খুলনায় বিএনপির সমাবেশের আগে ঘোষণা দিয়ে যানবাহন বন্ধ
২০ অক্টোবর ২০২২খুলনা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি আগামী ২১ এবং ২২ অক্টোবর দুই দিন খুলনার সঙ্গে জেলা এবং জেলার বাইরে ১৭ টি রুটে জেলা এবং আন্তঃজেলা গণপরিবহন চলাচল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। এর ফলে সমাবেশের আগের দিন থেকে খুলনা মহানগর বিভাগের ১১টি জেলাসহ ঢাকা ও সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। তবে মালিক সমিতি তাদের বিজ্ঞপ্তিতে কোনো সুর্নির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করেনি। এদিকে মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন এর আগে গণপরিবহন বন্ধের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করলেও বৃহস্পতিবার খুলনা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বিপ্লব বলেন,"মালিকেরা আমাদের সঙ্গে কোনো বৈঠক না করে, কোনো কথা না বলেই দুই দিনের জন্য গণপরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে। এতে আমরা শ্রমিকেরা যেমন দুর্ভোগে পড়ব তেমনি সাধারণও মানুষও দুর্ভোগে পড়বেন।”
কেন বন্ধ করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,"সেটা তো সবাই জানে। আমার মুখ দিয়ে বলা সম্ভব নয়।”
তিনি জানান, খুলনার সঙ্গে ১৮টি রুটে পাঁচ শতাধিক যানবাহন চলাচল করে, শ্রমিক আছে প্রায় দুই হাজার। তার কথা,"এই সময়ে মালিকেরা আমাদের শ্রমিকদের কোনো বেতন বা মজুরি দেবে না। আমরা কাজ করলে মজুরি পাই। কাজ না করলে পাই না। আমাদের কাজ না করতে বাধ্য করা হচ্ছে। তিনটি মালিক সংগঠন গণপরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা বন্ধ করিনি।” এ নিয়ে চেষ্টা করেও খুলনা পরিবহন মালিক সমিতির কোনো নেতার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। খুলনা জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি হলেন খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রাহমান মিজান। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য।
তবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ বলেন,"খুলনার মালিক সমিতি দুই দিনের জন্য গণপরিবহন কেন বন্ধের ঘোষণা দিলো আমরা জানি না। আমাদের সঙ্গে তারা যোগাযোগও করেনি। আমি সাংবাদিকদের কাছে শুনেছি। হতে পারে তাদের কোনো অভ্যন্তরীণ বিষয় আছে।”
এর আগে ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহের সমাবেশের আগেও অঘোষিতভাবে ওই বিভাগের সব রুটে গণপরিবহন বন্ধ করে দেয়া হয়েছিলো। তাতে ব্যপক জনদুর্ভোগ হয়। খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ বলেন,"তখন আমাকে মালিকেরা বলেছিলো যে যানবাহনে হামলা ও ভাঙচুর হতে পারে তাই তারা তারা বন্ধ রেখেছিলো। তবে এবার এখানো কিছু জানায়নি।”
শনিবারের সমাবেশ হবে খুলনার সোনালী ব্যাংকের সামনে। খুলনা জেলা বিএনপির সভাপতি আমির এজাজ জানান, ওই জায়গায় সমাবেশ করতে পুলিশ তাদের অনুমতি দিয়েছে। তিনি বলেন,"তবে সরকারের নির্দেশে দুইদিনের জন্য গণপরিবহণ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে যাতে সমাবেশে লোকজন না আসতে পারে। কিন্তু মানুষ আসবেই, কোনোভাবেই তাদের ঠোকানো যাবে না। প্রয়োজনে তারা পায়ে হেঁটে আসবেন। তারা লঞ্চ নৌকা, ইঞ্জিন চালিত নৌকাও বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু তাতেও কাজ হবে না।”
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন,"এর আগে তারা চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহে একই কাজ করেছে। পরিবহন বন্ধ, পথে পথে বাধা ও হামলা চলিয়েও তারা মানুষের ঢল থামাতে পারেনি। এবারও পারবে না। আগে তারা অঘোষিতভাবে করেছে। এবার তারা ঘোষণা দিয়ে করছে। তারা জনতার ঢল দেখে ভয় পেয়ে বেসামাল হয়ে গেছে।
তবে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন,"মালিকেরা পরিবহন কেন বন্ধ করেছে তা আমরা জানি না। সেটা তাদের ব্যাপার। বিএনপির সমাবেশ ঠেকানোর আমাদের কোনো ইচ্ছা নেই। আমরা যদি আরেকটি সমাবেশ ডাকি তাহলেই বিএনপির সমাবেশে আর লোক পাওয়া যাবেনা। আমরা তো সেটা করছি না।”
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,"জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছে তো বিএনপি। তারা রাস্তাঘাট বন্ধ করে দিচ্ছে। পরিবহন মালিকেরা হয়তো বা তাদের হামলা বা ভাঙচুরের ভয়ে যানবাহন বন্ধ করে দিয়েছেন।”