মানুষের মস্তিষ্কের রহস্য আজও পুরোপুরি জানা যায়নি৷ সেই মস্তিষ্কের কাজ নকল করার চেষ্টা করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা তার জটিল কাঠামো সম্পর্কে আরো জ্ঞান অর্জন করছেন৷ বিশেষ করে অনুভূতি নকল করা বড় এক চ্যালেঞ্জ৷
বিজ্ঞাপন
একটি রোবট তার অনুভূতি দেখাতে চায়৷ সে নাকি খুশি হতে পারে, লাজুক হতে পারে৷ রোবটের মধ্যে কি অনুভূতি ও সচেতনতা ভরে দেওয়া সম্ভব? সেই স্বপ্ন বাস্তব করতে হলে বিজ্ঞানীদের প্রয়োজন এমন এক কনট্রোল সেন্টার, যার ভিত্তি হবে মানুষের মস্তিষ্ক৷ অসাধারণ এক প্রকল্পের মাধ্যমে মস্তিষ্কের কাজকর্ম বোঝা ও কম্পিউটারে তা নকল করার চেষ্টা চলছে৷
মিউনিখের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোইস ক্নল ইউরোপের অন্যান্য বিজ্ঞানীদের মতো মানুষের মস্তিষ্কের রহস্য ভেদ করার চেষ্টা করছেন৷ সেখানকার তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ প্রো. আলোইস ক্নল বলেন, ‘‘হিউম্যান ব্রেন প্রজেক্টের মৌলিক আইডিয়া হলো, স্তন্যপায়ী প্রাণীর মস্তিষ্কের যতটা সম্ভব কাজ এক কম্পিউটারে নকল করা৷ অর্থাৎ সবার আগে জানতে হবে, মস্তিষ্ক কীভাবে কাজ করে৷ নিউরন, জৈবিক মস্তিষ্কের অংশগুলি কীভাবে কাজ করে, তারা পরস্পরের সঙ্গে কীভাবে তথ্য আদানপ্রদান করে, কম্পিউটারের মধ্যে সেই প্রক্রিয়া কীভাবে নকল করা সম্ভব?''
জীবন বাঁচাবে বাংলাদেশের রোবট
গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে রোবট নিয়ে কাজ হচ্ছে৷ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায়ও বাংলাদেশের প্রতিযোগীরা এক্ষেত্রে সফলতার স্বাক্ষর রাখছেন৷
ছবি: RoboticsBD
আগুন নেভাবে রোবট
তৈরি পোশাক কারখানা সহ বিভিন্ন জায়গায় আগুন লাগার ঘটনা প্রায় ঘটে৷ এতে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে৷ আগুন নেভাতে ছুটে যান দমকল বাহিনীর কর্মীরা৷ ভবিষ্যতে হয়ত তাদের সঙ্গে যোগ দেবে রোবট৷ বাংলাদেশেই এ ধরনের রোবট তৈরির কাজ চলছে বলে জানান শিবলী ইশতিয়াক৷ রোবট তৈরির উপকরণ পাওয়া যায় এমন একটি ওয়েবসাইট রোবটিক্সবিডি ডটকমের অ্যাডমিন তিনি৷
ছবি: STR/AFP/Getty Images
স্বয়ংক্রিয় বা রিমোট কন্ট্রোল
ইশতিয়াক বলেন, ‘‘বাংলাদেশে অনেক ফ্যাক্টরি আছে যেগুলো অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা ততটা ভালো না৷ তাই কিছু কিছু রোবট ডেভেলপ করার চেষ্টা চলছে যেগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে আগুন নেভানোর কাজ করবে৷ অথবা সেগুলো রিমোট কন্ট্রোল দিয়ে চালানো যেতে পারে৷'' এ ধরনের রোবটকে কোথায়, কীভাবে কাজে লাগানো যায় তা নিয়ে বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে কথাবার্তা চলছে বলে জানান তিনি৷
ছবি: RoboticsBD
কোয়াডকপ্টার
ইশতিয়াক বলেন, বর্তমানে কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেল তাদের অনুষ্ঠান নির্মাণকাজে কিংবা সরাসরি কোনো অনুষ্ঠান সম্প্রচার করতে বাংলাদেশে তৈরি কোয়াডকপ্টার ব্যবহার করছে৷
ছবি: Getty Images
সাগরে ডুবে যাওয়া থেকে রক্ষা
কোয়াডকপ্টারের আরেকটি সম্ভাব্য ব্যবহারের কথাও জানান ইশতিয়াক৷ সাগরে ডুবে যাচ্ছে এমন কোনো ব্যক্তির কাছে কোয়াডকপ্টারের মাধ্যমে লাইফ জ্যাকেট ও ভেস্ট পাঠিয়ে তাঁর প্রাণ বাঁচানো যেতে পারে৷
ছবি: RoboticsBD
ঘরের কাজে রোবট
ভ্যাকুয়াম ক্লিনার সহ ঘরের কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে এমন সব রোবট ডেভেলপ করতে গবেষণা করছেন বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা৷
ছবি: AP
অনলাইনে রোবট তৈরির যন্ত্রপাতি
রোবটিক্সবিডি ডটকমে (http://store.roboticsbd.com/) গেলে রোবট তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো পাওয়া যাবে৷ আগে এসব বিদেশ থেকে আমদানি করতে হতো৷
ছবি: store.roboticsbd.com
শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়ছে
ইশতিয়াক জানান, সাইট চালুর শুরুর দিকে অর্থাৎ ২০১২ সালে তেমন একটা ব্যবসা করতে না পারলেও পরের দুই বছরে বিক্রি বেড়েছে প্রায় দুইশো শতাংশ৷ এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘‘আজকাল শিক্ষার্থীরা ইউটিউব সহ অন্যান্য মাধ্যমে বিদেশে রোবট নিয়ে যেসব কাজ হচ্ছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারছে৷ ফলে তারাও এ বিষয়টির প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে৷’’
ছবি: RoboticsBD
প্রশিক্ষণ
যারা রোবট বানানোর চেষ্টা করছেন তাদের আরেকটু সহায়তা করতে রোবটিক্সবিডি বেশ কিছু কোর্সও পরিচালনা করে থাকে৷
ছবি: RoboticsBD
8 ছবি1 | 8
ইঁদুরের মস্তিষ্কে প্রায় ৭ কোটি নিউরন রয়েছে৷ মানুষের তুলনায় অনেক ছোট হওয়া সত্ত্বেও কাঠামোর ক্ষেত্রে মিল রয়েছে৷ প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে কম জটিল ইঁদুরের মস্তিষ্ক সিমুলেশনের প্রক্রিয়া বেছে নেওয়া হলো৷ সেই মস্তিষ্কের তথ্য কীভাবে কোনো কম্পিউটারে পাঠানো যায়, সেই প্রশ্ন নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে৷ মস্তিষ্ক শরীরের ইন্দ্রিয় থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে বায়োলজিকাল কমান্ড বা নির্দেশ সৃষ্টি করে, যা গতির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে৷ এই প্রক্রিয়া ঠিক কীভাবে ঘটে?
মানুষের মস্তিষ্কে ১০ হাজার কোটি নিউরন রয়েছে৷ তার নকল করতে হলে চাই বিশাল, শক্তিশালী সুপারকম্পিউটার৷ মিউনিখের ‘সুপারএমউসি' বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম কম্পিউটার৷ তার মধ্যে প্রায় দেড় লক্ষ প্রসেসর রয়েছে৷ কিন্তু এই কাজের জন্য সেটিও যথেষ্ট বড় নয়৷ প্রো. আলোইস ক্নল বলেন, ‘‘একটি নিউরনের কম্পিউটিং ক্ষমতাকে ভিত্তি হিসেবে ধরলে বলা যেতে পারে, এমন এক কম্পিউটার হয়তো মানুষের মস্তিষ্কের ক্ষমতার এক শতাংশের সিকিভাগ ধারণ করতে পারে৷''
রেস্তোরাঁয় খাবার পরিবেশন করবে রোবট?
রোবট, যন্ত্রের তৈরি মানুষগুলো শুধু যে চোখ পিটপিট তাকাতে আর শব্দ করতে পারে, তা নয়৷ চীনের বেশ কিছু রোস্তোরাঁয় আজকাল অতিথি আপ্যায়নেও কোমর বেঁধেছে তারা৷ চলুন যন্ত্রমানবের কাজ দেখতে ঘুরে আসা যাক সেরকমই একটি রেস্তোরাঁ থেকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Zhang
আপনার অর্ডার, প্লিজ...
শুধু প্রযুক্তিগত চমক দেখানোই নয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এ ব্যাপারে একেবারে সামনের সাড়িতে রয়েছে চীন৷ তবে সেই সব আধুনিক প্রযুক্তি আদৌ ব্যবহারযোগ্য কিনা – সেটা অবশ্য দেখার বিষয়৷ ছবিতে দেখুন অতিথিদের খাওয়ার অর্ডার নোওয়াসহ হাজারো কাজ নিয়ে মেতেছে রোবট৷
ছবি: picture-alliance/epa/P. Hilton
খাবার তৈরি!
এই ছোট্ট হিউম্যানয়েড রোবটগুলো খাবার পরিবেশনের ক্ষেত্রে খুবই পারদর্শী৷ এদের সুবিধা হলো এই যে, এরা ক্লান্ত হয় না আর কাজ করতেও কোনো ঝামেলা করে না৷ বরং ওরা শুধুই নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে জানে৷ অবশ্য রোবটের পরিবেশিত খাদ্য খেতে অতিথিদের কোনো অভিযোগ থাকলে, সেটা ভিন্ন ব্যাপার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ChinaFotoPress/MAXPPP
শেফকুক রোবট
রোবট শুধু অতিথিদের অর্ডারই নেয় না, তারা উনুনের সামনে দাঁড়িয়ে খাবার গরমও করে৷ ছবিতে দেখুন আগে থেকে তৈরি করা খাবার গরম করছে রোবট৷ তবে তরকারি কাটাবাছা বা এ ধরনের কাজগুলো মানুষ সহকর্মীদেরই আগে থেকে করে দিতে হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ChinaFotoPress/MAXPPP
নানা ধরনের রোবট
তবে সব রেস্তোরাঁর রোবট কিন্তু এই গ্যালারির ছবিগুলোর মতো দেখতে যন্ত্রমানবের মতো নয়৷ এখানে যে কাজটা করা হচ্ছে, সে অংশটুকুই দেখানো হচ্ছে৷ অর্থাৎ শুধু মাথাটাই দেখানো হচ্ছে, হাত বা পা নয়৷ রেস্তোরাঁর রান্নাঘরের রোবটগুলো, অর্থাৎ যে রোবটগুলো রেস্তোরাঁর অতিথিদের সামনে যায় না, সেগুলো এরকমই হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিনোদনেও রোবট
সাংহাই-এর কাছে এই রোবট-রেস্তোরাঁতে খাবারের চেয়ে কিন্তু বিনোদন অনুষ্ঠানই বেশি আনন্দদায়ক৷ ইন্টারনেটে করা মন্তব্য থেকে অন্তত এ তথ্যই জানা যায়৷ অর্থাৎ এই রেস্তোরাঁয় অতিথিরা খাবারের চেয়ে বিনোদনটাই বেশি উপভোগ করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Robichon
5 ছবি1 | 5
মৌলিক পাটিগণিতের ক্ষেত্রে আমরা, মানে মানুষ কোনো পকেট ক্যালকুলেটরের তুলনায় অধম৷ অন্যদিকে চারিপাশের পরিবেশ বুঝতে আমাদের মাত্র কয়েক সেকেন্ড লাগে৷ কোন তথ্য গুরুত্বপূর্ণ, কোনটা নয় – তা চট করে বুঝে ফেলি৷ অথচ তথ্য ও আনফিল্টারড ডেটা সামলাতে গিয়ে কম্পিউটার তার ক্ষমতার সীমায় পৌঁছে যায়৷
তাছাড়া উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কম্পিউটার চালাতে একটা ছোটখাটো শহরের সমপরিমাণ বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়৷ সে তুলনায় সাধারণ লাইট বাল্ব জ্বালানোর জন্য যেটুকু বিদ্যুৎ লাগে, মস্তিষ্কের ঠিক সেটুকুই প্রয়োজন হয়৷