রতিবাদ
‘‘বাংলাদেশে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নির্মমভাবে হত্যা এবং হামলার প্রতিবাদে জার্মানির রাজধানী বার্লিনে বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে কয়েকশ বাংলাদেশি সমবেত হন’’ বলে জানিয়েছেন তাদের একজন মুহাম্মদ মুহিব্বুল হাসান৷ প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে স্মারকলিপি প্রদান করে হামলাকারীদের শাস্তি, কোটা সংস্কার এবং সরকারের পক্ষ থেকে এর দায় স্বীকার করে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানানো হয়৷
ছবি: Muhib Hasan
প্যারিসে মানববন্ধন
বাংলাদেশের চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বৃহস্পতিবার ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ‘ন্যাশন’ চত্ত্বরে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে ফ্রান্সে উচ্চশিক্ষার জন্য আসা বাংলাদেশি শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় বাংলাদেশি কমিউনিটির সদস্যরা৷ ‘‘দুই শতাধিক মানুষ বাংলাদেশে চলমান আন্দোলনে ছাত্রছাত্রীদের প্রতি সংহতি জানান,’’ বলে জানিয়েছেন প্যারিসে বসবাসরত সাংবাদিক মোহাম্মদ আরিফ উল্লাহ৷
ছবি: Mohammad Arif Ullah
নুরেমবার্গে প্রতিবাদ
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার প্রতিবাদে জার্মানির নুরেমবার্গ শহরে মানববন্ধন করেন একদল প্রবাসী বাংলাদেশি৷
ছবি: Samsuzzaman Uday
ড্রেসডেনে প্রতিবাদ
জার্মানির ড্রেসডেনে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেন একদল বাংলাদেশি৷ তাদের একজনের প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘‘নিরীহ শিক্ষার্থীদের হত্যা বন্ধ করুন৷’’
ছবি: Md Imtiaz
নর্দান সাইপ্রাসে অবস্থান কর্মসূচি
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘাত, সংঘর্ষের প্রতিবাদে নর্দান সাইপ্রাসেও বাংলাদেশিদের সমবেত হতে দেখা গিয়েছে৷ সেখানকার ব্যবসায়ী ইমাম হোসেন বলেন, ‘‘আমরা বাংলাদেশিরা কোটা আন্দোলনে শহিদদের মাগফিরাত এবং আহত ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছি৷ আমরা চাই ছাত্র হত্যা বন্ধ হোক, দেশে শান্তি ফিরে আসুক৷’’
ছবি: Emam Uddin
পোর্টসমাউথে প্রতিবাদ
যুক্তরাজ্যের পোর্টসমাউথেও প্রবাসী বাংলাদেশিরা কোটা আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন৷ সেখানে একজনের প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘‘শিক্ষায় রাজনীতি নয়৷’’
ছবি: Md. Rubayeth Islam
মাগডের্বুগে শিক্ষার্থীদের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ
বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতায় যে প্রাণহানি হয়েছি তার নিন্দা জানানোর পাশাপাশি কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে জার্মানির মাগডের্বুগের বাংলাদেশি কমিউনিটি৷
ছবি: Shehab Uddin
ব্রেমেনে একাত্মতা প্রকাশ
বাংলাদেশে চলমান কোটা আন্দোলনের সঙ্গে একাত্বতা প্রকাশ করে জার্মানির ব্রেমেন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের একাংশ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন৷ সেখানে একজনের প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘‘শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমরা তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছি৷’’
ছবি: Hasibul Hasan Shanto
এসেনে প্রতিবাদ
বাংলাদেশে কোটা সংস্কারের আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে জার্মানির এসেন শহরে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি মানববন্ধন করেন৷ মানববন্ধনে অংশ নেয়াদের মধ্যে অন্যতম রাজনৈতিক বিশ্লেষক জিয়া হাসান বলেন, ‘‘সবাই একমত হোন যে এটা আর কোটা সংস্কার নয়, বরং রাষ্ট্রীয় সংস্কার দরকার৷ হাসিনার পদত্যাগ ছাড়া রাষ্ট্রীয় সংস্কার সম্ভব নয় বলে [এখানে] সবাই শেখ হাসিনার পতন চান৷’’
ছবি: Niaz Muhit
বনে প্রতিবাদ
বাংলাদেশে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলার প্রতিবাদে জার্মানির বন শহরে জাতিসংঘের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেন একদল প্রবাসী বাংলাদেশি৷ সেখানে একজন বীর বিক্রম খেতাবপ্রাপ্ত একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মো: কবির আহমেদ বলেন, ‘‘মুক্তিযোদ্ধাদের সরকারের কাছ থেকে আর কি-ইবা পাওয়ার আছে৷ তারা তো সম্পূর্ণ দেশটাই পেয়েছে স্বাধীন হিসেবে৷’’
ছবি: Md Shafaat Ullah
ছাত্র হত্যার অবসান দাবি মিউনিখে
জার্মানির মিউনিখ শহরে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের একাংশ মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন৷ এই কর্মসূচির সঙ্গে সম্পৃক্ত হোসাইন মোঃ তালিবুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমরা মিউনিখে বাংলাদেশে সংগঠিত সংঘাতের এবং ছাত্র হত্যার অবসান এবং বিচার চেয়ে মানববন্ধন করেছি৷’’
ছবি: Hossain Islam
ব্রান্ডেনবুর্গে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ
জার্মানির কটবুস শহরে ব্রান্ডেনবুর্গ টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নরত প্রায় ১০০ এর মতো শিক্ষার্থী চলমান কোটা সংস্কার ‘‘আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের হত্যা ও হামলার প্রতিবাদে’’ সমবেত হন৷ তাদের অনেকের হাতে প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘‘সহিংসতা বন্ধ হোক৷’’
ছবি: Muhib Hasan
ম্যনশেনগ্লাডবাখে মানববন্ধন
জার্মানির ম্যনশেনগ্লাডবাখের হকশুলে নিধেরেইন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা তাদের দেশে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে সংহতি জানিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন৷
ছবি: Rayhan Jilani
ওয়ারশতে বাংলাদেশের দূতাবাসের সামনে প্রতিবাদ
পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশতে দেশটিতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের একাংশ তাদের দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনে আন্দোলরত শিক্ষার্থীদের ওপর ‘‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ছাত্রলীগের হামলা এবং শিক্ষার্থীদের হত্যার প্রতিবাদে’’ বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন৷