1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

খেই হারিয়ে ফেলছে আওয়ামী লীগ সরকার?

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা২ সেপ্টেম্বর ২০১৫

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের ওপর শাসক দল আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের হামলার পর একটি প্রশ্ন আবার সামনে এসেছে৷ আর তা হলো আওয়ামী লীগ সরকার কি খেই হারিয়ে ফেলছে?

Bangladesh Sheikh Hasina Regierungschefin
ছবি: Oli Scarff/Getty Images

কারণ যে শিক্ষকদের ওপর হামলা হয়েছে তারা আওয়ামীপন্থি বলেই পরিচিত৷ আর কয়েকদিন আগে যে সাংবাদিক প্রবীর সিকদারকে কারাগারে নেয়া হলো তাঁর একটি বই আছে, যার শিরোনাম ‘হাসিনা আমার বোন'৷ আরেকটি বিষয় শুরুতেই উল্লেখ করছি৷ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে সৈয়দ আশরাফকে দপ্তর থেকে বাদ দেয়ার পর তাঁকে আবার নতুন দপ্তর দেয়া হয়েছে৷ এর নেপথ্যে কী আছে?

এখন হেফাজত রীতিমত সরকারের গুডবুকেছবি: Mustafiz Mamun

এবার একটু পিছন থেকে শুরু করি৷ ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে গণজাগরণ মঞ্চ গড়ে ওঠে যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে৷ ব্যাপক আলোড়ন তোলা শাহবাগের এই আন্দোলনে সরকারের সমর্থন ছিল প্রকাশ্য৷ আর উল্লসিত আওয়ামী লীগ সরকার মঞ্চের দাবিতে সাড়া দিয়ে মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালের আইনেও পরিবর্তন আনে৷ কিন্তু সেই গণজাগরণ মঞ্চ এখন সরকারের চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছে৷ সরকার গণজাগরণ মঞ্চকে তার লোকজন দিয়ে টুকরো টুকরো বানিয়ে দুর্বল করে দিয়েছে৷ মঞ্চের নেতা-কর্মীদের পুলিশ বেশ কয়েকবার রাস্তায় লাঠিপেটা করেছে৷ আর সেই গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক এবং ব্লগাররা এখন একের পর এক খুন হচ্ছেন৷ সে প্রসঙ্গে পরে আসছি, তার আগে হেফাজতের কথা একটু বলে নিই৷

গণজাগরণ মঞ্চ এখন সরকারের চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছেছবি: Getty Images/AFP/Uz Zaman

গণজাগরণ মঞ্চের প্রতিপক্ষ হিসেবে হেফাজতের প্রকাশ্য তৎপরতার খবর সবার জানা৷ তারা কয়েকটি রাজনৈতিক দলের ইন্ধনে গণজাগরণ মঞ্চের লোকজন এবং ব্লগারদের ‘নাস্তিক' ঘোষণা করে ফাঁসির দাবি জানায়৷ আর একই বছর তারা ২০১৩ সালের ৫ই মে শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ করে সরকারের পতন ঘটাতে চেয়েছিল৷ সরকার তাদের শেষ পর্যন্ত বাগে আনতে পেরেছে এবং এখন হেফাজত রীতিমত সরকারের গুডবুকে রয়েছে৷ হেফাজতের দাবি মেনে আসিফ মহিউদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন ব্লগারকে আটক ও বিচারের মুখোমুখি করেছে৷ শুধু তাই নয় হেফাজতের দাবি মেনে ‘নারী নীতি' বাস্তবায়ন থেকেও বিরত আছে সরকার৷

‘জয়বাংলা' এবার ‘জয়বাংলা'র ওপর হামলা চালিয়েছেছবি: cc-by-sa-3.0/Nazmush Shams

গণজাগরণ মঞ্চের সময়ই ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে ব্লগার হত্যার ঘটনা ঘটে৷ নিহত ১৫ ফেব্রুয়ারি নিহত আহমেদ রাজীব হায়দার ছিলেন গণজাগরণ মঞ্চের সক্রিয় কর্মী৷ এরপর আরো চারজন ব্লগারকে হত্যা করা হয়৷ সর্বশেষ গতমাসে ঢাকায় নিহত ব্লগার নিলয় নীলও ছিলেন গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী৷ কিন্তু ধর্ম নিরপেক্ষ দল আওয়ামী লীগের সরকার ব্লগার হত্যাকারী ‘জঙ্গিদের' বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা এখনো নেয়নি৷ উপরন্তু যে কয়েকজন এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলে আটক হয়েছেন তাদের মধ্যে মহাজোট সরকারের একজন প্রতিমন্ত্রীর ভাগ্নেও রয়েছেন৷

সাংবাদিক প্রবীর সিকদার একজন ‘আওয়ামী সাংবাদিক' হিসেবে পরিচিত৷ মুক্তিযুদ্ধে তাঁর বাবাসহ পরিবারের ১৪ জন শহিদ হয়েছেন৷ তিনি একাত্তরে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি বিশেষ করে রাজাকারদের বিরুদ্ধে লেখালেখির কারণে হামলারও শিকার হয়েছেন৷ হামলায় তিনি তাঁর একটি পা হারিয়েছেন৷ তিনি একটি বই লিখেছেন, যার নাম, ‘হাসিনা আমার বোন'৷ মুক্তিযুদ্ধে নিজের বাবাকে হারনোর পর প্রবীর সিকদার বঙ্গবন্ধুকে তাঁর পিতা এবং শেখ হাসিনাকে তাঁর বোন জ্ঞান করেন৷ আর সেই শেখ হাসিনার সরকারের কাছ থেকে জীবনের নিরাপত্তা না পেয়ে ফেসবুকে এক পোস্টের মাধ্যমে তিনি জানিয়েছিলেন প্রাণহানির আশঙ্কার কথা৷ যাদের কাছ থেকে এই আশঙ্কা তাদের নামও প্রকাশ করেছেন৷ কিন্তু তাঁকে জীবনের নিরাপত্তা না দিয়ে বিতর্কিত প্রক্রিয়ায় তথ্যপ্রযুক্তি আইনের মামলায় আটক করে কারাগারে পাঠানো হয় ১৭ই আগস্ট৷ এই মামলার নেপথ্যে আছেন প্রধানমন্ত্রীর বেয়াই মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন৷ শেষ পর্যন্ত প্রবীর শিকদার জামিনে ছাড়া পেয়েছেন৷ তবে সরকারের চরিত্রের নতুন দিক স্পষ্ট হয়েছে৷

হারুন উর রশীদ স্বপনছবি: Harun Ur Rashid Swapan

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের ওপর ছাত্রলীগ হামলা করেছে গত রোববার৷ যে শিক্ষকদের ওপর হামলা করা হয় তারা যে আওয়ামীপন্থি তা সবার জানা৷ আর আন্দোলনকারী শিক্ষকদের প্রতিপক্ষ উপাচার্যও তা-ই৷ অভিযোগ উপাচার্যের আমন্ত্রণে ছাত্রলীগের আগুয়ান নেতাকর্মীরা এই হামলা চালায়৷ হামলার পর অধ্যাপক ড. জাফর ইকবালের একটি কথা বেশ আলোচিত৷ আর তা হল, ‘‘জয়বাংলা শ্লোগান দিয়ে যদি হামলা চালায় তাহলে আমরা গলায় দড়ি দেয়া উচিত৷'' অধ্যাপক জাফর ইকবালের কথায়ই প্রমাণ হয় ‘জয়বাংলা' এবার ‘জয়বাংলা'র ওপর হামলা চালিয়েছে৷ এখানে প্রসঙ্গক্রমে বলছি এর আগে সিলেটের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কায়েস একবার অধ্যাপক জাফর ইকবালকে চাবুক মারতে চেয়েছিলেন৷

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর হামলার দু'দিন পর কিছু ছাত্রলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে৷ কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগের ‘আগাছা সাফে'র কথা বলার আগ পর্যন্ত হামলাকারী ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের কোনো নেতা বা মন্ত্রী কথা বলেননি৷ একমাত্র ব্যতিক্রম সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত৷ তিনি ঘটনার পরদিনই দায়ী ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান৷

এবার ভিন্ন একটি কাহিনি শোনাই৷ অ্যাডভোকেট রানা দাসগুপ্তের কথা৷ তিনি মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালের প্রসিকিউটর এবং হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক৷ এই রানা দাসগুপ্ত এখন হুমকি এবং হয়রানির মুখে আছেন৷ তার অপরাধ একটিই৷ ৬ই আগস্ট তিনি হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের পক্ষে সারাদেশে সংখ্যালঘুদের জমি এবং ঘর-বাড়ি দখলকারীদের তালিকা প্রকাশ করেছেন৷ আর এই তালিকায় সরকারের মন্ত্রী এমপিসহ ২২ জনের নাম আছে৷ আছে মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নামও৷

শেষ করছি সরকারের খেই হারিয়ে ফেলার আরেকটি উদাহরণ দিয়ে৷ গত ৭ই জুলাই স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে তার মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দেয়া হয়৷ সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে৷ তার চেয়েও বড় কথা তিনি মন্ত্রিসভায় সেই বিরল মন্ত্রীদের একজন যাদের ক্লিন ইমেজ সর্বজনবিদিত৷ শোনা যায় আশরাফ বিরোধী একটি গ্রুপ তাঁকে সরিয়ে দেয়ার কলকাঠি নাড়েন৷ পরে অবশ্য ব্যাপক আলোচনা এবং সমালোচনার মুখে তাঁকে জনপ্রশাসন মন্ত্রী করা হয়৷ কিন্তু সরকারের মধ্যে যে নানা দল, উপদল তা স্পষ্ট হয়ে যায় এই ঘটনায়৷ আর বিতর্কিতরা যে প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে তার প্রমাণ পাওয়া যায়৷

সরকারের মন্ত্রী এমপিরা এখন প্রায়ই বলছেন দলের ভিতরে ঘাপটি মেরে আছে স্বাধীনতা বিরোধীরা৷ তাহলে তারা বুঝতে পারছেন৷ কিন্তু আমার প্রশ্ন তারা কারা? সরকার কি তাদের চেনে না? না তারাই সরকারকে ‘নতুন পথ' দেখাচ্ছে!

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ