1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

খুলনা-১ আসনে কী হয়েছিল?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২ জানুয়ারি ২০১৯

খুলনা-১ আসনে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণায় ‘গরমিল'-এর খবরের কারণে দু'জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে মামলা হয়েছে৷ একজনকে তিনদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে৷কেন রিমান্ডে নেয়া হলো সাংবাদিককে? আসলে কী হয়েছিল সেদিন?

Bangladesch Wahlen 2013
ফাইল ফটোছবি: picture-alliance/A.A./N. Kumar

খুলনা-১ আসনটি বটিয়াঘাটা ও দাকোপ উপজেলা নিয়ে গঠিত৷ এই আসনে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের পঞ্চানন বিশ্বাস৷ নির্বাচনের দিন ৩০ ডিসেম্বর রাতেই ফলফল ঘোষণা করা হয়৷ ফল ঘোষণা করেন খুলনার জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার হেলাল হোসেন৷ খুলনায় জাতীয় সংসদের মোট আসন ৬টি৷ এর মধ্যে খুলনা-২ আসনে ইভিএম-এ নির্বাচন হয়েছে৷  

৩০ ডিসেম্বর রাতে ফলাফল ঘোষণার সময় খুলনা জেলা রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে যে সাংবাদিকরা উপাস্থিত ছিলেন, তাঁদের একজন একাত্তর টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি পারভেজ রেজা৷ তিনি ঢাকা থেকে গিয়েছিলেন খুলনার নির্বাচনের খবর সংগ্রহ করতে৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রাত ৯টার  কিছু সময় পরে রিটার্নিং কর্মকর্তা হেলাল হোসেন খুলনা-১ আসনের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করেন৷ তিনি তখন নৌকা প্রতীকে ভোটের সংখ্যা বলেন দুই লাখ ৫৩ হাজার সামথিং৷ আর ধানের শীষ প্রতীকে ২৮ হাজার৷ কিন্তু কিছুক্ষণ পরে একজন স্থানীয় সাংবাদিক, আমি নাম বলতে পারব না, তিনি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বললেন, আপনি যে ফলাফল ঘোষণা করলেন, সেই ফলাফলে দেখা যায় মোট ভোটারের চেয়ে ২২ হাজারেরও বেশি ভোট কাস্ট হয়েছে৷ তিনি এটা শুনে একটু অপ্রস্তুত হয়ে যান৷ এরপর আমাদের সামনেই তিনি কারো সাথে ফোনে কথা বলেন৷ ফল ঘোষণার মাইক্রোফোন অন ছিল৷ যার সঙ্গে কথা বলেন, তার সঙ্গে তিনি রাগতস্বরেই কথা বলছিলেন৷''

পারভেজ রেজা

This browser does not support the audio element.

পারভেজ রেজা বলেন, ‘‘এরপর তিনি আমাদের কিছু বললেন না৷ অন্য আসনের ফল ঘোষণা করতে থাকলেন৷ রাত ১০টার দিকে তিনি নতুন করে আবার খুলনা-১ আসনের ফলাফল ঘোষণা করেন৷ তখন তিনি এক লক্ষ ৭২ হাজারে কিছু বেশি ভোট নৌকা প্রতীক পেয়েছে বলে ঘোষণা করেন, আর ধানের শীষ আগের মতোই ২৮ হাজারের কিছু বেশি৷''

শুরুর ভুল নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা তখন কোনো ব্যাখ্যা দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে পারভেজ রেজা বলেন, ‘‘না, তিনি কোনো ব্যাখ্যা দেননি৷ আগের ঘোষণা করা ফলাফল নিয়ে তিনি কোনো ধরনের কথাই বলেননি৷''

সাংবাদিকরা কোনো ব্যাখ্যা চেয়ে প্রশ্ন করেছিলেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘না, আমরা কোনো প্রশ্ন করিনি৷ কোনো ব্যাখ্যাও চাইনি৷ আমরা তো দেখছিলাম৷ আর সাংবাদিকরাই তো বিষয়টি তাঁর নজরে এনেছিলেন৷''

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘প্রথমে রাত ৯টার পরে খুলনা-১ আসনের যে ফল ঘোষণা করা হয়েছিল, তাৎক্ষণিকভাবে আমরা সাংবাদিকরা সবাই যার যার অফিসে সেই ফলই পাঠিয়ে দেই৷ এক ঘণ্টা পরে আবার যখন নতুন করে সেই ফল ঘোষণা করে, সেটাই আমরা আবার পাঠিয়ে দিই৷''

আতিয়ার পারভেজ

This browser does not support the audio element.

প্রসঙ্গত, খুলনা-১ আসনের মোট ভোটার ২লাখ ৫৯ হাজার ৪২০ জন এবং কেন্দ্র ১০৭টি৷

ফল ঘোষণার সময় খুলনায় কর্মরত বাংলাভিশনের সাংবাদিক আতিয়ার পারভেজও সেখানে ছিলেন৷ তিনিও পারভেজ রেজার বক্তব্য সমর্থন করেই ডয়চে ভেলেকে বললেন, ‘‘প্রথমে খুলনা-১ আসনের ফল যখন রিটার্নিং অফিসার ঘোষণা করেন, তখন দেখা গেল মোট কাস্টিং ভোট মোট ভোটারের চেয়েও ২২ হাজার বেশি৷ এটা সাংবাদিকরাই তাঁকে জানান৷ তিনি তখন এটা সংশোধন করবেন বলে জানান এবং পরে এটা সংশোধন করে ফল ঘোষণা করেন৷ তিনি আসলে দু'বারই সহকারী রিটার্নিং অফিসারের পাঠানো ফলাফলই ঘোষণা করেন৷ প্রথমবার ২২ হাজার ভোট বেশি হওয়ায় রিটার্নিং কর্মকর্তা ফোনে সম্ভবত সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাকে ধমকও দেন৷ আমার মনে হয়েছে, এটা তথ্যগত ভুল এবং পরে আসলে তথ্যগত ভুল ঠিক করা হয়েছে৷''

আতিয়ার পারভেজও জানান, ‘‘প্রথমে যে ফল ঘোষনা করা হয়, তা কোনো কোনো সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়৷ আর পরে যে ফল আবার ঘোষণা করা হয়, তার কোনো ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি বা সাংবাদিকরা তখন এ নিয়ে কোনো প্রশ্নও করেননি৷''

দেবাশীষ চৌধুরী

This browser does not support the audio element.

এর কোনো রেকর্ড বা ভিডিও ফুটেজ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘কারো কাছে আছে কিনা আমি জানি না৷ তবে ফল ঘোষণা করা হয় দীর্ঘ সময় ধরে৷ সাধারণত আমরা, টিভি সাংবাদিকরা দীর্ঘ ভিডিও করি না৷ আর আমার মূল আগ্রহ ছিল খুলনা-২ আসন৷ কারণ, সেখানে হেভিওয়েট প্রার্থী ছিলেন৷ আর আমি  নিশ্চিত করেই বলছি, খুলনা-১ আসনের ফল দু'বার ঘোষণা করা হয়৷''

দু'জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে খুলনার বটিয়াঘাটা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ৩১ ডিসেম্বর মামলা করেছেন বটিয়াঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার দেবাশীষ চৌধুরী৷ ১ জানুয়ারি বাংলা ট্রিবিউন ও ঢাকা ট্রিবিউনের সাংবাদিক হেদায়েৎ হোসেনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে৷ বুধবার তাঁকে ৩ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে৷ আর দৈনিক মানবজমিনের খুলনা প্রতিনিধি রাশিদুল ইসলাম আত্মগোপনে আছেন৷ মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, ‘‘ঢাকা ট্রিবিউন-এর বাংলা অনলাইনে এবং মানবজমিনে ‘খুলনা-১, মোট ভোটারের চেয়ে ২২,৪১৯ ভোট বেশি পড়েছে' শিরোনামে খবর প্রকাশ হয়, যা মিথ্যা এবং অসত্য৷ তারা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ এবং বিতর্কিত করার জন্য এই খবর পরিবেশন করেছেন, যা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অপরাধ৷''

খুলনা-১ আসনে দু'বার ফল ঘেষণার বিষয়ে জানতে চাইলে বটিয়াঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার দেবাশীষ চৌধুরী টেলিফোনে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দু'বার ফল ঘোষণার বিষয়টি আমার জানা নেই৷ এ বিষয়ে জানতে চাইলে রিটার্নিং অফিসারের সঙ্গে কথা বলুন৷ আমি নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে মামলা করেছি৷''

হেলাল হোসেন

This browser does not support the audio element.

আর রিটার্নিং কর্মকর্তা ও খুলনার জেলা প্রশাসক হেলাল হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমিই ফল ঘোষণা করেছিলাম৷ তবে খুলনা-১ আসনে দু'বার ফল ঘোষণা বা ভুল সংশোধনের কোনো বিষয় আমার নলেজে নেই৷ আমার যেটা জানা আছে, তা হলো,  ২০টি সেন্টারের রেজাল্ট আমরা একসঙ্গে দিচ্ছিলাম৷ আবার আপডেট দিচ্ছিলাম৷ সেক্ষেত্রে দাকোপ-এর একটি রেজাল্টে আমি নাকি প্রথমে ধানের শীষের ভোট বলেছি ২৯ হাজার, পরে নাকি বলেছি ২৮ হাজার প্লাস৷ এটা হলো ওদের (সাংবাদিকদের) কথা৷ ৭-৮ শ' ভোটের একটা গরমিল৷ তাদের হিসেবে ৭-৮শ' ভোট প্লাস-মাইনাস বলছিল তারা৷ এটা হয়েছে যখন আমি আপডেট দিচ্ছিলাম৷'' তিনি বলেন, ‘‘আরেকটি আসনে ভোটারের চেয়ে ২২ হাজার বেশি ভোটের ঘোষণা আমি কখনোই  দেইনি৷ এটা নিয়ে আমার সহকর্মীদের সঙ্গেও কথা বলেছি৷ এটা নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা হয়নি৷ আর এটা কোনোভাবেই হওয়া সম্ভব নয়৷ নির্বাচন কমিশন কি এত ব্যালট পেপার দেয় নাকি? এটা আমাদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের (সাংবাকিদের) শিওর হওয়া দরকার ছিল৷''

নির্বাচন কমিশন (ইসি)-র নির্দেশে দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এটা স্থানীয় বিষয়৷ এই মামলা হয়েছে স্থানীয়ভাবে৷ স্থানীয় প্রশাসন মামলা করেছে৷ ভোটের রেজাল্টকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য তারা একটি মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করেছে৷ পুরো ইলেকশনটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করেছে৷''

হেলালুদ্দীন আহমদ

This browser does not support the audio element.

খুলনা-১ আসনে ফলাফলের ভুল সংশোধন করে দ্বিতীয়বার আবার ঘোষণা করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমি ঠিক জানি না৷ ওখানের বিষয়গুলো আমি জানি না৷''

জাতীয় পার্টির আসন নিয়ে ইসি সচিবের ভুল তথ্য!

৩১ ডিসেম্বর ভোরে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল ঘোষণায় ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জাতীয় পার্টি (জাপা) সব মিলিয়ে ২০টি আসন পেয়েছে বলে জানান৷ আসলে জাতীয় পার্টি পেয়েছে ২২টি আসন৷এই তথ্য সংশোধন করে ইসি সচিবালয় থেকে কোনো বিবৃতিও দেয়া হয়নি৷

তবে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাওয়ায় একটি জাতীয় দৈনিককে ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব সাইদুর রহমান বলেন, ‘‘স্যার বিষয়টি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন৷ সেদিন তাড়াহুড়ো করে কাজ করতে গিয়ে এই ভুল হয়েছে৷ আসলে জাতীয় পার্টির আসনসংখ্যা হবে ২২৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ