1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

খুলনার নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৬ মে ২০১৮

খুলনা সিটি নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু৷ এদিকে জয়ী আওয়ামী লীগের প্রার্থী জনরায় মেনে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন৷ বিশ্লেষকরা প্রশ্ন তুলেছেন নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে৷

Bangladesch Bürgermeisterwahl in Khulna
ছবি: bdnews24.com

মঙ্গলবার (১৫ মে) কেসিসিতে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে হওয়া নির্বাচনে জয়ী ঘেষণা করা হয়েছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেককে৷ তিনি বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে ৬৫ হাজার ৬০০ ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছেন৷ নজরুল ইসলাম মঞ্জু ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১ লাখ ৯ হাজার ২৫১ ভোট৷ তালুকদার খালেক পেয়েছেন ১ লাখ ৭৪ হাজার ৮৫১ ভোট৷

কিন্তু বুধবার সকালে খুলনায় এক সংবাদ সম্মেলনে নজরুল ইসলাম মঞ্জু নির্বাচনের এই ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছেন৷ তাঁর অভিযোগ, এই নির্বাচন সর্বকালের ভোট ডাকাতির নতুন রূপ, নতুন সংস্করণ৷ নারী ভোট ডাকাত এখানে নতুন সংযোজন৷ ১০৫টি কেন্দ্রে ব্যালট ছিনিয়ে ভোট দেওয়া হয়েছে, ৪৫টি কেন্দ্রে ভোটারদের আটকে দেওয়া হয়েছে৷ ভোট ডাকাতির অন্যতম দৃষ্টান্ত এটি৷ ভোট ডাকাতির এই নির্বাচনে জয়ী হয়েছে তালুকদার আব্দুল খালেক৷''

ড. আব্দুল আলীম

This browser does not support the audio element.

তিনি আরও বলেন, ‘‘তালুকদার আব্দুল খালেকের পক্ষে বনদস্যু, জলদস্যু, সন্ত্রাসী সবাই প্রকাশ্যে কাজ করেছে৷ আগামীতে খালেককে বোরকা পরে জনগণের সামনে বের হতে হবে, সেই পরিবেশই তিনি তৈরি করলেন৷''

তাঁর কথায়, ‘‘নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচনে সহায়ক না, যোগ্য না৷ বিজিবি, র‌্যাব ঘুমিয়ে ছিল৷ পুলিশ সক্রিয় ছিল আওয়ামী লীগের বাহিনী হিসেবে৷ সকাল থেকে রিটার্নিং অফিসার ফোন রিসিভ করেননি৷ এই ভোট ডাকাতি প্রমাণ করেছে সেনাবাহিনী ছাড়া নির্বাচন সম্ভব নয়৷''

অন্যদিকে আরেক সংবাদ সম্মেলনে তালুকদার আব্দুল খালেক ‘জনরায়' মেনে নেয়ার জন্য মঞ্জুর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন৷ তিনি ‘ভোট ডাকাতির' অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘‘সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার দুরভিসন্ধি বাদ দিয়ে জনরায় মেনে নিন৷'' তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, ‘‘নির্বাচনের শুরু থেকেই পরিবেশ সুষ্ঠু ছিল৷ নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে৷ কয়েকটি কেন্দ্রে সংগঠিত ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া আর কিছু না৷ বিএনপি এই নির্বাচনে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াতে তৎপর ছিল৷ কিন্তু জনগণ তাদের মতো করেই রায় দিয়েছেন৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘বিএনপির প্রার্থী এক লাখ ৯ হাজার ভোট পেয়েছেন৷ এর মাধ্যমেও প্রমাণিত যে নির্বাচন অবাধ ছিল৷ অবাধ নির্বাচন ছাড়া কেউ এত ভোট পেতে পারেন না৷''

ড. বদিউল আলম মজুমদার

This browser does not support the audio element.

এদিকে ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ (ইউডাব্লিউজি) বুধবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে, ‘খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ৩২ শতাংশ কেন্দ্রে নির্বাচনি সহিংসতার প্রমাণ পাওয়া গেলেও, তা নির্বাচনের ফলাফলে কোনো প্রভাব ফেলেনি৷' তারা তাদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে জানায়, ‘পর্যবেক্ষণকৃত ১৪৫টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ৩২ শতাংশ ভোট কেন্দ্রে নির্বাচনি সহিংসতা পাওয়া যায়৷ এর মধ্যে রয়েছে অবৈধভাবে ব্যালট পেপারে সিল মারা, ভোটকেন্দ্রের ভেতরে এবং বাইরে সংগঠিত সামান্য সহিংসতা, ভোটকেন্দ্রে অননুমোদিত ব্যাক্তির উপস্থিতি এবং ভোটারকে ভোট প্রদানে বাধা দান৷ যে কয়টি অনিয়ম দেখা গেছে, তার মধ্যে রয়েছে ভোট কেন্দ্রের বাইরে সহিংসতা ১২টি, ভেতরে সহিংসতা চারটি, ভোটারকে ভোটপ্রদানে বাঁধা দান ১৮টি, পর্যবেক্ষককে ভোটকেন্দ্রে প্রেবেশ করতে না দেওয়ার ঘটনা চারটি, ভোটকেন্দ্রের ৪০০ গজের মধ্যে নির্বাচনি প্রচারণার ঘটনা ১০টি, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ প্রার্থীর পক্ষে অবস্থানের ঘটনা চারটি৷''

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘ভোটগ্রহণ শুরুর সময় ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের লম্বা লাইন দেখা গেছে৷ এর মধ্যে ৩৭ শতাংশ কেন্দ্রের লাইনে ১-২০ জন ভোটার লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন৷ ২৭ শতাংশ কেন্দ্রে ২১-৪০ জন ভোটার এবং ৩৪ শতাংশ কেন্দ্রে ৪০ জনের বেশি ভোটার লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন  ভোটগ্রহণ শুরুর সময় ৯৯ দশমিক ৩ শতাংশ ভোটকেন্দ্রে আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট এবং ৮৮ দশমিক ৮ শতাংশ কেন্দ্রে বিএনপি মেয়র প্রার্থীর এজেন্টদের উপস্থিতি দেখা গেছে৷' ইউডাব্লিউজি-র পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী ভোট প্রদানের হার ৬৪ দশমিক ৮ শতাংশ৷'

ইউডাব্লিউজি-র পরিচালক ড. আব্দুল আলিমের কাছে প্রশ্ন ছিল ৩২ ভাগ কেন্দ্রে সহিংসতা হলে ভোটে তার প্রভাব পড়েনি এই সিদ্ধান্তে আপনরা কীভাবে এলেন? জবাবে তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই সহিংসতা ছিল মাইনর লেভেলে, বড় আকারে নয়৷ আমরা একেকটি কেন্দ্রে দেখেছি ৫-১০টা ব্যালট নিয়ে সিল মারা হয়েছে৷ আমরা যদি ৩২ কেন্দ্রের হিসাব করি তাহলেও সংখ্যা কিন্তু বেশি হয় না৷ মেয়র পদে দুই প্রার্থীর ভোটের যা ব্যবধান, তাতে ঐ অল্প সংখ্যক ভোটে ফলাফল পরিবর্তন হয় না৷ তাই আমরা বলেছি ৩২ ভাগ সহিংসতা হলেও ভোটের ফলে তা প্রভাব ফেলেনি৷''

তবে আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার কাজ আরো বাকি আছে৷ সেজন্য নির্বাচন কমিশনকে শক্ত ভূমিকা পালন করতে হবে৷ রাজনৈতিক দল ও সরকারের সহায়তা ছাড়া নির্বাচন কমিশন ভালো নির্বাচন করতে পারে না৷ মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনকে নিয়ে কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করে৷ তাদের সহায়তা সরকারই নিশ্চিত করতে পারে৷''

সুশাসনের জন্য নাগরিক বা সুজন-এর প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘একটি নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে কিনা, তা কিছু মানদণ্ডের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করতে হয়৷ ভোটার তালিকা নিয়ে প্রশ্ন আছে কিনা৷ যাঁরা প্রার্থী হতে চেয়েছেন, সবাই প্রার্থী হতে পেরেছেন কিনা৷ ভোটারদের সামনে বিকল্প ছিল কিনা৷ ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পেরেছে কিনা৷ পুরো প্রক্রিয়া বিশ্বাসযোগ্য ছিল কিনা৷ ভোটগণনা ঠিক মতো হয়েছে কিনা৷ এ রকম আরো অনেক বিষয় আছে৷''

তিনি বলেন, ‘‘খুলনায় প্রশ্ন উঠেছে নির্বাচনের প্রক্রিয়া নিয়ে৷ ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পেরেছে কিনা৷ জাল ভোট হয়েছে কিনা৷ নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে কতগুলো গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে? প্রার্থীদের হলফনামা নিয়ে অভিযোগ করা হলেও কমিশন তা আমলে নেয়নি৷ গ্রেপ্তার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷ অন্য কোনো নির্বাচনে তো এভাবে গ্রেপ্তার করা হয়নি৷ নির্বাচনের সময়তো পুলিশ কমিশনের অধীনেই থাকে৷ রিটানিং অফিসারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে কোনো তদন্ত না করে শুধু তাঁকে দেখভাল করার জন্য দায়িত্ব দিয়েই দায় সেরেছে নির্বাচন কমিশন৷ এইসব ঘটনা নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে এবং পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করে৷''

ড. বদিউল আলম মজুমদার আরো বলেন, ‘‘আমরা সংবাদমাধ্যমে দেখেছি নির্বাচনের সময় অনেক কেন্দ্রে বিএনপির এজেন্ট ছিল না৷ কিছু কিছু এলাকায় জাল ভোট হয়েছে৷ এগুলো নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে৷ আমি আশা করি, নির্বাচন কমিশন এগুলো খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবে৷''

নির্বাচন কমিশনের ওপর আপনার আস্থা কতটা? লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ