অ্যামেরিকা আফগানিস্তান ছাড়ার পর এই প্রথম বিমান উড়ল কাবুল বিমানবন্দর থেকে। বিমান নেমেছে দোহায়।
বিজ্ঞাপন
সম্ভাবনা ছিল। তবে এত তাড়াতাড়ি কাবুল বিমানবন্দর খোলা সম্ভব হবে, তা অনেকেই ভাবেননি। অ্যামেরিকা আফগানিস্তান ছাড়ার পরে বৃহস্পতিবার কাবুল বিমানবন্দর থেকে প্যাসেঞ্জার ফ্লাইট ছেড়েছে কাতারের উদ্দেশে। শুক্রবারও একটি বিমান ছাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তালেবান জানিয়েছে, বৈধ কাগজ থাকলে তারা বিদেশি নাগরিকদের বিমানে উঠতে দেবে। কাতার জানিয়েছে, বৃহস্পতিবারের বিমানে প্রায় দেড়শ মানুষ ছিলেন। তার মধ্যে বহু অ্যামেরিকান, ক্যানাডার নাগরিক এবং কিছু জার্মান ছিলেন।
দোহার মধ্যস্থতায় এভাবেই আরো মার্কিন নাগরিককে উদ্ধার করা সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে। কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মেদ বিন আব্দুলরহমান আল-থানি বিমান চালাতে দেওয়ার জন্য তালেবানকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, বেশ কিছুদিন ধরেই কাবুল বিমানবন্দর খোলা নিয়ে তালেবানের সঙ্গে আলোচনা চলছিল। প্রয়োজনে কাতার সে কাজে তালেবানকে সাহায্য করবে বলেও জানানো হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তা সফল হলো।
বুকে বন্দুক তাক করেও বিক্ষোভ থামাতে পারছে না তালেবান
তালেবান সরকার গঠন করার আগে থেকেই আফগানিস্তানে চলছে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ৷ প্রতিবাদ আর বিক্ষোভ মূলত তালেবান এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে৷ বন্দুক তাক করে, ফাঁকা গুলি ছুঁড়েও বিক্ষোভ থামাতে ব্যর্থ তালেবান৷ ছবিঘরে বিস্তারিত...
ছবি: REUTERS
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ
মঙ্গলবার কাবুলে বড় একটি বিক্ষোভ হয়েছে পাকিস্তান দূতাবাসের সামনে৷ তালেবান ফিরে আসার পর থেকে আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পাকিস্তান হস্তক্ষেপ করছে- এমন অভিযোগ তুলে হস্তক্ষেপ বন্ধের দাবি জানান বিক্ষোভকারীরা৷ গত রবিবার পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-র প্রধান ফায়েজ হামিদ দু’ দিনের সফরে কাবুলে যান৷ এ সফরে তালেবান কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকও করেন তিনি৷
ছবি: HOSHANG HASHIMI/AFP
বিক্ষোভ থামাতে ছুটে আসে বন্দুক
পাকিস্তান দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ থামাতে এক বিক্ষোভকারীর বুকে এভাবেই বন্দুক তাক করেন এক তালেবান যোদ্ধা৷ তারপরও বিক্ষোভ থামেনি৷
ছবি: REUTERS
‘আইএসআই প্রধানের আফগানিস্তানে কী কাজ?’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিক্ষোভের অনেক ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে৷ স্থানীয় টেলিভিশনেও দেখানো হয় বিক্ষোভের খবর৷ সেখানে এক নারী বলেন, ‘‘আমরা এখানে এসেছি আমাদের দেশ রক্ষা করতে৷ আফগানিস্তানে সরাসরি হস্তক্ষেপ করছে পাকিস্তান৷ আমরা জানতে চাই, তাদের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান এখানে কেন? এখানে তার কী কাজ?’’
ছবি: HOSHANG HASHIMI/AFP
বিক্ষোভে বাধা
রাজধানী কাবুলে আরেকটি বিক্ষোভ মিছিল৷ মিছিলের সামনে দাঁড়িয়ে পড়েন সশস্ত্র তালেবান যো্দ্ধারা৷
ছবি: WANA/REUTERS
‘তারা মুসলমান না’
কাবুলে নারীদের বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেয়া এক নারী বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘‘ তারা (তালেবান) অন্যায়কারী এবং তারা মোটেই মানুষ না৷ তারা আমাদের বিক্ষোভ করতে দিচ্ছে না৷ তারা মুসলমান না, তারা কাফের৷’’
ছবি: WANA/REUTERS
চারপাশে তালেবান
বিক্ষোভ মিছিলটি তখন আফগানিস্তানে পাকিস্তানের হস্তক্ষেপের প্রতিবাদ জানাতে পাকিস্তান দূতাবাসের দিকে এগিয়ে চলেছে৷ চারপাশ থেকে তাদের ঘিরে ফেলে তালেবান৷
ছবি: REUTERS
নারীদের ক্ষোভ
তালেবানবিরোধী এক বিক্ষোভ মিছিলের পাশ দিয়ে যাবার সময় গাড়ি থেকেই স্লোগান দিতে শুরু করেন এক নারী৷
ছবি: WANA/REUTERS
গনি সরকারের সমর্থন
মঙ্গলবারের বিক্ষোভের ছবি৷ এক বিক্ষোভকারী উঁচিয়ে ধরেন আফগানিস্তানের সাবেক সরকারের পতাকা৷
ছবি: WANA/REUTERS
‘নারীদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে’
তালেবান ফেরায় আফগানিস্তানের নারীদের একটা অংশ নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত৷ সাম্প্রতিক বিক্ষোভগুলোতে তাই নারীদের অংশগ্রহণ খুব বেশি৷ গত ৪ সেপ্টেম্বরও কাবুলে বিক্ষোভ মিছিল করেন নারীরা৷
ছবি: Bilal Guler/AA/picture alliance
হেরাতেও নারীদের বিক্ষোভ
মঙ্গলবার হেরাত শহরেও নারীদের তালেবানবিরোদী বিক্ষোভে অংশ নিতে দেখা যায়৷ রয়টার্সকে এক নারী বলেন, ‘‘আমাদের চাকরি এবং সমাজে অর্জিত মর্যাদা রক্ষার জন্য নারীদের এগিয়ে আসতে হবে৷হয় এখন হবে, নয়তো কোনোদিনই নয়৷ হ্যাঁ, এমনই পরিস্থিতি এখন৷ আমরা সাহসী নই, আমরা আসলে নিজেদের মৌলিক অধিকার রক্ষার জন্য বেপরোয়া৷’’ ওপরের ছবিটি গত ২ সেপ্টেম্বরের৷
ছবি: Mir Ahmad Firooz Mashoof/Anadolu Agency/picture alliance
10 ছবি1 | 10
বস্তুত, বিমানবন্দর খোলার জন্য চাপসৃষ্টি করেছিল পশ্চিমা দেশগুলি। কাতারে গিয়ে এ বিষয়ে আলোচনা করেছিলেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনও সম্প্রতি এ বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেন কাতারের সঙ্গে। কাতার প্রশাসন জানিয়েছে, বিমানে ১২০ থেকে ১৫০ জন মতো যাত্রী ছিলেন। তার মধ্যে অধিকাংশই অ্যামেরিকান। শুক্রবার আরো একটি বিমান উড়বে কাবুল থেকে। সেটিও কাতারে পৌঁছবে। ওই বিমানে দুইশো যাত্রী থাকতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবারের বিমানে ১৫জন জার্মান ছিলেন বলে হাইকো মাস জানিয়েছেন। কাতারকে তিনি ধন্যবাদও দিয়েছেন।
দোহায় বৃহস্পতিবার বিমানটি নামার পরেই হোয়াইট হাউস একটি বিবৃতি জারি করে। তাতে বলা হয়, তালেবানের সঙ্গে বিজনেস মডেলে আলোচনা চলছে। তারই ফলে বিমান চালানো সম্বব হয়েছে। বিজনেস শব্দটি ব্যবহার করে কূটনৈতিক শব্দটিকে এড়ানোর চেষ্টা করেছে হোয়াইট হাউস। এমনই মনে করছেন অনেকে। কারণ, এখনো তালেবানকে মান্যতা দেওয়ার জায়গায় পৌঁছায়নি মার্কিন প্রশাসন।
কাতারের মাধ্যমেই বাকি মার্কিন নাগরিকদের উদ্ধার করা যাবে বলে মনে করছে অ্যামেরিকা। একইসঙ্গে আফগানিস্তানে মার্কিন এবং ন্যাটো বাহিনীর সঙ্গে কাজ করা আফগানদেরও এই পদ্ধতিতেই দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহল।